ঈদ আনন্দ ২০১৮

গল্প

সাত দিন পর আনিস মারা যাবে

সাজিদ আহমেদ

২৮ জুন ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৮:০৭ পূর্বাহ্ন

গন্তব্য নিশ্চিতই। জায়গাটা কোথায় ঠাওর করা কঠিন। এই যা। অনিশ্চিত যাত্রা। অচেনা, অন্ধকার। নাকি আলো? কে জানে। দুপুর। দূরে কোথাও আজান হচ্ছে। ভেসে আসছে মুয়াজ্জিনের কন্ঠ। ভাষার, না হৃদয়ের ডাক? ভরদুপুরেও মনে হয় গভীর রাত। চারদিক নিকষ অন্ধকার। বজ্রপাত। ঝড়ের ভয়ঙ্কর আওয়াজ। ইদানীং পত্রিকা খুললেই বজ্রপাতে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। আট বছরে ১৮০০ মৃত্যু। ভাবা যায়। সাত দিন পর আনিস মারা যাবে। এ কারণেই কি-না তার মনে মৃত্যু চিন্তা বারবার হানা দেয়। আশ্চার্য এক অনুভূতি। একদিকে ভয়, অন্যদিকে নির্ভার।
ঠিক দু’বার এমনটা হয়েছিল। সন্ধ্যা হয় হয়। সন্ধ্যা কী সৃষ্টিজগতে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি করে। সব পাখি কী ঘরে ফিরতে চায়। তাড়াহুড়ো। ভীষণ তাড়াহুড়ো। মাগরিবের নামাজের সময়। চারদিকে গাছ আর গাছ। কাছাকাছি মানুষের বসতি নেই। দুটি দেশের সীমান্ত চিহ্ন। পাখিদের হয়তো কোন দেশ নেই, কোন সীমানা নেই। কিন্তু তাদের বড় তাড়া ঘরে ফেরার। হাজার হাজার পাখির কিচির-মিচির। যেন সব কিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে। আনিসের ভীষণ ভয় করছিল। কিসের ভয় সে জানে না। ঠিক একই ঘটনা আরো একবার ঘটেছিল। একই অনুভূতি। সে ছিল বাসে। সময়টা একই। তবে সেখানে কোন পাখি ছিল না। গতকালই আনিসকে জানানো হয়েছে তার মৃত্যুর দিনক্ষণ। এরপরই সে চিন্তা করতে শুরু করে। গভীর চিন্তা। এ সাতটা দিন কী করা যায়। যতই ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে যায় তার মনে হাজির হয় অতীত। সত্যিই কী মানুষের সব শ্রম পণ্ড হয়ে যায় এক দিন? যা সে চেয়েছিল তা কী পেয়েছে। তা কি কেউ কোন দিন পায়। প্রেম এবং প্রেমহীন, ভালোবাসা এবং ভালোবাসাহীন, পাপ এবং পুণ্যের, সম্মান ও অসম্মানের এক দীর্ঘ জীবন। কোনটির পাল্লা ভারী। নিশ্চিতভাবেই পাপের। সাত দিন পর শুরু হওয়া যাত্রায় কেউ কি আনিসের সঙ্গী হবে।


