ঈদ আনন্দ ২০১৮

খেলাধুলা

৩২ দলের ৩২ তরুণ তারকা

নিঝু চৌধুরী

৩০ জুন ২০১৮, শনিবার, ৬:৩৫ পূর্বাহ্ন

তারকাখ্যাতি পাওয়ার বড় মঞ্চ বিশ্বকাপ। আসন্ন রাশিয়া বিশ্বকাপে নজর কাড়তে পারেন তেমনই একঝাঁক তরুণ খেলোয়াড়। সব দলেই রয়েছেন উদীয়মান ফুটবলার। অভিজ্ঞদের পাশাপাশি আলো ছড়াতে পারেন এমন প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের নিয়েই এই আয়োজন। পাঠকদের জন্য ৩২ দলের সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়দের তুলে ধরা হলো

আলেক্সান্ডার গোলোভিন (রাশিয়া)
গত দুইটি ট্রান্সফার উইন্ডোতে (দলবদল) বার্সেলোনা ও আর্সেনালের রাডারে ছিলেন আলেক্সান্ডার গোলোভিন। ২১ বছর বয়সী এই প্রতিভাবান মিডফিল্ডার খেলেন সিএসকেএ মস্কো ক্লাবে। বিশ্বকাপে স্বাগতিক রাশিয়ার মাঝমাঠে দ্যুতি ছড়াতে পারেন গোলোভিন। চার বছর আগে শৈশবের ক্লাবটির হয়ে পেশাদার ফুটবলে পা রাখেন তিনি। ২০১৫ সালে অভিষেক হয় রাশিয়া দলে। ১৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে দুইটি গোল করেন সম্ভাবনাময় এই প্লে-মেকার। ১৪ই জুন মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী ম্যাচে রাশিয়ার প্রতিপক্ষ সৌদি আরব। ‘এ’ গ্রুপের অপর দুই দল মিশর ও উরুগুয়ে।
টিমো ওয়ার্নার (জার্মানি)
জার্মানির অন্যতম সম্ভাবনাময় ফরোয়ার্ড টিমো ওয়ার্নার। গত বছর আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হয় তার। ২০১৭ ফিফা কনফেডারেশন কাপে নিজের সামর্থ্যরে জানান দেন ২২ বছর বয়সী ওয়ার্নার। আসরে সর্বোচ্চ তিন গোল করে দলকে শিরোপা জেতাতে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। জার্মান ক্লাব আরবি লিপজিগের হয়ে এই মৌসুমে ৪৫ ম্যাচে ২১ গোল করেছেন ওয়ার্নার। জাতীয় দলের জার্সিতে ১২ ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠিয়েছেন ৭ বার। বিশ্বকাপে অভিজ্ঞ থমাস মুলারের ওয়ার্নার জ্বলে উঠতে পারলে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানির আক্রমণভাগ হবে আরো ক্ষুরধার। ‘এফ’ গ্রুপে জার্মানির প্রতিপক্ষ মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া ও সুইডেন।
ক্রিস্টিয়ান পাভন (আর্জেন্টিনা)
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেয়েই আলোচনার জন্ম দেন ক্রিস্টিয়ান পাভন। স্ট্রাইকার ও উইঙ্গার হিসেবে খেলতে সক্ষম বোকা জুনিয়র্সের এই উদীয়মান খেলোয়াড়। ২০১৪ সাল থেকে আর্জেন্টিনার জনপ্রিয় ক্লাবটিতে খেলছেন। ঘরোয়া লীগে ৬৫ ম্যাচে করেন ১৭ গোল। মাঝে ধারে খেলেছেন জার্মান ক্লাব কোলনে। পাভনের আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় গত বছর। ২২ বছর বয়সী উইঙ্গারের সঙ্গে রয়েছে মেসির ‘প্রশংসাপত্র’। পাভনকে নিয়ে মেসির মূল্যায়ন, ‘কোচ যে ছকে খেলতে চান, সেখানে পাভন দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে উঠতে পারে।’ এরই মধ্যে ইউরোপের বড় ক্লাবের নজর কেড়েছেন পাভন। তার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে আর্সেনাল। কর্ডোবার স্কুল ফুটবল থেকে উঠে এসেছেন পাভন। বেড়ে ওঠেন আর্জেন্টিনার প্রিমেরা ডিভিশনের ক্লাব তাল্লেরেস ডি কর্ডোবার বয়সভিত্তিক দলে। সেই সময় এক সাক্ষাৎকারে প্রশ্নের জবাবে পাভন বলেছিলেন তিনি মেসির মতো খেলেন। মেসির সতীর্থ হিসেবে এবার রাশিয়া মাতানোর অপেক্ষায় সম্ভাবনাময় পাভন। তাকে পাল্লা দিতে হবে দিবালা, আগুয়েরো, হিগুয়েইনদের সঙ্গে। ‘ডি’ গ্রুপে আইসল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া ও নাইজেরিয়াকে পেয়েছে মেসির আর্জেন্টিনা।
দানিলো (ব্রাজিল)
