ঈদ আনন্দ ২০১৮

বিচিত্রিতা

ভালোবাসার রডোডেনড্রন

ড.মাহফুজ পারভেজ

২৮ জুন ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৫:১৩ পূর্বাহ্ন

হিমালয়ের বর্ণিল ফুল রডোডেনড্রন ভালোবাসার মোহন স্পর্শে ছড়িয়ে আছে ইউরোপের উদ্যান আর ঘরে ঘরে। বিশ্বজয়ী পুষ্পের রোমাঞ্চকর অভিযাত্রার আদ্যোপান্ত
বর্তমানের মতো সুতীব্র বেগে বিশ্বায়ন তখনো শুরু হয়নি। তবে ইউরোপে রেনেসাঁ-রিফর্মেশন-শিল্প বিপ্লব হওয়ায় পূর্ববর্তী আমলের পালের বদলে দ্রুতগামী জাহাজ নিয়ে বণিক ও ঔপনিবেশিক শক্তি এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার নানা দেশ দখলে ব্যস্ত। তখনকার সেই রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক ক্রান্তিকালের মধ্যেও ভারতবর্ষের পূর্ব হিমালয়ান অঞ্চলের নামগোত্রহীন একটি পার্বত্য ফুল চলে গেল ইউরোপের ঘরে ঘরে, এমনকি মহারানির বাগানে। সে ফুলের নাম রডোডেনড্রন।
নাম শুনলে মনে হবে ইউরোপীয় কোনও ফুল। কিন্তু একেবারেই উপমহাদেশীয় ফুল রডোডেনড্রন। চুপিসারে শতবর্ষ আগেই আদি বিশ্বায়নের দূত হয়ে এশিয়ার এক নিভৃত কোণ থেকে গিয়ে পুরো ইউরোপ জয় করলো। রাজকীয় বাগান থেকে নাগরিকের বাসগৃহ পর্যন্ত উচ্ছলিত হলো এই ফুলের গুচ্ছে, গন্ধে, বর্ণে। রবীন্দ্রনাথ, বুদ্ধদেব বসুর লেখা ছাড়িয়ে স্থান পেল জেমস জয়েসের ক্ল্যাসিক উপন্যাস ‘ইউলিসিস’-এর পাতায়।
ইংল্যান্ডের উইন্ডসর গ্রেট পার্ক এবং অন্যান্য বিশ্ববিখ্যাত উদ্যানে রডোডেনড্রনের মন মাতানো সমারোহ ইউরোপের এক পরিচিত ছবি হয়ে দাঁড়াল। অথচ অযত্নে অবহেলায় হিমালয়ের পার্বত্য ধূলায় মুখ লুকিয়ে ছিল রডোডেনড্রন। বিলাতের এক তরুণ উদ্ভিদ বিজ্ঞানী জোসেফ ডালটন হুকার প্রেমে পড়লেন এই ফুলের। ইংল্যান্ড থেকে সবাই যখন বৃটিশ-বাংলায় আসছেন সম্পদের লোভে, জোসেফ ডালটন হুকার তখন সন্ধান করছেন প্রকৃতির রূপ ও রস এবং জীববৈচিত্র্য। তাঁর হাত ধরে এশিয়ার এই পাহাড়ি ফুলের রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ল ইউরোপে এবং সেই সূত্রে বিশ্বের সর্বত্র। দার্জিলিং, সিকিম, নেপাল, আসাম, মেঘালয়, ভুটানের পথে পথে ছড়িয়ে আছে যে ফুল, সে ফুল আজ ইউরোপের অভিজাত সম্‌ভ্রান্ত পুষ্পের অন্যতম।
শিল্পে, সাহিত্যে, প্রেমে, আবেগে, গানে, কবিতায় রডোডেনড্রনের মতো অন্য কোনও ফুল স্থান করে নিতে পারেনি। উপমহাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষের সঙ্গে হিমালয়ের স্মৃতি বলতেই কাঞ্চনজঙ্ঘা আর রডোডেনড্রন। জীবনের কোনও এক অংশে দার্জিলিঙ-কাঞ্চনজঙ্ঘায় ভ্রমণ স্মৃতিতে রডোডেনড্রনের রঙিন উচ্ছ্বাস অনেককেই নস্টালজিক করে। স্মৃতি ও অতীত ঝাপসা হলেও ঔজ্জ্বল্য হারায় না বহুবর্ণা ও বহু বাহারের প্রেমমথিত রডোডেনড্রন গুচ্ছ।
রবীন্দ্রনাথ যেন এ ফুলের যথার্থ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অপরূপ করে রেখেছেন ‘শেষের কবিতা’য় উদ্ধৃত পঙক্তিকে: “প্রভাতবেলায় হেলাভরে করে অরুণকিরণে তুচ্ছ/উদ্ধত যত শাখার শিখরে রডোডেনড্রন গুচ্ছ।” অমিত রয় আর কেটি মিত্তিরের আল্ট্রা-মর্ডান প্রেমের পরশ জাগিয়ে দিয়ে রডোডেনড্রন এখনও অনেকের মধ্যে নিয়ে আসে হারানো প্রেমের স্মৃতিকাতর আকুতি।  
 ব্যক্তি মানুষের মতো সামাজিক মানবমণ্ডলীও রডোডেনড্রনের প্রেমে মগ্ন। নেপালের জাতীয় ফুল আর সিকিমের রাষ্ট্রীয় ফুলের জায়গাটি তাই রডোডেনড্রন ছাড়া অন্য কোনও পুষ্পই দখল করতে পারেনি। ইরান, মধ্য এশিয়া এবং বিশ্বের কোনও কোনও দেশে যেমন গোলাপ রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে সমাদৃত এবং উৎসব মুখরিত হয়, রডোডেনড্রনও তেমনিভাবে পূর্ব হিমালয়ান অঞ্চলের লোকসমাজে সমাদৃত ও উদযাপিত হয়। প্রতি বসন্তে সিকিমে আয়োজিত হয় ‘রডোডেনড্রন উৎসব’। উৎসবে সমবেত হয় বৃহত্তর হিমালয়ান জনগোষ্ঠী। সঙ্গে থাকে শত শত রঙ, বাহার ও প্রজাতির রডোডেনড্রন। পুষ্পালোকের সেই নন্দন-কাননে ভিড় জমায় বিশ্বের হাজার হাজার পযটক।
ফুলকে ভালোবেসে এমন আয়োজন ও সমারোহ পৃথিবীতে আর কয়টি হতে পেরেছে, যেমনটি হচ্ছে নিজের জন্মস্থান ও বিশ্বের উদ্যানে উদ্যানে রডোডেনড্রনকে কেন্দ্র করে। চীনে রয়েছে শতাধিক মাইল বিস্তৃৃত রডোডেনড্রন উদ্যান। বাণিজ্য, রাজনীতি, যোগাযোগ, সামরিক চিৎকারের সমকালীন বিশ্বায়নের পাশেই সংস্কৃতি ও প্রকৃতির মেলবন্ধন রচনা করার অপরাজেয় শক্তি ‘বিশ্বায়নের আদি দূত রডোডেনড্রন’ ছাড়া আর কে দেখাতে পেরেছে!