সব স্মৃতিই যেন ঝাপসা। মৃত্যুর আগে আগে কী এমন হয়। মায়ের কথা খুব মনে পড়ে। আনিস কত চেষ্টা করেছে মা’কে নিজের কাছে নিয়ে আসতে। কিন্তু মায়ের যে শহর ভালো লাগে না। মাথা ঝিমঝিম করে। রতনপুর। ছোট্ট একটা গ্রাম। তখনও আলো আসেনি। কিন্তু এই গ্রামেই আটকা পড়ে আছেন মা। স্বামীর ভিটা। ছাড়তে চান না।
রিস্তি। তার আরেক মা। না জানি মেয়েটা এখন কত বড় হয়ে গেছে। ও কি স্কুলে যায়। বাবার কথা কি তার মনে আছে? বাবাকে কি সে মিস করে। চোখ বন্ধ করলেই দিনটা দেখতে পায় আনিস। যেদিন তার ছোট্ট মা পৃথিবীতে আসে। তার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। সব কিছু বদলে যায় আনিসের। মেয়েটা কেবল বাবাকে চিনতে শিখেছে। মুখে আধো আধো বুলি। আকস্মিক বিচ্ছিন্নতা। ভালোবাসা, সম্পর্ক, হৃদয়ের গভীর টান। সবকিছু ভেঙে পড়ে।
আনিসের জীবনটা নায়কের মতো না। সাধারণ এবং বিশেষত্বহীন। নিজের চেহারাটা দেখতে কেমন হয়েছে, আনিস বুঝতে পারে না। ১১ বছর ১১৭ দিন হলো সে আয়না দেখে না। আনিস যেখানে আছে সেখানে তা দেখার সুযোগও নেই। আচ্ছা, রিয়া। রিয়া কেমন আছে। সে কি আজো অপেক্ষা করে আছে। কলিংবেলের আওয়াজ শুনলেই কি দরজায় দিকে দৌড়ে যায়। ভাবে, এই বুঝি তার স্বামী ফিরে এসেছে।
কেউ ফিরে, কেউ কোনো দিন ফিরে না। আনিস ফিরবে না। সে তা জানে। কিন্তু মা, রিস্তি, রিয়া, ছোট বোন জানে না। ওরা অপেক্ষা করে আছে। অপেক্ষা করে আছেন এমন অনেকে। আনিসও অপেক্ষা করে আছে। সে জানে তার সময় ফুরিয়ে আসছে। একটা আক্ষেপ অবশ্য রয়ে যাবে। কিছু মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আছে। তাদের সঙ্গে কী ওপারে দেখা হবে। ক্ষমা কী চাওয়া যাবে। সে জগতে কী এর কোন সুযোগ থাকবে? আনিস জানে না। নাকি ক্ষমা না চাইলেও ওরা ওকে ক্ষমা করে দেবে? রিয়া। কত কষ্টই না সে মেয়েটাকে দিয়েছে। টাকা ছাড়া আসলে কিছুই হয় না। বেঁচে থাকার এ এক অদ্ভুত লড়াই। কখনো পরাজিত, কখনো অপমানিত। ভালোবেসে ভালোবাসা না পাওয়া মানুষটা কি ক্ষমা করবে। বোকা টাইপের মানুষ আনিস। বুঝতে পারে না ভালোবাসা, সাপোর্ট আর বিরক্ত করার ব্যবধান। কেউ হয়তো তাকে নিয়ে আজো এসএমএস লিখছে, ডিসগাস্টিং ক্যারেক্টার।
হঠাৎই গর্ডন গর্ডন ই বিগেলোর একটা লেখা মনে পড়ে আনিসের। অস্তিত্ববাদীরা গভীরভাবে অনুভব করেছেন যে আধুনিক মানুষ সৃষ্টিকর্তা থেকে, প্রকৃতির থেকে, চারপাশের অন্য মানুষদের থেকে এবং নিজের আসল পরিচয় থেকেও নিজে বিচ্ছিন্ন। মানুষের সৃষ্টিকর্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার এই অভিজ্ঞতার সব থেকে যন্ত্রণাময় প্রকাশ ঘটেছে নিটশের লেখার তীব্র অভিব্যক্তিতে- ঈশ্বর মারা গেছেন!
আনিস কি তেমন কোন বিচ্ছিন্ন মানব?


