বাংলারজমিন

শ্রমিক নেতার দিকে তেড়ে গেলেন সেলিম ওসমান

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে

২৬ জুন ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ন

নারায়ণগঞ্জে একটি গার্মেন্টসে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা নিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে শ্রমিক নেতার দিকে মারমুখী হয়ে তেড়ে গেলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জাপা সমর্থিত এমপি সেলিম ওসমান। এ সময় গার্মেন্ট মালিক পক্ষের হামলায় আহত শ্রমিকসহ বিপুল সংখ্যক শ্রমিক ও কয়েকজন শ্রমিক নেতা উপস্থিত ছিলেন। পরে পুলিশ সংসদ সদস্যকে নিবৃত করে গাড়িতে তুলে দেন। সংসদ সদস্য গাড়িতে উঠার পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন ফতুল্লা আঞ্চলিক শ্রমিকলীগের সভাপতি কাউসার আহমেদ পলাশ। তবে, সেলিম ওসমান গাড়ি থেকে না নেমে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল দুপুরে ফতুল্লা মডেল থানা কার্যালয়ের সামনে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানায়, ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকায় সাকুরা গার্মেন্টসে রোববার শ্রমিক অসন্তোষ ফতুল্লা মডেল থানার ওসির মধ্যস্থতায় শান্ত হলে গতকাল সকাল ৮টায় শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়। কিন্তু কারখানার মালিকের নির্দেশ অনুযায়ী ২০/২৫ জন শ্রমিককে গার্মেন্টসে প্রবেশে বাধা দেন লাইন্সম্যানরা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ভেতরে অবস্থানরত শ্রমিক তাদের ছাড়া কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায়। এর পরেই ভেতরে থাকা স্টাফরা লাঠি ও হকিস্টিক দিয়ে শ্রমিকদের মারধর শুরু করে। শ্রমিকরা আতঙ্কে বের হয়ে বাইরে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় স্টাফদের হামলায় ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক আহত হয়। এরমধ্যে গুরুতর আহত হয়- খোকন মণ্ডল, হনুফা (২৩), সজীব (২১), সাবিনা (২০), কামরুন নাহার (১৮), মাসুদা (২৫), রিনা (২৭)। আহতদের নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়। এদিকে, কারখানার বাইরে থাকা শ্রমিকরা একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে কারখানা ভাঙচুর করতে থাকে। ঘটনাস্থলে শিল্প পুলিশের ফোর্স এসে শ্রমিকদের শান্ত করে ও লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ করে শ্রমিকরা। পরে শ্রমিকরা গার্মেন্টসের সামনে থেকে সরে গিয়ে ফতুল্লার আলীগঞ্জ ক্লাবের দিকে মিছিল নিয়ে যায় এবং শ্রমিক নেতা কাউসার আহমেদ পলাশের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। একপর্যায়ে আহত শ্রমিকসহ বিপুল সংখ্যক শ্রমিক ফতুল্লা মডেল থানার সামনে অবস্থান নেয়। এদিকে ভাঙচুরের খবর পেয়ে সেলিম ওসমান ফতুল্লা মডেল থানায় ছুটে যান। তিনি ওসির রুমে সাকুরা গার্মেন্টের মালিকের সঙ্গে শ্রমিক অসন্তোষের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বেলা দেড়টার দিকে সেলিম ওসমান শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন।
এ সময় সেলিম ওসমান কারখানার মালিককে উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমার লোকদের আর ওইখানে পাঠাবা না। তোমার মিড লেভেলের লোক খারাপ। সেলিম ওসমান কথা বলার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ইউনাইটেড গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি শাহাদাত হোসেন সেন্টুকে দেখে উত্তেজিত হয়ে উঠেন। তিনি বলেন, ‘অয় (সেন্টু) যায় না ক্যান এখান থেকে।’ এ সময় শ্রমিক নেতা সেন্টু সংসদ সদস্যকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে চেতাচেতি করছেন ক্যানো? আমি কী করলাম।’ এর পরেই সেলিম ওসমান তাকে গালাগাল দিতে দিতে তার দিকে তেড়ে যান এবং স্থান ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। এ সময় ফতুল্লা মডেল থানার ওসি মঞ্জুর কাদের উভয়ের মাঝে অবস্থান নিয়ে সংসদ সদস্যকে গাড়িতে তুলে দেন। এরপরই শ্রমিক নেতা কাউসার আহমেদ পলাশ সেখানে উপস্থিত। পরে পলাশ শ্রমিকদের শনিবার পর্যন্ত শান্ত থাকার নির্দেশ দিলে শ্রমিকরা চলে যায়। এ বিষয়ে ইউনাইটেড গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের জেলা সভাপতি শাহাদাত হোসেন সেন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এমপি সেলিম ওসমান কোনো ভুল বোঝাবুঝির কারণে আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়েছেন। ওনার মাথা সে সময় হয়তো গরম ছিল। আর আমার উপস্থিতিটা সে অন্যভাবে নিয়েছিল সম্ভবত তাই ক্ষেপে গিয়েছেন। তবে, এটা নিছক ভুল বোঝাবুঝি ব্যতীত কিছুই নয়।
ফতুল্লা মলেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুর কাদের বলেন, সাকুরা গার্মেন্টসে শ্রমিকদের উপর হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ঘটনাস্থল থেকে লাঠি ও হকিস্টিক উদ্ধার করা হয়েছে ও হামলার সত্যতা পাওয়া গেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। এমপি মহোদয় কারখানার মালিকের সঙ্গে কথা বলেছেন। সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status