রডোডেনড্রন প্রেমিক উদ্ভিদবিজ্ঞানি
হিমালয়ের উচু-নিচু ভূগোলে, পাকদণ্ডীর বাঁক বাঁকে শত শত বছর ধরে হেলায় জন্ম-মৃত্যু হয়েছে শত শত রডোডেনড্রন পুষ্প ও প্রজাতির। বিলাত থেকে আসা এক উদ্ভিদ বিজ্ঞানী প্রেমে পড়েন এই ফুলের। অশেষ কষ্ট স্বীকার করে পরিচালনা করেন পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা। পুষ্পের ইতিহাসে অনামা এই ফুলটি অবশেষে বিজ্ঞানীর হাত ধরে পেল একটি সুন্দর নাম আর সম্মানজনক আসন।
তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকালের শেষভাগ। মহারানির অধীনে বৃটিশরাজের শাসন তখনো শুরু হয়নি ভারতবর্ষে। সেই ঘোরতর সন্ধিক্ষণে একজন বৃটিশ উদ্ভিদ বিজ্ঞানী স্বদেশের হাজার মাইল দূরের অচেনা হিমালয়ের গহীন-গভীরে খুঁজে খুঁজে বের করেন রডোডেনড্রনের অসংখ্য ভেরাইটি এবং ইংল্যান্ডসহ ইউরোপের মাটিতে ছড়িয়ে দেন ভালো লাগা ও ভালোবাসার প্রিয় ফুলটিকে।    
ঘটনাটি বৃটিশের বিরুদ্ধে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের (১৮৫৭) দশ বছর আগেকার (১৮৪৭) সালের কথা। রডোডেনড্রন নামটি তখনো পযন্ত কেউ জানতেন না। সে সময় জোসেফ ডালটন হুকার নামের ত্রিশ বছর বয়েসি ইংল্যান্ডের এক তরুণ উদ্ভিদবিজ্ঞানি জাহাজে পাড়ি দিলেন সম্পদে ভরপুর উপনিবেশ বৃটিশ-বাংলার পথে। সবাই যখন বাংলার সম্পদ আহরণ করে বিলাতে ধনী হতে মশগুল, তখন এই তরুণ উদ্ভিদবিজ্ঞানি চাইলেন পাহাড়ি-পর্বত ঘুরে ঘুরে জীববৈচিত্র্যের সন্ধান করতে।
শাশ্বত বাংলার অর্থনৈতিক সম্পদ বা রাজনৈতিক ক্ষমতা তাকে আকৃষ্ট করল না, আকৃষ্ট করল চিরায়ত প্রকৃতি ও পরিবেশ। তিনি আগ্রহী হলেন প্রাণবৈচিত্র্য আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য-সুষমার অনুসন্ধান কাজে। তাঁর ভ্রমণ পরিকল্পনায় সে কারণে বাংলা বা ভারতের শহর কিংবা বাণিজ্যকেন্দ্র নেই। প্রকৃতিকে সরাসরি জানতে এবং প্রাণ ভরে দেখতে তিনি তাঁর গন্তব্য ঠিক করেন অখণ্ড বাংলার উত্তরবঙ্গ, আসাম, সিকিম, নেপাল আর তিব্বত। শহরের চেয়ে বহুদূরের অরণ্য-পাহাড়ের পটভূমিকায় ছডড়িয়ে থাকা সুবিশাল হিমালয় পর্বতমালার পূর্বাঞ্চলের অপরূপ-প্রকৃতিসমৃদ্ধ অঞ্চল ও জনপদ এই তরুণ বিজ্ঞানীর পছন্দের জায়গা।
ঔপনিবেশিক শক্তির পেছন পেছন আলোকিত ইউরোপ থেকে নানা বিদ্যায় পারদর্শী জ্ঞানী-গুণী-বিজ্ঞানীরা তখন অল্প অল্প করে বৃটিশ-বাংলায় আসতে শুরু করেছেন। কেউ চান নতুন দখলকৃত অঞ্চলে নিজেদের খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচার করতে। কেউ চান ছাপাখানা স্থাপন করে বইপত্র, পত্রিকা, ব্যাকরণ চর্চা করতে। এশিয়াটিক সোসাইটির মাধ্যমে অনেকে দলবদ্ধ হয়ে শুরু করলেন ভারতচর্চা। এদের বলা হতো ওরিয়েন্টালিস্ট, যারা প্রাচ্যের প্রাচীন বিষয়কে আধুনিক ব্যাখ্যায় উপস্থাপন করতেন। প্রাচীন মন্দির, স্থাপনা, ক্ষেত্র অনুসন্ধানে এলেন প্রত্নতাত্ত্বিকগণ এবং বিচিত্র সংস্কৃতির সন্ধানে নৃবিজ্ঞানীরা।
এসব কৃতবিদ ইউরোপীয়দের হাতে ভারত নবরূপ লাভ করতে থাকে। ধীরে ধীরে জন্ম নেয় আধুনিক ভারতের আদি কাঠামো। রেনেসাঁর-পূর্ব পুরুষরূপে প্রণোদনা জাগাতে লাগলেন নানা ক্ষেত্রের নানা গুণীজন। প্রাচীন ভারত জেগে উঠল এসব বিদেশির স্পর্শে। উপনিবেশবাদের তীব্র শোষণ ও অন্ধকারের মধ্যেও মানব মনীষার ছোঁয়ায় জ্বলে উঠলো কিছু কিছু আলো।
জোসেফ ডালটন হুকার নিজের নাম যুক্ত করলেন সেই আলোকিত মানুষদের আদি তালিকায়। হিমালয়ান উদ্ভিদ, গুল্ম, লতা-পাতা-পুষ্প অনুসন্ধানে তার অবদান চিহ্নিত হলো ইতিহাসের পাতায়। বিশেষত রডোডেনড্রনের সুবাদে তিনি রইলেন অমর হয়ে।
ইতিহাস ভোলেনি, ইংল্যান্ড বা বৃটিশ-বাংলাও ভোলেনি নিবেদিতপ্রাণ উদ্ভিদ বিজ্ঞানীকে। হুকারের স্মরণে  দার্জিলিঙে আছে ‘হুকার রোড’, হ্যাপি ভ্যালি টি এস্টেট ছাড়িয়ে সামনে এগিয়ে গেলে বাঁ দিকে অনেক দূর চলে গেছে আঁ
কাবাঁকা সেই রাস্তা, হুকারের কণ্টকাকীর্ণ-সংগ্রামী জীবনেরই মতো সর্পিল এবং উত্থান-পতনে ভরপুর।

রডোডেনড্রনের পাশে আরেক ডারউইন
বৃটিশ উদ্ভিদ বিজ্ঞানী জোসেফ ডালটন হুকার-এর জীবনটা বড় অদ্ভুত, সংগ্রামশীল ও বৈচিত্র্যময়। তার বন্ধু বিশ্ববিখ্যাত জীব বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন যখন জাহাজে চেপে দক্ষিণ আমেরিকার পথে চলেছেন, হুকার তখন চলে আসেন উল্টো দিকের ভারতে। দুই আলাদা ও পৃথক ভূগোলে পাড়ি জমালেও দু’জনের মাঝে ভীষণ মিল। উভয়েই উদ্ভিদ ও জীবজন্তু নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। জোসেফ ডালটন হুকারকে নিঃসন্দেহে বলা যায় ‘ভারতের ডারউইন’।
ইংল্যান্ডে ডারউইন ও হুকারের শৈশব-কৈশোরটাও ছিল প্রচণ্ড রোমাঞ্চকর আর উত্তেজনায় ঠাসা। ইউরোপের দেশে দেশে তখন তৈরি হচ্ছে অভিযাত্রীর দল। আধুনিক জাহাজ আর উন্নত বৈজ্ঞানিক যন্ত্র পাওয়া যাচ্ছে হাতের নাগালের মধ্যে। সবাই ক্যাপ্টেন কুক এবং স্কটের মতো অভিযাত্রীর অনুপ্রেরণায় মাতোয়ারা। ঘরে থাকার লোকের চেয়ে বাইরের জগৎ দেখতে বেরিয়ে পড়ার মানুষের সংখ্যাই তখন বেশি।
ডারউইন ও হুকার প্রভাবিত হলেন তাদের সমকালীন পরিবেশ ও পরিস্থিতির দ্বারা। ঘরে মন টিকলো না এই দুই বন্ধুর। প্রথমে বের হলেন তাঁর বন্ধু চার্লস ডারউইন। তিনি হলেন ‘বিবর্তনবাদ’-এর শ্রষ্ঠা সেই ডারউইন, যিনি ‘এইচএমএস বিগল’ জাহাজে চেপে পৌঁছে গিয়েছিলেন গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে, এমন সব অনুসন্ধান আর পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, যা পরে রূপ পেয়েছিল জগৎ-কাঁপানো ‘থিয়োরি অব ইভোলিউশন’-এ।
