ঈদ আনন্দ ২০১৮

স্মৃতিকথা

আরমানিটোলায় স্মৃতিময় ঈদ

সারোয়ার হোসেন টুটুল

২৮ জুন ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৫:১৯ পূর্বাহ্ন

পুরনো ঢাকার মোঘল আমলে ঈদ আনন্দ মিছিল

ছোটবেলা থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত রোজার ঈদ করতাম আরমানিটোলায় নানাবাড়িতে। আর কোরবানির ঈদ করতাম দাদাবাড়িতে। আমার নানা খান মোহাম্মদ সেরাজুল হক থাকতেন আরমানিটোলার বিশাল এক বাড়িতে। তিনি একাধারে ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, দানশীল ও সর্বোপরি একজন ভালো মনের মানুষ। একনিষ্ঠভাবে স্বাধীনতার আগে  ১৯৭০ সাল  পর্যন্ত তিনি রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। আমার নানার রাজনীতি ছিল কিভাবে বাঙালিদের ব্যবসায়ী বানানো যায়।
তিনি ব্যবসায়ী বানাতে উদ্বুদ্ধ করতেন পরিচিত বন্ধু-বান্ধবদের। কতজনকে যে তিনি নিজে ধরে এনে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায় ঢুকিয়েছেন তার হিসাব নেই। কেননা, বাঙালি বেশি ব্যবসার দিকে যেত না। বেশিরভাগ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতো অবাঙালি। আমার নানার ইসলামপুরে অনেক বড় কাগজের শোরুম ছিল। তার পেছনে তখনকার দিনের অত্যাধুনিক প্রিন্টিং প্রেস ছিল। যেখানে জার্মানির তৈরি সেই সময়ের সবচেয়ে আধুনিক মেশিন হামাদার মেশিন ছিল চারটি। ‘এলিট প্রিন্টিং প্রেস’ নামে বিশাল প্রিন্টিং ইন্ডাস্ট্রি ছিল নানার নানা ‘পূর্ব পাকিস্তান স্কুল সাপ্লাই কোম্পানি’ প্রেসে পূর্ব পাকিস্তান টেক্সট বুক বোর্ডের বই ছাপাতেন। এ ছাড়াও ‘মতি কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি’ নামে নানার কোম্পানি ছিল যেখান থেকে তৈরি হতো ‘রেশমী স্নো’, ‘রেশমি তেল’সহ বিভিন্ন কসমেটিকস আইটেম। ইসলামপুরে নানা পরোপকারী ব্যবসায়ী হিসেবে অনেক সুনাম অর্জন করেছিলেন। তিনি একাধারে ‘ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর যুগ্ম সচিব, ‘প্রিন্টিং ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন’সহ সভাপতি, ‘ইস্ট বেঙ্গল পেপার ট্রেডার্স এসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক এবং ‘ঢাকা জেলা বোর্ড’-এর চিফ হুইপ। আমার বাবা সরকারি চাকরীজীবী হওয়ায় রোজা শুরু হওয়ার একদিন আগেই চলে আসতাম নানাবাড়ি আরমানিটোলায়। