ঈদ আনন্দ ২০১৮

কবিতা

এক গুচ্ছ কবিতা

৩০ জুন ২০১৮, শনিবার, ৫:৫৯ পূর্বাহ্ন

মরমিয়া বাঁশি
হাসান হাফিজ

কথা জমে আছে, জমতে জমতে পাহাড়প্রতিম
অকথিত থেকে গেল বহু কথা, এরকমই থাকার নিয়ম?
একবুক কথা নিয়ে, যেসব হলো না বলা, অভিমানে বিরাগবশত
সেইসব কথাপুঞ্জ না বলাই রয়ে যাচ্ছে অঙ্কুরিত হতে পারলো কই
                      ক্রমেই জোরালো হচ্ছে প্রস্থানের বাঁশি
                      অদৃশ্য যে বাঁশিঅলা তার ছবি মানুষ চেনে না
                      জানা নাই সে দূতের মোকাম সাকিন...
ওই বাঁশি ভয়ঙ্কর দানবীয় এবং অমোঘ
                       সেই তথ্য মানুষের জানা আছে, তারপরও
                       ভুলতে চাওয়া, অর্থহীন লুকোচুরি খেলা
                       মানুষ সত্যিই জানে,
                       জানলেও ভুলে থাকে,
                               ভুলে থাকতে ভালোবাসে
                                 ইচ্ছাকৃত সজ্ঞানে স্পর্ধায়
এরকম ধ্রুবসত্যে উপনীত হওয়া সমীচীন, দোষ কিছু নাই
এ মূর্খতা একমাত্র মানুষের পক্ষেই মানায়
                    মানুষেরা এত নিচু বেপথু বেকুব?
একইসঙ্গে অসহায় বিদীর্ণ কাঙালও বটে!
শুনতে পাচ্ছো বাঁশির নিস্তব্ধ গান? ভোগে মোহে
নিমজ্জিত চরাচর সম্মোহিত করেছে নিখুঁত,
তোমাদের মরমে কী পশেছে জোছনাতুল্য সেই মন্দ্র লয়ের সংগীত
               কান পাতো, ভিতরের মর্ম মেলে ধরো,
ধৈর্যচ্যুত নৈরাশায় হালছাড়া সন্ত্রস্ত হয়ো না...

নাগরিক চাঁদ
আলমগীর রেজা চৌধুরী

আইল্যান্ডে দাঁড়িয়ে আকাশে তাকিয়ে খিস্তি-খেউর করে
যে নগর কুতুব। সে ছিল না। মধ্য রাতে সরণিজুড়ে হাহাকার।
খেজুর বাগানে নিঃস্তব্ধতা। আড়ঙের মোড় অবধি নিঃসঙ্গ
এতিম সরণি। ফ্লোরোসেন্ট আলোয় কুয়াশার হালকা প্রলেপ,
মথ-মচ্ছব। পাতা ঝরার মৌসুম চলছে। না! কোনো ছিনতাইকারী
নেই। এ সময় ওরা থাকে না। সংবাদকর্মী, অ্যাম্বুলেন্স, পুলিশের
জরুরি গাড়ি, কদাচিৎ কর্কশ চিৎকারে ছুটে যায়। লুই কানের
স্থাপত্য যেন পাথর বাড়ি। আর রাস্তার ওপাশে যারা বাস করে
 তারা আইনের  লোক।
রাষ্ট্রের ঘুমন্ত পাহারাদার।
ফুটপাতের কোনায় দাঁড়িয়ে মনে পড়ে, ওখানটায়
রিনিকে নিয়ে প্রথম বসেছিলাম। আর এ সময় নজরে
আসে ওপাশের পাম গাছের মাথায় ঝুলে আছে-
    আধভাঙ্গা নাগরিক চাঁদ।

যদি ঘৃণায় ফিরিয়ে নাও মুখ
রোকন জহুর

মিথ্যের সাথে ঘর করা যায় না যেনেও
স্বপ্ন দেখি বাঁচবার
কোন আলোয় পৃথিবীর এতো সুখ
        দুচোখ ভরে যায় জলে...

তোমার চোখের দিকেও তাকাতে পারি না
স্বচ্ছ বিশ্বাস নিয়ে- মনে হয় কঠিন অন্ধকারের দিকে
        অবলীলায় হেঁটে যাই-
            অসীম থেকে অনন্তে...