ব্রাজিল দলের উদীয়মান তারকা বলতেই চলে আসবে গ্যাব্রিয়েল জেসুসের নাম। আক্রমণভাগে নেইমার, ফিরমিনো, কুতিনহোরা তো আছেনই। সেলেকাওদের দুশ্চিন্তায় রাইটব্যাক পজিশন। হাঁটুর ইনজুরির কারণে যে ছিটকে গেছেন অভিজ্ঞ দানি আলভেস। তার অভাব পূরণ করার চ্যালেঞ্জ দানিলোর কাঁধে। রিয়াল মাদ্রিদে দুই মৌসুমে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি ২৬ বছর বয়সী এই রাইটব্যাক। গত বছর যোগ দেন জেসুসের ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটিতে। সিটিজেনদের হয়ে দারুণ একটি মৌসুম কাটিয়েছেন দানিলো। কোচ পেপ গার্দিওলার অধীনে ম্যানসিটির প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা জয়ের দৌড়ে ২৯ ম্যাচ খেলেন তিনি। দানিলোর সামনে বিশ্বকাপ দিয়ে নিজেকে নতুন করে প্রমাণের সুযোগ। ডিফেন্সের দুই পাশেই খেলতে সক্ষম তিনি। ২০১১ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে ব্রাজিল দলে অভিষেক হয় দানিলোর। সেলেকাওদের জার্সিতে নিয়মিত হতে পারেননি। আলভেসের ইনজুরির সুবাদে এবার তার সামনে আক্ষেপ ঘোচানোর হাতছানি। ম্যাচ খেলেছেন ১৬টি। রাইটব্যাকে চারটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা ফাগনারকে বিকল্প হিসেবে রেখেছেন কোচ লিওনার্দো বাচ্চি তিতে। ‘ই’ গ্রুপে ব্রাজিলের সঙ্গী সুইজারল্যান্ড, কোস্টারিকা ও সার্বিয়া।
সাউল নিগেজ (স্পেন)
স্পেন দলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তরুণ খেলোয়াড় মার্কো অ্যাসেনসিও। ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে চমৎকার একটি মৌসুম কাটিয়েছেন এই উদীয়মান অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। আরেক সম্ভাবনাময় মিডফিল্ডার সাউল নিগুয়েজের নামটাও বলতে হবে। অ্যাসেনসিওর চেয়ে বয়সে এক বছরের বড় নিগুয়েজ। ২৩ বছর বয়সী এই প্লে-মেকার খেলেন রিয়ালের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে। এবার ইউরোপের ক্লাব ফুটবল প্রতিযোগিতার দুইটি শিরোপাই গেছে মাদ্রিদে। ইউয়েফা ইউরোপা লীগের ট্রফি ঘরে তোলে অ্যাটলেটিকো। দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য নিগুয়েজ। কিন্তু স্পেনের ভরা মাঝমাঠে একাদশে সুযোগ পাওয়াটা হবে তার জন্য চ্যালেঞ্জিং। অ্যাসেনসিও ও নিগুয়েজ দুইজনের আন্তর্জাতিক অভিষেক ২০১৬ সালে। ম্যাচ সংখ্যা যথাক্রমে ৯ ও ১০টি। দুই মিডফিল্ডারের কেউই এখনো গোলের দেখা পাননি। ‘বি’ গ্রুপে ২০১০ বিশ্বকাপ জয়ীদের প্রতিপক্ষ পর্তুগাল, ইরান ও মরক্কো।
মার্কাস রাশফোর্ড (ইংল্যান্ড)
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের যুব একাডেমি থেকে ওঠে আসা মার্কাস রাশফোর্ড হতে পারেন ইংল্যান্ডের আক্রমণভাগের বড় অস্ত্র। ২০১৬ সালে কনিষ্ঠতম ইংলিশ খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেক ম্যাচে গোল করার রেকর্ড গড়েন ২০ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। একই বছর ইংল্যান্ডের সবচেয়ে কম বয়সী (১৮ বছর ২২৯ দিন) খেলোয়াড় হিসেবে ইউয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে (ইউরো) খেলে ওয়েইন রুনির রেকর্ড ভাঙেন রাশফোর্ড। ইংল্যান্ডের জার্সিতে ১৭ ম্যাচে দুই গোল করেছেন তিনি। আর ম্যানইউর হয়ে এই মৌসুমে ৫৩ ম্যাচে ১৩ বার লক্ষ্যভেদ করেন। বিশ্বকাপে হ্যারি কেইন, রাহিম স্টারলিংদের সঙ্গে জুটি গড়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণ দেয়াল ভেঙে দেয়ার সামর্থ্য রাখেন উদীয়মান রাশফোর্ড। ‘জি’ গ্রুপে ইংল্যান্ডের সঙ্গী বেলজিয়াম, পানামা ও তিউনিসিয়া।
উসমান দেম্বেলে (ফ্রান্স)
ফ্রান্সের তরুণ তারকাদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত মুখ কিলিয়ান এমবাপ্পে। প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ে (পিএসজি) খেলেন তিনি। এর বাইরে উসমান দেম্বেলের নাম বলতেই হবে। গত বছরের দলবদলে নজর কাড়েন দেম্বেলে। নেইমার প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ে (পিএসজি) চলে যাওয়ার পর বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে তাকে দলে টানে বার্সেলোনা। গুণতে হয় ১০৫ মিলিয়ন ইউরো। বার্সার আক্রমণভাগে মেসি-সুয়ারেজের সঙ্গে এখনো পুরোপুরি মানিয়ে নিতে পারেননি ২১ বছর বয়সী দেম্বেলে। ন্যু ক্যাম্পে এসেই ইনজুরির কবলে পড়ে তিন মাস থাকেন মাঠের বাইরে। নেইমারের শূন্যস্থান পূরণ করা তার বড় চ্যালেঞ্জ। ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ দিয়ে নিজের সামর্থ্য প্রমাণের দারুণ সুযোগ পাচ্ছেন প্রতিভাবান এই ফরোয়ার্ড। ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিষিক্ত হন দেম্বেলে। ফ্রান্সের জার্সিতে ৯ ম্যাচে করেছেন এক গোল। বার্সায় প্রথম মৌসুমে ২০ ম্যাচ খেলে চার গোল করেন দেম্বেলে। ‘সি’ গ্রুপে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক ও পেরু।
গঞ্জালো গুয়েডস (পর্তুগাল)
পর্তুগাল দলে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর উত্তরসূরি হতে পারবেন গঞ্জালো গুয়েডস? ২১ বছর বয়সী এই উইঙ্গারের মাঝে সেই সম্ভাবনা দেখছেন ফুটবলবোদ্ধারা। রাশিয়া বিশ্বকাপে এই প্রশ্নের উত্তর মিলতে পারে। খেলার ধরন ও ক্ষিপ্রতায় সম্ভাবনাময় এক ফুটবলার গুয়েডস। গত বছরের জানুয়ারিতে শৈশবের ক্লাব বেনফিকা থেকে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ে (পিএসজি) যোগ দেন তিনি। পরে ধারের চুক্তিতে ভ্যালেন্সিয়ায় নাম লেখান। স্পেনে এই মৌসুমটা দারুণ কেটেছে। ভ্যালেন্সিয়ার হয়ে লা লিগায় ৩৩ ম্যাচ খেলেন গুয়েডস। পর্তুগাল দলে তার অভিষেক ২০১৫ সালে। সাতটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে একটি গোল করেছেন। গ্রুপপর্বে ২০১৬ ইউয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিনশিপ (ইউরো) জয়ীদের সঙ্গে স্পেন, ইরান ও মরক্কো।
ইউরি তিয়েলেমান্স (বেলজিয়াম)
এই মৌসুমে পিএসজির কাছে উঠতি ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পেকে হারিয়েছে মোনাকো। কিন্তু বেলজিয়ান ক্লাব আন্ডারলেখট থেকে ২৫ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে প্রতিভাবান মিডফিল্ডার ইউরি তিয়েলেমান্সকে দলে ভিড়িয়েছে ফ্রান্সের ক্লাবটি। বেলজিয়ামের অন্যতম সম্ভাবনাময় ফুটবলার ২১ বছর বয়সী তিয়েলেমান্স। আন্ডারলেখটের জার্সিতে চার মৌসুমে খেলেছেন ১৮৫ ম্যাচ। ৩৫ গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে আরো ৩১টি গোল করিয়েছেন প্রতিশ্রুতিশীল এই প্লে-মেকার। মোনাকোতে প্রথম মৌসুমে সব মিলিয়ে ৩২ ম্যাচে মাঠে নামেন। বেলজিয়ামের পরবর্তী উজ্জ্বল তারকা হতে যাচ্ছেন তিয়েলেমান্স। স্বদেশী আইকন এডেন হ্যাজার্ড ও কেভিন ডি ব্রুইনার সঙ্গে রাশিয়া মাতানোর অপেক্ষায় প্রতিভাবান এই মিডফিল্ডার। ২০১৬ সালে জাতীয় দলে অভিষেকের পর সাত ম্যাচ খেলেছেন তিয়েলেমান্স। গোল পাননি এখনো। ‘জি’ গ্রুপে ইংল্যান্ড, পানামা ও তিউনিসিয়ার সঙ্গী তারকাসমৃদ্ধ বেলজিয়াম।
রদ্রিগো বেন্তাকুর (উরুগুয়ে)
২০১৫ সালে জুভেন্টাস থেকে শৈশবের ক্লাব বোকা জুনিয়র্সে পাড়ি জমান কার্লোস তেভেজ। ওই চুক্তির সময় উঠতি উরুগুইয়ান মিডফিল্ডার রদ্রিগো বেন্তাকুরকে নিশ্চিত করে ইতালিয়ান চাম্পিয়নরা। গত বছর জুভেন্টাসে যোগ দেন সম্ভাবনাময় এই মিডফিল্ডার। দুই পায়েই খেলতে পারেন বেন্তাকুর। কৌশলী ও দারুণ সব পাস দিতে সক্ষম ২০ বছর বয়সী এই প্লে-মেকার। জুভিদের হয়ে প্রথম মৌসুমে ২৭ ম্যাচে মাঠে নামেন বেন্তাকুর। তার পারফরম্যান্স নজর কেড়েছে উরুগুয়ে কোচ অস্কার তারারেজকে। গত বছর উরুগুয়ে দলে অভিষেকের পর ৬ ম্যাচে এখনো গোলের দেখা পাননি বেন্তাকুর। বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেয়ে এবার তার নিজেকে মেলে ধরার চ্যালেঞ্জ। ‘এ’ গ্রুপে রাশিয়া, সৌদি আরব ও মিশরকে পেয়েছে সুয়ারেজ-কাভানিদের উরুগুয়ে।
ডেভিনসন সানচেজ (কলম্বিয়া)
হামেস রদ্রিগেজ, রাদামেল ফ্যালকাওদের নিয়ে গড়া কলম্বিয়ার আক্রমণভাগে দৃষ্টি থাকবে সবার। বিশ্বকাপে তাদের রক্ষণভাগও আসতে পারে আলোচনায়। এর কারণ ডেভিনসন সানচেজ। আয়াক্স থেকে টটেনহ্যামে যোগ দিয়ে চমৎকার একটি মৌসুম কাটিয়েছেন ২১ বছর বয়সী এই সেন্টারব্যাক। ডিফেন্সে দারুণ দক্ষতায় নজর কাড়েন উদীয়মান এই ডিফেন্ডার। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে তার ৩১ ম্যাচের উপস্থিতি সেটিই প্রমাণ করে। কলম্বিয়া দলে ২০১৬ সালে অভিষেকের পর ৮ ম্যাচ খেলেছেন সানচেজ। ‘এইচ’ গ্রুপপর্বে কলম্বিয়ার প্রতিপক্ষ পোল্যান্ড, জাপান ও সেনেগাল।