হুকারেরও মন পড়েছিল বৈজ্ঞানিক গবেষণায়, কিন্তু সে কালে পড়াশোনা, বিশেষত গবেষণার সুযোগ সুবিধা এত প্রাতিষ্ঠানিক ছিল না। ফলে তাকে সুযোগের সন্ধান করতে হয়। কারণ, পরিস্থিতি ছিল বাণিজ্যমুখী। টাকা কামানোর চেষ্টাই ছিল সকলের মধ্যে প্রধান। বিজ্ঞান বা গবেষণা চর্চার প্রতি মনোযোগ দেওয়ার ফুসরত সাধারণ মানুষ বা নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে তখনো বৃদ্ধি পায়নি। এমনকি,  ‘সায়েন্টিস্ট’ নামে যে একটি শব্দ আছে, সেটাই মানুষ জানত না। অভিধানেও ছিল না শব্দটি।
ফলে ডারউইনের মতো হুকারকেও সুযোগের সন্ধানে অপেক্ষা করতে হয়। এবং তার অপেক্ষা ছিল কিছুটা বেশি। অবশেষে এক সময় সুযোগ ধরা দিল। হুকার জুটে যেতে পারলেন বৃটিশ-বাংলামুখী বণিক-অভিযাত্রী দলের সঙ্গে। অন্য ধরনের একদল মানুষের সঙ্গে তিনি নিজের মনের ইচ্ছা মনে পুষে বেরিয়ে পড়লেন সমুদ্রের অনিশ্চিত সফরে। বৃটিশ-ভারত অভিমুখী বণিকদের সঙ্গে এভাবেই হুকারের মতো এক উদ্ভিদ বিজ্ঞানী চলে এলেন উপমহাদেশের তৎকালীন কেন্দ্রস্থল অবিভক্ত বাংলায়।
বিরূপ পরিবেশ, বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রা ইত্যাদির পরেও লক্ষ্যে-অবিচল-প্রাণোচ্ছল বৃটিশ তরুণ মোটেও দমে যাননি। বরং, সারা জীবন তিনি যে ভালোবেসেছেন গাছপালা, উদ্ভিদজগৎ, তার সন্ধানে পথ চলতে গিয়ে সব কষ্ট তিনি ভুলে গেলেন। হুকারের মনে একটাই ইচ্ছা, অজানা দূর দেশে বেরিয়ে পড়তে হবে, সেখানকার উদ্ভিদবৈচিত্র্য, সব তথ্য লিখে রাখতে হবে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।
নবাব সিরাজউদ্দৌলাহ-পরবর্তীকালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শাসিত ভারতে বৃটিশ সাম্রাজ্যের রাজধানী কলকাতায় পৌঁছে হুকার কাল-বিলম্ব করেননি। নগর ও বাণিজ্যের টান তাকে আটকাতে পারল না। প্রকৃতির হাতছানিতে তিনি বেরিয়ে পড়লেন উত্তরের হিমালয়ান অঞ্চলের পথে। পথে নামলেন তিনি তার প্রথম গন্তব্যস্থল হিমালয়ের প্রবেশমুখ দার্জিলিঙের উদ্দেশে।
ঔপনিবেশিক আমলের কঠিন ও কষ্টকর যোগাযোগ ব্যবস্থায় কলকাতা থেকে দার্জিলিং যাওয়া ছিল এক রকম ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাডভেঞ্চার। হুকার সেই রোমাঞ্চকর পথই বেছে নিলেন। পথের বিঘ্নের জন্য তিনি তার কাঙ্ক্ষিত পরিকল্পনা বাদ দিলেন না। বরং নানা ধরনের বাহনের সাহায্যে এগিয়ে যেতে লাগলেন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে।
হুকারের প্রথম বাহন ছিল হাতি। তিনি কলকাতা থেকে চুনারের কাছে মির্জাপুর অবধি গেলেন হাতির পিঠে। উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের ঘন জঙ্গল পেরিয়ে সেখান থেকে জলপথে পৌঁছালেন শিলিগুড়ি। তারপর বাকিটুকু পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিলেন ঘোড়ার পিঠে চড়ে। অবশেষে তিনি হিলটাউন দার্জিলিঙ এসে উপস্থিত হলেন। দিনটি ছিল ১৮৪৮ সালের ১৬ই এপ্রিল।
দার্জিলিঙে অনিন্দ্য সুন্দর প্রকৃতি আর নয়ন জুড়ানো রডোডেনড্রনের আলোকিত উদ্ভাস দেখে বিদেশি উদ্ভিদ বিজ্ঞানী বিমুগ্ধ। ভুলে গেলেন কষ্টকর পথের ক্লান্তি। মেতে উঠলেন পুষ্প, পত্রালী ও উদ্ভিদে। ডারউইনের সঙ্গে অনেকগুলো মিল থাকলেও হুকারের একটি বড় পার্থক্য আছে। ডারউইন গিয়েছিলেন দ্বীপে। হুকার এসেছিলেন হিমালয়ের পাদদেশে, পাহাড়ে।

হিমালয়ে রডোডেনড্রনের জগতে
হুকার যখন দার্জিলিং পৌঁছান, তখন হিমালয়ান আবহাওয়ার স্বাভাবিক প্রবণতা ও তোড়ে ঝুপঝুপ বৃষ্টি পড়ছে। পাহাড়ি ঢেকে আছে ঘন সাদা কুয়াশায়, কয়েক হাত দূরের কিছুও দেখা যাচ্ছে না। প্রথম দিনটি তার ভালো লাগেনি, সে কথা ডায়েরিতেও লিখে রেখেছিলেন। কিন্তু তারপর? তিনি হারিয়ে গেলেন হিমালয়ে, রডোডেনড্রনের অনিন্দ্য জগতে।
গ্রীষ্মের রৌদ্রকরোজ্জ্বল পরবর্তী দিনটি ছিল হুকারের জীবনে অন্যতম একটি শ্রেষ্ঠ দিন। পথক্লান্তি আর কুয়াশাময় আবহাওয়ার ভেতর দিয়ে হিমালয়ের কিছুই দেখতে না পেয়ে তিনি অবসন্ন শরীরে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। পরদিন সকালে ঘুম ভেঙে বাইরে তাকাতেই দেখলেন জাদুময় এক পুষ্পিত জগৎ। মনে হলো সত্যি সত্যি তিনি ম্যাজিক দেখছেন! সোনার তালের মতো সূর্য বিচ্চুরিত হচ্ছে পর্বত গাত্রে। ঠিক চোখের সামনেই ঝকঝক করছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। আশেপাশে বাহারী শত-সহস্র ফুলের মেলা।
প্রকৃতির সুতীব্র শিহরণে বিমুগ্ধ হুকার নিজের ব্যক্তিগত ডায়েরিতে লিখলেন: ‘‘হিমালয়ের অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে কত কিছুই না শুনেছি আর পড়েছি। কিন্তু সামনে থেকে দেখা এই অভিজ্ঞতা আমার সমস্ত প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে!’’
পরিশ্রমী বিজ্ঞানি দেশ থেকে এতদূর এসে রূপ ও সৌন্দর্য নিয়ে মজে রইলেন না। মিশে গেলেন পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে, কোণে কোণে। হিমালয়ের কোলে নিসর্গ, প্রকৃতি আর উদ্ভিদ পর্যবেক্ষণে তাক লাগানো অসামান্য কৃতিত্ব স্থাপন করলেন তিনি। অনেক কিছুর মধ্যে তিনি বিশেষভাবে প্রেমে পড়লেন রডোডেনড্রনের। রডোডেনড্রনের বিশদ বর্ণনায় তিনি অতুলনীয়। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীর অনুধ্যানে ভরপুর ডায়েরি যে প্রকৃতি আর পরিবেশ বর্ণনায় সাহিত্যিক ভাবাবেগে উত্তীর্ণ হতে পারে, হুকার তার প্রমাণ রেখেছেন। পযবেক্ষণ শক্তিতে একজন বিজ্ঞানীর ডায়েরির নোটগুলোও যে বিজ্ঞানের কঠিন গবেষণার বাইরে এসে প্রকৃতি বর্ণনার অনবদ্য দলিল হতে পারে, হুকারের ডায়েরি সে প্রমাণ বহন করছে।