আমাকে ধরে দেখ- পুড়ে যেতে পার ক্ষণিকেই
ঠোঁটের ফাঁকে যে হাসি লেগে থাকে সারাক্ষণ
        মুহূর্তেই বিলীন হতে পারে
ঘৃণায় ফিরেও তাকাবে না হয়ত কোন দিন
বলবার কিছু নেই জেনেও
            ফিরে আসি একই রেখায়...

তোমাতে বিলিন হওয়ার সাধ ছিল
বহুকালের পুরনো-
যেভাবে আদম- হাওয়া মিশে ছিল কোনো পর্বতে
     সেই প্রতীক্ষা থেকে শিক্ষা নিয়েছি-
প্রস্তুত আছি- অনন্ত আরাধনায়...


কষ্ট পোড়াতে পারিনি কোনো দিন
শুধু চেয়ে চেয়ে মনে রেখেছি-
         দেখা হতে পারে কোন অজানায়...



স্থায়ী প্রতিনিধি
তপন বাগচী

এখনো ডোবেনি বেলা, আলোহীন চাঁদ তবু জাগে,
ঢেউয়ের ফণারা কাঁপে তিরতির, গাঢ় অনুরাগে।।
রোদের ঝিলিক নেই, ম্রিয়মাণ উত্তাপের দাহ
ম্লান মূক চারদিকে কনে দেখা আলোর প্রবাহ।।
জলের বিশাল বক্ষে ডিঙি নায়ে হয়েছি সওয়ার,
তুমি-আমি মধ্যখানে, সাক্ষী অই নদীর কিনার।
সংযোগের সেতু  দেখো দাঁড়িয়েছে ঊর্ধ্বে তুলে গ্রীবা
আমরা  মিলিত হবো ভেদ নেই- রাত্রি কিবা দিবা!

অনন্তর হাতে ধরে পার হবো অভয় বারিধি
তুমি শুধু পাশে থেকো হৃদয়ের স্থায়ী প্রতিনিধি।


আলোকিত আশ্লেষ
হায়াৎ সাইফ

কোন কোন মানুষের প্রেম বিপন্ন করে,
আত্মপরিজন  সংসার সংবদ্ধ থাকে না।
কোন কোন মানুষের প্রেম হাহাকার করে
নিসর্গে ও জনপদে,
জীবনকে সংহতি দ্যায় না।

কোন কোন মানুষের প্রেম বিনষ্ট করে,
প্রেতায়িত চেতনায় টেনে আনে শব
গলিতগন্ধ অন্ধকারে হানা দ্যায়
লক্ষ লক্ষ বৃশ্চিকের দল,
গহীন অরণ্য থেকে বীভৎস চিৎকার করে
একপাল মাতাল হায়েনা,
সুস্থির সন্নিকট থাকে না।

কোন কোন মানুষের প্রেম প্রচণ্ড নখরে
বারংবার বিক্ষত করে নিজের শরীর,
পণ্য হয়ে পসরা সাজায়,
বেপথু বাতাস উড়ে যায়;
স্থায়িত্ব থাকে না।

কোন কোন মানুষের প্রেম ক্রুদ্ধ করে,
কোনো কোনো মানুষের প্রেম প্রবুদ্ধ করে,
দু’টি আড়াআড়ি কাঠে দেহময় উড়িয়ে দ্যায়
ক্ষমা-সুন্দর বিজয় পতাকা
এবং ঝলকিত সম্ভাবনার কথা ব’লে চলে যায়;
তবু আমাদের আলোকিত আশ্লেষ থাকে না।

