ঈদ আনন্দ ২০১৮
গল্প
গোলাপ সদৃশ ভালোবাসা
তৌহিদুল হক
২৯ জুন ২০১৮, শুক্রবার, ৬:৪৩ পূর্বাহ্ন
সচিত্রকরণ: সুমন রহমান
জামান, সাফিরা জামান। ভালোবাসতে বাসতে এক সময় ভালোবাসার মানুষ বন্ধনের ছিটকানি খুলে হারিয়ে যায়। খুঁজলে পেতে কিন্তু যে ইচ্ছা করে হারিয়ে যায় তাকে কী খুঁজে পাওয়া যায়? সাফিরা, আসিক কে হারিয়ে মানুষ সম্পর্কে কত কী ভেবেছে, কেন এমন হয়? কেন? আশপাশে যারা ভালোবাসে, পরিচিতজন যারা ভালোবাসে তাদের অনেক সুখী মনে হয়, সাফিরার। প্রেমে আক্রান্ত একটি যুগদল অন্য যুগলকে কতো সুখী ভাবে! আসলে, প্রেমে কী সুখ আছে না অস্থিরতা? এ রকম কতো ভাবনা সাফিরাকে ভাবিত করেছে।
কিছুদিন বিরহ যন্ত্রণা উপভোগ করে বাবা-মাকে বলেছে, ছেলে দ্যাখো বিয়ে করবো। বাবা-মা সাফিরার পছন্দমতো ছেলে খুঁজে পেতে চেষ্টা-তদবির করে, অবশেষে পেয়েছে। নাফিস ইকবাল। ছেলের নাম। ঢাকায় একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করে। বিয়ের পূর্বে অল্প কয়েকবার কথা-বার্তা, দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে। পরস্পর পরস্পরকে অল্প কিছু জেনে বাকিটা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলো।
সাফিরা বাস্তবিক ঘটনায় সিদ্ধ হয়ে বিশ্বাস করে, ভালোবাসলে কিছু একটাতো দাঁড়াবে, হয় তার নাম হবে ভালোবাসা বা দূরত্ব। দূরত্ব কী নিকটে আসার অস্থিরতা নয়? সম্পর্কের অপর নাম অস্থিরতা, বুক ভরা অস্থিরতা।
বিয়ের পর সংসার জীবন, জীবনের কঠিন সময়। কঠিন সময় পার করেই, সহজে আসতে হয়। সাফিরা মাস্টার্স শেষ করে বিয়ে করেছে। নাফিস ইকবাল, সাফিরার চেয়ে পাঁচ বছরের বয়সী অভিজ্ঞ। বিয়ের প্রথম রাতেই সিদ্ধান্ত, ছেলে-পেলে শুরুতেই নিতে হবে।
প্রথম বছর গড়িয়ে দ্বিতীয় বছরে দাম্পত্য জীবনের শরীরি ফসল-সাফা বিনতে ইকবাল এর জন্ম। মেয়ে হওয়াতে সাফিরা অনেক খুশি। কারণ, সাফিরা স্থায়ীভাবে বিশ্বাস করে, পৃথিবী ততদিন বাঁচবে যতদিন মেয়েদের মায়া ভরা যত্নশীল আদরের ইচ্ছা থাকবে। সাফিরার মনোবল খুবই দৃঢ়, মেয়েদের ব্যাপারে বিশেষ করে। মেয়ে হয়ে মেয়েদের পক্ষে, বিষয়টি এ রকম নয়। আসলে, সাফিরার ভাষ্য, মেয়েরা হাসে বলেই পুরুষরা পথ খুঁজে পায়।
নাফিস ইকবাল চায় না তার বউ চাকরি করুক। আবার সাফিরা মনে করে পড়া-শুনা করলেই কি চাকরি করতে হবে? পড়া-শুনা নিজের জীবনের জন্য, নিজের জন্য নিজের বানানো প্রমোদকৌশল যা সিদ্ধান্তে, কৌশলে ব্যক্তির মেরুদণ্ড সোজা রাখবে। সাফিরার প্রধান কাজ সংসার সামলানো, মেয়েকে স্কুলে নেয়া, রান্না-বান্না করা। বাসায় কাজের লোক থাকলেও নাফিস অন্যের হাতের রান্না খেয়ে তৃপ্তি পায় না। সাফিরা ভাবে, পুরুষজাতের এই এক সমস্যা, একবার ঠিকানা চিনলে না এসে পারে না।
