বাংলারজমিন

ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ

জালাল উদ্দিন আহমেদ, পটুয়াখালী থেকে

২৪ জুন ২০১৮, রবিবার, ৮:৫১ পূর্বাহ্ন

ঈদ উদযাপন শেষে অষ্টম দিনেও রোদ, বৃষ্টি উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পটুয়াখালী-ঢাকা নৌরুটে লঞ্চসমূহে ঠাঁসাঠাঁসি করে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে কর্মস্থলে ফিরছে লাখো মানুষ। লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রী সাধারণের নিরাপত্তায় পুলিশ কন্ট্রোল রুমসহ নিয়োগ করা হয়েছে পুলিশ ও আনসারসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।
সরজমিনে দেখা গেছে, ঈদে আসা পটুয়াখালী ও বরগুনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে স্ব-স্ব কর্মস্থলে লঞ্চযোগে ফিরে যেতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমিয়েছে পটুয়াখালী লঞ্চ টার্মিনালে। প্রয়োজনের তুলনায় আসন সংখ্যা কম হওয়ায় যাত্রীরা লঞ্চসমূহে ঠাসাঠাসি করে সাদে জায়গা নিয়েছে। গতকাল শনিবার আকস্মিক অবিরাম বৃষ্টির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে কর্মস্থলমুখী মানুষ। এদিকে নির্ধারিত সময়ের আগে লঞ্চগুলো ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া শত শত যাত্রী দূর-দূরান্ত থেকে এসে লঞ্চ না পেয়ে বিপাকে পড়েছে। কোনো কোনো যাত্রীকে পরিবার নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লঞ্চঘাটে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। পটুয়াখালী লঞ্চঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে প্রিন্স আওলাদ-৭, সুন্দরবন-৯, জামাল-৫, কাজল-৭, কুয়াকাটা-১ ও এআর খান-১ ডাবল ডেকার লঞ্চগুলো ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। এসব লঞ্চে ও চাদর পার্টির অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের যাত্রী সাধারণ। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ সিঙ্গেল কেবিন বাবদ ১৫০০ এবং ডাবল কেবিন বাবদ ২৮০০ টাকা ভাড়া আদায় করছেন বলে যাত্রীদের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জামাল লঞ্চে ওঠা ২১৪নং কেবিনের শহিদ মিয়া এবং ২১৫নং কেবিনের যাত্রী হেনা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কেবিন পেতে উৎকোচ ছাড়াও দেড় গুন ভাড়া নিয়েছে। কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ থেকে পরিবার নিয়ে আসা আলমগীর হোসেন জানান, ঈদের ছুটি শেষ হয়েছে শুক্রবার। যেভাবে হোক রোববার ঢাকা গিয়ে তার অফিসে যোগ দিতে হবে। বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার ডাকুয়া গ্রাম থেকে আসা মোবারক আলী জানান, ডেকের ভাড়া ছাড়াও লঞ্চের দালাল ও চাঁদর পার্টির কাছ থেকে একজনের জায়গার জন্য ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। কিন্তু একই জায়গা দালালরা ও চাঁদর পার্টি আরো একজনের কাছে বিক্রি করে চক্রটি উধাও হয়ে বিপাকে ফেলে যাত্রীদের। চরম দুর্ভোগের শিকার হন নিম্ন আয়ের মানুষ। তবে এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালী নদী বন্দরের পরিবহন পরিদর্শক মো. মাহাতাব উদ্দিন বলেন, ঈদ মৌসুমে যাত্রীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী উঠানো ঠেকানো যাচ্ছে না। মাইকিং করে নিষেধ করলেও যাত্রীরা সে নিষেধ মানছে না- এই অবস্থায় নির্ধারিত সময়ের আগেই লঞ্চগুলোকে ঘাট ত্যাগ করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে আমার মনে হয় না। অপরদিকে শনিবার দুপুরের পর পরই যাত্রী নিয়ে পটুয়াখালী লঞ্চঘাট থেকে ৬টি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। আসনসংখ্যা কম হওয়ার কারণে শিশুসহ অনেক যাত্রী লঞ্চের ছাদে উঠতে বাধ্য হয়েছে। তবে আকস্মিক বৃষ্টির কারণে ছাদে ওঠা যাত্রীগুলো দুর্ভোগে পড়েছে এবং ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে।
পটুয়াখালী নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক ও সহকারী বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা খাজা সাদিকুর রহমান অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি জানান, আমরা যাত্রীদের কথা মাথায় নিয়ে অতিরিক্ত লঞ্চের ব্যবস্থা করেছি। অতিরিক্ত ভাড়া যাত্রী বহনের কারণে শুক্রবার কাজল-৭ ও কুয়াকাটা-১ লঞ্চে ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। যাত্রীদের হয়রানির বিষয়ে আমরা সবাই তৎপর রয়েছি। পটুয়াখালী পুলিশ সুপার মইনুল হাসান জানান, যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য ঈদের আগ থেকেই লঞ্চঘাটে পুলিশ কন্ট্রোল রুম খোলাসহ অতিরিক্ত পুলিশ ও আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। যাতে ঈদ উদযাপন শেষে কর্মস্থলমুখী মানুষ কোনো রকম দুর্ভোগে না পড়ে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status