শত বিপর্যয়েও মানুষ বাঁচে। সম্ভবত, এ কারণেই সালেহা বেগম বেঁচে আছেন। চারদিকে অদ্ভুত নীরবতা। এই সময়টায় ঢাকা যেন একটু ঝিরিয়ে নেয়। নিরন্তর ছুটতে থাকা শহরের বুকে ভর করে গভীর ক্লান্তি। একটু পরেই ভোর হবে। সালেহা বেগম কোরআন শরীফ পড়তে বসেন।
হঠাৎ তার বুকটা ধড়ফড় করে ওঠে। ছেলেটা জানি কেমন আছে, কোথায় আছে। বেঁচে আছেতো। নাকি মারা গেছে। যদি মারা যায় তার কি জানাজা হয়েছে। কবর হয়েছে। ভয়ঙ্কর সব চিন্তা মনে আসে। কত চেষ্টা করে মনকে এসব থেকে দূরে রাখতে। কিন্তু পারে না। যেন এক ব্যর্থ মা। এইতো এই টুকুন ছেলে। হঠাৎ করেই বড় হয়ে গেল। সময়ই তাকে বড় করে দেয়। স্বামী থাকতেন দূরে। ছোট চাকরি। চাওয়া-পাওয়া ছিল সামান্য। দুই সন্তান নিয়ে রতনপুরে জীবন চলছিল তার। হঠাৎ সব এলোমেলো। সব খারাপ খবরই কি রাতে আসে। রাতগুলো কী সত্যই ভয়ঙ্কর। স্বামী মারা যাওয়ার পর আক্ষরিক অর্থেই সাগরে পড়েন সালেহা বেগম। দুই সন্তান নিয়ে কোথায় যাবেন ভেবে পান না। সামান্য চাষের জমি আর ভিটেমাটি ছাড়া যে বলতে গেলে কিছুই নেই। ছেলেটা সবে ম্যাট্রিক পাস করেছে। মেয়েটা আরো ছোট। সালেহা বেগম বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেন, আনিস হঠাৎই বড় হয়ে গেছে।
রিস্তি বসে বসে কী যেন লিখছে। মেয়েটা দিন দিন এতো সুন্দর হচ্ছে। সালেহা বেগমের চোখে পানি এসে যায়। রিস্তি কখনও বাবাকে দেখেনি। না, এ কথা সত্য নয়। তার স্মৃতিতে বাবার ছবি আছে। আবার নেইও। তার ইদানীং ডায়েরি লেখার অভ্যাস হয়েছে। যদিও ফেসবুক যুগে কেউ ডায়েরি লিখে না।
রিস্তি লিখে চলে-
আব্বু জানো, আজ দাদুকে নিয়ে স্কুলে গিয়েছিলাম। ও তুমিতো এটাও জানো না, দাদু এখন আমাদের সঙ্গেই থাকে। মা একটা স্কুলে চাকরি পেয়েছে। নানা কাজে ব্যস্ত থাকে। দাদুই এখন আমার গার্ডিয়ান। সবচেয়ে কাছের বন্ধু। সব কথাই দাদুর সঙ্গে শেয়ার করি। আমার গোপন বলে কিছু নেই। না, এ কথা ঠিক না। তোমাকে মিস করার যে কষ্ট সেটা দাদুর সঙ্গেও শেয়ার করি না।
আজ আমার স্কুলে রেজাল্ট দিয়েছে। রেজাল্ট ভালো হয়নি। টেনেটুনে পাস করেছি। দাদু অবশ্য আমাকে কিছু বলেনি। পাস করেছি এতেই খুশি। মা জানতে পারলে কষ্ট পাবেন। বকাঝকাও করবেন। মা’র মেজাজটা ইদানীং কেমন যেন খিটমিটে হয়ে গেছে। কিন্তু কী করবো, বলো, সবাইতো আর ফাস্ট হয় না।
আচ্ছা বাবা আমার কথা কী তোমার মনে পড়ে? তুমিতো ভাবতেই পারবে না আমি কতো বড় হয়ে গেছি। তোমার সেই পিচ্ছি মেয়েটা এখন নিজের সব কাজ করতে শিখে গেছে। একা একা চলতেও পারে। জানো, আমার অনেকগুলো বন্ধু হয়েছে। ওদের বাবাদের অনেক গল্প। অথচ আমার বাবার কোন গল্প নেই। মিস ইউ বাবা।


রিয়া একমনে টিভি দেখছে। এতোটা মগ্ন হয়ে কখনো তাকে খবর দেখতে দেখা যায় না।
‘আমি যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাই, লোকেরা আমাকে চিনতে পারে। টিভিতে দেখে দেখে সবাই আমাকে চিনে ফেলেছে। ছেলে হারা মায়ের অ্যাড করি আমি।’ মানববন্ধনে কথা বলছেন আর কাঁদছেন বৃদ্ধা। রিয়া তাকে চিনতে পারে। সাগরের মা, রুনির শাশুড়ি।
আনিসের সঙ্গে রিয়ার বিয়েটা যেন নিয়তি নির্ধারিতই ছিল। যদিও সেটা সিনেমার মতো না। রিয়াকে পেতে আনিসের বহু কাঠখড় পোহাতে হয়েছে। আনিস ছিল সাধারণ একটা ছেলে। বৈশিষ্ট্যহীন। চেহারাতেও নিম্নবিত্তের চাপ। এই ধরনের মানুষকে জীবনে বহু অপমানের মুখোমুখি হতে হয়। আনিসের বেলাতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সাধারণ, বিত্তহীন এবং টুকটাক রাজনীতিতে জড়িত। এমন ছেলেদের কখনো রিয়ার পছন্দ ছিল না।