মাঝে মাঝে সাফিরা অনেক সময় পায়, মেয়েকে স্কুলে দিয়ে অপেক্ষা, স্কুল থেকে ফিরে দুপুরের খাবারের পর। এভাবে চাইলে সময় বের করতে পারে। একান্ত সময় তাকে নাজেহাল করে ছাড়ে। স্মৃতি বড় জ্বালায়, আসিকের স্মৃতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ সময়ে আসিকের সঙ্গে সাফিরার প্রেম। একই সাবজেক্টে পড়তো, আসিক দু’বছরের সিনিয়র। সাফিরা একটু দুষ্ট প্রকৃতির ছিলো। আসিক চুপচাপ। চুপচাপ স্বভাবের ব্যক্তিরা সহজে মনে দাগ কাটে আর চঞ্চল প্রকৃতির ব্যক্তি আনন্দের উৎসে পরিণত হয়।
একদিন বান্ধবীরা মিলে দুষ্টামি করছে, করিডোর দিয়ে যেতে যেতে ধাক্কা-ধাক্কি করছে। পিছনে ছিলো আসিক, তার ক্লাস শুরু হয়ে গেছে, দ্রুত যাচ্ছে। এমন সময়, সাফিরা এক বান্ধবীকে ধাক্কা দেয়, মেয়েটি আসিকের গায়ে গিয়ে পড়ে। আসিক পুরো দলকে উদ্দেশ্য করে বলে- ডিপার্টমেন্ট অব দুষ্টামিতে ভর্তি হলে ভালো করতে।
সাফিরাসহ সবাই হতভম্ব হয়ে যায়। যে মেয়েটি ধাক্কা খায়, সে সরি বললেও কোনো রকম সম্মতি না রেখেই আসিক ক্লাসে ঢুকে যায়।
এর পর কয়েকবার ডিপার্টমেন্টে দেখা হয়েছে, কথা হয়নি। সাফিরা ভয় পায়। কথা বলতে। কিন্তু ডিপার্টমেন্টে গেলে আনমনে কাউকে খুঁজে, হলে দুপুরের খাবারের পর আলসেমি আয়েশে কিংবা রাতে ঘুমানোর আগে মনে পড়ে। এভাবে কোন একদিন কথা হয়ে যায়, তার পর টুকটাক দেখা। চুপচাপ ছেলেটি চঞ্চল হয়ে যায়। আর চঞ্চল মেয়েটি চুপচাপ হয়ে যায়। এটাই প্রেম। কাছে আসার গহীন গল্প।
কতোদিনের কতো স্মৃতি মনে নাড়া দেয়, মন ভারাক্রান্ত হয়। সাফিরা ভাবে এভাবে স্মৃতিচারণ কষ্ট বাড়ায়। স্মৃতি ভুলে থাকতে চাইলে কি ভুলে থাকা সম্ভব! স্মৃতি আপন কক্ষপথে নিজ দায়িত্বে ঘুর্ণায়মান।
আসিক বাবা-মায়ের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করবে বলে হারিয়ে যায়। একবুক উষ্ণতা ছড়িয়ে দিয়ে যেখানেই থাকুক ভালো থাকা কি সম্ভব? সাফিরা ভাবে।
সাফিরা সবকিছুই স্বামীর সঙ্গে শেয়ার করেছে। সংসার জীবনে কিছু বিষয় ওপেন থাকা ভালো, কিছু বিষয় আজীবন ঢেকে রাখতে হয়। এই ঢেকে রাখাতেই- আনন্দ, জীবনের সৌন্দর্য ফুটে উঠে। হাসি হাসি মুখ করা যায়।
মেয়েকে ইংরেজি শিক্ষকের বাসায় নিয়ে যেতে হয় সপ্তাহে তিন দিন। সাফিরা ভাবে, কি দিন আসলো, সব সাবজেক্টই প্রাইভেট পড়তে হয়। স্কুলের কাজ কী? স্কুলের শিক্ষকদের কাজ কী? এসব এখন ইতিহাস। স্কুলের ভূমিকা ও শিক্ষকের দায়িত্ব আজ প্রাইভেটলি পালন হচ্ছে।
মেয়েকে ইংরেজি শিক্ষকের বাসায় দিয়ে বাসার সামনে অপেক্ষারুমে বসে থাকে। দু’ঘণ্টার অপেক্ষা। এ সময় অন্য অভিভাবকদের সাথে গল্প করে, কখনো চুপ করে বসে থাকতে ভালো লাগে। চুপ থাকাও অনেক কথা বলা, নিজে নিজে। নিজের সাথে নিজের কথনে কত আনন্দের ঝিলিক উঠে চোখে, মুখে। কখনো হাসতে মন চায়, কখনো কাঁদতে মন চায়।