ক্রিস্টিয়ান কুয়েভা (পেরু)
ডোপিং নিষেধাজ্ঞার কারণে অধিনায়ক পাউলো গুরোরোকে ছাড়াই বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে পেরু। দীর্ঘ ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপের টিকিট কাটে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি। দলটির সম্ভাবনাময় তারকা দারুণ ফর্মে থাকা অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ক্রিস্টিয়ান কুয়েভা। চমৎকার ড্রিবলিংয়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ ব্যতিব্যস্ত করে রাখতে পারেন এই প্রতিশ্রুতিশীল প্লে-মেকার। ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সাও পাওলোতে খেলেন ২৬ বছর বয়সী কুয়েভা। ২০১১ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হয় তার। পেরুর জার্সিতে ৪১ ম্যাচে গোল সাতটি। গ্রুপ পর্বে পেরুর সামনে অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক ও ফ্রান্স।
১৩. হারভিং লোজানো (মেক্সিকো)
পিএসভি আইনদোফেন সমর্থকরা কখনোই নবাগত কোনো খেলোয়াড়ের এমন দুর্দান্ত শুরু দেখেননি। এমনকি রোমারিও, রোনালদো, রুড ফন নিস্টলরয়ও হারভিং লোজানোর মতো পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি। পিএসভির হয়ে ডাচ্ লীগে প্রথম ১১ ম্যাচে ১০ গোল করেন তিনি। ২২ বছর বয়সী লোজানো জাত স্ট্রাইকারও নন। এই মৌসুমে মেক্সিকান ক্লাব পাচুয়া থেকে নেদারল্যান্ডসে আসেন লোজানো। মৌসুমে ৩৪ ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠান ১৯ বার। উইঙ্গার হিসেবে মেক্সিকো দলে দ্রুতই মানিয়ে নিয়েছেন প্রতিশ্রুতিশীল এই ফুটবলার। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে চার গোল করেন লোজানো। ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর ২৫ ম্যাচে তার নামের পাশে ৭ গোল। প্রতিভা ও আত্মবিশ্বাস পুঁজি করে আইডল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে অনুকরণ করেন লোজানো। মেক্সিকোর রাশিয়া বিশ্বকাপ যাত্রায় দারুণ প্রভাব রাখতে পারেন তিনি। ‘এফ’ গ্রুপে মেক্সিকানদের সামনে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া ও সুইডেনের বিপক্ষে।
জোয়েল ক্যাম্পবেল (কোস্টারিকা)
আর্সেনাল থেকে এরই মধ্যে ছয় ক্লাবে ধারে খেলে নিজেকে পরিণত করেছেন জোয়েল ক্যাম্পবেল। সমশেষ এই মৌসুমে তাকে দেখা গেছে স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল বেটিসে। এবার ধারাবাহিক পারফরম্যান্স প্রমাণের বড় মঞ্চ হিসেবে পেয়েছেন বিশ্বকাপকে। অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের গুরুত্ব দিয়ে গড়া কোস্টারিকা দলে জায়গা করে নেন ২৫ বছর বয়সী ক্যাম্পবেল। প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারেন প্রতিশ্রুতিশীল এই উইঙ্গার। ২০১৪ বিশ্বকাপে কোস্টারিকা দলে ছিলেন ক্যাম্পবেল। ২০১১ সালে জাতীয় দলে অভিষেকের পর ৭০ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন তিনি। গোল ১৪টি। কোস্টারিকার আক্রমণভাগে অধিনায়ক ব্রায়ান রুইজের যোগ্য সঙ্গী হতে পারেন ক্যাম্পবেল। গত আসরের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা কোস্টারিকার গ্রুপে পড়েছে ব্রাজিল, সার্বিয়া ও সুইজারল্যান্ড।
সন হিউং মিন (দক্ষিণ কোরিয়া)
