শেষের পাতা

কুমিল্লার এক মামলায় খালেদার জামিন প্রশ্নে আদেশ ২রা জুলাই

স্টাফ রিপোর্টার

২৫ জুন ২০১৮, সোমবার, ৯:৫৫ পূর্বাহ্ন

কুমিল্লায় বাসে পেট্রল বোমা মেরে মানুষ হত্যার অভিযোগের মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া  অন্তর্বর্তীকালীন জামিন আদেশের বিরুদ্ধে   রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিলের শুনানি শেষ হয়েছে। এ মামলায় খালেদার জামিন প্রশ্নে আদেশের জন্য আগামী ২রা জুলাই দিন ধার্য করেছে আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে একই ঘটনায় নাশকতার অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসনের জামিন প্রশ্নে শুনানির জন্য সোমবার (আজ) দিন ধার্য করেছেন সর্বোচ্চ আদালত। গতকাল শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত চার বিচারপতির আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান, মওদুদ আহমদ, এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। খালেদা জিয়াকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে হত্যা ও নাশকতার দুটি মামলায় হাইকোর্টের দেয়া অন্তর্বর্তীকালিন জামিন গত ৩১শে মে এক আদেশে ২৪শে জুন পর্যন্ত স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল দায়েরের নির্দেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত। পরে রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালত খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করে এ বিষয়ে ২৪শে জুন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল এ সংক্রান্তে শুনানি হয়। এর আগে গত ২৮শে মে এক আদেশে খালেদা জিয়াকে এ দুই মামলায় ৬ মাসের অন্তর্বর্তীকালিন জামিন দেন বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। দুই মামলায় জামিন পেতে গত ২০শে মে আইনজীবীদের মাধ্যমে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে আবেদন করেন খালেদা জিয়া।
গতকাল শুনানির শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ২০১৫ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পেট্রল বোমায় বাস পুড়িয়ে মানুষ হত্যা মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র), ওই ঘটনার পর তোলা কিছু স্থিরচিত্র, সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এবং সাক্ষীদের বক্তব্য থেকে পড়ে শোনান। শুনানিতে খালেদা জিয়াকে ওই ঘটনার হুকুমদাতা, নির্দেশদাতা ও প্ররোচনাকারী হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি বলেন, এগুলো দেখাচ্ছি একারণে যে, ওই ঘটনার ভয়াবহতা কি ধরনের ছিল। কেবল হিটলারের সময় এ ধরনের ঘটনা ঘটতো। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তিনি এই ঘটনার মূল ব্যক্তি যার নির্দেশ ও প্ররোচনায় এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। শুনানিতে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, হরতাল ও অবরোধ এক বিষয় না। হরতালে সীমিতভাবে গাড়ি চলে, দোকানপাটও খোলা থাকে। আর অবরোধে সবকিছু অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। গাড়ি চলতে দেয়া হয় না। তখন লাগাতার অবরোধ চলছিল। ওই অবরোধের হুকুমদাতা তিনিই (খালেদা জিয়া) ছিলেন। ঘটনার আগে দলের নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে তার কথোপকথনেই এটি বোঝা যায় যে, তার নির্দেশেই এই ঘটনা ঘটেছে। খালেদা জিয়ার জামিনের বিরোধিতা করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ নৃশংস ঘটনায় সাতজন মানুষ পুড়ে মারা যান। এখন এ ঘটনার হুকুমদাতা ও প্রধান ব্যক্তি হওয়ার পরও যদি তাকে জামিন দেয়া হয়, তাহলে এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারগুলোর কাছে কী বার্তা যাবে?
একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে জানতে চান, এ বিষয়ে আরো বক্তব্য দেবেন কি না। জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তিনি আরেকটু বক্তব্য দেবেন এবং এজন্য সোমবার সময়ের আর্জি জানান তিনি। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আগামীকাল (সোমবার) আমাদের একজন ব্রাদার  জাজ থাকবেন না। দেশের বাইরে যাবেন। আমরা এরপরের সোমবারে (২রা জুলাই) শুনবো। এতে আপত্তি জানান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। বিএনপির চেয়ারপারসনের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালতের উদ্দেশে বলেন, এখানে একজন আসামির জীবন-মরণের প্রশ্ন। আমাদের নিবেদন, এই পিটিশনের শুনানি শুরু হয়েছে, এটি শেষ হোক। অ্যাটর্নি জেনারেল কেন অ্যাডজন (মুলতবি) চাচ্ছেন?
এসময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি মুলতবি চাইনি।  
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা তো অ্যাডজন অ্যালাউ করিনি। আমরা বলছি, আমাদের একজন ব্রাদার জাজ দেশের বাইরে যাচ্ছেন। তাই আগামী সোমবারের (আজ) পরের সোমবারে (২রা জুলাই) শুনবো। আপনারা তো রিপ্লাই দিতে পারবেন।
একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার অন্য আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও মাহবুব উদ্দিন খোকন দাঁড়িয়ে উচ্চ স্বরে কিছু বলার চেষ্টা করেন।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা কোর্টে চিৎকার করলে তো হবে না। এক পর্যায়ে আদালত খন্দকার মাহবুবকে শুনানি শুরু করতে নির্দেশ দেন।
শুনানিতে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল বলতে চেয়েছেন তিনি (খালেদা জিয়া) অবরোধ ডেকেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো তিনি তখন কি অবস্থায় ছিলেন? তিনি তখন অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন। চার্জশিটে তাকে ৫১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এজাহারে ও প্রথম চার্জশিটে তার নাম ছিল না। আর যদি ধরেও নেয়া হয় যে, তিনি নির্দেশদাতা, তাহলে যাদের তিনি নির্দেশ দিলেন তারা সবাই তো জামিনে আছেন। খন্দকার মাহবুব বলেন, খালেদা জিয়ার সম্মানহানি করতেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পেট্রল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে নস্যাৎ করতেই সরকারের এজেন্টরা পেট্রল বোমা মেরে নাশকতা করেছে। এর দায় বেগম খালেদা জিয়ার নয়। শুনানিতে তিনি বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল অভিযোগপত্র, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন অনেক কিছুই দেখালেন। কিন্তু আমরা কি মামলা বাতিল চাইতে এসেছি? আমরা এসেছি জামিনের জন্য। খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) অত্যন্ত অসুস্থ। ৭৩ বছর বয়সী একজন নারী। তিনি জীবন ঝুঁকিতে রয়েছেন। চার্জশিটে যে কথাগুলো বলা হয়েছে, সেই ঘটনার কতটা সত্যি তা বিবেচনার বিষয়। শুনানিতে খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বহাল রাখার আর্জি জানান খন্দকার মাহবুব হোসেন। শুনানি শেষে সর্বোচ্চ আদালত কুমিল্লার হত্যা মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে আদেশের জন্য ২রা জুলাই এবং নাশকতার মামলায় জামিন শুনানির জন্য সোমবার দিন ধার্য করেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status