প্রথম পাতা

দুঃস্বপ্নের রাত, কান্না

মানবজমিন ডেস্ক

২৩ জুন ২০১৮, শনিবার, ১০:০১ পূর্বাহ্ন

এক দুঃস্বপ্নের রাত গ্রাস করেছিল আর্জেন্টিনাকে। ক্রোয়েশিয়ার কাছে একের পর এক, মোট তিন গোল হজম করার পর দেশটির আবালবৃদ্ধবনিতা যেমন বেদনায় হিমশীতল হয়েছেন, তেমনি   বেদনা বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অসংখ্য ভক্তের শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেছে। বৃহস্পতিবারের রাতটি তাদের কেটেছে দুঃস্বপ্নে, যেমনটি তারা ভাবতেও পারেননি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গার্ডিয়ান। আর্জেন্টিনা এভাবে হেরে যাবে এটা কেউ কখনো ভাবতেই পারেননি। এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন সব সময়ই থাকবে। কিন্তু তার উত্তর পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হতে পারে দেশটির উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা এমনকি চাহিদার কাছে। তারা আইসল্যান্ডের সঙ্গে খেলায় ড্র করেছে। এটা একটি নৈতিক অবক্ষয়। এতেই ফুটে উঠেছে আর্জেন্টিনা টিম এবার স্বাভাবিক নয়। তারপরও ফুটবল বোদ্ধারা তাদেরকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছিলেন। এক্ষেত্রে প্রকৃত পরীক্ষা ছিল ক্রোয়েশিয়া।
আর্জেন্টিনা দু’দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। তাদের কাছে কোটি কোটি আর্জেন্টাইন ভক্তের এক সীমাহীন স্বপ্ন ছিল। এ দলটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দিয়েগো ম্যারাডোনার মতো কিংবদন্তির দ্যুতি। মাঠে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন তিনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা হেরে গেল ৩-০ গোলে। একটি ম্যাচেই যেন আর্জেন্টিনার জাতীয় দল দুমড়ে-মুচড়ে গেল। এ ম্যাচেই হয়েছে ৩৩টি ফাউল। দেখানো হয়েছে ৭ টি হলুদ কার্ড।
ম্যারাডোনা কেঁদেছেন। আর্জেন্টিনার টিম স্পিরিট যদি কাঁদেন, তাহলে এ খেলাটাকে সবার জন্য বলা যেতে পারে সুষ্ঠু খেলা। তাই আর্জেন্টিনার সাংবাদিকরা সঙ্গে সঙ্গে খবর লিখে ভরিয়ে দিলেন। শুরু হয়ে গেল তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্লেষণ। আর্জেন্টিনার খেলাধুলা বিষয়ক পত্রিকা ডাইরিও ওলে তার অনলাইন সাইটে সঙ্গে সঙ্গে বেদনাযুক্ত একটি শিরোনাম দিয়ে দেয়। তাতে লেখা হয় ‘দুঃস্বপ্নের রাত’। এর সঙ্গে আর্জেন্টিনার গোলকিপার উইলি ক্যাবায়েরোর প্রতি শ্লেষ জানানো হয়। ভিতরে ছিল পূর্ণাঙ্গ ম্যাচের বিশ্লেষণ। এতে ব্যবহার করা হয় কঠিন কিছু বাক্য। তাতে বলা হয়- আর্জেন্টিনা ভয়াবহভাবে হেরে গেছে। এর মধ্য দিয়ে তারা বিশ্বকাপে বাদ হয়ে পড়ার একেবারে দ্বারপ্রান্তে এসে পড়েছে। এ প্রতিবেদন লিখেছেন দিয়েগো ম্যাসিয়াস। খেলা শুরুর আগে আর্জেন্টিনার ভক্তরা যা অসম্ভব বলে ভেবেছিলেন সেই কঠিন সত্যই তাকে লিখতে হয়েছে। তিনি লিখেছেন, ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে আমরা যতটা খারাপ করতে পারি তার চেয়েও বেশি বাজে খেলেছি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে সাংঘাতিক যতগুলো ভুল আছে তার মধ্যে অন্যতম বড় ভুলের দুর্ভোগ পোহাচ্ছি আমরা। দেখেছি সবচেয়ে সেরা খেলোয়াড়ের সবচেয়ে বাজে খেলা। ডাইরিও ওলে লিখেছে, এগুলো হলো সবই দুঃস্বপ্নের রাত। এত বেশি আর্জেন্টাইনিয়ানের হৃদয়ের বেদনা তা। সেই বেদনা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। বিশ্বকাপের লড়াইয়ের স্বপ্নের চেয়ে তা বেশি বেদনাময় হয়ে উঠেছে। তবে এই পত্রিকাটির প্রতিদ্বন্দ্বী এল গ্রাসিকো আর্জেন্টিনার ৯৯ বছরের ফুটবল ইতিহাস নিয়ে গর্ব করেছে। তারা তাদের ফুটবলের ঐতিহ্য নিয়ে প্রশংসা করেছে। তারা ১৩৯ বার ম্যারাডোনাকে নিয়ে কভার ফিচার করেছে। তবে তারা আধুনিক ডিজিটাল যুগের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেয়নি। তারা অনলাইন আপডেট করেনি। আর্জেন্টিনা হেরে যাওয়ার এক ঘণ্টা পরও তাদের অনলাইনের প্রধান শিরোনাম ছিল বিশ্বকাপ থেকে পেরুর ঝরে যাওয়ার খবর। পত্রিকাগুলো তাদেরকে বর্ণনা করেছে ‘বেদনার মুখ’ হিসেবে। তারা একজন মানুষকে জিজ্ঞেস করলেন, মাঠে সব চেয়ে বাজে বা ফ্লপ ছিলেন কে? এক সেকেন্ডও পাড় হলো না। অমনি জবাব এলো কাঠের চামচ তুলে নিয়েছেন মাশ্চেরানো। ক্রোকিকা টিভি’র উপস্থাপক আরেকজনকে জিজ্ঞেস করলেন, বাস্তব জীবনের চেয়ে মেসি কি প্লে স্টেশন ভাল খেলেন? তবে এই ম্যাচটি শেষ হওয়ার পর মধ্য-ডানপন্থি শীর্ষস্থানীয় দৈনিক লা ন্যাশন সব কিছুকে এক স্থানে ১৫০ শব্দের একটি ম্যাচ রিপোর্ট লিখেছে। তাতে তারা ভক্তদের প্রকৃত তথ্যের সঙ্গে আকৃষ্ট করে রাখলেন। তাদের শিরোনাম ‘আর্জেন্টিনা এমব্রেসড এগেইনস্ট ক্রোয়েশিয়া অ্যাজ দেয়ার ওয়ার্ল্ড কাপ ফিউচার ইজ ইন চেক’। অর্থাৎ ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে বিব্রতকর অবস্থায় আর্জেন্টিনা। তাদের বিশ্বকাপের ভবিষ্যৎ দমিত হয়েছে। কোচ সাম্পাওলির কৌশলগত খেলোয়াড় পরিবর্তনের দিকে তারা আঙ্গুল তুলেছে। বলা হয়েছে, টিম খেলায় যেমনটা দেখা যায় ঠিক সেই একই কাজ তিনি এখানেও করেছেন। আর ম্যাচের শেষ পর্যায়ে এসে পুরো টিমই যেন পুরোপুরি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিল।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status