ইংল্যান্ড থেকে

মস্কো টু সেন্ট পিটার্সবার্গ

সামন হোসেন, রাশিয়া থেকে

২৭ জুন ২০১৮, বুধবার, ১০:১৪ পূর্বাহ্ন

লিওনেল মেসির সব ম্যাচ স্টেডিয়ামে বসে দেখার ইচ্ছা ছিল অনেকের মতো আমারও। তবে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে মেসির আর্জেন্টিনাকে নাস্তানাবুদ হতে দেখে সেই ইচ্ছায় চিড় ধরে। এক সময় ভাবছিলাম আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়ার ম্যাচটি বাতিল করে ডেনমার্ক-ফ্রান্সের খেলা দেখি। নাইজেরিয়ার কাছে আইসল্যান্ডের হারে আশা জাগে  আর্জেন্টিনার। আর বাংলাদেশে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার লাখো সমর্থকের কথা ভেবে আমিও সিদ্ধান্ত পালটে আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়ার বাঁচা-মরার ম্যাচটি কাভার করতে সেন্ট পিটার্সবার্গের ট্রেন ধরি। মস্কোর

লুঝনিকি স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টার থেকে সহকর্মী দৈনিক সংবাদের আরাফাত যোবায়েরকে সঙ্গে নিয়ে আগেভাগেই বের হয়ে মেট্রো ধরে কসোমস্কোকিয়ার স্টেশন পৌঁছালাম রাত সোয়া এগারটায়। আগে বের হওয়ার কারণ কেএফসি খোঁজা। রাশিয়ায় খাবারের জন্য আমাদের অন্যতম ভরসা কেএফসি। মেট্রো থেকে বেরিয়ে মূল স্টেশনে কেএফসি পেলাম। কেএফসিতে রাতের খাবার খেয়ে রেল স্টেশনে পৌঁছালাম। স্টেশনের মূল ফটক দেখে বোঝার উপায় নেই এটি রেল স্টেশন। দেখতে রাজপ্রাসাদ বা বড় গুরুত্বপূর্ণ কোনো কিছু মনে হয়। বড় বড় শপিং সেন্টারও আছে। আমাদের দেশের যে কোনো বিমানবন্দরের চেয়েও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা আছে এখানে। বিশ্বকাপের অনেক স্যুভেনিরও রয়েছে স্টেশনে। স্টেশনে পায়চারি করার একপর্যায়ে দেখা মেলে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক প্রধান নির্বাচন ফারুক আহমেদের। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক পরিচালক আবদুল আউয়াল চৌধুরী ভুলুকে সঙ্গে নিয়ে আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচ দেখতে তারাও এসেছেন সেন্ট পিটার্সবার্গে। তাদের ট্রেন ছিলো ১২.৪ মিনিটে, আর আমার ট্রেন ১.০৯ এ। দেশের ক্রীড়াঙ্গনের মানুষদের পেয়ে ঘণ্টা খানেক সময় দ্রুত কেটে গেল। ফারুক ভাই মস্কো পৌঁছেন সোমবার। পাঁচঘণ্টার মধ্যেই আবার পিটার্সবার্গের ট্রেন ধরতে এসেছেন কমোমস্কোকিয়ায়। ফারুক ভাইকে পাওয়াটাও একেবারে অপ্রত্যাশিত। তারা ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট হলেও যথেষ্ট ফুটবলপ্রেমী। আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়ার ম্যাচ শেষে আজই ব্রাজিল-সার্বিয়ার খেলা দেখতে পিটার্সবার্গ থেকে মস্কোর বিমান ধরবেন। বিমানের টিকিট অতি চড়ামূল্য হলেও মস্কোতে ব্রাজিলের ম্যাচ মিস করতে চান না জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক এই অধিনায়ক। ফারুক ভাইদের ট্রেনের সময় হওয়ায় রওনা হলেন। তাদের চলে যাওয়ার মিনিট দশেক পরেই আরাফাতকে ফেলে আমিও ট্রেন ধরলাম। মস্কোতে আসার পরও ওদের ট্রেনের সুনাম শুনেছি। রোস্তভ, নিজনি নভগোরদ যাওয়ার সময় তার প্রমাণও পেয়েছি। কিন্তু ওই ট্রেন দু’টি দিনের হওয়াতে আসল ভ্রমণের স্বাদ পায়নি। যেমনটা পেয়েছে মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবাগ আসার সময়। নির্ধারিত সময়েই ট্রেন ছেড়েছে। চার বেডের কামরাতে আমার সিট ছিলো উপরে। নিচের সিট দু’টিতে দুই রুশ মা-মেয়ে উঠলেন। উপরের সিট দু’টিতে এক নাইজেরিয়ানের সঙ্গে ছিলাম আমি। কিছুক্ষণ আলাপচারিতার পর আমি ঘুমিয়ে গেলে নাইজেরিয়ান প্রায় সারারাত বসে কাটিয়েছে। একটু পর পর চিৎকার করে বলতে শুনেছি নাইজেরিয়া উইন, মেসি ইজ ক্রাইং। প্রায় বারো ঘণ্টার আরামদায়ক ভ্রমণ শেষে দুপুর পৌনে একটায় সেন্ট পিটার্সবার্গে পৌঁছায়। সেন্ট পিটার্সবার্গ রাশিয়ার একটি ফেডারেল শহর, যা বাল্টিক সাগরের অন্তর্গত ফিনল্যান্ড উপসাগরের মাথায় নেভা নদীর তীরে অবস্থিত। ১৯১৪ সালে শহরটির নাম পরিবর্তন করে পেত্রোগ্রাদ রাখা হয়। ১৯২৪ সালে আরেকবার এর নাম বদলে লেনিনগ্রাদ করা হয়। ১৯৯১ সালে পুনরায়  সেন্ট পিটার্সবার্গ নামটি ফিরিয়ে আনা হয়। রুশ সাহিত্য, অনানুষ্ঠানিক দলিল ও আলোচনায় সাংস্কৃতির অংশটি সাধারণত বাদ দিয়ে শুধু পিতেরবুর্গ বলা হয়। রুশ কথ্য রীতি অনুসারে কখনো কখনো বুর্গ অংশটিও বাদ দেয়া হয় এবং শুধুমাত্র পিতের বলে শহরটিকে ডাকা হয়। এটি রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এটি ইউরোপের একটি প্রধান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং বাল্টিক সাগরের তীরে একটি গুরুত্বপূর্ণ রুশ সমুদ্রবন্দর।  সেন্ট পিটার্সবার্গ রাশিয়ার সবচেয়ে পশ্চিমাভাবাপন্ন শহর হিসেবে বিবেচিত। দশ লাখের বেশি বসবাসকারী আছে এমন শহরগুলোর মধ্যে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তর প্রান্তে অবস্থিত। সেন্ট পিটার্সবার্গ ঐতিহাসিক কেন্দ্র ও সংশ্লিষ্ট স্মৃতিসৌধগুলো ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর একটি। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম জাদুঘর হারমিটেজ সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে অবস্থিত। ৬৭ হাজার ধারণ ক্ষমতার সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে মস্কোর পর রাশিয়া বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সবার্ধিক সাতটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status