হুকারের ডায়েরির লেখাগুলো পড়লে পাঠকের ভুল হতেই পারে যে, লেখাগুলো কি বিজ্ঞানির, নাকি প্রকৃতিপ্রেমী সাহিত্যিকের! তিনি বর্ণনা করছেন মানুষের অদেখা এক প্রকৃতি জগত: ‘‘ভোরে জানলা দিয়ে তাকাতে যেন শ্বাস বন্ধ হয়ে এল। শ্রদ্ধা আর ভালো লাগায় অভিভূত আমি। আট হাজার ফুট উঁচুতে আমি যেখানটায় আছি, সেখানে প্রকৃতির বিষ্ময় ছাড়া আর কিছু নেই। দূরের ঝকঝকে সাদা বরফঢাকা পর্বতশ্রেণির মধ্যে, আমার চোখের সামনে পর পর ছ’-সাতটা পর্বতশ্রেণি রয়েছে, সেগুলো অরণ্যে ঢাকা। আরও দূরে তুষারাবৃত পর্বতচুড়াগুলোর মধ্যে মাথা উঁচিয়ে আছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। আমি যেখানে দাঁড়িয়ে, তার ত্রিশ হাজার ফুট ওপরে! একটু পরে দেখলাম তুষারপাত শুরু হলো, তবে সেটা মাইল কয়েক দূরে। দূরের সুউচ্চ পাহাড়কে মনে হচ্ছিল যেন মোটে এক দিনের পথ।’’
পর্বত আর প্রকৃতিময় পূর্ব হিমালয়ের অসাধারণ রূপ ও সৌন্দর্য তরুণ বিজ্ঞানী হুকারের মন জয় করে নিয়েছিল। ডায়েরিতে সে কথা তিনি গোপন করেননি। নিজের ভালো লাগার স্পষ্ট অনুভূতিতে তিনি সবিস্তারে দিয়েছেন অনুপম বিবরণ। বলেছেন, আদি অন্তহীন আকাশের সুনীল বিস্তার আর পাহাড়চূড়ার কথা। কখনও সেখানে কুয়াশার চাদর, উদিত সূর্যের আলোয় কখনওবা তার বর্ণ সোনারং হলুদ, কখনওবা স্নিগ্ধ গোলাপি। হুকার যেখানে থাকেন, তার থেকে অনেক নিচে খেলা করছে মেঘমালা। তিনি দেখতে পান সূর্যের আলো কেমন প্রথমে রাঙিয়ে দিচ্ছে পাহাড়চূড়া, অথচ নিচের পাহাড়ে তখনও চাপ-চাপ অন্ধকার।
পাহাড়ের রহস্যময় আলো ও অন্ধকারের খেলাচ্ছলে উদ্ভিদ ও পুষ্পের উদ্ভাসন তিনি অপরূপ ভাষার বিবৃত করেছেন নিজের ডায়েরিতে। যেখানে অনেকটুকু জায়গাজুড়ে রয়েছে রডোডেনড্রনের স্তূতি ও বর্ণনা। হিমালয়ের রহস্যময় প্রকৃতির অন্যসব বিষয়কে বাদ দিয়ে হুকার ডুব দিলেন রডোডেনড্রনের অতলান্ত প্রেমের সাগরে।   

উন্মুক্ত রডোডেনড্রনের প্রভা
হিমালয়ের অনিন্দ্য সুন্দর প্রকৃতি আর পরিবেশ দেখতে দেখতে হুকার এক সময় ঠিকই চলে আসেন তার প্রিয়তম বস্তুটির কাছে। পূর্ব হিমালয়ের অপূর্ব প্রকৃতির কোলে বিশেষ এক প্রজাতির ফুল হুকারের খুব ভালো লেগেছিল। এই প্রিয় ফুলটির নামই রডোডেনড্রন। পাহাড়ি পথের পাশে চারদিক আলো করে ফুটে থাকা এক ফুল অনাদরে মলিন হলেও ঠিকই চোখে পড়ে হুকারের।
যথার্থভাবেই হুকার পরে বলেছিলেন, “এক গোলাপ ছাড়া আর রডোডেনড্রনই একমাত্র ফুল যা ইউরোপে সাড়া ফেলেছিল।” হুকারের হাত ধরেই রডোডেনড্রনের প্রভা ও বিভা উন্মুক্ত হয় সারা বিশ্বের সামনে। ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে এই ফুল মানুষের প্রিয়তম অনুভূতিতে।
দার্জিলিঙের হিমালয়, রোদ, কুয়াশা আর রডোডেনড্রন অনেকটা জায়গা জুড়ে আছে হুকারের লেখায়। এক জায়গায় লিখছেন: ‘নিচের পাহাড়ের জায়গায় জায়গায় আটকে থাকা বাতাস দ্রুত গরম হয়ে উঠল। ঘন, ভারী, সাদা বাষ্প এখান ওখানকার ফাঁকা জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে ক্রমে উঠে পড়ল পাহাড়ের চূড়ায়; আটকে রইল চূড়ার ওপরে বনের মাথায়; পুরু হয়ে ছড়িয়ে পড়ে উঠল আরও, আরও ওপরে। এমনই আকস্মিক এই ঘটনা, এমনই অবিস্মরণীয় সেই নিসর্গ, যা দেখে কেউই চোখ সরিয়ে নিতে পারে না, মনে হয় যেন জাদু। এ-ই হল ভারতীয় রডোডেনড্রনের বাসভূমি।”
জোসেফ ডালটন হুকারের আগে রডোডেনড্রন সম্পর্কে বিশেষ কোনও ধারণা ছিল না আধুনিক বিশ্বের মানুষের। উনিশ শতকের ইউরোপীয়রা বৃটিশ-বাংলায় এসে রডোডেনড্রনের হাতেগোনা কয়েকটা প্রজাতি সম্পর্কেই ভাসা ভাসা জানতেন। বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে হুকার যোগ করলেন রডোডেনড্রনের আরও ২৫ রকমের প্রজাতি। দিনের পর দিন পযবেক্ষণ করে তিনি তাদের আবিষ্কার করলেন, শ্রেণিবিভাগ করলেন, করলেন নামকরণও। অনেকগুলোর নাম রেখেছিলেন নিজের বন্ধুদের নামে। একটি নাম এখনও শোনা যায়। সেটি বৃটিশ-বাংলার তৎকালীন গভর্নর জেনারেল ডালহৌসির নামে। বন্ধু ও শাসককে খুশি করার একটি রেওয়াজ সব সময়ই ছিল। হুকারও তেমনিভাবে একটা রডোডেনড্রনের নাম রেখেছিলেন লর্ড ডালহৌসির নামে। ডালহৌসির নামে হিমালয়ান উপত্যকায় একটি পাহাড়ি শহরও আছে।
শুধু নামকরণই নয়, সমগ্র দার্জিলিং, সিকিম ও ভুটান ঘুরে হুকার রডোডেনড্রনের নানান প্রজাতি সংগ্রহ করেন। পরিষ্কার করে বললে, শুধু সংগ্রহই করেননি, তাদের পাঠিয়ে দেন খোদ বৃটেনে। পরে ইংল্যান্ডের ‘কিউ গার্ডেনস’-এর উদ্ভিদ-সংগ্রহালয়েও সেগুলি অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন তিনি। আজ যে ইংল্যান্ড জুড়ে রডোডেনড্রনের শোভা, তার কারণ হুকার আর তাঁর হিমালয়-ভ্রমণের মাধ্যমে রডোডেনড্রনের অনেকগুলো প্রজাতির আবিষ্কার ও হুকারের হাত ধরে সেগুলোর বিলাত গমন।  
রডোডেনড্রন বিলাতে গিয়ে চুপ করে থাকেনি। ইংল্যান্ডসহ তাবৎ ইউরোপের মাটিকে আপন করে নিয়েছে। হয়ে গেছে সেখানকার নিজস্ব ফুল। বর্তমানে ইংল্যান্ডের পার্কগুলো আর কান্ট্রিসাইটে বসন্ত জুড়ে যে রঙের দাপাদাপি, তার অনেকটাই বাহারি রডোডেনড্রনেরই দৌলতে। বর্ণবহুল ফুল রডোডেনড্রন গোলাপি, মেরুন, মুক্তো-সাদা রঙের বন্যায়  চারপাশ আলো করে ফুটে থাকে। বিলেতের মহারানির খাসতালুকের নিজস্ব বাগান বলে পরিচিত যে উইন্ডসর গ্রেট পার্ক, তার মূল আকর্ষণ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছে রডোডেনড্রন ফুলের নজরকাড়া সুবিশাল আয়োজনের জন্যেই। আরেক ইউরোপীয় ফুল রঙিন আজেলিয়ার গায়ে গায়েই রডোডেনড্রন যেন রঙের মাতন লাগায় বর্ণিল আবেগে।
ইউরোপে বাণিজ্যিক বিপণনেও রডোডেনড্রন সবার চেয়ে এগিয়ে। পথে-ঘাটে রডোডেনড্রন বিক্রি হয়।  নার্সারি আর বাগানগুলো বোঝাই হয়ে আছে নানা কিসিমের রডোডেনড্রনে। সৌন্দয পিপাসু নাগরিকদের ঘর আলো করে থাকে রডোডেনড্রন। কিন্তু ক’জনই বা জানেন, তাদের স্বদেশি বিজ্ঞানী হুকারই একদা রডোডেনড্রনের পূর্বপুরুষদের নিয়ে গিয়েছিলেন বৃটিশ-বাংলা থেকে ইউরোপের মাটিতে?