সাফিরার মনে পড়ে যায়, স্কুলের পড়ার সময় এক নতুন শিক্ষক আসে স্কুলে, ইংরেজির শিক্ষক। ছাত্রসুলভ গঠন, ব্যবহারে ভারীক্কি। সাফিরাদের সেকশনে ইংরেজি পড়াবে। আজাদুর রহমান, আজাদ স্যার। পড়ার সময় না চাইলেও চোখা-চোখি হতো। এরপর প্রাইভেট পড়তে যাওয়া। আজাদ স্যার প্রথমে রাজি না হলেও সাফিরাসহ অন্যান্য বন্ধুরা তাকে রাজি করায়। ৭ জনের একটি ব্যাচ হয়।
মানুষের প্রতি মানুষের ভালোলাগা কোনো এক অদ্ভুত কারণে জন্মায়। এর ব্যাখ্যা প্রায় অসম্ভব, তবে উপলব্ধি সম্ভব। সাফিরা আজাদ স্যারের কাছেই বসতো। কারণ যাতে ভালো করে স্যারকে দেখা যায়, কথা শুনতে পারার উছিলায়। এ নিয়ে বান্ধবীরা মশকারি করলেও সাফিরার কিছু যায় আসে না। সাফিরা কাউকে কিছু বলেও নাই। কিন্তু চোখের চাউনি অন্যরা অবিশ্বাস করে কি করে?
এক সময় আজাদ স্যারও বুঝতে পারে। তার বুঝতে পারা বুঝতে পারার মধ্যেই আটকা রইলো। সে ভাবে স্কুলপড়ুয়া ছাত্রী আবেগে টলোমলো হলেও শিক্ষক হিসেবে তার এতটুকু টলা উচিত হবে না।
এভাবে আজাদ স্যারও মজা পেত, বলা যায় ভালো লাগতো, এ পর্যন্তই। কখনো চাইতো কিছু একটা বলতে, তবে পারে নাই। সাফিরা চাইতো স্যার একটা কিছু বলুক। একদিন পড়াচ্ছে, হঠাৎ টেবিলের পাশে গোলাপ গাছে ফুটন্ত গোলাপের দিকে তাকিয়ে আজাদ স্যার বললো- গোলাপ ভালোবাসতে হয়, বুঝতে পেরেছো সাফিরা, গোলাপ ভালোবাসতে হয়!
সাফিরা আজো ভাবে কি কথা লুকিয়ে ছিলো, গোলাপ ফুল ভালোবাসার মধ্যে? সাফিরা ভাবে স্যারের সঙ্গে যদি কখনো দেখা হয়, তবে সেও বলবে, স্যার গোলাপ ভালোবাসতে হয়!!
কিছুদিন বিরহ যন্ত্রণা উপভোগ করে বাবা-মাকে বলেছে, ছেলে দ্যাখো বিয়ে করবো। বাবা-মা সাফিরার পছন্দমতো ছেলে খুঁজে পেতে চেষ্টা-তদবির করে, অবশেষে পেয়েছে। নাফিস ইকবাল। ছেলের নাম। ঢাকায় একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করে। বিয়ের পূর্বে অল্প কয়েকবার কথা-বার্তা, দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে। পরস্পর পরস্পরকে অল্প কিছু জেনে বাকিটা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলো।
সাফিরা বাস্তবিক ঘটনায় সিদ্ধ হয়ে বিশ্বাস করে, ভালোবাসলে কিছু একটাতো দাঁড়াবে, হয় তার নাম হবে ভালোবাসা বা দূরত্ব। দূরত্ব কী নিকটে আসার অস্থিরতা নয়? সম্পর্কের অপর নাম অস্থিরতা, বুক ভরা অস্থিরতা।
বিয়ের পর সংসার জীবন, জীবনের কঠিন সময়। কঠিন সময় পার করেই, সহজে আসতে হয়। সাফিরা মাস্টার্স শেষ করে বিয়ে করেছে। নাফিস ইকবাল, সাফিরার চেয়ে পাঁচ বছরের বয়সী অভিজ্ঞ। বিয়ের প্রথম রাতেই সিদ্ধান্ত, ছেলে-পেলে শুরুতেই নিতে হবে।