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রতিটি মিনিট অপেক্ষা করতাম কখন আসবে চানখারপুল। চানখারপুল এলেই মনে হতো এইতো এসে গেছি নানাবাড়ির কাছাকাছি। মনে আছে একবার ঘোড়ার গাড়ি করে গিয়েছিলাম নানাবাড়ি। দিনবদল হলে সিএনজি এবং গাড়িতে যেতাম। চানখারপুল থেকে যখন সেন্ট্রাল জেলের পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় আরমানিটোলার মাঠ পর্যন্ত প্রতিটা বাড়ি চেনা হয়ে উঠেছিল। অপেক্ষায় থাকতাম কখন আসবে নানাবাড়ি। বর্তমানের আরমানিটোলা মাঠের পূর্ব দিকের ‘পুলিশ ফাঁড়ির’ যে বাড়িটা ব্যবহার করা হচ্ছে তার পাশেই ছিল নানাবাড়ি। আমার নানা থাকতেন আরমানিটোলার বিশাল এক বাড়িতে। সামনে ছিল বড় একটা সিংহদ্বার দরজা। যে দরজা দিয়ে আত্মীয়স্বজন বা একান্ত আপনজন ঢুকতেন। সিংহ দরজার আগে ছিল বড় একটা বৈঠকখানা। বৈঠকখানার পাশেই ছিল ছোট একটা রুম যেটা ছিল ছোট মামার পড়ার রুম বা থাকার রুম। বাড়িতে মাস্টার এলে খালাদের বৈঠকখানার রুমেই পড়াতো। বৈঠকখানার ঘর থেকে একটু পেছনে পাশেই ছিল বিশাল একটা রান্নাঘর। বর্তমানের বিয়ে বাড়ির রান্না করতে গেলে যত বড় রুম লাগে সেই রকম বড় ছিল রান্নাঘরটি। রান্নাঘরের পাশে ছিল বড় একটা গোসলখানা। সেখানে একটা ছোট হাউসের মতো ছিল সুইমিংপুলের মতো দেখতে। সেখানে মজা করে হাউসে নেমে অনেক সময় ধরে গোসল  করতাম। বৈঠকখানার পরই ছিল  বিরাট একটা উঠোন। তারপর উঠোন পার হয়ে অনেক বিশাল বড় বড় ৪টা রুম।  উঠানের পর ৪ রুমের সামনে পুরোটাই ছিল বারান্দা। বিশাল এক বারান্দা। বারান্দায় অনেকগুলো চেয়ার লম্বা করে দেয়া ছিল। নানা ও নানি ভীষণ নাতি, নাতিদের মধ্যে আমাকে সবেচেয়ে বেশি ভালোবাসতো। আমি আরমানিটোলায় গেলে সব সময় নানা-নানির মাঝখানে ঘুমাতাম। নানা যখন ইসলামপুর প্রিন্টিং প্রেস থেকে দুপুরে বাসায় আসতেন বিশ্রামের জন্য তারপরই নানা-নানি দুজনেই বারান্দায় চেয়ার টেনে আমাকে মাঝখানের চেয়ারে বসিয়ে বলতেন বাবা গান শোনাও। আমিও গলা ছেড়ে গান শুনাতাম নানা-নানিকে। কত যে আনন্দ পেতো নানা-নানি! আর উনাদের মুখের দিকে তাকিয়ে যখন দেখতাম খুশি হয়ে শুনছে আমার গান তখন দ্বিগুণ উৎসাহে এক নাগাড়ে গান গেয়ে শুনাতাম। এখনো মনে পড়ে সে কথা। আমার মনে আছে আমাকে গান গাইতে বললে বেশির ভাগ সময়ই আবদুল আলীমের গান ‘সর্বনাশা পদ্মা নদী’, আব্বাস উদ্দীনের ‘শোন মোমিন মুসলমানো করি আমি নিবেদনো এই দুনিয়া ফানা হবে জেনে জানো না’, আজম খানের ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’ একের পর এক গান শুনাতাম। আমার আম্মারা ছিল ৭ বোন ও ৩ ভাই। খালা ও মামারা কি যে ভালোবাসতো আমাদের, বলে বোঝাতে পারবো না। ছোটবেলায় প্রচণ্ড দুষ্ট ছিলাম। এত দুষ্টুমি, যন্ত্রণা দেয়ার পরও আমরা যাওয়ামাত্রই পয়লা রোজা থেকেই মনে হতো  ঈদের আনন্দ শুরু হয়ে গেছে।  