ঈদ আনন্দ ২০১৮

নিসর্গ

সুন্দরবনে বিপন্ন বাঘ

মুকিত মজুমদার বাবু

২৮ জুন ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৬:৫৪ পূর্বাহ্ন

সৃষ্টির শুরু থেকেই চলছে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সংঘাত। শিকার জীবন, বসতি স্থাপন, শিল্পের প্রসার, খাদ্যের সংস্থানসহ প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে গিয়ে মানুষ বার বার জড়িয়ে পড়ছে প্রকৃতির সঙ্গে সংঘাতে। কখনও জেনেশুনে, কখনও অজান্তে। অর্থলিপ্সু মানুষ পাহাড়ের মাটি কেটে গড়ে তুলছে টাকার পাহাড়। সেই পাহাড়ের আহারে পরিণত হচ্ছে পাহাড়ে বসবাসরত অন্য মানুষ। বন উজাড় করে বসতি গড়ে উঠছে; সেই সঙ্গে বন্যপ্রাণী আর মানুষের সংঘাত বাড়ছে। মিডিয়ায় প্রায়ই খবর হয়ে আসে বন্যহাতি আর মানুষের পাল্টাপাল্টি আক্রমণের কথা।
শোনা যায় লোকালয়ে বাঘের আক্রমণে মানুষের প্রাণহানির খবর। সেই সঙ্গে এটাও শোনা যায়, মানুষখেকো বাঘটি আর ফিরে যেতে পারেনি আপন ডেরায়। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় নিত্যনৈমিত্তিক না হলেও এ পর্যন্ত বিভিন্নভাবে সুন্দরবনে প্রায় ১২০টি বাঘকে হত্যা করা হয়েছে। গত ৩২ বছরে সুন্দরবন ও সংলগ্ন এলাকায় বন উজাড় করে বসতি স্থাপন, বাঘ লোকালয়ে এলে মানুষের মেরে ফেলার মনোভাব নিয়ে পিটুনি, শিকারিদের অপতৎপরতা, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, মিষ্টি জলের অভাব, পানিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততা, বনে খাদ্য সংকট, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি কারণে এ পর্যন্ত ৬৭টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। বাঘের মৃত্যু প্রসঙ্গে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার-ইন্ডিয়ার বাঘ সংরক্ষণ কর্মসূচির (টিএনসি) পরিচালক ড. এম কে রণজিত সিং তার এক নিবন্ধে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, প্রাণিজগতের মধ্যে সবচেয়ে অরক্ষিত হলো বাঘ। এর সংখ্যা দিন-দিন কমছে। বাঘ সংরক্ষণে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে সুন্দরবনের সৌন্দর্য বিরল প্রজাতির এই প্রাণীটি এক সময় সুন্দরবন থেকে হারিয়ে যাবে। অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খানের গবেষণা তথ্যমতে, প্রতি বছর চোরা শিকারিদের হাতে গড়ে ৩ থেকে ৫টি বাঘ মারা পড়ে। তারা চামড়া আর হাড়ের জন্য বাঘ শিকার করে যা বিক্রি হয় লাখ লাখ টাকায়। চীন ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে বাঘের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যাপক চাহিদা বাড়ায় মারা পড়ছে পৃথিবীর বিপন্ন প্রাণী বনের অতন্দ্র প্রহরী বাঘ। তাই জাতিসংঘের উদ্যোগে ১৯৮৭ সালে অতি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী হিসেবে বাঘ কিংবা বাঘের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবসা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তারপরও লুকিয়ে ছাপিয়ে চলছে বাঘের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির অপতৎপরতা।
