বাংলারজমিন

দূষণে হালদায় মরছে মাছ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

২৫ জুন ২০১৮, সোমবার, ৮:৩৯ পূর্বাহ্ন

দূষণে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় হালদা নদীতে ব্যাপকহারে মরছে মাছ। মরছে অন্যান্য জীবও। সম্প্রতি হালদা নদীতে মরে ভেসে উঠে ১৫ কেজি ওজনের একটি মৃগেল মাছ। এতে টনক নড়ে মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তর ও হালদা নদী বিশেষজ্ঞদের।
মাছ ও জীব বৈচিত্র্য মরার কারণ অনুসন্ধানে মাঠে নেমে হালদা নদীর ১০টি পয়েন্টে পানির নমুনা পরীক্ষা করে ভয়াবহ চিত্র বের করেন মৎস্য, পরিবেশ অধিদপ্তর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ টিম।
হালদার পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় গণহারে মাছ মরছে বলে জানান তারা। বিশেষজ্ঞ টিমের সদস্যরা জানান, দূষণে হালদার পানিতে অক্সিজেন কমে যাওয়ার কারণে মাছ ও অন্যান্য জীব বৈচিত্র্য মরে ভেসে উঠছে। কলকারখানার বর্জ্য নিক্ষেপের কারণে মূলত হালদা নদীর পানি দূষিত হচ্ছে।   
টিমের প্রধান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, সাধারণত প্রতিলিটার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের স্বাভাবিক মাত্রা থাকে ৫ মিলি গ্রাম। কিন্তু হালদার পানিতে পাওয়া গেছে ২ মিলি গ্রামের চেয়েও কম। এত কম পরিমাণ অক্সিজেনের মধ্যে মাছ বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, সম্প্রতি হালদা নদীর কর্ণফুলীর মুখ, খন্দকিয়া খালের মুখ, কাটাখালী খালের মুখ, মাদারিখালের মুখ, রামদাশ হাট এলাকা, নাপিতের ঘোনা, আজিমের ঘাট, মাছুয়াঘোনা, সর্তার ঘাট এলাকাসহ ১০টি পয়েন্টে পানির নমুনা পরীক্ষা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, গত দুই যুগের বেশি সময় ধরে হালদা নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু হালদার পানি এত ভয়াবহ দূষণ হতে দেখিনি। পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন খুব কম পাওয়া গেছে যা মাছের বসবাসের উপযোগী নয়। নমুনা পরীক্ষায় নদীর উজানের চেয়ে ভাটি এলাকায় দূষণের মাত্রা বেশি। এর মধ্যে রাউজানের আজিমের ঘাট থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার এলাকায় দূষণের মাত্রা তুলনামূলক বেশি।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কার্যালয়ের সহকারী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, গত মঙ্গল ও বুধবার হালদায় ছোট ছোট মাছ মরে ভেসে উঠলেও বৃহস্পতিবার পাওয়া গেছে বড় বড় প্রচুর মৃত মাছ। এরমধ্যে রুই জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) মাছও রয়েছে। রুই জাতীয় মাছের মধ্যে ১৫ কেজি ওজনের একটি মৃগেল মাছও পাওয়া গেছে। পরে এটি মাটি চাপা দেয়া হয়েছে। দূষণে বিপর্যস্ত হালদা নদীতে মরে ভেসে উঠেছিল মা মাছটি। এতটাই পচে গেছে মাছটি শেষ পর্যন্ত মাটি খুঁড়ে চাপা দেয়া হলো কঙ্কাল সংগ্রহের জন্য।
স্থানীয় লোকজন জানান, গত কয়েকদিনে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে রাউজান, ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীতে বন্যা দেখা দেয়। বন্যার পানি নামার পর কয়েকদিন ধরে হালদার মাছ মরে ভেসে ওঠার বিষয়টি নজরে পড়ে মানুষের। নদীর পানি কালো রং ধারণ এবং দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে।
মঙ্গল ও বুধবার নদীতে ছোট আকারের মরা মাছ দেখা গেলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রচুর পরিমাণে রুই জাতীয়সহ বিভিন্ন প্রজাতির বড় মাছ ও জলজ প্রাণি মরে ভেসে উঠতে দেখা যায়। নদী দূষণ ও মাছ মরে যাওয়ার কারণ নির্ণয়ের জন্য গতকাল সকালে মাঠে নামে বিশেষজ্ঞ টিম। তাদের পরীক্ষায় নদীর পানি দূষণের এই ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে।
দূষণ রোধে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট গতকাল বিকালে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে পাঠানো হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status