আমরা গেলেই মনে হতো নানা-নানির আনন্দ আর খুশি শুরু হয়ে গেছে। আমার দুষ্টামির ছোট একটা বর্ণনা দিচ্ছি। আমরা নানাবাড়ি গিয়েছি দুপুরের দিকে। দুপুরের পরপরই বারান্দার এবং ঘরের সব চেয়ার ও সোফাগুলো টেনে উঠোনে এনে উল্টা করে রেলগাড়ি বানিয়ে খেলছিলাম মনের আনন্দে। আমার ছোট মামা পড়তেন নটর ডেম কলেজে। বিকেলে কলেজ থেকে এসে বাড়িতে ঢুকে ভয় পেয়ে নানাকে উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলেন আব্বা বাসায় কোনো ডাকাতি হয়েছে কিনা। আমার নানা হাসিমুখে খুশি হয়ে বললেন তোমার ভাগ্নাভাগ্নি এসেছে। এই অবস্থা দেখেও ছোট মামা চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন বুগগা কোথায়। আমাকে ছোটবেলা থেকেই ছোটমামা ডাকতো বুগগা বলে। পুরনো ঢাকায় এখনো চালু আছে কাফেলার দল আসতো গান গাইতে গাইতে রোজাদারদের ঘুম ভাঙাতে। চাঁদ রাতে এসে যার যত খুশি চাঁদা নিয়ে খুব খুশি মনে চলে যেতেন। সমস্ত রমজানে নানা ইফতারির জন্য কত ধরনের যে খাবার নিয়ে আসতেন চকবাজার থেকে। প্রায়ই সূতা কাবাব, ক্ষিরি কাবাব, বটি কাবাব, কাচ্চি বিরিয়ানি, দইবড়া, পনিরসহ অনেক ধরনের কাবাব। এতসব ইফতারির সমাহার দেখে অবাক হয়ে যেতাম। কত ধরনের যে শরবত বানাতে পারতেন নানি। সবচেয়ে মজা পেতাম নানির হাতের দুধের সঙ্গে রুহ আফজা দিয়ে পেস্তা বাদাম দিয়ে যে শরবতটা বানাতো।      
পয়লা রোজা থেকেই কেনা কাটার ধূম পড়ে যেত নানাবাড়িতে। নানা খুব শৌখিন মানুষ ছিলেন।  প্রত্যেক ঈদেই মার্কেটে নতুন ডিজাইন বা নতুন কাপড় এলে সেটাই কিনে দিতেন তিনি। নানা প্রায়ই লাহোর যেতেন ব্যবসায়িক কাজে। একবার পিআইএ এয়ারলাইন্স আসার সময় দেখেন যে এয়ারহোস্টেসরা লেডি হ্যামিলটন কাপড় দিয়ে সালোয়ার কামিজ পড়েছে। ওই সময় মার্কেটে নতুন ধরনের কাপড় এসেছে যার নাম লেডি হ্যামিলটন। সেইবার নানা আমার খালাদের সবার সালোয়ার কামিজ লেডি হ্যামিলটন কাপড় দিয়ে বানিয়ে দিয়েছিলেন। যেটাই মার্কেটে নতুন কাপড়  আসতো যেমন শিফন, ব্রকেট, জর্জেট ইত্যাদি নানা সবসময় খালাদের কিনে দিতেন। আমি ছোটবেলা থেকেই দেখেছি আমার চতুর্থ খালা মাঝে মাঝেই হঠাৎ করে খাতা পেন্সিল নিয়ে বসে ছড়া বা কবিতা লিখতে বসতো। বেগম ম্যাগাজিনে ঈদ সংখ্যায় সব সময়ই ছড়া বা কবিতা লিখতো। তাই বেগম ম্যাগাজিন দেখার জন্য অধীর আগ্রহে চেয়ে থাকতাম কখন বের হবে বেগম ম্যাগাজিন। ১০ রোজার পরেই আমার আম্মার সমসাময়িক বোন নার্গিস খালা চলে আসতেন নানাবাড়িতে রোজার ঈদ করতে। আমার খালু সোনালী ব্যাংকের জিএম ছিলেন। আমার সমসাময়িক খালাতো ভাই ছিল যার নাম শোয়েব। তখন আর আমাদের পায় কে? দিনের বেলা রেলগাড়ি আর রাতের বেলা সব ঘরের বালিশ টেনে এনে বালিশ ঘর বানিয়ে খেলতাম। তারপর বালিশ নিয়ে মারামারি আরো কত কি!