আজান আর বজ্রপাতের শব্দ ঠিকই আছে। কিন্তু পত্রিকা? না, বহু বছর হয় আনিস পত্রিকা পড়ে না, টিভিও দেখে না। এগুলো থেকে তার জীবন এখন বহুদূরে।
রতনপুর। ছবির মতো গ্রাম। রতনপুর নিয়ে আনিসের স্মৃতির শেষ নেই। এক জীবনে কত গ্রাম-শহর দেখেছে সে। কিন্তু রতনপুরের সঙ্গে কোনো কিছুরই মিল খুঁজে পায় না। একটা কথা মনে পড়লে তার খুব হাসি পায়। রাস্তা-ঘাট ছিল ভাঙাচুরা। গ্রামের স্কুল ৪-৫ কিলোমিটার দূরে। রোজ হেঁটে স্কুলে যেতো আনিস। বর্ষাকালে স্কুল থেকে আসতে প্রায়ই এমন হতো যে, আনিস ও তার বন্ধুরা লুঙ্গি খুলে মাথায় বেঁধে ফেলতো।
সে এক জীবন ছিল। ফুটবলে লাথি মারতে মারতে সন্ধ্যা নামতো। এ যুগের মতো তখনকার মায়েদের এতো টেনশন ছিল না। তারা যেন জানতেনই ছেলে এক সময় বাড়ি ফিরবে। আচ্ছা, তার বোনটা কেমন আছে? দু’ ভাই-বোনে যে কত মারামারি, কত ঝগড়া। আনিস কখনোই ফার্স্ট হওয়া ছাত্র ছিল না, আবার মন্দও ছিল না। ৩-৪ এর মধ্যেই থাকতো রোল নম্বর। খুব বেশি দুষ্টুও না, শান্তও না। চিরকালীন মধ্যবিত্ত।
রফিক, আল আমিন, ইফতি। কত বন্ধু। বাবা মাঝে মাঝে আসতেন। বিস্কিট আনতেন অনেক। গ্রামে তখনো ভাতের কষ্ট ছিল। ভালো ছিল, মন্দ ছিল। সৌন্দর্য ছিল, কুৎসিত ছিল। আনিস এতোকিছু বুঝতো না। সে বড় হতে থাকে। কেন যেন পড়ালেখার প্রতি তার মনোযোগও বাড়তে থাকে। আনিস কী কিছু টের পেয়েছিল।
এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট ভালোই হয় আনিসের। সবে জেলা শহরের কলেজে ভর্তি হয়েছে। এক রাতে আকাশ ভেঙে পড়ে তার ওপর। আনিসের পরিবারের ওপর। খবর পান বাবা মারা গেছেন। সে এক ভয়ঙ্কর রাত। যে রাতে আনিসকে এরা নিয়ে এসেছিল তেমনই ভয়ঙ্কর।
মহান লেখকরা এক কথা দু’বার লেখেন না। সাধারণরা লেখেন। আগেই একবার বলা হয়েছে, আনিস হঠাৎ করেই বড় হয়ে যায়। সময় মানুষকে বড় করে, ছোট করে। পড়ালেখার পাশাপাশি টিউশনি শুরু করে আনিস। টিউশনির সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর মধ্যে একটা ছাত্রী ছিল ভারী দুষ্টু। আনিস নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে। সে জানে তাকে বহুদূর যেতে হবে। পরিবারের খরচ জোগাতে হবে। বোনটাকে পড়ালেখা করাতে হবে। সাধারণ একটা জীবন। অসাধারণ স্বপ্ন।


এইচএসসিতে আনিসের রেজাল্ট ছিল চমৎকার। সবাইকে সে চমকে দিয়েছিল। কিন্তু তার দুশ্চিন্তার শুরু হয়েছিল আরো আগে। পরীক্ষা শেষে সব টিউশনি ছেড়ে দিতে হয়। হাতও খালি। আবার কোচিংয়ের জন্য যেতে হবে ঢাকায়। ভাবনার যেন শেষ নেই। মনে আবার অদ্ভুত সব খেয়াল জন্মে। মা-বোনের জন্য গভীর মমতা। ছাত্রীটির জন্যও কিছুটা টান। তবে মাঝেমধ্যে সব কিছু ছেড়ে চলে যেতে ইচ্ছা করে। তীব্র ইচ্ছা। কিন্তু কোথায় যাবে সে জানে না। নগর থেকে নগর তার আর ভালো লাগে না। রতনপুর। ভালোই। তবে সে তীব্র টান আর নেই। এখন তার ইচ্ছা করে অন্য কোথাও চলে যেতে। অন্য কোথাও বলে কোনো জায়গা নেই আনিস তা জানে না। মানুষ কখনো কখনো ভীষণ একা। আবার কখনো কখনো তার একা হয়ে যেতে ইচ্ছা করে। পাহাড়। আকাশে মেঘের ঘনরাশি। যেন নীল আকাশ মিশে গেছে পাহাড়ের সঙ্গে। পাশে সমুদ্রের গর্জন। মাঝে বসে আছে একটা মানুষ। যার কোনো পিছুটান নেই।
আনিসের ঠাঁই হয় দূর সম্পর্কের এক মামার বাসায়। মামার দুই ছেলে। তাদের পড়ানোর দায়িত্বও এসে পড়ে তার ওপর। দূরের হলেও মামা-মামি কাছেই টেনে নেন তাকে। তবুও আনিসের কেমন যেন লাগে। সে কোচিংয়ে ভর্তি হয়। পাশাপাশি মেসে সিট আর টিউশনি দুটাই খুঁজতে থাকে।