প্রার্থনায় নত হই
আরিফ মঈনুদ্দীন

কৌতূহল-নকশায় আঁকা মানুষের মনে
কেমন করে জ্বালিয়ে দিয়েছিলে স্বপ্নের চেরাগ
হৃদয়ের ভূখণ্ড বানিয়ে তাকে তুমি সাজালে আগে
অনুভূতি আর ভালোবাসা দিয়ে
স্নেহে শ্রদ্ধায় কোমলে কঠিনে জয়ের নেশায় জাগালে এবং দাগালে
    আরও এক পোঁচ
হাল ধরে বসে আছো
যতবার বলি, আমি পারি, আমি করবো
ততবার শক্তির আকরে তুমি ঢেলে দাও সুধা
পোষ মানিয়েছি পাহাড়-পর্বত, সমুদ্রের জল,
পোষ মানিয়েছি অরণ্য ঘন জঙ্গল, মরুভূমি কঠিন প্রকৃত
বিশ্বাসের পায়ে চুমু খেয়ে আমি যতবার সম্মুখে এগিয়ে যাই
তোমার হাতের আলোকবর্তিকা পথ দেখায় আমাকে
ক্রোধান্বিত সমুদ্রও হাল ছেড়ে দিয়ে
তোমার অঙ্গুলি ইশারায় বাধ্য বালকের মতো অবনত মস্তকে দাঁড়িয়ে থাকে।

ক্রুদ্ধ ঢেউ শান্ত হলে তীরে গিয়ে এলিয়ে দেয় তাতানো শরীর, আমিও
মমতার চাদরের নিচে জাপটে ধরে একাগ্রতার বুলিতে প্রার্থনায় নত হই-
আর কত মমতায় ভরাবে জীবন,
আর কত ভালোবাসায় ভেজাবে জীবন, তোমার অপার করুণা আর
মহিমার যেন যোগ্য হই-
আরও নিতে আরও দিতে-দিতে দিতে...


ঠিক যখনই
মোশাররফ হোসেন ভূঞা

ঠিক যখনই-
তোমার আকাশ ছুঁয়ে দিতে উড়ে চলি
ঠিক  তখনই-
মেঘ বালাদের মধ্যখানে লুকিয়ে বেড়াও
ঠিক  তখনই-
একটু আদর চেয়ে চেয়ে হাতটি বাড়াই
ঠিক  তখনই-
আর বাতাসের স্পর্শে তুমি শরীর সাজাও
ঠিক  তখনই-
উড়ে উড়ে তোমার বুকের গন্ধ শুঁকি
ঠিক  তখনই-
দূর বনানীর ভিন্ন গাছে বাকল লাগাও
ঠিক  তখনই-
তোমার ছায়ায় মাথা রেখে অশ্রু ফেলি
ঠিক  তখনই-
কারো চুলে বিলি কেটে স্বপন দেখাও
ঠিক  তখনই-
ঘুড়ি হয়ে পাখা মেলি ওড়ার আশায়
ঠিক  তখনই-
পিঠে বসে নতুন প্রেমের প্রাসাদ সাজাও
ঠিক  তখনই-
কাছে পেয়ে দীঘল আমার দু’হাত বাড়াই
ঠিক  তখনই-
ক্রুদ্ধ হয়ে দু’টি চোখে আগুন জ্বালাও।

ঊঞ্চতার খোঁজে
কামাল উদ্দিন আহমদ

ভীত প্রেম উষ্ণতা খুঁজে
শৃঙ্খল ভাবে
সুবজ ঘাসে ঘাসে শিশির খেলা করে
যমুনার ঘোলা জলে তবু চোখ বুজে।

আশ্বিনের মরা জলে
বাতাসে কাঁপে তার জলের আঁচল
কলকল ছলছল গতায়ু তারে
বিমুষ্য করে তারে কুয়াশায় ঢাকে।

শিউলীরা ঝরে শুধু শিশিরের জলে
কুয়াশায় জড়ানো চোখে
ছায়া-মেঘ ভাসে তার অধর কাঁপে
দিগন্তে মিলে মিশে
আকাশ মাটি কথা বলে।

রাজনীতি
অনিকেত রাজেশ

পরদিন দুপুরে মিছিলের পরিকল্পনা সেরে
মেসে ফেরার পথে ছেলেটি খুন হলো।
পরদিন মিছিল হলো দুপুরের আগেই
যত লোক জড়ো হবে কথা ছিলো
হলো তার চেয়ে বহুগুণ বেশি
আজ সে বেশি লোক নিয়ে আসবে বলেছিল
কথা দিয়েছিল আরো বেশি নিবেদিত হবার।
সেই কথা রেখেছে সে-
মিছিলে যার লোক সবচেয়ে বেশি হবে
সেই হবে আসছে দিনের নেতা
থাকবে সামনে সবার
এরকম কথা ছিল।
আজকে কিন্তু সেটাই হলো
সেই ছেলেটিই আজকে সবার সামনে ছিল।
আজকে মিছিল সফল হল, নানারকম শ্লোগান হল-
প্রতিবাদের, প্রতিরোধের আগুনঝরা শ্লোগান।
লাশের নামে শপথ হলো
রক্ত ছুঁয়ে শপথ হল- রক্ত নেবার, রক্ত দেবার
মাইকে ঘোষিত হল- বাদ আছর জানজা শেষে
কবরে যাবে ছেলেটির লাশ।
পরদিন পত্রিকার পাতায় ছবি হবে
স্বজনের শোকের কোরাস।
কিছু ঘোষনা আসবে- তাই ঘোর নীরবতা
সবাইকে বাহ্‌বা দিলেন সিনিয়র নেতা-
"program  successful
thanks to all".
 


