বাংলারজমিন

বালাগঞ্জে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা

বালাগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি

২৬ জুন ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ন

বালাগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বন্যা স্থায়ী রূপ ধারণ করেছে। প্রতিদিনই নতুন-নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। একদিকে কুশিয়ারা নদীতে পানির চাপ কমছে আর দ্রুতগতিতে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। ফলে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলোর বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন। পানিবন্দি লোকজনের মধ্যে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কগুলোতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দরিদ্র, দিনমজুর ও স্বল্প আয়ের মানুষজন অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন। অব্যাহত বৃষ্টিপাত আর উজান থেকে নেমে আসা পানিতে স্থানীয় বাসিন্দারা ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কায় রয়েছেন। এছাড়া প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে উপজেলা প্রশাসনের অফিস পাড়া ও প্রশাসনিক ভবনের নিচতলা পানিতে নিমজ্জিত থাকায় অফিসিয়াল কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। উপজেলা সদরের বালাগঞ্জ বাজার বন্যা আক্রান্ত হওয়ার কারণে ক্রেতা-বিক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন। এরমধ্যে বন্যার জন্য বাজারগুলোতে সবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তাই সাধারণ ক্রেতাদের সবজি ক্রয় ক্ষমতার সাধ্য হচ্ছে না। বন্যাকবলিত এলাকায় টিউবওয়েলগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি লোকজনের মধ্যে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বন্যা আক্রান্ত এলাকার শিশুরা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কুশিয়ারা ডাইক নামক বালাগঞ্জ-খসরুপুর নির্মাণাধীন সড়কের উপর দিয়ে প্রায় ৭-৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রবল গতিতে পানি প্রবেশ করায় ক্রমেই পানিবন্দি লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বালাগঞ্জ-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কটিও বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। সরকারিভাবে দেয়া ত্রাণ সহায়তার অপ্রতুলতা রয়েছে। পানিবন্দি লোকজন চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন না বলে তারা অভিযোগ করেছেন। পানিবন্দি লোকজনের অভিযোগ-জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বন্যা পরিদর্শনের অজুহাতে মূল্যবান সময় ক্ষেপণ করছেন। নৌকা দিয়ে পরিদর্শন নামক পিকনিকে সময় নষ্ট না করে তারা যদি বন্যার্তদের কীভাবে সহায়তা করা যায় সেটি ভাবতেন তাহলে বন্যার্তরা উপকৃত হতেন। এদিকে উপজেলা পরিষদের এক জনপ্রতিনিধি বন্যা পরিদর্শনের নামে নৌকায় পিকনিক করার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত কয়েকদিন ধরে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই নানা মন্তব্য করেছেন। ভাইরাল হওয়া ছবিটিকে ঘিরে ওই জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে সর্বত্রই সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ১৭ই জুন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস থেকে প্রেরিত প্রতিবেদনে বন্যার্ত লোকজনের সংখ্যা প্রায় বিশ হাজার উল্লেখ করা হলেও জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন- এ পর্যন্ত পানিবন্দি লোকের সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিকের কাছাকাছি। সরজমিন পরিদর্শন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বালাগঞ্জ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে এখন প্রায় সবক’টি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামগুলো বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। এসব এলাকার প্রায় ৬০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়াও বালাগঞ্জ সদর, পূর্ব পৈলনপুর, বোয়ালজুড়, দেওয়ান বাজার, পশ্চিম গৌরীপুর ও পূর্ব গৌরীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা বন্যার বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হয়েছে। উপজেলা সদরের সঙ্গে ওসব এলাকার লোকজনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে উপজেলার পূর্ব পৈলনপুর ও বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের ‘কুশিয়ারা ডাইক’ নামক সড়কের প্রায় ২০টি স্থানে ভাঙন আক্রান্ত হয়েছে। বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রাধাকোনা গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় আরো কয়েকটি স্থানে উজান থেকে নেমে আসা পানি কুশিয়ারা নদীর উপর দিয়ে গ্রাম ও হাওর এলাকায় প্রবেশ করছে। কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী রাধাকোনা গ্রামের লোকজন দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছেন। উপজেলা সদরের নিকটবর্তী এই রাধাকোনা গ্রামে কুশিয়ারা ডাইকের ১৫ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি কালভার্ট ধসে পড়েছে। বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল হক বলেন, ইতিমধ্যে বরাদ্দ পাওয়া ২২ টন চাল বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে আর কোনো বরাদ্দ আসেনি। তিনি বলেন, উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। আরো বরাদ্দ প্রদান করা হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ছয়টি ইউনিয়নের জন্য আলাদা-আলাদা মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status