সে দিনটার কথা মনে পড়লে আজো রিয়ার হাসি পায়। সময় আসলে কত কিছুই না বদলে দেয়। তখনো সেমিস্টার সিস্টেম চালু হয়নি। ফার্স্ট ইয়ারের মাঝামাঝি সময়। আনিস আর তার ডিপার্টমেন্ট ছিল আলাদা। অপশনাল কোর্সের ক্লাসেই তাদের চোখাচোখি, দেখাদেখি। ছেলেটা অনেকদিন ধরেই তার পিছে ঘুরঘুর করছে। রিয়া তার বন্ধুদের কাছ থেকে শুনেছে, আনিস ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কিছুটা ভয় পেলেও রিয়া একে পাত্তা দেয়নি।
একদিন হঠাৎ কলাভবনের সিঁড়িতে রিয়ার পথ আটকে দাঁড়ায় আনিস। কিছু একটা বলার চেষ্টা করে। বিস্মিত, হতবাক, রিয়া চোখ বড় বড় করে আনিসের দিকে তাকায়। আনিস কিছু বলতে পারে না। পথ ছেড়ে দিয়ে ছোট্ট করে কেবল বলে, সরি।
পরদিন ক্লাসে রিয়া এলেও আনিস আসে না। আনিস এ ঘটনার কথা কাউকে বলে না। অবশ্য বলার মতো তেমন কেউ নেইও তার জীবনে। বন্ধুরা আছে, আবার নেইও। মানুষ কী কখনো মানুষের বন্ধু হতে পারে। আচ্ছা, বন্ধু কী?
রিয়া তার বন্ধুদের কাছে গতকালের গল্প বলে। অট্ট হাসির শব্দ শোনা যায়। কেন জানি তার খারাপ লাগে। বেশি না, কিছুটা। মনে হয় বন্ধুদের কাছে কথাটা বলা ঠিক হয়নি।
আনিস কত কি ঠিক করেছিল। রিয়াকে কী কী বলবে প্র্যাকটিস করেছিল। ফেসবুক তখনো চালু হয়নি। কমদামি একটা মোবাইল ছিল আনিসের। মাঝে মাঝে গ্রামে ফোন করে মায়ের সাথে কথা বলতো। রিয়ার ফোন নাম্বার আনিসের কাছে ছিল না। চাইলে হয়তো সংগ্রহ করতে পারতো। মেয়েটাকে তার ভালো লাগতো। আবার ভয়ও করতো। এক ধরনের দ্বিধা ছিল মনে। কিসের সে তা জানতো না। সে সত্যিই মেয়েটার প্রেমে পড়েছিল। একটা বইয়ের কথা মনে পড়ে তার। বইয়ের একটি চরিত্র বলতে থাকে। এখন পর্যন্ত দুটি মাত্র বই পড়েছে সে। এবং পৃথিবীর সব বই তার পড়া হয়ে গেছে। কারণ সব বইয়ের কাহিনী আসলে এক। একটা ছেলের সঙ্গে একটা মেয়ের দেখা হবে। হয় তাদের বিয়ে হবে, না হয় হবে না।
আনিসের গল্পটা তেমন ছিল না। সত্যি বলছি, তেমন ছিল না। এই প্রেমে পড়া, বিয়ে হওয়া, না হওয়ার বাইরেও একটা জীবন ছিল তার। ক্ষুদার বিরুদ্ধে সে লড়াই করেছে সব সময়। বিরতিহীন। মামার বাসায় বেশিদিন সে থাকেনি। এমন নয় যে, মামা-মামি তার যত্ন-আত্তী করেনি। কিন্তু তার ভালো লাগতো না। আশ্রিত জীবন কেন যেন তার ভালো লাগে না। ফাউস্টের একটি কথা অবশ্য তার খুব প্রিয়- আমি একজন ক্রীতদাস। যারই হই না কেন।
আনিসের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াটা কোনো চমক ছিল না। মেসের খরচ মেটাতে গিয়ে তার নাভিশ্বাস ওঠে। ওদিকে বোনটাও বড় হচ্ছে। ওর রেজাল্টও ভালো হচ্ছে। খরচ বাড়তে থাকে। চাপ বাড়তে থাকে। আনিসের চিন্তাও বাড়তে থাকে। হলে সিট পেতে শুরু হয় তার নতুন যুদ্ধ। শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আনিস ভেবেছিল তার রেজাল্ট যেহেতু ভালো সহজেই সিট পেয়ে যাবে। সে বিস্মিত হয়। হাউজ টিউটর আর প্রভোস্ট এদের হাতে আসলে কোনো ক্ষমতাই নেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতারাই হলের রাজা। অন্যরা সব প্রজা। শিক্ষকরা পাহারাদার।
খুঁজে খুঁজে আনিস তার এলাকার এক বড় ভাইকে বের করে। নিজের দুরবস্থার কথা খুলে বলে। ওই বড় ভাই, তাকে আশ্বস্ত করে। তোমার সিট হবে। কিছুদিন একটু কষ্ট করতে হবে। তার ঠিকানা হয় মহসিন হলের ২১১ নাম্বার রুমে। এই রুমের অন্য একটা নাম আছে গণরুম। সাধারণ কক্ষে ওঠার আগে শিক্ষার্থীদের বেশ কিছুদিন এখানে থাকতে হয়। রুমটা বড়ই বলা চলে। ১৬ জন শিক্ষার্থীর জন্য আবার একেবারেই ছোট। একজনের গা ঘেঁষে অন্যজনের জীবন। তবুও একটা ঠিকানা তো হলো। রাতেই আবার ডাক পড়ে গেস্ট রুমে। সকালে মধুর ক্যান্টিন। এ জীবন আনিসের একেবারেই অচেনা। রাজনীতি কখনো তাকে টানেনি। বাধ্যতামূলক রাজনীতি আর টিউশনি। সব মিলিয়ে জীবন হাঁপিয়ে ওঠে। এ জীবনটা ছেড়ে যদি চলে যাওয়া যেতো। আহারে।