সব মার্কেটেই ঘুরে ঘুরে জামা কাপড় কিনতাম। আমার প্রত্যেক ঈদেই ৬-৭ সেট কাপড়  পেতাম। সবাই মিলে একসঙ্গে মার্কেটে যাওয়া যে কত আনন্দের বলে বোঝানো যাবে না। ইসলামপুর, রমনা ভবন, নিউ মার্কেট থেকে প্যান্ট-শার্ট ও চকবাজার থেকে কাবুলী ড্রেস, পাঞ্জাবি কিনতাম। রমজান জুড়েই কেনাকাটা করতেন নানা। আমার নানারা দুই ভাই, এক বোন ছিলেন। বড়বোন মোফেলা খাতুনের ছিল এক ছেলে ও চার মেয়ে। বড়বোন বা বুজিকে প্রচণ্ড শ্রদ্ধা ও ভালোবাসতেন নানা ও নানার ছোটভাই আমীরুল হক খান। বড়বোনকে বুজি ডাকতেন দুই নানা। বুজি খুব রাগী ছিলেন। তার ভয়ে তটস্থ থাকতেন দুই নানা। বড়বোনের ছেলে ও মেয়েদের এক বছরের সমস্ত জামা কাপড় জুতা বইখাতা, পেন্সিল কিনে দিতেন নানা। মার্কেটের সবচেয়ে দামি সুন্দর জিনিসগুলো কিনতেন বড়বোনের ছেলে মেয়েদের জন্য। কেননা, বুজির মন খুশি করার জন্যই ছিল সমস্ত চিন্তাভাবনা। আমরা রমনা ভবন থেকে কেনাকাটা করেই সাবেক গুলিস্তান হলের নিচে যেতাম। সেখানে ছিল বেবি আইসক্রিমের বিশাল শোরুম। সেখানে  ৪-৫ রকমের স্কুপ নিয়ে আইসক্রিম খেতাম। বেবি আইসক্রিমের ঠিক উল্টোদিকেই ছিল ঈগলু আইসক্রিমের আরেকটা বড় শোরুম।
পরের দিন ঈদ- এমন ঘোষণা হলে সন্ধ্যায় দেখতাম নানা বাজার করতে গিয়েছেন। রাত ৯টার দিকে ৫-৬ টুকরি ভরা সদাই নিয়ে মিনতিসহ নানা চাঁদ রাতে বাসায় ফিরতেন। মিনতিদের মধ্যে দুই জন সব সময়ই নানার বাজার সদাই নিয়ে আসতেন। একজন মিনতির নাম হচ্ছে সওদাগর আর আরেকজনের নাম কেনিয়া। চাঁদ রাতে নানা বাজার নিয়ে আসার পর নানিকে দেখতাম ভোর পর্যন্ত ব্যস্ত থাকতো রান্নাবান্না নিয়ে। প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ জন মানুষের রান্না করতে হতো নানিকে। ঈদের দিনের জন্য পোলাও, খাসির কোরমা, মুরগির রেজালা, মুরগির রোস্ট, ফিরনি, জর্দা, দুধের সেমাই সারা রাত ধরে রান্না করতো নানি। নানির হাতের পোলাও কোরমার স্বাদ আজো মনে হয় ঠোঁটে লেগে আছে। তখন ঈদ হতো খুব কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে। ঈদের দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে ডেকে তুলতেন নানা। শীতের সময় খুব ভোরে নানা যখন ডেকে তুলতেন তখনো দেখতাম নানি রান্নার কাজে তখনো ব্যস্ত। লিমোশন হিটার দিয়ে নানা বালতির পানি গরম করে বলতো যে আগে গোসল করবে আর সমস্ত শীত পরের জনের কা
ছে চলে যাবে। তাই আমি তাড়াতাড়ি গোসল সেরে নিতাম। যেহেতু আমি ঘুমাতামই নানা-নানির মাঝখানে।