হিমালয় থেকে ইউরোপে রডোডেনড্রন
বৃটিশ-বাংলা থেকে সেই ঔপনিবেশিক পরিস্থিতিতে রডোডেনড্রনকে ইউরোপে বয়ে নেওয়া সহজসাধ্য ছিল না। বিরূপ যোগাযোগ ব্যবস্থা আর প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে কাজ করতে হয়েছে তাকে। কাজ করতে গিয়ে হুকারকে ঝামেলাও পোহাতে হয়েছে বিস্তর। তবু তিনি হিমালয়ের উপান্তে পাওয়া প্রিয়তম ভালোবাসার ফুল রডোডেনড্রনকে শেষ পযন্ত স্বদেশের ইউরোপীয় মাটিতে বয়ে নিয়ে যেতে এবং জাগিয়ে রাখতে সমর্থ হন।
নানা বিচিত্র ও বিরূপ অভিজ্ঞতায় পূর্ণ ঘটনাবহুল পরিস্থিতি মিশে আছে হুকারের রডোডেনড্রন গবেষণা প্রচেষ্টার পরতে পরতে। একবার দার্জিলিং থেকে আনা চমৎকার কিছু প্রজাতির রডোডেনড্রন নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। দীর্ঘ পথে কুলিদের শরীর অসুস্থ হওয়ার কারণে রাস্তাতেই অনেক সময় নষ্ট হয়েছিল বলে গাছগুলো টিকে থাকতে না পেরে মারা যায়। হুকার লিখেছেন সেই অভিজ্ঞতা তার বিখ্যাত ডায়েরিতে: “সেই সব রডোডেনড্রন তাঁকে ফের অনেক কষ্টে সংগ্রহ করতে হয়েছিল।”
হুকার ডায়েরিতে আরও লিখেছেন, ১০০০০ থেকে ১৩০০০ ফুট উচ্চতায় জন্মানো রডোডেনড্রন ঝোপ থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে তাঁর পা আর হাঁটু কেটে গিয়ে ভয়ানক ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল। বলাই বাহুল্য, উনিশ শতকের দুর্গম হিমালয়ে কাজ করার পরিবেশও আদৌ সুবিধাজনক ও সুখকর ছিল না। তবু দমেন নি হুকার। বিভিন্নভাবে প্রচেষ্টা চালাতেই থাকেন। সেসব কথা হুকার লিখছেন বিস্তারিতভাবে: ‘‘গাছের ডাল থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া একটা কম্বল দিয়েই আমার তাঁবুটা তৈরি। সেটার সঙ্গে আবার অন্য একটা কম্বল সাঁটা, আর এভাবেই কোনও মতে একটা ঘরের মতো ঠেকনা দেওয়ার চেষ্টা। তাঁবুর অর্ধেকটা জুড়ে আমার খাট, তার তলায় আমার জামা-কাপড়ের বাক্স। আর আমার বইপত্র, লেখালিখির সরঞ্জাম ইত্যাদি সব রাখা টেবিলের তলায়। বাইরের দিকে এক কোণায় ব্যারোমিটারটা ঝোলানো, অন্য সব যন্ত্রপাতি চারপাশে ছড়ানো-ছিটানো।’’
অস্থায়ী তাঁবুতে তাবুতে প্রকৃতির বিরূপতাকে মোকাবেলা করে চার বছর ধরে হুকার একা, বা কখনও সঙ্গী গবেষক ও বৃটিশ কূটনীতিকদের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন বিপদসঙ্কুল পার্বত্য জনপদে।  অনেক কষ্ট করেছেন। সিকিমে বন্দি হয়েছিলেন রাজার হাতে, জেলেও থাকতে হয়েছিল, কারণ তিনি সিকিম থেকে তিব্বতে ঢুকতে চেয়েছিলেন। ঢাল-তরোয়ালের ঝনঝনানি হয়েছিল বিস্তর। না ছাড়লে পরিণাম ভয়ংকর হবে, বৃটিশ সেনার এই হুমকিতে সিকিমের রাজা শেষমেশ তাঁকে মুক্তি দেন।
পরে সেই আক্রান্ত জনপদ সিকিম থেকেই হুকার সংগ্রহ করেছিলেন রডোডেনড্রনের ২৫টি প্রজাতি। সযত্নে সংরক্ষিত সেই ফুলগাছ ও তার বীজের নমুনা বিলাতেও পাঠিয়েছিলেন তিনি ।
অভিজ্ঞতার কথা ডায়েরিতে লেখা বা উদ্ভিদ প্রজাতি সংগ্রহেই সীমাবদ্ধ ছিল না বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী বিজ্ঞানী হুকারের কাজকর্ম। তার আঁকা রডোডেনড্রনের অজগ্র ‘ফিল্ড স্কেচ’-এর লিথোগ্রাফ-কপি নিয়ে পরে প্রকাশিত হয়েছিল ওয়াল্টার হুড ফিচ সম্পাদিত বিখ্যাত বই ‘দ্য রডোডেনড্রনস অব সিকিম-হিমালয়াজ’। ১৮৪৯ সালে প্রকাশিত সেই বইটি লেখক উৎসর্গ করেছিলেন প্রিন্সেস মেকি অব কেমব্রিজ-কে। তিনি বাগান ভালোবাসতেন, কিউ গার্ডেনস-এর নির্মাণের পিছনে তাঁর অবদান কম ছিল না। হুকার এবং রডোডেনড্রনের সুবাদে আরও অনেক প্রকৃতিপ্রেমীর নামও লিপিবদ্ধ হয়ে রইলো ইতিহাসের পাতায়।
প্রকৃতিপ্রেমী হুকার তাঁর নোটবুকে হিমালয়ের ল্যান্ডস্কেপও এঁকেছিলেন। একটা স্কেচে আছে নেপালের চুনজেরমা পাস থেকে দেখা দৃশ্য। ফিচ পরে তাঁর বইয়ে সেই ছবি ব্যবহার করেছিলেন। ছবিটি একটা পর্বতশীর্ষের স্কেচ। মনে করা হয় সেই পর্বতচূড়াটি মাউন্ট এভারেস্ট। ১৮৪৮ সালের সেই রেখাচিত্র খুব সম্ভবত কোনও পশ্চিমের মানুষের আঁকা মাউন্ট এভারেস্টের প্রথম স্কেচ। হুকার যখন স্কেচটি আঁকেন, তখনও এভারেস্ট আবিষ্কৃত হয়নি। শৃঙ্গটি জয় করা হয় আরও অনেক বছর পর।
পূর্ব আসাম থেকে নেপালের পর্বতমালা অবধি হিমালয়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কয়েক বছর অক্লান্ত ঘুরে ১৮৫১ সালে হুকার বৃটিশ-বাংলা থেকে ফিরে যান স্বদেশে। ইংল্যান্ডে তিনি রডোডেনড্রনের প্রায় ৭০০০ প্রজাতির নমুনা সঙ্গে নিয়ে। চার বছর পর, ১৮৫৫ সালে প্রকাশিত হয় ভারতীয় গাছপালা নিয়ে লেখা তাঁর বিখ্যাত বই ‘ফ্লোরা ইন্ডিকা’।
কিন্তু ভাগ্যের এমনই পরিহাস, এত বড় গবেষককে তারপরেও পেটের ভাত জোগাতে কষ্ট করতে হয়েছিল। ১৮৫৯ সালে বন্ধু চার্লস ডারউইন ‘অন দি ওরিজিন অব স্পিশিস’ বইখানা লেখার পরই বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও লেখালিখির নতুন দিগন্ত খুলে যায়। হুকার ডারউইনকে লিখেছিলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকে একটাই ইচ্ছে মনের মধ্যে পুষে রেখেছিলাম, নতুন দেশে এক নতুন যাত্রায় যাব, তার প্রাকৃতিক সম্পদভাণ্ডারের কথা লিখব এমন ভাবে, যাতে এই পৃথিবীর বিজ্ঞান-অভিযাত্রীদের মধ্যে আমার একটু ঠাঁই হয়। যাতে সত্যিকারের অবদান রেখে যাওয়া একজন মানুষ হিসেবে আমার নাম ইতিহাসে লেখা থাকে।’’
স্বদেশে শেষ পর্যন্ত স্বীকৃতি পান হুকার। ১৮৬৫ সালে তাকে ‘কিউ গার্ডেনস’-এর ডিরেক্টর করা হয়। ১৮৮৫ সালে অবসর নেওয়ার সময় তিনি বৃটিশ সাম্রাজ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী বিজ্ঞান পুরুষদের একজনে পরিণত হন। কিন্তু এইসব প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি তুচ্ছ করে হকারের সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি প্রতিদিনই জানাচ্ছে, ইংল্যান্ড জুড়ে হাওয়ায় মাথা দোলানো রডোডেনড্রন গুচ্ছ।
রডোডেনড্রন মানে গোলাপ গাছ
আদি ও অকৃত্রিম এশিয়ান ফুল হলেও রডোডেনড্রন নামটি ইউরোপীয়। আরও মজার ব্যাপার হলো, রডোডেনড্রন নামটির বাংলা মানে হলো গোলাপ গাছ!
জোসেফ ডালটন হুকার নামে বৃটিশ উদ্ভিদ বিজ্ঞানি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে বৃটিশ-বাংলায় এসে হিমালয়ের বুকে খুঁজে পাওয়া ফুল রডোডেনড্রন নামটি এসেছে গ্রিক থেকে। শব্দটির অর্থ হলো:  "rodon'' মানে গোলাপ এবং “dendron” মানে গাছ। অর্থাৎ  Rhododendron  মানে গোলাপ গাছ। পারস্য আর মধ্য এশিয়ার বিশ্বজয়ী গোলাপ হয় তো জানেই না, হিমালয়ের ভূগোলে রডোডেনড্রন নামের আড়ালে লুকিয়ে আছে আরও এক গোলাপ!
নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিরসবুজ পুষ্পক বৃক্ষ হওয়ায় রডোডেনড্রন গুল্ম জাতীয় ফুলের রাজা। রডোডেনড্রন বড় বড় পাতাযুক্ত গুল্ম, প্রজাতিভেদে সর্বনিম্ন ৪ ইঞ্চি হতে সর্বোচ্চ ৯৮ ফুট পর্যন্ত উচুঁ হতে পারে। রডোডেনড্রন ফুল সাধারণত গুচ্ছবদ্ধ ভাবে হয়। এতে গোলাকার গুচ্ছবদ্ধ সাদা, গোলাপী, লাল, বেগুনি ইত্যাদি রংয়ের ফুল ফোটে। ফুল ফোটে শীতের শেষ হতে গ্রীষ্মের আগ পর্যন্ত সময়কালে।
বিশ্বজুড়ে রডোডেনড্রনের প্রায় দেড় হাজার প্রজাতি রয়েছে। প্রধানত এশিয়ায় জন্ম হলেও বর্তমানে ইউরোপে. উত্তর আমেরিকার অ্যাপলেশিয়ান পর্বতের দক্ষিণে উচ্চভূমির সর্বত্রই রডোডেনড্রন বিস্তৃত।
রডোডেনড্রন গাছের সব অংশই বিষময়। বিশেষত পাতা বিপদজনক। এর ফলে পাকস্থলীর পীড়া, তলপেটে ব্যথা, হৃৎপিণ্ডের অস্বাভাবিক গতিবৃদ্ধি, কোমা এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। তদুপরি রডোডেনড্রন ফুলের মধুও বিষাক্ত এবং ভোজ্য নয়। তবে ফুলের তৈলাক্ত পাপড়ি ও পাতার নির্যাস থেকে এক ধরনের মাদকতাময় সুগন্ধী উৎপন্ন হয়।
আধুনিক জগৎ রডোডেনড্রনকে চেনার জন্য যে বৃটিশ উদ্ভিদবিজ্ঞানির কাছে ঋণী, সেই হুকারের রডোডেনড্রন নোটে লেখা আছে পুষ্পের যথার্থ বন্দনা: ‘‘তার চিরসবুজ পাতার কথাই বলি, বা তার থোকায় থোকায় ফুটে-থাকা ফুলের বাহারের কথাই, প্রাচ্যের এই প্রজাতিটির মতো আর কোনও ফুলের গাছই এত বিস্তৃত, ব্যাপকভাবে জন্মায় না।’’
পূর্ব আসাম থেকে নেপালের পর্বতমালা অবধি হিমালয়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে অক্লান্ত ঘুরেছিলেন হুকার। খেয়াল করেছিলেন, পূর্ব আসামে রডোডেনড্রন মেলে ৫৪০০ ফুট থেকে ১২০০০ ফুট উচ্চতাতেও। নেপাল সীমান্তে টোংলু পর্বতে ওঠার সময় দেখেছিলেন সারা জায়গাটা রডোডেনড্রনে ছেয়ে আছে। ৭০০০ ফুট উচ্চতায় দেখেছেন, লিলির মতো দেখতে বড় বড় ডালহৌসি রডোডেনড্রনে ভরে আছে ঘন জঙ্গল। মাথার ওপর বিশালকায় ওক গাছগুলো থেকেও ফুল ঝরেছে নিচে, আছে ডিমের মতো দেখতে ম্যাগনোলিয়ার ফুলও।
তবে উদ্ভিদবিজ্ঞানী চার্লস ক্লুস ১৬ শতকে রডোডেনড্রনের একটি প্রজাতি আবিষ্কার করেন। তারপর Rhododendron histrum  প্রজাতির রডোডেনড্রন সর্বপ্রথম ১৬৫৬ সালে আল্পস পর্বত থেকে বৃটেনে আনা হয় বলে একে লন্ডনে ‘আলপাইন রোজ’ বলে। কিন্তু বৃটেন ও ইউরোপে রডোডেনড্রনের বিকাশ ও বিস্তৃতি হুকারের মাধ্যমে হিমালয় অঞ্চলের অসংখ্য প্রজাতির দ্বারাই সম্পন্ন হয়েছে বলেই সবাই স্বীকার করেন।
সবচেয়ে বেশি রডোডেনড্রন ফুলের দেখা কোথায় পাওয়া যায়? নেপালে? সিকিমে? ভুটানে? আসামে? মেঘালয়ে? এই প্রশ্নের ঠিক ঠিক উত্তর পাওয়া ভার। বিশেষজ্ঞরা এ কারণে ফুলটির আদি আবাসস্থল নির্ধারণ করেছেন সমগ্র পূর্ব হিমালয় অঞ্চল। মানে হলো, এই ভৌগোলিক অবস্থানে যতগুলো দেশ বা রাজ্য আছে, সবগুলোই রডোডেনড্রনের আবাস। মূলত পূর্ব হিমালয়ের অনুচ্চ পর্বত গাত্রে ছবির মতো লেপ্টে আছে রডোডেনড্রনের ঝোপ। রডোডেনড্রন ফুলের বড় বড় গাছগুলো যখন পাহাড়ের গায়ে শাখা-প্রশাখা মেলে দাঁড়িয়ে থাকে, আর তাতে অসংখ্য লাল টকটকে ফুল ফুটে,  তখন বুঝতে বাকি থাকে না কেন সকলেই এই ফুলের বন্দনা করেন।
রবীন্দ্রনাথ অবশ্য শিলং এর পাহাড়ে রডোডেনড্রন ফুলের দেখা পেয়েছিলেন। জায়গাটি একদা ছিল আসামের অংশ, এখন মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী। তবে সামগ্রিকভাবে নিম্ন-হিমালয়ান অঞ্চলভুক্ত।
রডোডেনড্রন ফুল শীতে ফোটে না। পাহাড়ের ফুল রডোডেনড্রনের দেখা মেলে বসন্তের শেষে। অনেকগুলো রং হয় এর। সাধারণত উচ্চতাভেদে এই ফুলের রঙের তারতম্য দেখা যায়। পাহাড়ের গায়ে গায়ে যে রডোডেনড্রন গুচ্ছের ছড়াছড়ি, সেগুলোর প্রায়-সবই লাল বা গাঢ় কমলা। উচ্চ পাহাড়ের কিছুটা নিচের দিকে উপত্যকায় দেখতে পাওয়া যায় ঈষৎ বেগুনি, হালকা গোলাপি রঙের রডোডেনড্রন।
রডোডেনড্রন নেপালের জাতীয় ফুল এবং আমেরিকার ওয়াশিংটন ও ভারতের সিকিম রাজ্যের রাষ্ট্রীয় ফুল। হিমালয়ের অপর প্রান্তের চীনও পিছিয়ে নেই রডোডেনড্রন চর্চায়। দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের কুইচৌ প্রদেশের বি চিয়ে এলাকায় ১২৫.৮ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে রডোডেনড্রন উদ্যান। এখানে রয়েছে ৪১ জাতের রডোডেনড্রন ফুল এবং এশীয় অঞ্চলের সবগুলো প্রজাতি। প্রাকৃতির রঙিন ফিতার মতো ঝলমল করছে চীনে রডোডেনড্রনের প্রাকৃতিক বাহার।
সাহিত্যে রডোডেনড্রেন
প্রকৃতির মাঝে দোলায়িত শত-সহস্র ফুলের মধ্যে খুব কম ফুলের ভাগ্যে কালজয়ী সাহিত্যে স্থান পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। রডোডেনড্রনের রয়েছে তেমনই সৌভাগ্য। বাংলা সাহিত্য ছাড়িয়ে এই ফুল জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বসাহিত্যের আসরেও। সাহিত্যের বিশ্বসভায় সমাদরের দিক থেকে তুলনা করলে একমাত্র গোলাপকেই পাওয়া যায় রডোডেনড্রনের প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে। অনেক পেছনে থাকে চেরি, লিলি এবং আমাদের জবা, জুঁই, মালতী, বকুল, পলাশ, শিমূল, রজনীগন্ধা।
প্রসঙ্গত বলা ভালো, গোলাপের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক নিবিড় সাহিত্যিক বিষণ্নতা। জার্মান-কবি মারিয়া রিলকে প্রেমিকার কাছ থেকে পাওয়া উপহারস্বরূপ গোলাপ স্তবক গ্রহণ করতে গিয়ে আবেগ ও উত্তেজনার আতিশয্যে কাঁটায় বিদ্ধ হন। যে আঘাতের ক্ষত তার মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। ‘রিলকের গোলাপ’ তাই বিশ্বসাহিত্যে এক ট্র্যাজিক ব্যাঞ্জনা পেয়েছে।
রডোডেনড্রনের প্রসঙ্গ শুরু করা যেতে পারে রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে। তাঁর ‘শেষের কবিতা’র মতো বিখ্যাত লেখা সম্পর্কে কে না জানে! রবীন্দ্রনাথ ‘শেষের কবিতা’য় বাংলাভাষী পাঠকের মনে রডডেনড্রনকে অমরত্ব দিয়েছেন! একটি অতি রোমান্টিক ও নাটকীয় আবহে প্রেমের ফুল হয়ে এসেছে রডোডেনড্রন।  
‘শেষের কবিতা’ প্রায়-সবারই পড়া। কাহিনীতে আছে: শিলং পাহাড়ে সন্ধাবেলায় গাড়ি নিয়ে বেড়াতে বেরিয়েছে অমিত রায়, পাহাড়ি পথে আচমকা তার গাড়ি ধাক্কা দিল আর একটি গাড়িকে। গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল একটি মেয়ে। সে দিন লাবণ্যকে তার বাড়ি নামিয়ে দিয়ে ঘরে ফিরে কবিতার খাতা খুলতেই বেরিয়ে এসেছিল নিবারণ চক্রবর্তীর বকলমে অমিত রায়ের উচ্ছ্বাস, ‘...অরুণ মেঘেরে তুচ্ছ,/ উদ্ধত যত শাখার শিখরে/ রডোডেনড্রনগুচ্ছ।’ প্রেমকে নতুন প্রেমিক পেয়েছিলেন রডোডেনড্রনের আবহে।

রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগের ধীমান লেখক বুদ্ধদেব বসুও পরে এই ‘রডোডেনড্রনগুচ্ছ’ নামেই লিখেছিলেন এক আস্ত উপন্যাস। শুধু বাংলা নয়, কালজয়ী ইংরেজি সাহিত্যেও প্রেমের এক অমোঘ দৃশ্যে রডোডেনড্রনের উপস্থিতি উজ্জ্বলতর হয়ে রয়েছে। জেমস জয়েসের বিশালাকার উপন্যাস ‘ইউলিসিস’-এ ডাবলিন উপসাগরের ধারে এক এলাকায় ঝরে-পড়া রডোডেনড্রনের মাঝে লিওপোল্ড ব্লুম বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে নায়িকা মলি ব্লুমকে। প্রণয় নিবেদনের চমৎকার প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছিল রডোডেনড্রনের সান্নিধ্যে। সংলাপেও সে কথা উল্লেখ করতে ভোলেননি ঔপন্যাসিক, যা পরবর্তী কালে স্মৃতি হাতড়েছে নায়িকা মলি: ‘...the day we were lying among the rhododendrons on howth head in the grey tweed suit and his straw hat I got him to propose to me’.
