শেষের পাতা

বিশ্বকাপ উন্মাদনা সমাজবিজ্ঞানীদের চোখে

মরিয়ম চম্পা

২৬ জুন ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৫৮ পূর্বাহ্ন

রাশিয়া বিশ্বকাপে বাংলাদেশ নেই। আবার আছেও। লিওনেল মেসির ভিডিওতে আমরা আছি। ব্রাজিলিয়ান মিডিয়ার খবরে আছি। আর ফুটবল আবেগে? দুনিয়ার কারো থেকেই পিছিয়ে নেই এই ভূমের মানুষেরা। কিন্তু বিশ্বকাপ নিয়ে উন্মাদনা কখনো কখনো ছাড়িয়ে যাচ্ছে সীমানা। মারামারি আর সংঘাতে জড়াচ্ছেন বাংলাদেশের ফুটবল সমর্থকরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে হিংসা। ফুটবল নিয়ে এই বাড়াবাড়িতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন  সমাজ বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা, আবেগ ঠিক আছে। কিন্তু সংঘাত, সংঘর্ষ কখনো কাম্য নয়।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বলেন, পৃথিবীর আর কোথাও খেলা নিয়ে এমনটা দেখা যায় না। যারা বা যে দেশগুলো খেলছে তাদেরকে নিয়ে আমরা মারামারি করছি। আত্মহত্যা করছি। তাদের নিজ দেশেও কিন্তু এরকমটা দেখা যায় না। বিল্ডিংয়ে, দালানে পতাকা উড়ানো, জার্সি পরা, স্টিকার লাগানো, কি না করছি আমরা। এই ফিফা ওয়ার্ল্ডকাপে আমাদের দেশ কিন্তু খেলছে না। আমাদের মধ্যে এখনো একধরনের বিদেশ প্রীতি রয়েই গেছে। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, স্পেন, জার্মানি- যেই খেলুক না কেন তাদের খেলা আমরা দেখছি ভালো কথা। কিন্তু এটা নিয়ে আমরা যে মাতামাতি বা বাড়াবাড়ি করছি তা ঠিক না। টিভিতে আমরা ক্রিকেট বা টেনিস খেলাও তো দেখি। কিন্তু তা নিয়ে তো এতোটা মাতামাতি করছি না। বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে বাড়াবাড়িটা আমাদের দেশে অন্যরকম একটি পর্যায়ে চলে গেছে। যার ফলে সামাজিকভাবে আমাদের মধ্যে একধরনের হীনম্মন্যতা তৈরি হয়েছে। আবার সাইকোলজিক্যালি আমাদের মধ্যে পরশ্রীকাতরতা বলতে যে একটা ব্যাপার আছে, সেটাও ফুটে উঠছে। এটার কিন্তু কোনো সমাধান নেই। কী কারণে করছি, কেন করছি, এতে আমাদের লাভ কী? সেটা কি আমরা একবারও ভেবে দেখেছি। একেবারে লেখাপড়া, কাজকর্ম, নাওয়া-খাওয়া, ঘুম সব বাদ দিয়ে রাত জেগে আমাদের খেলা দেখতে হবে এটার কোনো মানে হয় না।  ক্রিয়া বা বিনোদন হতে হবে সুস্থ্য এবং সংঘাত মুক্ত।

সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক রাশেদা ইরশাদ নাসির বলেন, ব্যক্তিগতভাবে ফুটবল খেলা দেখা নিয়ে মারামারিকে কখনোই সমর্থন করি না। খেলা হচ্ছে সমাজের মানুষের বিনোদনের একটা অংশ। কিন্তু সবকিছুরই একটা মাত্রা থাকে। যেটা লিমিটের বাইরে যাওয়াটা কখনোই পজেটিভভাবে দেখা সম্ভব না। বাংলাদেশ এত ধনী দেশ না এবং এখানকার সাধারণ মানুষ এতটা উচ্চবৃত্তের পর্যায়ে পড়ে না যে তারা খেলা নিয়ে এধরনের বাড়াবাড়ি এফোর্ট করতে পারে। আত্মহত্যার তো প্রশ্নই ওঠে না। আর খেলা যেহেতু বিনোদনের একটা অংশ তাই কে পক্ষে থাকবে আর কে বিপক্ষে থাকবে সেটা নিয়ে মারামারি করা যাবে না। অর্থাৎ লাইক-ডিসলাইক থাকতেই পারে।

কিন্তু আমাদের মতো ওভার পপুলেটেড ও দরিদ্র দেশের জনগণের ক্ষেত্রে এটা একদমই মানায় না। শহর, গ্রাম-গঞ্জ থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত এলাকায় ফুটবলের প্রচলন থাকায় এটা একটি জনপ্রিয় খেলা। তাই স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য খেলার থেকে এটার উন্মাদনা একটু বেশি। পক্ষান্তরে আমাদের দেশের বহুসংখ্যক লোক অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। যেখানে আমাদের ১৬ কোটি মানুষের বেসিক নিড এখনো ফিলাপ করতে পারিনি। সেখানে ভিনদেশিদের সামান্য খেলা নিয়ে আমাদের এই অত্যন্ত বাড়াবাড়ি ঠিক না। এই বছর ঈদে আমাদের দেশের হাওর অঞ্চলের মানুষ ঠিকমতো ঈদ করতে পারেনি। কই সেখানে তো এই ফুটবল খেলার মতো কাউকে সাহায্যোর হাত বাড়িয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা যায়নি। মজার বিষয় হচ্ছে যে দেশকে আমরা সাপোর্ট করি ওই দেশ কি জানে যে বাংলাদেশ নামক দেশ আছে, সেখানের মানুষ তাদের খেলার জন্য প্রাণ দিয়ে দিচ্ছে। সুতরাং এই মাতামাতির মূল কারণ হিসেবে আমাদের বোধের, শিক্ষার ও জ্ঞানের অভাবকেই দায়ী করতে চাই। কাজেই সবকিছুরই একটা মানানসই বিষয় আছে। এটা আমাদের মানায় না। আমাদের যে সমাজ কাঠামো সেটা এই বাড়াবাড়ি অ্যালাউ করে না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status