ঈদ আনন্দ ২০১৮

বিনোদন

দ্য থ্রি স্টুজেস অজানা গল্প

ফারজানা রুমা

২৮ জুন ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৩:৫৫ পূর্বাহ্ন

কোনো কারণে আপনার মন খারাপ, তা নিমিষেই দূর করতে চান? কিংবা হাসতে চান প্রাণখুলে, তাহলে মেতে উঠুন কমেডি কোনো মুভি বা টিভি সিরিজ উপভোগে। আর এক্ষেত্রে বিশ্বের যে ক’টি টিভি সিরিজ আপনাকে সবচেয়ে বেশি আনন্দ দেবে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘দ্য থ্রি স্টুজেস’।
মৌ হাওয়ার্ড, ল্যারি আর কার্লি -এই তিন অনাথ বন্ধুকে ঘিরে তৈরি হয়েছে বিশ্বনন্দিত এ সিরিজ।
সাদাকালো যুগের এই তিন জনের অদ্ভুত সব কান্ডকারখানা আর তামাসা দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে হয় শিশু, বুড়ো যে কাউকেই। প্রায় ৯০ বছর আগে যাত্রা শুরু ‘থ্রি স্টুজেস’- এর। যদিও শুরুর ইতিহাসে আছে অনেক রকমের গল্প। তবে জানা যায়, টেড হেইলি নামের এক শো অর্গানাইজারের হাত ধরে এই কমেডি টিমের জন্ম। টেড হেইলি অনেক আগে থেকেই মৌ এবং শেম্প হাওয়ার্ড ভাতৃদ্বয় সম্পর্কে জানতেন। ১৯২২ সালের দিকে তিনি মঞ্চে একটি বিচিত্রানুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেন। অনুষ্ঠানের রিহার্সেলের শেষ মুহূর্তে তার সঙ্গে কাজ করা কিছু কলাকুশলী সেট ছেড়ে চলে যায়। অগত্যা আর কোনো উপায় না দেখে টেড হেইলি মৌ এবং শেম্পকে অনুষ্ঠানে নিয়ে আসেন। সেখানেই ঘটে মজার ঘটনা। মঞ্চে স্ক্রিপ্টের বাইরে গিয়ে দুই ভাই নানান রকম কৌতুকপূর্ণ দৃশ্যের জন্ম দেয় আর দর্শকরাও তা লুফে নেয় দারুণভাবে। জন্ম নেয় ‘টেড হেইলি এন্ড হিজ স্টুজেস’-এর। ১৯২৫ সালে এই ত্রয়ীর আরেকজন অভিনেতার খোঁজ চলছিল। ল্যারি ফাইনের সঙ্গে পরিচয়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিই যোগ দেন এ দলে। আর এরই মাধ্যমে ‘টেড হেইলি এন্ড হিজ স্টুজেস’ হয়ে ওঠে আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় তিন কমেডি ত্রয়ী। ১৯৩২ সালে ‘স্যুপ টু নাটস’ ফিল্ম মুক্তির পরপরই শেম্প হাওয়ার্ড ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে চলে যান এবং তার স্থলাভিষিক্ত হন ছোটভাই কার্লি হাওয়ার্ড। তিন বছর পর এই ত্রয়ী, টেড হেইলির সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে কলিম্বিয়ান পিকচার্সের সঙ্গে নিজেদের চুক্তি করেন এবং তখন থেকে ‘দ্য থ্রি স্টুজেস’-এর যাত্রা শুরু হয়।
পরবর্তী ১২ বছরে ‘দ্য থ্রি স্টুজেস’ কলম্বিয়া পিকচার্সের জন্য প্রায় ১০০ এর কাছাকাছি শর্ট ফিল্ম নির্মাণ করে। এই সময়টাতে ‘থ্রি স্টুজেস’ তাদের ক্যারিয়ারে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল। ১৯৪৬ সালে কার্লি স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে শেম্প ছোট ভাইয়ের স্থলাভিষিক্ত হন। প্রথমে রাজি না হলেও পরবর্তীতে কার্লি সুস্থ হলে তিনি আবারও চলে যাবেন এই শর্তে রাজি