আশাবরি
সাবেদ আল সাদ

মোড়ে মোড়ে শোনো নতুন পুরোনো গল্প
আকাশে ভূতের ত্রুর হাসি
সম্মুখে আতংকিত মানুষ
গল্পের নায়ক ফিরে গেছে বহু দূরে
অনার্য দ্রাবিড়ে,
গল্পের খাতিরে যদি ফিরে, তাও ভালো
যদি না ফেরে তবে কে বা তাকে ফেরাবে?

অঘাটে চৌবাহু ভেলায় বসে আছে কে!
অকাল বেহুলা?
বুকে তার পঞ্চবাণে কাটা
পাঁচ পা সাপের অভিশাপ!
তবুও বুকে তার উন্মাদ আশাবরি

ধুর! ওসব পৌরাণিক গল্পে কাজ ক!
তারচে বরং
লাগাম টেনে ধরো আউলা বাতাসের
এখানে আসো-নতুন মঞ্চে।


শ্যাম দরশনে যাব
মনিরুন নাহার

আমায় সাজিয়ে দে গো
সখি তোরা
আমায় সাজিয়ে দে
আমি শ্যাম দরশনে যাব।

কপালে প্রেম চন্দনের টিপ
ভালোবাসার অঞ্জন মেখে দে
নয়নে- যাব শ্যাম দরশনে
কর্ণে পরিয়ে দে শারদীয়
পঞ্চমীর চাঁদের দুল
গলায় তারার মালা
রংধনুর সাতরঙা চুড়ি
পরিয়ে দে দু’হাতে আমায়
যাব শ্যাম দরশনে।

কাঁঠালচাঁপা ফুলে বিনুনি বেঁধে
শুকতারা করে দে নাকছাবি
চরণে পরিয়ে দে বৃষ্টি নূপুর
সখি অঙ্গে জরিয়ে দে মেঘের আঁচল
অবাঙ মুখে অর্চকী এক
চলেছি- শ্যাম দরশনে।


আমার পৃথিবী জুড়ে মেঘ
শাহাদত হোসেন সুজন

আকাশের বুকে আজ মেঘ নেই
সমস্ত মেঘ জমেছে আমার পৃথিবী জুড়ে
লক্ষ্যহীন প্রেমহীন নীল নগরের বুকে
ভারসাম্যহীন ভাগ্য রেখা আঁকি বুকি খেলে যায়...

স্রোতহীন নদীর বুকে জমেছে খড় কুটো
রঙ্গিলা পালের নায়ে ভাসে না আর সেই জীবন দু’টো
পৃথিবীর সৃষ্টি হতে দেখি চিরচেনা মায়াময়ী সেই মুখ
শররের কাঁপুনি ধরিয়ে দেয় বুক ভরে তোলে অচেনা কোন সুখ...

গভীর অরণ্য অশুভ বাতাসে বিবর্ণ দিগন্ত
ডুবু ডুবু সূর্যের শেষ আভাটুকুও দিনান্তে বিলীন
শুক তারার আশায় ঊর্ধ্ব আকাশে তাকিয়ে থাকি
ঘোর অমানিশা চারিদিকে ঘিরে ধরে অক্টোপাসের মতো...

গন্তব্যহীন লক্ষে সীমাহীন পথের প্রান্তে
ঢিব ঢিব জ্বলে ওঠা সূর্য আবার জেগে উঠবে কী?
শুকনো বৃক্ষে শিকড় থেকে মগডাল
কঁচি পাতায় ছেয়ে যাবে কী?

ভালোবেসে আসবে কি কেউ দু’হাত বাড়িয়ে শেষে
দগ্ধ জীবনের তপ্ত মরুময় পথ জানি না ভিজবে কিসে?