কয়েক মাস যাওয়ার পরই রিয়া অনুভব করে আনিস ছেলেটার জন্য কেমন যেন মায়া লাগে। এটা কি করুণা না ভালোবাসা তা সে বুঝতে পারে না। বাবা তার বন্ধুর মতো। বাবার সঙ্গে আনিসের কথা কি একবার আলাপ করা যায়? বাবাকে আর বলা হয় না। তবে সেজো খালাসহ ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে সে। সবাই তাকে বুঝায়, এ সম্পর্কে না জড়ানোই ভালো। দরিদ্রতা, রাজনীতি আর চেহারা- সত্যি বলতে সবই ছিল আনিসের বিপক্ষে। রিয়া সিদ্ধান্ত নেয় আনিসের সঙ্গে সে কথা বলবে। সব বুঝিয়ে বলবে ছেলেটাকে।
রিয়ার ফোন পেয়ে যারপরনাই বিস্মিত, আনন্দিত হয় আনিস। তাদের দেখা হয়। অনেক কথা। রিয়া আনিসকে বুঝিয়ে বলে তাদের ব্যবধান। দেখো, আমি যদি তোমাকে বিয়ে করি তবে সারা জীবন আমার আত্মীয়-স্বজনদের সামনে তোমাকে মাথা নিচু করে থাকতে হবে। তোমাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে কোনো দিনও সম্ভব হবে না।
সেদিন হলে ফিরে আনিস অনেক কেঁদেছিল। সে চেষ্টা করে রিয়াকে ভুলে যেতে। কয়েক মাস পর একদিন নিজেকে সামলাতে পারে না আনিস। খুব ইচ্ছা করে রিয়াকে দেখতে। সকাল সকাল আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সামনে চলে যায়। অনেকক্ষণ অপেক্ষা। এক সময় দেখে রিয়া গাড়ি থেকে নামছে। ক্ষণিকের চোখাচোখি। একটু দাঁড়িয়ে আনিস চলে আসে। একটু পর দেখে তার মোবাইলে একটি ম্যাসেজ এসেছে। রিয়ারই ম্যাসেজ। লিখেছে, ডিসগাস্টিং ক্যারেক্টার।