এশিয়ার পরাশক্তি দক্ষিণ কোরিয়া দলের অন্যতম সেরা তারকা ২৫ বছর বয়সী সন হিউং মিন। বিশ্বকাপে নজর কাড়তে পারেন প্রতিশ্রুতিশীল এই উইঙ্গার। ইংলিশ ক্লাব টটেনহ্যামে দারুণ উন্নতি করেছেন সন। জার্মানির বায়ার লেভারকুজেন ছেড়ে তিন মৌসুম ধরে খেলছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রিমিয়ার লীগে। টটেনহ্যামের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সন। প্রিমিয়ার লীগের এই মৌসুমে ৩৭ ম্যাচে উপস্থিতি সেটিই প্রমাণ করে। আসরে গোল করেছেন ১২টি। সনের আন্তর্জাতিক অভিষেক ২০১০ সালে। জাতীয় দলের জার্সিতে ৬৩ ম্যাচে ২০ গোল করেন তিনি। গত বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেয় দক্ষিণ কোরিয়া। ফিফা’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে এবার আরো ভালো পারফরম্যান্সের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সন। গ্রুপপর্বে জার্মানি, মেক্সিকো ও সুইডেনকে সামলাবে এশিয়ান টাইগাররা।
ইয়োসুকে ইডেগুচি (জাপান)
জাপানের তারকা বলতেই সবার আগে উঠে আসবে কেইসুকে হোন্ডার নাম। বিশ্বকাপ আসরে অভিজ্ঞদের সঙ্গে এবার নজর কাড়তে পারেন ২১ বছর বয়সী সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার ইয়োসুকে ইডেগুচি। এই বছর ইংলিশ ক্লাব লিডস ইউনাইটেডে যোগ দেয়ার পর ধারের চুক্তিতে নাম লেখান দ্বিতীয় সারির স্প্যানিশ ক্লাব লিওনেসায়। ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় ইয়োসুকের। ১১ ম্যাচে জাপানের জার্সি গায়ে জড়ান তিনি। গোল করেন দুইটি। গ্রুপপর্বে পোল্যান্ড, কলম্বিয়া ও সেনেগালকে পেয়েছে সামুরাই ব্লু’রা।
জ্যাকসন আরভাইন (অস্ট্রেলিয়া)
অস্ট্রেলিয়ার চূড়ান্ত দলে সেন্টারব্যাক বেইলি রাইটের সুযোগ না পাওয়া অবাক করেছে অনেককে। গত বিশ্বকাপের দলে ছিলেন তিনি। ২৩টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন বিস্টল সিটির ২৫ বছর বয়সী ডিফেন্ডার। সকারুদের হয়ে মাঝমাঠে আলো ছড়াতে পারেন বেইলির সমবয়সী জ্যাকসন আরভাইন। ইংলিশ ক্লাব হাল সিটিতে খেলা এই মিডফিল্ডারের আন্তর্জাতিক অভিষেক পাঁচ বছর আগে। অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে ১৭ ম্যাচে দুই গোল করেন তিনি। প্লে-মেকার হিসেবে অধিনায়ক মিলে জেদিনাক, মার্ক মিলিগ্যান, অ্যারন মুইদের সঙ্গে নজর কাড়তে পারেন ইরভাইন। ‘সি’ গ্রুপে ফ্রান্স, ডেনমার্ক ও পেরুর সঙ্গী অস্ট্রেলিয়া।
রামাদান সোবহি (মিশর)
এই মৌসুমে লিভারপুলের হয়ে ইউরোপ মাতিয়েছেন মোহাম্মদ সালাহ। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে স্টোক সিটিতে খেলছেন সালাহরই স্বদেশী উইঙ্গার রামাদান সোবহি। ২১ বছর বয়সী সোবহিকে উত্তর আফ্রিকার সেরা প্রতিভা আখ্যা দেন মিশরের সাবেক তারকা স্ট্রাইকার মিডো। খেলোয়াড়ী জীবনে মিডো নিজেও খেলেছেন টটেনহ্যামে। স্পার্সদের হয়ে দুই মৌসুমে ৪৬ ম্যাচে মাঠে নামেন সোবহি। ২০১৫ সালে মিশর দলে অভিষেক হয় তার। এরই মধ্যে ২০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। সোবহির সামনে নিজেকে চেনানোর বড় মঞ্চ হিসেবে অপেক্ষা করছে বিশ্বকাপ। ‘এ’ গ্রুপে মিশরের প্রতিপক্ষ রাশিয়া, সৌদি আরব ও উরুগুয়ের বিপক্ষে।
উইলফ্রেড এনদিদি (নাইজেরিয়া)
নাইজেরিয়ার সম্ভাবনাময় মিডফিল্ডার ২১ বছর বয়সী উইলফ্রেড এনদিদি। ২০১৫-১৬ মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়ার পর চেলসির কাছে এনগোলো কান্তেকে হারায় লেস্টার সিটি। পরে টানা দুইবার প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা জেতেন কান্তে। ফ্রেঞ্চ মিডফিল্ডারের উত্তরসূরি হিসেবে বেলজিয়ান ক্লাব জেঙ্ক থেকে এনগিদিকে দলে ভেড়ায় লেস্টার। ২০১৬-১৭ অর্ধেক মৌসুমে খেলেন ১৭ ম্যাচ খেলে নিজের সামর্থ্যরে জানান দেন এনদিদি। এই মৌসুমে ৩৩ ম্যাচে উপস্থিতিই তাই প্রমাণ করে। ২০১৫ সালে নাইজেরিয়া দলে অভিষেক হয় এনদিদির। ‘সুপার ইগল’দের হয়ে এরই মধ্যে ১৬ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন এই তরুণ প্লে-মেকার। এনদিদির পাশাপাশি নাইজেরিয়া দলের আরেক উঠতি খেলোয়াড় অ্যালেক্স আইওবি। ইংলিশ ক্লাব আর্সেনালে খেলেন ২২ বছর বয়সী এই উইঙ্গার। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর গোল পেয়েছেন চারটি। গ্রুপপর্বে নাইজেরিয়ার সামনে আর্জেন্টিনা, ক্রোয়েশিয়া ও আইসল্যান্ড।