জাদুঘর বিষয়ক
আবদুল হাই শিকদার

আমার ভিতর বিপুল শরম তোমার হাসি ফ্রি,
আমি তখন ফাইভে পড়ি তুমি ক্লাস থ্রি

নাইনে তুমি পাহাড় নদী উপচে পড়ে ঘোর,
সন্ধি সমাস কারক কালে বিপুল ওঠে শোর।
হোসেন আলীর বাঁশবাগানে জোনাকীর ইস্কুলে,
আমরা কি আর আমরা আছি কামড়া ভরি ফুলে।

উদ্বোধনের কাটছি ফিতে আগুন সারা বনে,
আমার চোখে হাজারটা ভোর তুমি অন্য মনে।
দুয়ার ভাঙে ঠাঠা দুপুর, বাজিয়ে দিলো বাঁশি-
তোমার রূপে দগ্ধ লাশের আবার হলো ফাঁসি।

হলদে পাখি উড়াল দিলে হারিয়ে গেলে দূরে
আমি তখন আই. এ পড়ি শহর রংপুরে।

মায়ের চিঠি বাপের তাড়া এই ঈদে আয় বাড়ি,
আমার বুকের দুধ কুমারে ঢেউয়ের আড়াআড়ি,
গ্রীষ্ম গেছে, বর্ষা কাঁদে, এসেছে শীতরা,
ফিরবো কোথায় অস্ত গেছে আমার সুচিত্রা।

কিছুতে আর হয় না কিছু আগুন কিংবা পানি,
ছায়াপথের মায়াপথে বেহুদা প্রাণহানি।
রমনা গ্রীনে জ্বললে আগুন পালাই গিয়ে চিনে,
মারেফতের হাড় হাভাতে টংকা রাখি টিনে।

অর্থবিহীন সামান্য দিন, মিরপুরে গাবতলী-
আমার হৃদয় মর্গে এখন ঢাকার কানাগলি।
তোমার কথা যায় না বলা বুঝবে বা কোন শালা,
বুকের জাদুঘরেই রাখি জীবন ভরা জ্বালা।


ক্ষোভের পরাগ
মনসুর হেলাল

তুমিতো সাগর কন্যা সলিল সোপান
তোমার শরীরে পাই লবণের ঘ্রাণ;
ঊর্র্মিলিত চোখে দেখি সাগরের ফেনা
তবু মেয়ে কেন বলে সাগর চেনেনা!

মৌনতার অন্তরালে ক্ষোভের পরাগ
উচ্ছলিত যৌবনের রাগ-অনুরাগ
ছুঁঁয়ে যায় গ্রহণের একূল-ওকূল
বানবাসি কালিন্দির বিষণ্ন্ন বকুল।

তোমার দেহের ভাঁজে ব্যাকুল সাম্পান
জলে নৃত্য নটবর দোহারে বাথান
নোঙর তুলেছি বুকে বাহুতে সঙিন
রক্ত ঘামে বিবর্জিত কাম ক্রোধে লিন।

সাগর চেনেনা মেয়ে এ দায় কাহার
তবু আমি সমুন্নত অটুট পাহাড়।  


সুখ
রোকেয়া আক্তার

অতিরিক্ত সুখ উপচে পড়ায়
অসুখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
নির্জন একাকী বসে বাসায়
আমায় হাসায়, কাঁদায়, তাড়ায়।
মোহনায় জোসনায় ছলনায় ভুলায়
পাগল নির্লজ্জ বেহায়া সেথায়।
শুনতে হচ্ছে পরন্ত বেলায়
ফোনে কথা বলা পাপ বোলায়।
ভীষণ চাপে আছি যন্ত্রণায়
শুনো বলে যাই অবেলায়।
বাঁচতে চাই সাহিত্য আড্ডায়
কেন বুঝ না সুখ সেথায়।
ভাল আছি কই আলোচনায়
কর্ণপাত নেই কোন কথায়
আছি উদ্ভট এক ঝামেলায়
সুখ-অসুখের পীড়া ছড়ায়
অসুখ নিয়ে থাকবো যাতনায়
সুখ এবার দাও বিদায়।
রাখবো না পিঞ্জর কোঠায়
সুখ জ্বালায় হৃদ মাজায়।