প্রথম বছর গড়িয়ে দ্বিতীয় বছরে দাম্পত্য জীবনের শরীরি ফসল-সাফা বিনতে ইকবাল এর জন্ম। মেয়ে হওয়াতে সাফিরা অনেক খুশি। কারণ, সাফিরা স্থায়ীভাবে বিশ্বাস করে, পৃথিবী ততদিন বাঁচবে যতদিন মেয়েদের মায়া ভরা যত্নশীল আদরের ইচ্ছা থাকবে। সাফিরার মনোবল খুবই দৃঢ়, মেয়েদের ব্যাপারে বিশেষ করে। মেয়ে হয়ে মেয়েদের পক্ষে, বিষয়টি এ রকম নয়। আসলে, সাফিরার ভাষ্য, মেয়েরা হাসে বলেই পুরুষরা পথ খুঁজে পায়।
নাফিস ইকবাল চায় না তার বউ চাকরি করুক। আবার সাফিরা মনে করে পড়া-শুনা করলেই কি চাকরি করতে হবে? পড়া-শুনা নিজের জীবনের জন্য, নিজের জন্য নিজের বানানো প্রমোদকৌশল যা সিদ্ধান্তে, কৌশলে ব্যক্তির মেরুদণ্ড সোজা রাখবে। সাফিরার প্রধান কাজ সংসার সামলানো, মেয়েকে স্কুলে নেয়া, রান্না-বান্না করা। বাসায় কাজের লোক থাকলেও নাফিস অন্যের হাতের রান্না খেয়ে তৃপ্তি পায় না। সাফিরা ভাবে, পুরুষজাতের এই এক সমস্যা, একবার ঠিকানা চিনলে না এসে পারে না।
মাঝে মাঝে সাফিরা অনেক সময় পায়, মেয়েকে স্কুলে দিয়ে অপেক্ষা, স্কুল থেকে ফিরে দুপুরের খাবারের পর। এভাবে চাইলে সময় বের করতে পারে। একান্ত সময় তাকে নাজেহাল করে ছাড়ে। স্মৃতি বড় জ্বালায়, আসিকের স্মৃতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ সময়ে আসিকের সঙ্গে সাফিরার প্রেম। একই সাবজেক্টে পড়তো, আসিক দু’বছরের সিনিয়র। সাফিরা একটু দুষ্ট প্রকৃতির ছিলো। আসিক চুপচাপ। চুপচাপ স্বভাবের ব্যক্তিরা সহজে মনে দাগ কাটে আর চঞ্চল প্রকৃতির ব্যক্তি আনন্দের উৎসে পরিণত হয়।
একদিন বান্ধবীরা মিলে দুষ্টামি করছে, করিডোর দিয়ে যেতে যেতে ধাক্কা-ধাক্কি করছে। পিছনে ছিলো আসিক, তার ক্লাস শুরু হয়ে গেছে, দ্রুত যাচ্ছে। এমন সময়, সাফিরা এক বান্ধবীকে ধাক্কা দেয়, মেয়েটি আসিকের গায়ে গিয়ে পড়ে। আসিক পুরো দলকে উদ্দেশ্য করে বলে- ডিপার্টমেন্ট অব দুষ্টামিতে ভর্তি হলে ভালো করতে।
সাফিরাসহ সবাই হতভম্ব হয়ে যায়। যে মেয়েটি ধাক্কা খায়, সে সরি বললেও কোনো রকম সম্মতি না রেখেই আসিক ক্লাসে ঢুকে যায়।
এর পর কয়েকবার ডিপার্টমেন্টে দেখা হয়েছে, কথা হয়নি। সাফিরা ভয় পায়। কথা বলতে। কিন্তু ডিপার্টমেন্টে গেলে আনমনে কাউকে খুঁজে, হলে দুপুরের খাবারের পর আলসেমি আয়েশে কিংবা রাতে ঘুমানোর আগে মনে পড়ে। এভাবে কোন একদিন কথা হয়ে যায়, তার পর টুকটাক দেখা। চুপচাপ ছেলেটি চঞ্চল হয়ে যায়। আর চঞ্চল মেয়েটি চুপচাপ হয়ে যায়। এটাই প্রেম। কাছে আসার গহীন গল্প।
কতোদিনের কতো স্মৃতি মনে নাড়া দেয়, মন ভারাক্রান্ত হয়। সাফিরা ভাবে এভাবে স্মৃতিচারণ কষ্ট বাড়ায়। স্মৃতি ভুলে থাকতে চাইলে কি ভুলে থাকা সম্ভব! স্মৃতি আপন কক্ষপথে নিজ দায়িত্বে ঘুর্ণায়মান।