কেইতা বালদে (সেনেগাল)
২০০২ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে চমকে দিয়েছিল নবাগত সেনেগাল। তিন আসর পর আবারো বিশ্বকাপে নামছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশটি। সেনেগালের সবচেয়ে বড় তারকা লিভারপুলের সাদিও মানে। আক্রমণভাগে মানের যোগ্য সঙ্গী হতে পারেন কেইতা বালদে। বার্সেলোনার একাডেমি থেকে উঠে আসেন সম্ভাবনাময় এই ফরোয়ার্ড। এই মৌসুমে মোনাকোতে নাম লেখানোর আগে ল্যাজিওতে ছিলেন চার বছর। ইতালিয়ান ক্লাবটির হয়ে পেশাদার ক্যারিয়ারে পা রাখা বালদে ১৩৭ ম্যাচে করেন ৩১ গোল। মোনাকোতে ৩৩ ম্যাচে ৮ গোলের পারফরম্যান্স ভুলে থাকতে চাইবেন। ২৩ বছর বয়সী বালদের নিজেকে চেনানোর বড় মঞ্চ হতে পারে বিশ্বকাপ। গ্রুপে কলম্বিয়া, জাপান ও পোল্যান্ডের প্রতিপক্ষ সেনেগাল।
ফাহাদ আল মুয়াল্লাদ (সৌদি আরব)
বার্সেলোনার মতো ক্লাবের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় এমন ফুটবলার খুব কমই আছে। শৈশবে সেই কাজটিই করেছেন ফাহাদ আল মুয়াল্লাদ। মাত্র ৬ বছর বয়সে বার্সার একাডেমি ‘লা মেসিয়া’য় যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল তার। কিন্তু দেশের মায়া ছাড়তে পারেননি। যোগ দেন সৌদি আরবের ক্লাব আল ইত্তিহাদে। এই ক্লাবটিতেই মুয়াল্লাদির ফুটবলের হাতেখড়ি। সিনিয়র দলে অভিষেকের পর ১১৭ ম্যাচে ১৭ গোল করেন প্রতিভাবান এই উইঙ্গার। তার গতি দেখে অবাক হয়ে যেতে পারেন অনেকে। তাইতো বার্সার চোখে পড়েছিলেন। বিশ্বকাপ সামনে রেখে আরো অভিজ্ঞ হতে সম্প্রতি ধারের চুক্তিতে স্পেনের ক্লাব লেভান্তেতে যোগ দেন ২৩ বছর বয়সী মুয়াল্লাদ। বিশ্বকাপ মঞ্চে মুয়াল্লাদির ঝলক দেখতে তৈরি থাকুন। ৬ বছর আগে তার জাতীয় দলে অভিষেক হয়। সৌদি আরবের জার্সিতে ৪২ ম্যাচে ১০ গোল করেন মুয়াল্লাদ। গ্রুপপর্বে সৌদির প্রতিপক্ষ রাশিয়া, উরুগুয়ে ও মিশর।
আলিরেজা জাহানবখশ (ইরান)
পর্তুগিজ কোচ কার্লোস কুইরোজের অধীনে শক্ত ডিফেন্স গড়েছে ইরান। কিন্তু আক্রমণভাগেও তাদের সম্ভাবনাময় দুই ফরোয়ার্ড রয়েছে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে দলের নির্ভরযোগ্য গোলদাতা হয়ে ওঠেন ২৩ বছর বয়সী সরদার আজমাউন। কিন্তু রুবিন কাজানে এই মৌসুমটা ভালো যায়নি তার। ২৮ ম্যাচে করেন মাত্র পাঁচ গোল। অন্যদিকে আজমাউনের সতীর্থ আলিরেজা জাহানবখশ নেদারল্যান্ডস মাতাচ্ছেন। এজে আলকমারের হয়ে ৩৯ ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠিয়েছেন ২২ বার। ২০১৪ বিশ্বকাপে ইরান দলে ছিলেন ২৪ বছর বয়সী আলিরেজা। এবার তার সামনে নিজেকে মেলে ধরার চ্যালেঞ্জ। জাতীয় দলের হয়ে ৩৬ ম্যাচে গোল চারটি। ৩১ ম্যাচে ২৩ গোল করেছেন আজমাউন। গ্রুপপর্বে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে ইরানকে। ‘বি’ গ্রুপে তাদের সামনে স্পেন, পর্তুগাল ও মরক্কো।
আমিনি হারিত (মরক্কো)
গত বছরের নভেম্বরে বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে ৪-০ গোলে পিছিয়ে থেকে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনে সমতায় ফেরে শালকে। ম্যাচটিতে বদলি হিসেবে নেমে মাঝমাঠে দারুণ প্রভাব বিস্তার করেন শালকের আমিনি হারিত। দ্বিতীয় গোল পরিশোধ করেন তিনি। মরক্কোর সম্ভাবনাময় এক মিডফিল্ডার হারিত। বয়স মাত্র ২০। গত বছর তার আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়। শৈশবের ফ্রেঞ্চ ক্লাব নান্তে ছেড়ে শালকেতে প্রথম মৌসুমেই নিজের জাত চিনিয়েছেন হারিত। বুন্দেসলিগায় ২৯ ম্যাচে উপস্থিতি সেটিই প্রমাণ করে। বিশ্বকাপে মরক্কোর অন্যতম উজ্জ্বল তারকা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন হারিত। উত্তর আফ্রিকার দেশটির সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। গ্রুপপর্বের বাধা পেরোতে মরক্কোর চ্যালেঞ্জ স্পেন, পর্তুগাল ও ইরান।
নাঈম স্লিতি (তিউনিসিয়া)