বৃষ্টিহীন জলের ফোটা
মঈনুদ্দিন কাজল

একদিন অঝোর বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম আমরা দু’জন
দিকে দিকে তখনো প্রেমিক পাখিদের কুজন
হৃদয়ে হৃদয়ে রেখে গভীর আকুল দৃষ্টিতে
দুজনার মাঝে আগুন ছিল অনবদ্য সৃষ্টিতে।

মসৃণ পেলব মুখে বৃষ্টি আসে নক্ষত্রের
ভেজা মুখ অপরূপ শরীর গন্ধ চুলের
মুক্তা দানার ফুল তোমার অধরে ফুটেছিল
অধীর আত্মা আমায় পাগল করে তুলেছিল।

কি যে অফুরান ভালোবাসা কি যে অকথিত ভালোবাসা
বৃষ্টির হিমেল বাতাসে উষ্ণতায় আলো আশা
কি যে মায়াবী আদর জানেন শুধু অন্তর্যামী
মগ্নধ্যানে ভেবেছিলাম চিরকাল শুধু তোমার আমি।

ঝড় বৃষ্টির তাণ্ডবে তুমি আমায় জড়িয়ে
শব্দ তরঙ্গ বেড়েছিল হৃদয়ের স্পন্দন ছড়িয়ে
এখন শুধু সময় মাথা রেখে ঘুমাবার
বৃষ্টির হিমেল বাতাস উষ্ণতা তোমার আমার।

সবুজ পাতারা দোলে ঝড় বৃষ্টি বাতাসে
আমারো ছিল রং উন্মুক্ত এই আকাশে
তুমি চলে গেলে এক অলৌকিক দেশে
আরতো এলেনা ফিরে এই বৃষ্টির বেশে।

এখনো জড়িয়ে আছি তোমার কালো কেশে
আজো প্রহর গুনি এখানে কাঙালের বেশে
কোন গহিনে লুকিয়ে গেলে আমার কনে।
বৃষ্টিফুল ফুটেছিল প্রিয়া তোমার আমার বনে

ফুল জোস্না আকাশে ছিল বাংলার মুখ
বৃষ্টি ভেজা এইতো আমি শূন্য আমার বুক
দিনরাত রাশি রাশি গোটা গোটা
এখন ঝরছে চোখে বৃষ্টিহীন জলের ফোটা।


নদীর জলের সুর
শিবুকান্তি দাশ

যাচ্ছি সেদিন নদীর কাছে দেখব বলে নদী
রোদ্র ডেকে বলল এ ভাই সঙ্গে নিতে যদি
ও মা এ কি! তোমায় নেব সঙ্গে করে আমি
বেড়াল ছানার ডাকটা শুনে একটু গেলাম থামি।
তোমায় আমি বন্ধু ভাবি, আমায় ফেলে যাবে?
আমায় ফেলে একা এক কোপ্তা পায়েস খাবে?
এমন সময় শালিক পাখি ডানায় উড়ে এলো
সে ও নাকি সঙ্গে যাবে সব যে এলোমেলো।
পায়ে পায়ে এগিয়ে যেতেই ঘাসফড়িংয়ের দল
বলল হেসে সঙ্গী হলাম ছুটল যেনো জল
বটপাকুরে দাঁড়িয়ে থাকা হিজল গাছের ফুল
বলল হেসে চিনতে তোমায় হয়নি মোটেই ভুল।
সূর্য তখন পশ্চিমে ঠিক ডুববে নদীর জলে
দৌড়ে গেলাম নদীর কাছে জল করে টলমলে
ছোট্ট একটি নায়ে আমি ভাসছি জলের পরে
ঢেউয়ের পরে ঢেউ আসে আর সূর্য গেলো ঘরে।
রাশি রাশি জলের কণা আছড়ে পড়ে গায়
দারুণ মজা পায়
সঙ্গী-সাথী সবার কণ্ঠে ছুটির দিনের গান
চাঁদের বুড়ি বলল হেসে যাও দেখে আসমান
মেঘের ভেলায় ভেসে ভেসে গেলাম বহু দূর
হাওয়ার সাথে আসছে ভেসে নদীর জলের সুর।
 