অদ্ভুত একটা জীবন। ২১১ নাম্বার রুমটির জন্য কেমন যেন মায়া জন্মে গেছে আনিসের। গণরুম ছেড়ে বন্ধুদের সবাই চলে গেলেও তার যেতে ইচ্ছা করে না। বছর বছর নতুন ছাত্র আসে। নতুন জীবন, নতুন গল্প। পুরনো যন্ত্রণা। প্রায়ই সে বাড়ি যায়। মাকে দেখে আসে। বাবাকে হারানোর শোক এখনো মা ভুলতে পারেননি। কিছু শোক আসলে মানুষ কখনো ভুলতে পারে না। বেঁচে থাকার সময় হয়তো মানুষটার গুরুত্ব ওতোটা বুঝা যায় না। চলে যাওয়ার পরই যেটা অনুভব করা যায়।
চারদিকে এতো মানুষ। ঢাকা শহরে, এমনকি গ্রামেও মানুষ গিজ গিজ করছে। তবুও আনিসের ভীষণ একা লাগে। কাউকে কী সে হারিয়ে ফেলেছে। ‘আমার হারিয়ে ফেলার কেউ নেই। কাজেই খুঁজে পাওয়ারও কেউ নেই। আমি মাঝে মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলি। আবার খুঁজে পাই।’ আনিস তার প্রিয় এক লেখকের লেখা থেকে আওড়ায়। কিন্তু পুরো কথার সঙ্গে একমত হতে পারে না। আনিস কখনো নিজেকে খুঁজে পায় না।
সবুজ ক্যাম্পাস। অন্যরকম এক জীবন। নানা চরিত্র। বেশিরভাগই ক্রীতদাসের। স্বাধীনতা, অধিকার সবই বইয়ে আছে। ব্যক্তি মানুষের সম্মান, মর্যাদা ক্ষমতাবানদের হাতে বন্দি। আনিস ক্ষমতাবান আবার ক্ষমতাবান না। নিজের দ্বৈত চরিত্র প্রায়ই সে অনুভব করে। যন্ত্রণা পায়। তীব্র যন্ত্রণা। পাপ। অনুশোচনা। ফের পাপ।
রাজনীতি, ক্ষমতা বহু কিছুই বদলে দেয়। আনিস অনুভব করে এ বদল। নিজের জীবনের, চিন্তার বদলও তাকে ভাবায়। মাঝে মাঝেই চিন্তার সমুদ্রে ডুব দেয়। কোথায় যাচ্ছে সে। জন্ম থেকে বাল্যে, বাল্য থেকে কৈশোর। যুবক, বৃদ্ধ, মৃত্যু। এরপর কী? এই জীবনটাতো তার দুঃখে কেটেছে? পরের জীবনটা কেমন কাটবে।
একই মানুষ। আদম সন্তান। কিন্তু কত ব্যবধান। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পয়সার জন্য কেউ সকালের নাস্তা করতে পারে না। কেউ মার্সিডিজ হাঁকিয়ে বেড়ায়। কেমন না? ‘ব্রাহ্মণ মূর্খ হয়, অথচ শূদ্রে গীতা পাঠ করে। শঠ ও প্রতারকরা উৎকৃষ্ট অন্ন ভক্ষণ করে, অথচ পণ্ডিতরা কষ্ট পায়। লোকে ন্যায়কে দণ্ডাঘাত করে, অথচ অন্যায়কে পিতৃবৎ শ্রদ্ধা করে। পথে পথে পর্যটন করে দুধ বিক্রয় করতে হয়, অথচ সুরা এক স্থানে থেকেই বিক্রয় হয়ে যায়। পতিবতা সতী স্ত্রীর একখানি ধুতি মিলে না, অথচ দুশ্চারিনী কামিনীরা প্রকৃষ্ট পরিচ্ছদ পরিধান করে। অতএব, কবীর কহেন, ভাই! জগতের কেমন কৌতুক, দেখ।’
মনীষী কবীর কী ঠিকই বলেছেন? না কি আনিসের মতো পরাজিত মানুষেরা এসবের মধ্যে সান্ত্বনা খুঁজে। আনিস এখনো মাঝে মাঝে রিয়াকে ফোন দেয়। রিয়া ফোন ধরে না। প্রায়ই ওয়েটিং এ থাকে। ব্যর্থ আক্রোশে হাত-পা ছুড়ে মারে আনিস। নিজের পরাজয় সে অনুভব করে, কিন্তু মানতে চায় না। নিজেকে সে বুঝায়, যা পাওয়ার যোগ্য তুমি নও তা প্রার্থনা করো না। মঙ্গলময় নিশ্চয়ই কোথাও তোমার জন্য আরো ভালো কিছু রেখেছেন। কিন্তু এ কথা সে মানতে পারে না। তীব্র এক দহন তাকে তাড়া করে বেড়ায়।
মায়ের মুখ ভেসে আসে তার চোখের সামনে। মৃত পিতার মুখ। সে পড়ালেখায় মনোযোগী হয়। রাষ্ট্র ক্ষমতার বদল তার জীবনটা তছনছ করে দেয়। এতো কিছুর মধ্যেই তার জীবনে সবচেয়ে আনন্দময়ী ঘটনা ঘটে। রিয়া আনিসকে বিয়ে করে। সে এক লম্বা কাহিনী। সেটা এ গল্পের মূল উপজীব্য নয়। সে কাহিনী অন্য কোন দিন বলা যাবে।
সবার জন্য চমক নিয়ে হাজির হয় আনিস। বিসিএস এ উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু যোগদান করতে পারে না। ক্লিয়ারেন্স মেলে না তার। হতাশ আনিস আরো হতাশ হয়ে পড়ে। সে যে ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি করতো তারাও এখন দৌড়ের ওপর। মাঝে মধ্যে তাদের সঙ্গে আড্ডা দেয়। মিছিল মিটিংয়ে যোগ দেয়। দেশে ভয়াবহ অস্থিরতা। হরতাল-অবরোধ, পেট্রোল বোমা, আগুন, মানুষের মৃত্যু।
ডিপার্টমেন্টের এক বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে যোগ দেয় আনিস। রাজনীতি-মিছিল-মিটিং সব কিছু থেকে দূরে এখন সে। ভালো বেতন। কষ্টটা যদিও একটু বেশি। মা, বোন, রিস্তি আর রিয়া এদের নিয়ে আনন্দের জীবন। হঠাৎই একরাতে বদলে যায় সব।