ইনজুরির কারণে তারকা উইঙ্গার ইউসুফ মাসাকনিকে ছাড়াই বিশ্বকাপে নামছে তিউনিসিয়া। দলের উদীয়মান খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম নাঈম স্লিতি। গত বছর ফ্রেঞ্চ ক্লাব লিলে থেকে ধারের চুক্তিতে ডিজনে নাম লেখান তিনি। প্রতিভার ঝলক দেখিয়েই বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নেন প্রতিশ্রুতিশীল এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। ড্রিবলিং নৈপুণ্যে মাঝমাঠে প্রতিপক্ষের ওপর চাপ তৈরি করতে পারেন ২৫ বছর বয়সী স্লিতি। রাশিয়ায় উজ্জ্বল পারফরম্যান্স দেখাতে পারলে ইউরোপের বড় ক্লাবের দরজা খুলে যেতে পারে। ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর এরই মধ্যে ১৬ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন স্লিতি। গোল করেন তিনটি। গ্রুপপর্বে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়ার সামনে ইংল্যান্ড ও বেলজিয়ামের মতো পরাশক্তি। ‘জি’ গ্রুপের অপর দল পানামা।
আন্দ্রেই ক্রামারিচ (ক্রোয়েশিয়া)
লেস্টার সিটির ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ জয়ের মৌসুমের (২০১৫-১৬) শুরুতে হফেনহাইমে ধারে খেলতে যান আন্দ্রেই ক্রামারিচ। মৌসুম শেষে তা স্থায়ী চুক্তিতে রূপ নেয়। বুন্দেসলিগায় নিজেকে মেলে ধরেন ২৬ বছর বয়সী এই ক্রোয়েশিয়ান ফরোয়ার্ড। হফেনহাইমের হয়ে গত দুই সিজনে লীগের সব ম্যাচ খেলেন ক্রামারিক। ৬৮ ম্যাচে গোল করেন ২৮টি। বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার আক্রমণভাগে গতির সঞ্চার করতে পারেন প্রতিভাবান এই স্ট্রাইকার। চার বছর আগে জাতীয় দলে অভিষেকের পর ২৯ ম্যাচে গোল করেছেন ৮টি। গ্রুপপর্বে মদ্রিচ-রাকিটিচদের ক্রোয়েশিয়ার সামনে আর্জেন্টিনা, আইসল্যান্ড ও নাইজেরিয়া।
ভিক্টর লিনডেলফ (সুইডেন)
গত বছর বেনফিকা থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে নাম লেখান ভিক্টর লিনডেলফ। রেড ডেভিলদের হয়ে প্রিমিয়ার লীগ মৌসুমে ১৭ ম্যাচ খেলেন প্রতিভাবান এই ডিফেন্ডার। রাশিয়া বিশ্বকাপ দিয়ে আরো আত্মবিশ্বাস নিয়ে ওল্ড ট্রাফোর্ডে ফিরতে পারবেন। সুইডেনের রক্ষণভাগে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন ২৩ বছর বয়সী লিনডেলফ। ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর ১৯ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। একটি গোলও পেয়েছেন। এদিকে জøাতান ইব্রাহিমোভিচবিহীন সুইডেনের আক্রমণভাগে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন এমিল ফোর্সবার্গ। জার্মান ক্লাব লিপজিগে খেলা ২৬ বছর বয়সী এই উইঙ্গারের আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছে চার বছর আগে। সুইডেনের জার্সিতে ৩৪ ম্যাচে ৬ গোল করেন ফোর্সবার্গ। গ্রুপপর্বে সুইডিশদের প্রতিপক্ষ জার্মানি, মেক্সিকো ও দক্ষিণ কোরিয়া।
ক্যারল লিনেটি (পোল্যান্ড)
রাশিয়া বিশ্বকাপের ‘ডার্ক হর্স’ হতে পারে পোল্যান্ড। বায়ার্ন মিউনিখ তারকা রবার্ট লেভানদস্কির নেতৃত্বে অভিজ্ঞ ও তরুণদের নিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ দল গড়েছেন কোচ অ্যাডাম নাওয়ালকা। মাঝমাঠে আছেন উদীয়মান ক্যারল লিনেটি। পোল্যান্ডে তাকে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার সঙ্গে তুলনা করা হয়। ২০১৬ সালে ইতালিয়ান ক্লাব সাম্পদোরিয়ায় যোগ দেয়ার পর চোখে পড়ার মতো উন্নতি করেছেন ২৩ বছর বয়সী লিনেটি। গত দুই মৌসুমে ৬৪ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবেও বেশ কার্যকরী লিনেটি। চার বছর আগে জাতীয় দলে অভিষেকের পর থেকে ১৯ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। বিশ্বকাপে নাওয়ালকার অন্যতম হাতিয়ার হতে পারেন সম্ভাবনাময় এই মিডফিল্ডার। গ্রুপপর্বে পোল্যান্ডের প্রতিপক্ষ কলম্বিয়া, জাপান ও সেনেগাল।
ব্রিল এমবোলো (সুইজারল্যান্ড)