বৃষ্টিহীন জলের ফোটা
মঈনুদ্দিন কাজল

একদিন অঝোর বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম আমরা দু’জন
দিকে দিকে তখনো প্রেমিক পাখিদের কুজন
হৃদয়ে হৃদয়ে রেখে গভীর আকুল দৃষ্টিতে
দুজনার মাঝে আগুন ছিল অনবদ্য সৃষ্টিতে।

মসৃণ পেলব মুখে বৃষ্টি আসে নক্ষত্রের
ভেজা মুখ অপরূপ শরীর গন্ধ চুলের
মুক্তা দানার ফুল তোমার অধরে ফুটেছিল
অধীর আত্মা আমায় পাগল করে তুলেছিল।

কি যে অফুরান ভালোবাসা কি যে অকথিত ভালোবাসা
বৃষ্টির হিমেল বাতাসে উষ্ণতায় আলো আশা
কি যে মায়াবী আদর জানেন শুধু অন্তর্যামী
মগ্নধ্যানে ভেবেছিলাম চিরকাল শুধু তোমার আমি।

ঝড় বৃষ্টির তাণ্ডবে তুমি আমায় জড়িয়ে
শব্দ তরঙ্গ বেড়েছিল হৃদয়ের স্পন্দন ছড়িয়ে
এখন শুধু সময় মাথা রেখে ঘুমাবার
বৃষ্টির হিমেল বাতাস উষ্ণতা তোমার আমার।

সবুজ পাতারা দোলে ঝড় বৃষ্টি বাতাসে
আমারো ছিল রং উন্মুক্ত এই আকাশে
তুমি চলে গেলে এক অলৌকিক দেশে
আরতো এলেনা ফিরে এই বৃষ্টির বেশে।

এখনো জড়িয়ে আছি তোমার কালো কেশে
আজো প্রহর গুনি এখানে কাঙালের বেশে
কোন গহিনে লুকিয়ে গেলে আমার কনে।
বৃষ্টিফুল ফুটেছিল প্রিয়া তোমার আমার বনে

ফুল জোস্না আকাশে ছিল বাংলার মুখ
বৃষ্টি ভেজা এইতো আমি শূন্য আমার বুক
দিনরাত রাশি রাশি গোটা গোটা
এখন ঝরছে চোখে বৃষ্টিহীন জলের ফোটা।


নদীর জলের সুর
শিবুকান্তি দাশ

যাচ্ছি সেদিন নদীর কাছে দেখব বলে নদী
রোদ্র ডেকে বলল এ ভাই সঙ্গে নিতে যদি
ও মা এ কি! তোমায় নেব সঙ্গে করে আমি
বেড়াল ছানার ডাকটা শুনে একটু গেলাম থামি।
তোমায় আমি বন্ধু ভাবি, আমায় ফেলে যাবে?
আমায় ফেলে একা এক কোপ্তা পায়েস খাবে?
এমন সময় শালিক পাখি ডানায় উড়ে এলো
সে ও নাকি সঙ্গে যাবে সব যে এলোমেলো।
পায়ে পায়ে এগিয়ে যেতেই ঘাসফড়িংয়ের দল
বলল হেসে সঙ্গী হলাম ছুটল যেনো জল
বটপাকুরে দাঁড়িয়ে থাকা হিজল গাছের ফুল
বলল হেসে চিনতে তোমায় হয়নি মোটেই ভুল।
সূর্য তখন পশ্চিমে ঠিক ডুববে নদীর জলে
দৌড়ে গেলাম নদীর কাছে জল করে টলমলে
ছোট্ট একটি নায়ে আমি ভাসছি জলের পরে
ঢেউয়ের পরে ঢেউ আসে আর সূর্য গেলো ঘরে।
রাশি রাশি জলের কণা আছড়ে পড়ে গায়
দারুণ মজা পায়
সঙ্গী-সাথী সবার কণ্ঠে ছুটির দিনের গান
চাঁদের বুড়ি বলল হেসে যাও দেখে আসমান
মেঘের ভেলায় ভেসে ভেসে গেলাম বহু দূর
হাওয়ার সাথে আসছে ভেসে নদীর জলের সুর।
 

ঈদের খুশি
নাছিমা বেগম

ঈদ এল, ঈদ এল, ঈদ এলরে
রমজানের রোজা শেষে ঈদ এলরে-
চারদিকে আজ খুশির জোয়ার বয়ে যায়রে।।