আসিক বাবা-মায়ের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করবে বলে হারিয়ে যায়। একবুক উষ্ণতা ছড়িয়ে দিয়ে যেখানেই থাকুক ভালো থাকা কি সম্ভব? সাফিরা ভাবে।
সাফিরা সবকিছুই স্বামীর সঙ্গে শেয়ার করেছে। সংসার জীবনে কিছু বিষয় ওপেন থাকা ভালো, কিছু বিষয় আজীবন ঢেকে রাখতে হয়। এই ঢেকে রাখাতেই- আনন্দ, জীবনের সৌন্দর্য ফুটে উঠে। হাসি হাসি মুখ করা যায়।
মেয়েকে ইংরেজি শিক্ষকের বাসায় নিয়ে যেতে হয় সপ্তাহে তিন দিন। সাফিরা ভাবে, কি দিন আসলো, সব সাবজেক্টই প্রাইভেট পড়তে হয়। স্কুলের কাজ কী? স্কুলের শিক্ষকদের কাজ কী? এসব এখন ইতিহাস। স্কুলের ভূমিকা ও শিক্ষকের দায়িত্ব আজ প্রাইভেটলি পালন হচ্ছে।
মেয়েকে ইংরেজি শিক্ষকের বাসায় দিয়ে বাসার সামনে অপেক্ষারুমে বসে থাকে। দু’ঘণ্টার অপেক্ষা। এ সময় অন্য অভিভাবকদের সাথে গল্প করে, কখনো চুপ করে বসে থাকতে ভালো লাগে। চুপ থাকাও অনেক কথা বলা, নিজে নিজে। নিজের সাথে নিজের কথনে কত আনন্দের ঝিলিক উঠে চোখে, মুখে। কখনো হাসতে মন চায়, কখনো কাঁদতে মন চায়।
সাফিরার মনে পড়ে যায়, স্কুলের পড়ার সময় এক নতুন শিক্ষক আসে স্কুলে, ইংরেজির শিক্ষক। ছাত্রসুলভ গঠন, ব্যবহারে ভারীক্কি। সাফিরাদের সেকশনে ইংরেজি পড়াবে। আজাদুর রহমান, আজাদ স্যার। পড়ার সময় না চাইলেও চোখা-চোখি হতো। এরপর প্রাইভেট পড়তে যাওয়া। আজাদ স্যার প্রথমে রাজি না হলেও সাফিরাসহ অন্যান্য বন্ধুরা তাকে রাজি করায়। ৭ জনের একটি ব্যাচ হয়।
মানুষের প্রতি মানুষের ভালোলাগা কোনো এক অদ্ভুত কারণে জন্মায়। এর ব্যাখ্যা প্রায় অসম্ভব, তবে উপলব্ধি সম্ভব। সাফিরা আজাদ স্যারের কাছেই বসতো। কারণ যাতে ভালো করে স্যারকে দেখা যায়, কথা শুনতে পারার উছিলায়। এ নিয়ে বান্ধবীরা মশকারি করলেও সাফিরার কিছু যায় আসে না। সাফিরা কাউকে কিছু বলেও নাই। কিন্তু চোখের চাউনি অন্যরা অবিশ্বাস করে কি করে?
এক সময় আজাদ স্যারও বুঝতে পারে। তার বুঝতে পারা বুঝতে পারার মধ্যেই আটকা রইলো। সে ভাবে স্কুলপড়ুয়া ছাত্রী আবেগে টলোমলো হলেও শিক্ষক হিসেবে তার এতটুকু টলা উচিত হবে না।
এভাবে আজাদ স্যারও মজা পেত, বলা যায় ভালো লাগতো, এ পর্যন্তই। কখনো চাইতো কিছু একটা বলতে, তবে পারে নাই। সাফিরা চাইতো স্যার একটা কিছু বলুক। একদিন পড়াচ্ছে, হঠাৎ টেবিলের পাশে গোলাপ গাছে ফুটন্ত গোলাপের দিকে তাকিয়ে আজাদ স্যার বললো- গোলাপ ভালোবাসতে হয়, বুঝতে পেরেছো সাফিরা, গোলাপ ভালোবাসতে হয়!
সাফিরা আজো ভাবে কি কথা লুকিয়ে ছিলো, গোলাপ ফুল ভালোবাসার মধ্যে? সাফিরা ভাবে স্যারের সঙ্গে যদি কখনো দেখা হয়, তবে সেও বলবে, স্যার গোলাপ ভালোবাসতে হয়!!