২০১৬ সালে শালকেতে নাম লেখানোর আগে বাসেলে সামর্থ্যরে জানান দেন ব্রিল এমবোলো। বিশ্বকাপ দিয়ে আরো বিকশিত হতে পারেন সুইজারল্যান্ডের ক্যামেরুন বংশোদ্ভূত ফরোয়ার্ড। বাসেলের জার্সিতে তিন মৌসুমে ৯১ ম্যাচে ৩১ গোল করেন এমবোলো। সাম্প্রতিক বছরে এমবোলোর ওপর দিয়ে ইনজুরির ধকল গেছে। বুন্দেসলিগায় শালকের হয়ে গত দুই মৌসুমে ৩৩ ম্যাচে করেন ৬ গোল। বয়সে তরুণ হওয়ায় সুইসদের আক্রমণভাগে গতি সঞ্চার করতে পারেন ২১ বছর বয়সী এমবোলো। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর সুইজারল্যান্ডের হয়ে ২৩ ম্যাচে গোল তিনটি। গ্রুপপর্বে ব্রাজিল, কোস্টারিকা ও সার্বিয়ার সঙ্গী সুইজারল্যান্ড।
ক্যাসপার ডোলবার্গ (ডেনমার্ক)
ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে উদীয়মান ফরোয়ার্ডদের একজন ক্যাসপার ডোলবার্গ। মৌসুম শেষে প্রিমিয়ার লীগের বেশকিছু ক্লাব তার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। ডেনমার্কের হয়ে বিশ্বকাপে উজ্জ্বল পারফরম্যান্স দেখাতে পারেন ২০ বছর বয়সী ডোলবার্গ। আয়াক্সের জার্সিতে গত দুই মৌসুমে ৭৭ ম্যাচে ৩২ গোল করেন তিনি। ২০১৬-১৭ মৌসুমে আয়াক্সকে ইউয়েফা ইউরোপা লীগের ফাইনালে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন ডোলবার্গ। ২০১৬ সালে তার জাতীয় দলে অভিষেক হয়। চারটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে গোল একটি। গ্রুপে ডেনমার্কের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও পেরু।
সারজেজ মিলিনকোভিচ স্যাভিচ (সার্বিয়া)
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে দলে সুযোগ না পাওয়া বিস্ময়ের জন্ম দেয়। গত বছরের অক্টোবরে সার্বিয়ার কোচ বদলের পরই জাতীয় দলে অভিষেক হয় সারজেজ মিলিনকোভিচ স্যাভিচের। ২৩ বছর বয়সী এই প্রতিভাবান মিডফিল্ডার খেলেন ল্যাজিওতে। ইতালির সিরি আ’তে আলো ছড়িয়ে ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোর নজর কেড়েছেন। রাশিয়া বিশ্বকাপে সেই ছাপ রাখতে পারলে স্যাভিচের বাজার দরও বাড়তে পারে। ল্যাজিওর একাদশে নিয়মিত মুখ স্যাভিক। তিন মৌসুমে সব মিলিয়ে ১২২ ম্যাচ খেলেছেন। গোল ২৫টি। গ্রুপপর্বে কঠিন চ্যালেঞ্জে সার্বিয়া। প্রতিপক্ষ ব্রাজিল, সুইজারল্যান্ড ও কোস্টারিকা।
আরনোর ইঙ্গভি ট্রাউসট্যাসন (আইসল্যান্ড)
ইউয়েফা ইউরেপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে (ইউরো) অভিষেকের পর প্রথমবার বিশ্বকাপ মঞ্চে আইসল্যান্ড। দলের অন্যতম প্রতিভাবান খেলোয়াড় আরনোর ইঙ্গভি ট্রাউসট্যাসন। ২০১৬ ইউরোতে আইসল্যান্ডের কোয়ার্টার ফাইনাল যাত্রায় কার্যকরী অবদান রাখেন ২৫ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার। গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে যোগ করা সময়ের জয়সূচক গোলে দলকে নকআউট পর্বে তোলেন ট্রাউসট্যাসন। রাশিয়া বিশ্বকাপেও নজর কাড়তে পারেন প্রতিশ্রুতিশীল এই প্লে-মেকার। এই বছর সুইডিশ ক্লাব মালমোতে যোগ দেন তিনি। ২০১৫ সালে আইসল্যান্ড দলে অভিষেকের পর ১৮ ম্যাচে পাঁচ গোল করেন ট্রাউসট্যাসন। গ্রুপপর্বে নবাগত আইসল্যান্ডের প্রতিপক্ষ গতবারের রানার্সআপ আর্জেন্টিনা, নাইজেরিয়া ও ক্রোয়েশিয়া।
মাইকেল মুরিলো (পানামা)
প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলছে মধ্য আমেরিকার দেশ পানামা। দলে চোখে পড়ার মতো তরুণ খেলোয়াড় কম। রাইটব্যাক পজিশন থেকে আক্রমণে উঠে আলো ছড়াতে পারেন মাইকেল আমির মুরিলো। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক রেড বুলস ক্লাবে খেলেন ২২ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডার। ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর পানামার হয়ে ২১টি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন উদীয়মান এই রাইটব্যাক। দুইটি গোলও করেছেন। গ্রুপপর্বে পানামার পরীক্ষা ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম ও তিউনিসিয়া। ত
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status