২০০৪ সালে ইউএনডিপি, বাংলাদেশ ও ভারতের বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় বাঘের পায়ের চিহ্নের ওপর ভিত্তি করে একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। সেই জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা দেখানো হয় ৪৪০টি। এর মধ্যে পুরুষ বাঘ ১২১টি, মা বাঘিনী ২৯৮টি ও বাচ্চা ২১টি। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ইউনিয়নের (আইইউসিএন) লাল তালিকা অনুযায়ী বাংলাদেশে বাঘ রয়েছে ২০০টি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান ২০০৬ সালে ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতির মাধ্যমে শুমারি করে প্রায় ২০০টির মতো বাঘ পান। সামপ্রতিককালে ক্যামেরা জঙ্গলে পেতে ছবি তুলে বাঘের চামড়ার কালো ডোরার অবস্থান বিশ্লেষণ করে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় একশ’র কিছু বেশি।
প্রাণিবিদদের মতে, ১৯৭৫ সালের পর সুন্দরবনে আর বাঘ বাড়েনি। অথচ প্রাকৃতিক কারণে এবং চোরা শিকারিদের হাতে প্রতি বছরই মারা যাচ্ছে একাধিক বাঘ। ইতিহাস থেকে জানা যায়, অতীতে গাজীপুর, সিলেট, রংপুর, যশোর, খুলনা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল অঞ্চলসহ বাংলাদেশের ১৭টি জেলায় ছিল বাঘের অবাধ বিচরণ। কমতে কমতে এখন শুধু সুন্দরবনে বাঘের দেখা মেলে। তবে কোনো কোনো প্রাণিবিশেষজ্ঞ মনে করেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের গহীন বনে বাঘ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বাঘের সংখ্যা শুধু যে সুন্দরবনে কমছে তা কিন্তু নয়, বিশ্বে এখন বাঘ মহাবিপন্ন প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত। এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ১৯০০ সালের প্রথম দিকে বিশ্বের ১৩টি দেশে ১ লাখ বাঘ থাকলেও বর্তমানে বাঘের সংখ্যা ৩,২০০টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। টিআরএএফএফআইসি প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে বাঘ রয়েছে এমন দেশে বাঘের ৬৫৪টি চামড়া, দেহাবশেষ ও হাড় জব্দ করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, এ সময়ে ১ হাজার ৪২৫টি বাঘ মারা গেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী শতাব্দীতে বিপন্ন এই প্রাণীটি পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে। বিভিন্ন দেশ থেকে বিলুপ্ত হতে হতে এখন মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি দেশে বাঘের অস্তিত্ব বিদ্যমান। দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, চীন, ভুটান, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও রাশিয়া। এই দেশগুলোর বনাঞ্চল সংরক্ষণে সহায়তা করছে বিশ্বব্যাংক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউএসএইড, গ্লোবাল টাইগার ইনিশিয়েটিভ (জিটিআই), জিআইজেডসহ নানান আন্তর্জাতিক সংস্থা। এই ১৩টি দেশ টাইগার রেঞ্জ কান্ট্রি বা টিআরসি নামে পরিচিত।