অনেকেই স্কুলজীবন পেরিয়ে কলেজের চৌকাঠে এসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’ বইটি পড়েন। হয়ত বয়সের চপল-চঞ্চল স্বভাবের কারণে সে বয়সে সেভাবে বুঝতে পারেন না উপন্যাসটির মূলভাব। তবে অনেককেই জানি, ‘শেষের কবিতা’ পড়ার পর ভীষণ আচ্ছন্ন হয়ে ছিলেন। এমনও হয়েছে যে, মনে মনে ভালোবেসে ফেলেছেন অমিত রায় নামের চরিত্রটিকে। তার কথা বলার ঢং, কাব্য গাঁথুনি, কবিতা পাঠ, তার প্রগলভতা সবকিছুই ছিল বিশ্বায়নের প্রযুক্তি-পূর্ববর্তী পটভূমিতে আশির দশকের একজন বাঙালি মেয়েকে প্রেমে আকৃষ্ট করার জন্য একমাত্র পরিশীলিত পন্থা। রডোডেনড্রনের উল্লেখ আর আধুনিক পথচলার কথাও তরুণ-যুবকেরা শিখেছে ‘শেষের কবিতা’ থেকেই: “পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি/আমরা দুজন চলতি হাওয়ার পন্থী।”  
আবার এমন অনেককেই নিজের অভিজ্ঞতায় চিনি বা জানি, অমিত-লাবণ্যের প্রেমময় অমর কবিতাখানি তাদেরকে এতটাই মুগ্ধ করে ফেলেছিল যে, বইটি পড়ার পাশাপাশি কবিতাটি পুরো মুখস্থ করেছিলেন। সময় পেলেই ক্যাম্পাস জীবনে বন্ধুমহলে আবৃত্তি করে চমকে দিতেন সবাইকে:
“পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি,
আমরা দুজন চলতি হাওয়ার পন্থী।
রঙিন নিমেষ ধুলার দুলাল
পরানে ছড়ায় আবীর গুলাল,
ওড়না ওড়ায় বর্ষার মেঘে
দিগঙ্গনার নৃত্য,
হঠাৎ-আলোর ঝলকানি লেগে
ঝলমল করে চিত্ত।
নাই আমাদের কনকচাঁপার কুঞ্জ,
বনবীথিকায় কীর্ণ বকুলপুঞ্জ।
হঠাৎ কখন সন্ধ্যাবেলায়
নামহারা ফুল গন্ধ এলায়,
প্রভাতবেলায় হেলাভরে করে
অরুণকিরণে তুচ্ছ
উদ্ধত যত শাখার শিখরে
রডোডেনড্রন গুচ্ছ।”

আর কি চাই? একটি ফুলের জন্য রবীন্দ্রনাথের অপূর্ব কবিতাটির মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রেমময়-সম্মাননার স্পষ্টতর স্বাক্ষরই যথেষ্ট। রডোডেনড্রন ‘শেষের কবিতা’র পরশে কেবল ফুলই থাকে না, হয়ে যায় প্রেমের প্রতীতি। ডাক দেয় দূর পাহাড়ের। হাতছানিতে যেতে বলে শিলং পাহাড়ে। যেখানে হয়ত প্রেমের প্রত্যয় নিয়ে আছে অমিত কিংবা লাবণ্য।

রডোডেনড্রন উৎসব
ফুল যে প্রতিদিনের ব্যবহার পেরিয়ে আস্ত একটি উৎসবের বিষয়ে পরিণত হতে পারে, রডোডেনড্রন সে প্রমাণ বহন করে। অবশ্য গোলাপ নামক বিশ্ববিশ্রুত পুষ্প ইরান এবং মধ্য এশিয়ার নানা দেশে উৎসব মুখরতায় ধন্য হয়। একইভাবে পূর্ব হিমালয়ের ঈষৎ পার্বত্য অঞ্চলে রডোডেনড্রনকে সাধারণ মানুষ উদযাপন করেন প্রবল ভালোবাসার এক উৎসবের মধ্য দিয়ে।
ইংরেজি মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে যখন উপমহাদেশে বিরাজ করে ভরা-বসন্ত, তখন সিকিমের মানেবং-ডেনটামে শুরু হয় রডোডেনড্রন উৎসব। উৎসব চলে একটানা পাঁচ দিন ধরে। শুধুমাত্র পুষ্প-বন্দনা নয়, হিমালয়ান রেঞ্জের পর্যটকরা তখন ভিড় করেন নেপাল আর ভারতের মাঝখানের সিকিমে। বিশ্বায়নের কর্পোরেট কালচারের সুবাদে পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য একাধিক আয়োজন নিয়ে হাজির হয় সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা।
সিকিমে মূল উৎসবস্থল হলেও আয়োজনের প্রধান কেন্দ্র হলো পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ি জেলা দার্জিলিঙ-এর শিলিগুড়ি শহর। রডোডেনড্রন নেপালের জাতীয় ফুল। তাছাড়া ভারতের সিকিম রাজ্যের রাষ্ট্রীয় ফুল। আসাম, মেঘালয় সমেত নিম্ন হিমালয়ের অঞ্চলগুলো রডোডেনড্রনের আলো-ঝলমলে দাপটে উজ্জ্বল। ফলে যোগাযোগের সুবিধাবে বিবেচনা করে শিলিগুড়িতে বসে আশেপাশের সবগুলো অঞ্চলের রডোডেনড্রন প্রজাতির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। বৃহত্তর পূর্ব হিমালয় অঞ্চলের একটি সামগ্রিক ছাপ রডোডেনড্রন উৎসবের আবহ ঘিরে সঞ্চারিত হয় সিকিমে।
উৎসবের বৈশিষ্ট্যটিও চমৎকার। প্রতি বছর স্থান বদল করা হয়। সিকিমের নানা প্রান্তে ঘুরে ঘুরে আয়োজন করা হয় উৎসবের। সঙ্গে থাকে সিকিম ও অন্যান্য পার্বত্য অঞ্চলের ‘অর্গানিক ফুড’ আর ‘ইনবিজেনাস ফ্যাস্টিভেল’। আরও থাকে নানা রকমের ক্রীড়ানুষ্ঠান, যেমন, প্যারাগ্লাইবিং, ট্রেকিং, হিমালয়ান বাইকিং ইত্যাদি।
দেশ-বিদেশের পযটকরাও অপেক্ষা করেন উৎসবের সময়ে সিকিমে যাওয়ার জন্য। এক সাথে এতো কিছু পাওয়ার সুযোগ তো আর সব সময় হয় না! রাতে আলো-ঝলমল অনুষ্ঠান, স্থানীয় ঐতিহ্যের নাচ, গান, খাদ্য, পানীয় আর দিনের বেলা নিটোল প্রকৃতি কিংবা প্রাচীন মনেস্ট্রি, আদিবাসী গ্রাম, বিজন উপত্যকা ঘুরে দেখার রোমাঞ্চকর উন্মাদনা কে হারাতে চায়!
দার্জিলিঙের বিপরীত দিক থেকে অপরূপা কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখা যায় সিকিম থেকে। আরেক মায়াবী, লাজুক, মেঘ-রোদ্দুর জড়ানো আবেশে হিমালয় ধরা দেয় মানুষের চোখে চোখে। চারপাশে বন্য আদিমতায় পাহাড়ের পুরোটা শরীর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা রডোডেনড্রনের বহুবর্ণা বিস্তারের পটভূমিকায় হিমালয় দেখার অনির্বচনীয় আনন্দ সিকিম ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায় না। ফলে ‘রডোডেনড্রন উৎসব’ প্রকৃতি, পুষ্প ও নিসর্গকে ঘিরে জমজমাট মেলা বসায় দেশ-বিদেশের হরেক রকমের পর্যটকের। হিমালয়ের উপান্তে নিভৃত সিকিম মহামানবের মিলনস্থলে পরিণত হয় ‘রডোডেনড্রন উৎসব’ উপলক্ষে।  
স্থানীয় মানুষের কাছে পাহাড়ের কোলে থাকা রডোডেনড্রন গাছ অনেক আদর পায়। যত্ন করা হয় নানাভাবে। পাহাড়ি মানুষ নিজেদের মনে করে রডোডেনড্রন-জাতক। জীবনের নানা আয়োজনে, উৎসবে, প্রার্থনায় কাছে টেনে নেয় এই ফুলকে। শীতপ্রধান ভূগোলে কেবল বসন্তে যে ফুল ফোটে। রডোডেনড্রন ফুলের স্থানীয় নাম গুরাস, যে পুষ্পরাজির সম্ভার হিমালয় পর্বতমালা জুড়ে বিস্তৃত। এমনিতেই যা প্রাকৃতিক পরিচযায় পাহাড়ের আনাচকানাচে শোভা বাড়াচ্ছে। এই ফুল নিয়ে স্থানীয় মানুষ উৎসবে মাতবে না তো কি করবে!