হন। পরবর্তীতে কার্লির আর সুস্থ হয়ে উঠা হয়নি। তারা তাদের শর্ট ফিল্ম নির্মাণ অব্যহতি রাখেন। কিন্তু ১৯৫৫ সালের ২২শে নভেম্বর শেম্প হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পরের দুই বছর জো বেসার তার অভাব পূরণ করতে আসেন। কিন্তু তিনিও শেষমেশ তার অসুস্থ স্ত্রীকে দেখভাল করার জন্য অভিনয় জগত ছেড়ে দেন। তার পরিবর্তে আসেন জো ডেরিটা, যিনি ‘কার্লি জো’ হিসেবে ১৯৫৮ সালে ‘দ্য থ্রি স্টুজেস’- এ সম্পৃক্ত হন। ১৯৭৫ সালে হার্ট অ্যাটাকে ল্যারি ফাইনের মৃত্যুতে ‘থ্রি স্টুজেস’-এর পথচলা প্রায় সমাপ্ত হয়ে যায়। যদিও মৌ সাপোর্টিং অভিনেতা এমিল সিটকাকে ল্যারির চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ‘থ্রি স্টুজেস’কে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে তিনি সফল হননি। একই বছর ৪ঠা মে ৭৭ বছর বয়সে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে তিনি মারা যান। কলম্বিয়া পিকচার্সের সঙ্গে চুক্তির প্রথম এক যুগ ‘দ্য থ্রি স্টুজেস’ ছিল জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। কিন্তু তাদের কোনো ধারণাই ছিল না তারা কত ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন সেই সময়। কলম্বিয়া পিকচার্স তাদের জনপ্রিয়তাকে ব্যবহার করে নিজেদের ‘বি গ্রেড’ সিনেমাগুলো বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা করেছিল। ‘বি গ্রেড’ সিনেমা না কিনলে প্রদর্শকদের কাছে ‘থ্রি স্টুজেস’-এর ফিল্ম সরবরাহ বন্ধ রাখা হতো। তবে কলম্বিয়া পিকচার্সের প্রেসিডেন্ট হ্যারী কোহন এই ত্রয়ীর কাছে তাদের জনপ্রিয়তা লুকিয়ে রাখতেন। থ্রি স্টুজেস’কে বলা হতো তাদের কমেডি শো এখন আর আগের মতো চলছে না। জনপ্রিয়তার একেবারে শীর্ষে থাকার সময়ই ‘দ্য থ্রি স্টুজেস’ ভয়ে থাকতেন কখন না জানি তাদের শো বন্ধ হয়ে যায় এবং এ কারণে তারা কখনো আরও ভালো চুক্তি অথবা ভালো বেতনের দাবি করেনি। অথচ তাদেরকে বিক্রি করে কলম্বিয়া পিকচার্স বছরের পর বছর ঘরে তুলেছে বিপুল অর্থ। দীর্ঘ ২৩ বছর কলম্বিয়া পিকচার্সের এই কৌশল খুব ভালো কাজ করেছিল। হ্যারি কোহন তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, কমেডি শো দিন দিন ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে। ঠিক ঐ সময়টাতে ‘থ্রি স্টুজেস’ সর্বকালের অন্যতম প্রিয় কমেডি টিমে পরিণত হয়েছিল। কলম্বিয়া পিকচার্স ফিল্ম কোম্পানিতে তারা অপ্রতিদ্বন্ধী ক্যারিয়ার গড়েছিল দীর্ঘ ২৩ বছর। ’৮০ এর দশকের শুরুর দিকে তারা সমালোচকদের সুনজরে আসেন। তাদের বানানো ২২০টি ফিল্মের মধ্যে ১৯০টি ছিল কলম্বিয়া পিকচার্সের হয়ে। ‘থ্রি স্টুজেস’-এর সফল রূপকারদের কেউ আর বেঁচে নেই। কিন্তু তাদের সম্মিলিত এই সৃষ্টিকর্মটি এখনও রিশ্বময় হাসির সুবাতাস বইয়ে চলেছে দুর্দান্তভাবে। স্যালুট থ্রি ‘স্টুজেস’।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status