প্রথম পাতা

নন-এমপিও শিক্ষকদের কান্না

স্টাফ রিপোর্টার

২৫ জুন ২০১৮, সোমবার, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন

এ পর্যন্ত ২৭ বার প্রতিশ্রুতি মিলেছে। বাস্তবায়নের কোনো লক্ষণ নেই। কেউ কেউ সারা জীবন শিক্ষকতা করে জীবন সায়াহ্নে। কারও কারও জীবনের অর্ধেক পার হয়ে গেছে অপেক্ষায় থাকতে থাকতে। প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত না হওয়ায় তাদের জীবন চলছে না-চলার মতোই। শিক্ষকতার মতো মহান পেশা বেছে নিয়ে তারা পার করছেন মানবেতর জীবন। শিক্ষার আলো ছড়াতে তারা ঘাম ঝরালেও তাদের সন্তানরা শিক্ষার সুযোগ-বঞ্চিত হচ্ছে অর্থের অভাবে। আন্দোলনরত এমপিওবঞ্চিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের টানা কর্মসূচি চলছে। কর্মসূচিতে অংশ নেয়া শিক্ষকরা গণমাধ্যম কর্মীদের পেলেই ব্যাকুল হয়ে উঠছেন তাদের বঞ্চনার কথা বলতে। কথা বলার সময় কারও চোখ বেয়ে নামে অশ্রু।

এদিকে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষকদের বেঁধে দেয়া সময় পার হওয়ার পরও সরকার পক্ষ থেকে তেমন কোনো আশ্বাস না পাওয়ায় পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি হিসেবে আজ থেকে আমরণ অনশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। উল্লেখ্য, একই দাবিতে গত ২৬শে ডিসেম্বর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি ও অনশন শুরু করলে ৫ই জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসানের আশ্বাসে ঘরে ফিরে যান তারা। কিন্তু ২০১৮-২০১৯ সালে পেশ করা বাজেটে অর্থমন্ত্রী নন- এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে নির্দিষ্ট করে আলোচনা না করায় আবারো রাস্তায় নেমেছেন এই মানুষ গড়ার কারিগররা। জাতীয় প্রেস ক্লাবের উল্টোপাশের রাস্তায় রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে গত ১২ই জুন থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন এই শিক্ষকরা। আন্দোলন চলাকালে গতকাল শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, এর আগেও আমরা এমপিওভুক্তির দাবিতে ২৬ বার আন্দোলন করেছি। প্রতিবারই আমাদের ঘরে পাঠানো হয়েছে। গতবার আন্দোলনে নামলে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিতে আমরা প্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে আবার পাঠদান শুরু করি। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির সিকি ভাগও আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো এমপিওভুক্তিকরণে জুড়ে দেয়া হয়েছে নানা শর্ত। তিনি বলেন, আমরা বার বার সময় দিয়েছি সরকারকে।

শিক্ষকরা বলছেন, এমপিওভুক্তির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু গত ১২ই জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল-কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ জারি করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি ও স্বীকৃতির সময় আরোপিত শর্তের সঙ্গে এই নীতিমালা সাংঘর্ষিক। উল্টো বাজেটেও এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে তেমন কিছুই উল্লেখ করা নেই। এ জন্যই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের বিষয়ে অনেকটা সংশয় প্রকাশ করেছেন তারা। দিনাজপুর থেকে আন্দোলনে যোগ দিতে আসা শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, শিক্ষকরা নাকি মানুষ গড়ার কারিগর। কিন্তু এই মানুষ গড়ার কারিগর এখন ঢাকার রাস্তায় পলিথিন পেতে দিনের পর দিন বসে নিজেদের দাবি আদায়ে আন্দোলন করছে, কিন্তু কারোর তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। তিনি বলেন, আজ আমাদের ছাত্ররা অনেক বড় বড় স্থানে চাকরি করছে। অনেক পয়সা কামাচ্ছে। কিন্তু আমরা আজ কোথায়? তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে পাঠদান শেষে পেটের দায়ে মাঠে কৃষিকাজ করি। তবুও সংসারে সচ্ছলতা ফেরে না। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য ঘাম ঝরিয়ে শিক্ষা দেই। কিন্তু আমার সন্তানটি শিক্ষাবঞ্চিত হচ্ছে অর্থের অভাবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status