অনেকেই বলে থাকেন, ফুলের বাহারে হিমালয়ান অঞ্চলের সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছে ভুটান। যদিও রডোডেনড্রন উৎসব হয় সিকিমে, তথাপি ভুটানকে বলা হয় ‘ফুলের রাজ্য’। তীব্র শীত বাদ দিয়ে মোটামুটি বছরের আট মাস জুড়েই শুধু ফুলের ছড়াছড়ি। কত রকমের যে ফুল চোখের আলোয় ঝলমল করে, ভাবাই যায় না। ভুটানের পাহাড়গুলোর সর্বাঙ্গ যেন ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে প্রকৃতি। এত ফুল, এত সবুজ, এত অকৃত্রিম নীরবতা, এত পাহাড়, নদী, ঝর্ণা সব মিলে চোখজুড়ানো রূপ নিয়ে ভুটান সত্যিই এক পুষ্পকানন, ফুলের রাজ্য। কমবেশি এমন বিশেষণ পূর্ব হিমালয়ের সবগুলো অঞ্চলকেই দিতে হয়। হিমালয়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসা জনপদগুলো আসলেই একেকটি নন্দনকানন।
পূর্ব হিমালয়ের নন্দনকানন-সদৃশ্য অঞ্চলগুলোর মুকুটমণি বলা হয় রডোডেনড্রনকে। ‘রডোডেনড্রন উৎসব’-এ ফুলটির বহুবিচিত্র প্রজাতির উপস্থিতি আর রঙ ও বাহারই প্রধান আকর্ষণ। তথাপি Ericacea পরিবারে রডোডেনড্রন ছাড়াও পাহাড়ি লরেল, ব্লুবেরি ইত্যাদি আরও কয়েকটি গোত্রে ফুল সেখানে প্রদর্শিত হয়। তবে সবাইকে ছাপয়ে রডোডেনড্রনের পিছু পিছু চলে আসে আরেকটি নাম ‘ম্যাগনোলিয়া’, যাকে বলা হয় রডোডেনড্রন-সখা।

রডোডেনড্রন সখা-ম্যাগনোলিয়া
রডোডেনড্রনের নিবিড় সান্নিধ্যে পূর্ব হিমালয় অঞ্চলের উদ্দাম-পার্বত্য বাতাসে দোলে আরেক অনিন্দ্য ফুল ম্যাগনোলিয়া, যাকে ভালোবেসে স্থানীয় লোকজন বলে ‘রডোডেনড্রন-সখা’। একটি অদ্ভুত মিথ বা পৌরাণিক কথা প্রচলিত আছে ম্যাগনোলিয়াকে ঘিরে। এই ফুল নাকি পৃথিবীর আদিমতম পুষ্প। ঐতিহাসিক কাল পেরিয়ে হাজার হাজার বছর ধরে ম্যাগনোলিয়া নিভৃত পার্বত্য প্রকৃতির বুকে অপরূপ লাবণ্য ও বিভা নিয়ে প্রেমের দেবীর মতো পুষ্পিত হয়ে আছে। অবস্থান করছে রডোডেনড্রনের আশেপাশে।
রডোডেনড্রনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাদা, হলুদ, গোলাপি, বেগুনি রঙের ম্যাগনোলিয়ার রূপ যেন ছড়িয়ে আছে সমগ্র হিমালয়ের পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ের শরীর জুড়ে। শোনা যায় প্রায় ২০০ ধরণের ম্যাগনোলিয়া আছে বিশ্বে। রঙের বৈচিত্র্যের সাথে জড়িয়ে আছে ফুলটির অর্থগত ব্যবহারিক নানা তাৎপয। সাদা ম্যাগনোলিয়া মানব জীবনে ‘নারী মহিমা, শুদ্ধতা আর মর্যাদার প্রতীক’, এমনটিই মনে করা হয়।
শুধু প্রাচ্য দেশেই নয়, সুদূর ইউরোপের বৃটেনে সেই মহারানি ভিক্টোরিয়ান যুগ থেকে ভালোবাসার বার্তা পৌঁছানোর জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে সাদা ম্যাগনোলিয়া। প্রেমিক পুরুষ তার ভালোবাসার মানুষটিকে বলতো: “তুমি একটি সুন্দর ম্যাগনোলিয়ার মতই মূল্যবান ও স্নিগ্ধ।” নারী সৌন্দয বর্ণনায় ম্যাগনোলিয়ার উপমা প্রবাদতুল্য।
শুধু ইউরোপ বা বৃটেন নয়, প্রাচ্যের চীন দেশেও নারীর সৌন্দর্য আর রূপময়তাতে ফুটিয়ে তুলতে  প্রতীক হিসেবে প্রচলিত রয়েছে শ্বেত-শুভ্র-সাদা ম্যাগনোলিয়া। আমেরিকার দক্ষিণেও আনুষ্ঠানিক উৎসবে প্রেমিকা ও স্ত্রীদের হাতে হাতে প্রেমময়তার স্মারক হয়ে শোভা পায় সাদা ম্যাগনোলিয়া।  
ম্যাগনোলিয়ার রঙ বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলায় অর্থগত তাৎপয। হলুদ ম্যাগনোলিয়া মানে সূর্য এবং পৌরুযের প্রতীক। গোলাপি ম্যাগনোলিয়াও সাদার মতো নারীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। হালকা বেগুনি ম্যাগনোলিয়া মানে আনুগত্য ও বিশ্বস্তার প্রকাশ। কথিত আছে, প্রাচীন রোমানরা বেগুনি ম্যাগনোলিয়া রাখতো রাজদরবারে, রাজার প্রতি আনুগত্যের প্রতীকী বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জন্যেই রাখা হতো এই ফুল।
ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি এসে একজন ফরাসি উদ্ভিদবিদ, নাম পিয়েরে ম্যানগোল এই ফুলটি সম্পর্কে বেশ কিছু অজানা তথ্য দিয়েছিলেন বলে তার নামানুসারে ফুলটির নাম হয় ম্যাগনোলিয়া। রডোডেনড্রনের সঙ্গে যেমন মিশে আছে বৃটিশ উদ্ভিদবিজ্ঞানি জোসেফ ডালটন হুকার-এর নাম, ম্যাগনোলিয়ার সঙ্গেও তেমনি জড়িয়ে আছে ফরাসি উদ্ভিদবিদ পিয়েরে ম্যানগোল-এর নাম।
অনেক দেশেই ম্যাগনোলিয়ার ফুলের পাপড়ি থেকে ওষুধ তৈরি করা হতো। রডোডেনড্রনের মতো বিষাক্ত নয় ম্যাগনোলিয়ায় পাপড়ি ও পল্লব। রডোডেনড্রন যেমন নেপাল, সিকিম প্রভৃতি দেশে জাতীয়ভাবে সম্মানিত, ম্যাগনোলিয়াও আদরণীয় কোরিয়ায়। উত্তর কোরিয়ার জাতীয় ফুল এই ম্যাগনোলিয়া। কোরিয়া ছাড়াও দূরপ্রাচ্যের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও ব্যক্তিগত এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে বন্দিত হয় ম্যাগনোলিয়া। বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী বিস্কুট, প্রসাধনী, সাবানের প্যাকেটের গায়ে ম্যাগনোলিয়া ফুলের ছবি ব্যবহার করার প্রচলন বহু দেশেই আছে।
হিমালয়ান অঞ্চল, দূরপ্রাচ্য, ইউরোপ, লাতিন আমেরিকার পার্বত্য জনপদের পাহাড়ে পাহাড়ে, বাড়ির সামনে, পথের ধারের খোলা জায়গায় বড়, মাঝারি এমনকি ছোট গাছেও ফুটে থাকতে দেখা যায় অজগ্র ম্যাগনোলিয়া। কোনটা সাদা, কোনটা গোলাপি, কোনটা হলুদ, কোনটা বেগুনি। হয়তোবা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আরও বিভিন্ন রঙের ম্যাগনোলিয়া। শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়েও টিকে আছে ম্যাগনোলিয়ার নান্দনিক প্রভা ও অপার সৌন্দর্য। সখা-রডোডেনড্রনের মতোই মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত বর্ণবহুল ম্যাগনোলিয়া।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status