মানুষের সচেতনতা বাড়াতে এবং বিপন্ন বাঘের অস্তিত্ব যাতে চিরতরে হারিয়ে না যায় সে জন্য ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর ২৯শে জুলাই পালন করা হয় বিশ্ব বাঘ দিবস। রাশিয়ার সেন্টপিটার্সবার্গ শহরে প্রথম অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্ব বাঘ সম্মেলন। এতে ঘোষণার মূল বিষয়গুলো ছিল- আগামী ২০২২ সালে বাঘের সংখ্যা বর্তমান সংখ্যা থেকে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা; বাঘ ও বাঘের আবাসস্থল হিসেবে চিহ্নিত বনাঞ্চলগুলোকে সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে সংরক্ষণ করা; বাঘের আবাসস্থলকে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের মূূল আধার হিসেবে চিহ্নিত করে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা; বাঘ রয়েছে এমন বনাঞ্চলে কোনো শিল্পকারখানা স্থাপন না করা, খনিজ পদার্থ উত্তোলন বা পরিবেশ দূষণের মতো কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা না করা; বনাঞ্চলের চলমান টহল ব্যবস্থাকে উন্নত করে বাঘ ও বাঘের শিকার প্রাণীর নিধন বন্ধ করা; বাঘ সংরক্ষণে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি ইত্যাদি।
যুগে যুগে বাঘ মানুষের আতঙ্ক, অনুপ্রেরণা ও শ্রদ্ধার কারণ হয়ে আছে। বাঘকে বাংলাদেশ, ভারত ও মালয়েশিয়ায় জাতীয় পশুর মর্যাদা দেয়া হয়েছে। বেঙ্গল টাইগার আমাদের অহংকারের প্রতীক। বীরত্বের প্রতীক। বিভিন্ন সময় সাহস, শৌর্য-বীর্য ও শক্তির জন্য মানুষকে বাঘের সঙ্গে তুলনা করা হয়। যেমন: বাংলার বাঘ বলা হত আশুতোষ মুখোপাধ্যায়কে। আবুল কাশেম ফজলুল হককে বলা হত শের-এ-বাংলা। মনসুর আলি খান পতৌদিকে বলা হতো টাইগার। আবদুল কাদের সিদ্দিকীকে বলা হতো টাইগার কাদের বা বাঘা কাদের। টিপু সুলতানের উপাধি ছিল ‘শের-ই-মহীশূর’ অর্থাৎ মহীশূরের বাঘ। অসাধারণ ক্ষীপ্রতা, দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা আর কৌশলপূর্ণ রাজ্য পরিচালনা জন্য ইংরেজরা তাকে এই উপাধিতে ভূষিত করেন। আবার মহীশূরের স্থানীয়ভাষায় ‘টিপু’ শব্দের অর্থও বাঘ। ইতিহাসের এই বীরোচিত চরিত্রের বাঘ প্রীতি ছিল অবাক করার মতো। ছোটবেলা থেকেই তিনি বাঘ পুষতেন। যে আসনে বসতেন তাকে বলা হত ব্যাঘ্রাসন। আট কোণা এই আসনটির ঠিক মাঝখানে ছিল বাঘের মূর্তি। ৮ ফুট চওড়া আসনটির রেলিংয়ের মাথায়বসানো ছিল সোনার তৈরি দশটি বাঘের মাথা। আর পুরো ব্যাঘ্রাসনটাই ছিল বাঘের শরীরের মতো ডোরাকাটা। টিপু সুলতানের রাজ্যের প্রতীকও ছিল বাঘ। পরিধেয় সব পোশাক ছিল হলুদ-কালো রঙে ছাপানো আর বাঘের শরীরের মতো ডোরাকাটা। তিনি যে তলোয়ার ব্যবহার করতেন, তার গায়েও ছিল ডোরা দাগ এবং হাতলে ছিল খোদাই করা বাঘের মূর্তি। এমনকি তাঁর ব্যবহৃত রুমালও ছিল বাঘের মতো ডোরাকাটা। রাজ্যের সমস্ত সৈনিকের পোশাকে ছিল বাঘের ছবি। সৈন্যদের ব্যবহার্য তলোয়ার, বল্লম, বন্দুকগুলোর নল, কুদো, হ্যামারেও আঁকা ছিল বিভিন্ন আকারের বাঘের মূর্তি। তাঁর পতাকায় লেখা থাকতো ‘বাঘই ভগবান’। প্রায়ই তিনি বলতেন, ‘শিয়াল-ভেড়ার মতো ২০০ বছর বাঁচার চেয়ে বাঘের মতো দু’দিন বেঁচে থাকাও ভালো।’ বাঘকে এত সম্মান ও মর্যাদা প্রদানের পাশাপাশি এই প্রাণীটিকে বিপন্ন করে তুলতেও আমাদের রয়েছে অনেক বড় ভূমিকা। বিভিন্ন সময় বাঘ শিকার করা ছিল সাহসিকতার পরিচায়ক। বাঘ শিকার করলে নানাভাবে সেই ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করা হতো। সমাজের মানুষ তাকে সমীহ করে চলতো। বাঘ শিকার ছিল অবসরের বিনোদন কিংবা বংশপরম্পরায় অতীত ঐতিহ্যকে ধরে রাখার প্রয়াস। আগেকার রাজ-রাজড়াদের গল্প উঠলে আজও নানি-দাদিরা বাঘ-হরিণ, পশু-পাখি ইত্যাদি শিকারের বর্ণনা আকর্ষণীয় করে বলেন শিশুদের মনের কৌতূহল মেটাতে। আজও প্রায় ঘরে শোনা যায়- ‘এক দেশে ছিল এক রাজা। তিনি তার মন্ত্রীদের নিয়ে গেলেন বাঘ শিকারে...।’
রাজ-রাজড়াদের পর জমিদারি প্রথাতেও অব্যাহত ছিল বাঘ শিকার। অনেক জমিদার বাঘ মেরে তার ওপর পা তুলে বন্দুক হাতে শিল্পীকে দিয়ে ছবি আঁকিয়ে রাখতেন সেই স্মরণীয় মুহূর্তকে ধরে রাখতে। আভিজাত্য আর মর্যাদার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে বৈঠকখানায় টাঙিয়ে রাখতেন বাঘের চামড়া। অনেক রাজা-জমিদার আবার শখ করে বাঘ পুষতে ভালোবাসতেন।