ঈদের দিন সকাল ৯টার সময় নানার হাত ধরে যেতাম আরমানিটোলার মাঠে ঈদের জামাত পড়তে। একসঙ্গে সবাই যেতাম নামাজ পড়তে। আব্বা, খালু, মামারা, নানা সবাই মিলে ফিরনি খেয়ে নামাজ পড়তে যেতাম। আরমানিটোলার মাঠে ঈদের জামাতের পরপরই মেলা বসতো। মাঝে মাঝে নামাজ শেষে বড় একটা বেলুন নিয়ে বাসায় ফিরতাম। বাসায় ফিরে নানির হাতের পোলাও ও খাসির কোরমা দিয়ে রান্নার স্বাদ ও গন্ধ পেতাম সেই স্বাদ আর কখনো পাইনি। এখানে নানির হাতের রান্নার স্বাদের  উদাহরণ দিচ্ছি। ৩টার দিকে খালাদের শিক্ষক এসেছেন খেতে। পেটপুরে খাওয়ার পর মাবু খালা স্যারকে বললেন আরেকটু দিবো স্যার। স্যার বললো পেটে তো কোনো জায়গা নেই তারপরও যদি দিতেই হয় কোরমাটা দাও। তখন কোরমা শেষ হয়ে গেছে। আমার মেজো মামার ওতমার নামের জার্মানির এক বন্ধু  ছিল। ওতমারকে প্রথমে এক ডিশ পোলাও দিয়েছিল সঙ্গে কোরমা ও রেজালা। কিছুক্ষণের মধ্যেই একা এক ডিশ খাবার খেয়ে ফেললো। তারপর আরেক ডিশ খাবার শেষ করে বললো জীবনে এই প্রথম রান্না খেলাম যা সারা জীবন মনে থাকবে ওতমারের। ঈদের দিন  সকাল ১১টার মধ্যেই চলে আসতো ছোট নানা কে এম আমীরুল হক। তিন মামা ও দুই খালাসহ চলে আসতেন নানার বাসায়। নানার বড় বোন মোফেলা খাতুনও চলে আসতেন সবাইকে নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে ঈদ করতে। তখনই শুরু হয়ে গেছে ঈদের আসল আনন্দ। ঈদের দিন সকাল থেকেই মনে মনে চিন্তা করতাম কখন আসবে আম্মার হুরন আপা। আম্মার হুরন আপা হচ্ছে মুন্নু সিরামিকসের মালিক হারুনুর রশীদ খান মুন্নু সাহেবের স্ত্রী। ঈদে সবাই ১ টাকা বা ২ টাকা করে ঈদী দিতো। যেই সময়ে চার আনা দিয়ে ঈগলু আইসক্রিমের চকবার পাওয়া যেত। তখনকার সময়ে হারুনুর রশীদ মুন্নু যিনি সম্পর্কে আমার নানা হন। চকচকে ১০ টাকা নোটের বান্ডিল বের করে সবাইকে সালাম করলেই ঈদী দিতেন। সেইজন্য সকাল ১১টার পর শুধু দরজার দিকে তাকিয়ে থাকতাম কখন আসবেন আম্মার হুরন আপা। যখন দেখতাম আম্মার হুরন আপা এসেছে আসল ঈদের মজা তখন থেকে শুরু হতো। ঈদের পরের দিনও খুব মজা হতো নানাবাড়িতে। সকাল ১১টা থেকে খাট বা ২-৩টা চকি ফেলে স্টেজ বানিয়ে খালারা ঈদ আনন্দের অনুষ্ঠান করতেন। ছোট মামা হারমোনিয়াম বাজাতে পারতেন যে কোনো গানে। নীগার খালা খুব ভালো নাচ পারতেন। মাবু খালা গান গাইতেন ও নিজের লেখা কবিতা পাঠ করতেন। শিরিন খালা, নাসরিন খালারা গান গাইতেন, নাটক করতেন, সবাই খুব মজা করে সময়টা পার করতাম। দর্শক সংখ্যাও কম ছিল না। কি জমজমাট থাকতো আমার নানার আরমানিটোলার বাসা! যাদের কথা বলছি তাদের মধ্যে বেশির ভাগই গত হয়েছেন। রোজার ঈদ করতে এলে কিভাবে যে সময় কেটে যেত টেরই পেতাম না। নানির হাতের রান্না সব সময়ই সাধারণ খাবার হলেও অনেক মজা হতো। সেই রান্নার স্বাদ এখনো মনে হয় ঠেঁাঁটে লেগে আছে। আমি জীবনে দেশে-বিদেশে অনেক জায়গায়ই খেয়েছি। নানির হাতের পোলাও, খাসির কোরমা, রেজালা এসব রান্নার যে স্বাদ পেয়েছিলাম সেই স্বাদ আমি কোথাও পাইনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status