শেষের পাতা

সীমান্ত দিয়ে আসছে অবৈধ অস্ত্র

রুদ্র মিজান

৩০ জুন ২০১৮, শনিবার, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ন

সীমান্তে সতর্কাবস্থানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ওপারে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এর মধ্যেই দেশে ঢুকছে অস্ত্র ও চোরাচালান পণ্য। যদিও বিজিবি’র তৎপরতায় প্রায়ই জব্দ হচ্ছে অস্ত্র। ঢাকাসহ সারা দেশে বাড়ছে এসব অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার । ডাকাতি, ছিনতাই, হত্যা থেকে ছোটখাটো ঝগড়া-ঝামেলায় প্রদর্শন করা হচ্ছে অস্ত্র। ছোটখাটো অস্ত্রের পাশাপাশি সীমান্ত পথে আসছে অত্যাধুনিক অস্ত্রও। গত মাসে অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে ২৭৬টি। অবৈধপথে অস্ত্র দেশে আসার পর তা সন্ত্রাসীসহ অসাধু চক্রের হাতে চলে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটে। জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ৪৬টি অস্ত্র জব্দ করেছে বিজিবি। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, জব্দকৃত অস্ত্রের মধ্যে ৩৪টি পিস্তল-রিভলবার। অন্যান্য অস্ত্র রয়েছে ১২টি। এছাড়াও ৮৭টি গুলি, ২৫টি ম্যাগাজিন, একটি গ্রেনেড, ৫৬টি ককটেল ও একটি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। সূত্রমতে, নানা কৌশলে সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র আনা হচ্ছে। বিভিন্ন পণ্যবাহী গাড়ি, আমের ঝুড়িতে করে অস্ত্র আসছে দেশে। সীমান্ত এলাকার গোয়েন্দা সূত্র জানায়, অন্তত ৩০টি রুট দিয়ে অবৈধ অস্ত্র আসছে। রাজশাহীর চাঁপাই নবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরার দর্শনা, যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, পিরোজপুর, সিলেটের তামাবিল, কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে আসছে অস্ত্র। এছাড়াও মিয়ানমার হয়ে চট্টগ্রাম সীমান্ত দিয়ে বিপুল অস্ত্র ঢুকছে দেশে। অস্ত্র আইনে দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত মে মাসে দায়েরকৃত ২৭৬টি মামলার মধ্যে চট্টগ্রামে হয়েছে ৮৬টি। যা দেশের অন্য সব এলাকার চেয়ে বেশি। তারপরের অবস্থানে রয়েছে খুলনা। ওই এলাকায় অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে ৫৩টি। তৃতীয় অবস্থানে ঢাকা। ঢাকায় অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে ২৫টি। সূত্রমতে, চট্টগ্রাম ও খুলনা সীমান্ত দিয়েই অস্ত্র আসছে বেশি। পরে এই অস্ত্র ছড়িয়ে যাচ্ছে ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের মফস্বল এলাকায়। অস্ত্রধারীরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকায় অস্ত্র উদ্ধারে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। তবে অন্যান্য সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশ তৎপর রয়েছে।
একটি চক্র রয়েছে যারা ভারত থেকে বাংলাদেশে অস্ত্র এনে ৩০ হাজার থেকে লাখ লাখ টাকায় বিক্রি করে। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র আমদানি বাড়তে পারে। ছোট অস্ত্রগুলো ধরা পড়লেও অত্যাধুনিক অস্ত্র উদ্ধারের সংখ্যা খুবই কম।
অত্যাধুনিক অস্ত্র প্রবেশের বিষয় আলোচনায় আসে গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পরপরই। হলি আর্টিজানে হামলার জন্য চাঁপাই নবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে আমের ঝুড়িতে করে আনা হয় অস্ত্র। এরমধ্যে পিস্তল ও পাঁচটি একে-২২ ছিল। একইভাবে যশোরের চৌগাছা সীমান্ত দিয়ে তৈরি করা বোমা আনা হয়।
দেশে অবৈধ অস্ত্র আমদানির ১২৮টি সিন্ডিকেট রয়েছে বলে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ সেন্টার বিডিপিসি’র গবেষণাসূত্রে জানা গেছে। সংস্থাটির গবেষণায় জানা গেছে, কয়েক লাখ অবৈধ অস্ত্র রয়েছে দেশে। অবৈধ অস্ত্রের মালিকরা অস্ত্র ভাড়া দিচ্ছেন এক শ্রেণির সন্ত্রাসীদের কাছে। চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙ্গামাটির পাহাড়ি এলাকায় অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে প্রায়ই। সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো আধিপত্য বিস্তারের জন্য এসব অস্ত্র ব্যবহার করছে। একইভাবে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করছে সন্ত্রাসীরা।
এসব বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি সহেলি ফেরদৌস বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ অত্যন্ত তৎপর। দেশের যেখানেই অবৈধ অস্ত্র রয়েছে তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। প্রতি মাসেই উল্লেখযোগ্য অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে।  সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status