সময়ের কাঁটায় বেলা গড়িয়েছে অনেক। ইতোমধ্যে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বালিনিজ, জাভানিজ ও কাস্পিয়ান টাইগার। কোনোমতে টিকে আছে- বেঙ্গল, সাইবেরিয়ান, সুমাত্রান, সাউথ চায়না ও ইন্দো-চায়না- এ পাঁচ প্রজাতির বাঘ।
বাংলাদেশ ও ভারতের বেঙ্গল টাইগারের শেষ আশ্রয়স্থল এখন সুন্দরবন। অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে যার আয়তন ছিল বর্তমানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। বঙ্গোপসাগরের লোনা পানির কোলঘেঁষে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বন্ধুপ্রতিম মায়াবী অরণ্য। ঝড়-ঝাপটা থেকে বাঁচিয়ে রাখার একমাত্র রক্ষাকবজ। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। আয়তন ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার। ১৯৯২ সালের ২১শে মে সুন্দরবন রামসার স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো এ বনকে চিহ্নিত করে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান’ হিসেবে। সুন্দরবনের প্রায় ১ লাখ ৪৩ হাজার হেক্টর এলাকাকে বন্যপ্রাণীর জন্য অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয় ১৯৯৯ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি।
বন বিভাগের জরিপ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবনের পাখির বাস প্রায় ৩১৫ প্রজাতির। এর মধ্যে পরিযায়ী পাখি প্রায় ৮০ প্রজাতি। রয়েছে প্রায় ৪০০ প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী। গাছপালা রয়েছে প্রায় ৩৩৪ প্রজাতির। শৈবাল ও অর্কিড আছে যথাক্রমে ১৬৫ প্রজাতির ও প্রায় ১৩ প্রজাতির। এছাড়াও এ বনে রয়েছে প্রায় ৩৭৫ প্রজাতির বেশি বন্যপ্রাণী। যার মধ্যে সরীসৃপ আছে প্রায় ৩৫ প্রজাতির, স্তন্যপায়ী প্রায় ৪২ প্রজাতির, সাদা মাছ প্রায় ২৯০ প্রজাতির, চিংড়ি প্রায় ২৪ প্রজাতির, কাঁকড়া প্রায় ১৫ প্রজাতির, মলাস্কা প্রায় ৪৩ প্রজাতির ও ১ প্রজাতির লবস্টার।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সুন্দরবনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বনটি দেশের বনজ সম্পদের একক বৃহত্তম উৎস। পূর্ব সুন্দরবন বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর সুন্দরবন থেকে মৎস্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে গড়ে ৫-৭ কোটি টাকা আয় হয়। বনের ওপর নির্ভরশীল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৭ লাখ পরিবার। প্রতিবছর সুন্দরবন থেকে ১৫-১৬ হাজার মণ মধু আহরিত হয়। জেলেরা ১৫ হাজার টন সাদা মাছ, প্রায় ৪ হাজার টন চিংড়ি ও কাঁকড়াসহ প্রায় ৮০০ টন রুপালি ইলিশ আহরণ করে। পাশাপাশি সুন্দরবন ঝড়-ঝঞ্ঝাপ্রতিরোধক, শক্তি সম্পদের আধার এবং দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও অনন্য।
বাঘ রয়েছে এমন বনের জীববৈচিত্র্য, খাদ্যশৃঙ্খল ও প্রতিবেশব্যবস্থার প্রধান নিয়ন্ত্রক বাঘ। বনের প্রাকৃতিক বংশবৃদ্ধি যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য বাঘই বনের প্রতিবেশ ব্যবস্থা ঠিক রাখে। যে বনের অবস্থা যত ভালো সেখানে বাঘের সংখ্যাও তত বেশি। বাঘ কমে যাওয়ার মানে বনাঞ্চলের অবস্থা বাঘের অনুকূলে না থাকা, যা বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য সুখকর নয়। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে বাঘ আছে বলেই সুন্দরবন টিকে আছে। সুন্দরবন আছেই বলেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলীয় মানুষদের রক্ষা করার ঢাল আছে। অতএব, নিজেদের বাঁচাতেই আমাদের সুন্দরবন ও বিপন্ন বাঘকে বাঁচানোর কথা সবাইকে ভাবতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে তৃণমূল পর্যায়ে চালাতে হবে প্রচারণা। এগিয়ে আসতে হবে পরিচালক কমল সাদানার মতো ‘রোর-টাইগার্স অব সুন্দরবন’ চলচ্চিত্রের মতো অন্যান্য গণমাধ্যমকেও। তবেই রক্ষা পাবে সুন্দরবন। রক্ষা পাবে সাহস, শৌর্য-বীর্য আর শক্তির প্রতীক বেঙ্গল টাইগার।

লেখক: চেয়ারম্যান, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status