শেষের পাতা

টঙ্গীতে প্রকাশ্যে ব্যালট ছিনতাই, সিল

রুদ্র মিজান ও এমএ হায়দার সরকার, গাজীপুর থেকে

২৭ জুন ২০১৮, বুধবার, ১০:২৭ পূর্বাহ্ন

ভোটকেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর কর্মীরা। পুলিশের কড়া পাহারা। স্কুলের গেটের সামনে পুলিশের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন যুবলীগ কর্মীরা। নিজেদের লোক ছাড়া তেমন কাউকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেন না। দু’তলা থেকে কয়েক যুবক চিৎকার করছেন ‘ব্যালট শেষ, ব্যালট দেন। আমরা কি ভোট দিমু না’। লাইনে কোনো ভোটার না থাকলেও এই যুবকরা দীর্ঘসময় ধরেই এখানে ভোট দিচ্ছিলেন। ভোটগ্রহণের সময় প্রায় শেষ পর্যায়ে। বের হয়ে যাচ্ছিলেন এক তরুণী। ‘আপা, মারছেন তো খুব। আপনি যা মারতে পারেন।’ ওই তরুণীকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলছিলেন এক পুলিশ সদস্য। জবাবে ওই তরুণী হেসে হেসে বলেন, ‘হু মারছি। আমরা পাস।’ ঘটনাটি গাজীপুরের টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের। দু’তলার সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই  ভয়াবহ দৃশ্য। তিন নম্বর বুথে টেবিলের উপরে ব্যালট রেখে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারছেন কয়েক যুবক। একই বুথের ভেতরে কয়েক নারী সিল মারছেন আর বাক্সে ঢুকাচ্ছেন। স্বাভাবিক ভঙ্গিতে চেয়ারে বসে সেই দৃশ্য দেখছেন সহকারী নারী প্রিজাইডিং অফিসার। দুই নম্বর বুথে সিল মেরে ব্যালট শেষ করে ফেলেছেন যুবলীগের কর্মীরা। প্রিজাইডিং অফিসার বদিউল আলম তখন কেন্দ্রে নেই। অনেক  খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সকাল থেকেই ওই কেন্দ্রের আশেপাশেই ভিড়তে দেয়া হয়নি বিএনপিসমর্থিত মেয়র প্রার্থীর নেতাকর্মী ও এজেন্টদের। কেন্দ্রের আশেপাশে বিএনপি’র মেয়র প্রার্থীর কোনো নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি। ওই বিদ্যালয়ে কেন্দ্র রয়েছে তিনটি। প্রতিটি কেন্দ্রের অবস্থা অভিন্ন। ভোটার রয়েছে ৬ হাজারেরও বেশি। বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থীর কর্মীরা জানান, এজেন্টদের হুমকি-ধমকি দিয়ে বের করে দেয়া হয়েছে। সকালে এজেন্টরা কেন্দ্রে ঢুকতে চাইলে তাদের বের করে দেয়া হয়।

দুপুর ১২টায় টঙ্গীর এরশাদ নগরের মাজেদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ঢুকে ২০-১৫ যুবক। তারা ঢুকেই ব্যালট বই হাতে নেয়। একের পর এক সিল মেরে বাক্সে ঢুকায়। কেন্দ্রের অন্য প্রার্থীদের এজেন্টরা বিক্ষুব্ধ হলে প্রায় এক ঘণ্টা পরে যুবকরা বের হয়ে যায়। ওই কেন্দ্রের তিন নম্বর বুথের বিএনপি মনোনীত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের এজেন্টরা জানান, যুবকরা ব্যালট নিয়ে নৌকায় সিল মেরে একসঙ্গে কয়েক শ’ ব্যালট বাক্সে ঢুকিয়েছে। তবে ওই কেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার নাজনীন আক্তার বলেন, আমি কোনো ব্যালট দেইনি। এর চেয়ে বেশি বলতে পারবেন না বলে জানান তিনি। যদিও পাশের বুথের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার শফিকুল আলম জানান, তার টেবিল থেকে জোর করে ব্যালট নিয়ে গেছে যুবকরা। পুলিশের সামনেই এসব ঘটেছে বলে জানান তিনি। প্রিজাইডিং অফিসার সারোয়ার উদ্দিন বলেন, কিছু যুবক ঝামেলা করছে জেনে আমি পুলিশকে ডাকি। পরে তারা চলে গেছে।
দত্তপাড়ার জাহান পাবলিক স্কুলের আশেপাশে সকাল থেকেই অবস্থান নিয়েছিলো কিছু যুবক। ভোটাররা অভিযোগ করেন তাদের অনেককে ফিরে যেতে বলেছে তারা। আব্দুল হক নামে এক ভোটার জানান, ভোটকেন্দ্রে গেলে এক যুবক তাকে বলে ভোট দিতে হবে না। আপনাদের ভোটের দায়িত্ব আমরা নিয়েছি। এরমধ্যেই ঘটে ঘটনা। অর্ধশত যুবক কয়েকটি বুথে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত সিল মারতে থাকে সেখানে। এসময় পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে পাননি বলে অন্যান্য প্রার্থীর এজেন্টরা জানান। প্রিজাইডিং অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, কিছু যুবক জোর করে ব্যালটে সিল মারছিলো। খবর পেয়ে বুথে গিয়ে এই দৃশ্য দেখে কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করি।

টঙ্গী ইসলামিয়া সিনিয়র মাদরাসায় এজেন্টদের সকালেই হুমকি দেন আওয়ামী লীগ নেতারা। ধানের শীষের এজেন্টকে বের হয়ে যেতে বলেন। বের না হলে একপর্যায়ে হুমকি-ধমকি দেন। মিরাশপাড়ার সানরাইজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ছিল অত্যন্ত কম। কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা ছিলেন সরব। ওই কেন্দ্রের পাশেই রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করেন একজন ভোটার জানান, তিনি ভোট দিতে যাননি। আওয়ামী লীগের কর্মীরা তাকে হুমকি-ধমকি দিয়েছে। ভোট দিতে গেলে ব্যবসা করতে দেবে না। তাই ভোট কেন্দ্রে যাননি তিনি। ওই ব্যবসায়ী বলেন, আমি বিএনপি করি- এটা সবাই জানে। এজন্য হুমকি দিছে। ভোট দিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনতে চাননি বলে জানান এই ভোটার।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status