নীল আকাশে এক ফালি চাঁদ
সবাই যখন দেখে
হিরের ঝিলিক ভাসে যেন
সবার চোখে মুখে
ঈদের খুশির সুখ বয়ে যায়
সবার ঘরে ঘরে।।

যাকাত ফিতরা বিলিয়ে দিয়ে
ভেদাভেদ সব ভুলে গিয়ে
ঈদগাহেতে ঈদের নামাজ
সারি বেঁধে সবাই পড়ে
সবার সাথে বুক মিলিয়ে
সবাই যেন সবার তরে।।


মা
কণা জাহিদ

ও মা! তুমি পারবে ছুঁতে ? চন্দ্র-তারা হলে!
অন্ধকারে জ্বালবো আলো এই পৃথিবীর স্থলে।
কী যে বলিস! হেসেই মরি, আকাশ হবো আমি,
শূন্যে ভেসে রাখবো ধরে, তুই যে কত দামি।
হবো আমি অমাবস্যা রইবো আঁধার ঘিরে
যতই খোঁজো মন বিষাদে আসবো না আর ফিরে।
অবুঝ মেয়ের কথা শুনো, এমন করে বলে?
পূর্ণিমা যে হবো তখন একটু আঁধার হলে।
রৌদ্র হয়ে পুড়বো যখন দেখবে আমায় তুমি?
তখন তুমি পিপাসার্ত ফাটবে ধরার ভূমি।
এমন কথা আর কখনো আনবি না তুই মুখে,
আমি তখন বর্ষা হয়ে ভিজিয়ে দেব তোকে।
পারবে ছুঁতে? যখন হবো বরফগলা নদী
ভয়েই তুমি কাঁপবে তখন যাই হারিয়ে যদি!


অনন্ত অপেক্ষা
অণিমা মুক্তি গমেজ

তোর জন্য অপেক্ষা আমার
শত জনমের পথ ধরে-

বলেছিলি ঊষা হয়ে সকল ভুবন থেকে
দুজনে একত্র হয়ে রঙ তুলে নেব
বরফের বুক চিরে জ্বালাব আগুন
মরুময় ভূমিতেও বইবে জলের ধারা, সপ্ত সমুদ্দুর-
তবু তুই রয়ে গেলি কোন সীমানায়?
অবাঞ্ছিত সুদূরের কোন বেলাভূমে?

এ-জনমে তোকে ছাড়া চলে না আমার
একাকী জীবন যেন বয়ে চলা স্রোতহীন নদী
কিংবা কোনো ছন্দহীন তালহীন গান।

একাকী যাপন করি তাই আজ অপেক্ষার কাল-
সন্ধ্যামালতির গুচ্ছ হাতে নিয়ে জনম-জনম-


কৃষ্ণচূড়ার শহর
কবিতাচাষী

আমার কৃষ্ণচূড়ার শহরে
তোমাকে স্বাগতম!
নব বসন্তে তোমাকে পেয়েছি
একরাশ নতুন ফুলের অদৃশ্য
সুঘ্রাণের মতো।
তোমাকে চেয়েছি যতবার,
ঠিক ততবার নিজেকে
হারিয়েছি।

হৃদয় লেনের দু’ধারে পসরা
সাজিয়ে বসেছে
একদল হৃদয় লেনা-দেনা’য়
ঠকে যাওয়া
বোকা প্রেমিক-প্রেমিকার দল।


গল্পটি শেষ  হয়নি এখনো
রোদেলা শিশির

গল্পটি শেষ হয়নি এখনো...
বৃষ্টিকন্যার নুপূরের সুর আড়াল করে রেখেছে
গোঙ্গানির মুখরতা।
ধুয়ে দিয়ে গেছে মেঘের জল
তার কপোলে-মোড়া
নোনা ঝরনার স্রোত।
চঞ্চল কষ্টের নীল নকশার খসড়াটি...
ভাসমান ব্যস্ততায় মুখর।
পারিপার্শ্বিক দাবানলে
শুকিয়ে গেছে আর্তনাদের নদী,
অভিমানের পলি পড়ে
গজিয়েছে চর।
স্বপ্নের কাঁচ-প্রাচীর ভেঙ্গে
আসেনি সে
আসবেও না কখনো আর
এমনি করে কেটে যাক
উদাসী বছরগুলো নিরবে ...।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status