১০
আনিসের গল্পটা শেষ হয়ে আসছে। একবার দেখা যাক অন্যরা কেমন আছে। সালেহা বেগমের জীবনটা একেবারেই বদলে গেছে। একটি সংগঠনের প্রধান তিনি। মাঝেই মাঝেই প্রেস ক্লাব, ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে যান। সভা-সেমিনারে অংশ নেন। তার মতো আরো অনেক ছেলের মায়েরাও আসেন সেখানে। তাদের কান্না অবশ্য রাষ্ট্র শুনতে পায় না। আনিসের বন্ধুরা মাঝে মাঝে আসেন। মা’কে সান্ত্ব্তনা দেন।
রিয়া স্কুলে যান। ক্লাস নিয়ে আবার ফিরে আসেন। চিন্তার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে সে। কাউকেই বিরক্ত করে না। একা থাকতেই ভালো লাগে তার। নিজের দিকে তাকিয়ে নিজেই অবাক হয়। ছোট বেলায়, বড় বেলায় কত কথা বলতো সে। বেশি কথা বলার জন্য মায়ের কত বকা শুনেছে। বন্ধুরাও মাঝে মাঝে বিরক্ত হতো। অথচ এখন কেউ তাকে জোর করেও কথা বলাতে পারে না।
কয়দিন আগে রিস্তির জন্মদিন গেছে। বন্ধুরা, স্কুলের শিক্ষকরা, আত্মীয়স্বজনরা সবাই বাসায় এসেছিল। সবাই খুব চেষ্টা করেছে রিস্তিকে খুশি রাখতে। রিস্তিও হাসির অভিনয় করে গেছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই সে বাবাকে মিস করছে। বাবার অভাব কোনো দিনও কেউ পূরণ করতে পারে না।
মানুষতো আসলে শেষ পর্যন্ত একাই। একা একা থাকতে আনিস এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছে। শুরুর দিনগুলো কী ভয়ঙ্করই না ছিল। দিনতো একই আছে। তার অনুভবের জগতই আসলে বদল হয়েছে। গ্রীক ট্র্যাজেডির নায়কদের মতোই নিয়তি তার। যতই সে চেষ্টা করুক এ নিয়তিতে সে কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে না। যা লেখা আছে তাই হবে।
নিশ্চয়ই সকল মানুষ পাপে নিমজ্জিত। তারাই উত্তম যারা তওবা করে। আনিস পবিত্র গ্রন্থের এই বাণী অনুভব করার চেষ্টা করে। পেছনের দিকে তাকিয়ে সে শিউরে ওঠে। এতো পাপ। সে কী ক্ষমা পাবে।
আর একটা জীবন পেলে আনিস কী চাইতো পরম করুণাময়ের কাছে। একটাই তার চাওয়া হতো- কেউ যেন তাকে অপমান না করে, কারও দ্বারা যেন সে অপমানিত না হয়। এই জীবনে আনিস সত্যি ছোটলোকের চেয়েও ছোটলোক ছিল। কত অপমান আর গ্লানিভরা এই জীবন। মানুষের কাছ থেকে অবহেলা পাওয়ার চেয়ে বড় অপমান তো আর জীবনে নেই।

১১
গভীর রাত। ঘন কুয়াশা। চাঁদের আলো। নদীতে উথাল-পাতাল ঢেউ। আনিস চিৎকার করে বলে ওঠে বাহ! কী সুন্দর। কে যেন পেছন থেকে ডাকে।
আনিস বুঝতে পারে না। তার মধ্যে এক ধরনের বিভ্রম তৈরি হয়। বহু বছর আগে রিয়াকে দেখেও এ ধরনের বিভ্রম তৈরি হয়েছিল। মনে হয়েছিল বাহ! কী সুন্দর। মায়ের মুখ মনে পড়ে। আনিস ছোট্ট করে ডাকে মা, মা। সালেহা বেগম হয়তো শুনতে পান, হয়তো পান না। একটা বিভ্রমের মধ্যেই আমাদের জীবনটা কেটে যায়। দেখতে দেখতে সব শেষ হয়ে যায়। ডাক এসে পড়ে।
আজ আনিসের ডাক এসেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status