শেষের পাতা

রফিক ও রাহীর জবানবন্দি যে কারণে তাহসিন খুন

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২৩ জুন ২০১৮, শনিবার, ৯:৩২ পূর্বাহ্ন

সিগারেট খাওয়ায় জুনিয়রদের শাসন করেছিল সিলেটে খুন হওয়া কলেজছাত্র তাহসিন। এ সময় তাদের সিগারেট প্রকাশ্যে না-খাওয়ার জন্য বারণও করেছিল। এতে তাহসিনের ওপর ক্ষেপেছিল জুনিয়ররা। তারা তাহসিনকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা নেয়। রাত ১০টার দিকে তাহসিন যখন শিবগঞ্জ বাজার থেকে মিতালি ফার্মেসির দিকে আসছিল তখন তাকে ঘিরে ধরে জুনিয়র বখাটেরা। তারা তাহসিনকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণে
 মারা যায় তাহসিন। তাহসিনের পুরো নাম মশিউর রহমান তাহসিন। সে বালুচর এলাকার বাসিন্দা ও ছাত্রলীগের টিলাগড় গ্রুপের কর্মী। ঈদের দিন রাত ১০টার দিকে সিলেট নগরীর শিবগঞ্জের মিতালি ফার্মেসির সামনে আলোচিত এ খুনের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই খুনিরা শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে শাহপরান থানা পুলিশ প্রযুক্তিগত অনুসন্ধান চালিয়ে প্রথমেই অয়েজ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে। এরপর এক এক করে গতকাল পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রফিক ও রাহী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খুনের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের ভাষ্য থেকে নামের সূত্র ধরে গতকাল সকালে পুলিশ অপু, জুম্মান ও মিলন নামের আরো তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল বিকালে তারা আদালতে দায় স্বীকার করে বক্তব্য দিয়েছে। শাহপরান থানার ওসি আক্তার হোসেন জানিয়েছেন- নিহত তাহসিন ও খুনিরা একই বলয়ের সদস্য। ঈদের দিন রাতে সিগারেট খাওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। আর এই দ্বন্দ্বের জের ধরে ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় তাহসিনকে। তাহসিন এবার এসএসসি পাস করেছে। কলেজে ভর্তি হওয়ার প্রক্রিয়ায় ছিল। এই খুনের ঘটনার পর যারাই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে জুবের নামের এক যুবক খুনে ব্যবহৃত চাকু নিয়ে পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলে জানান তিনি। সিলেটের টিলাগড় ক্রমেই অশান্ত হয়ে উঠছে। ছাত্রলীগের কাউন্সিলর বলয়ের কর্মীরা এই এলাকা শাসন করে। নিহত তাহসিন ও খুনিরা একই গ্রুপের কর্মী। এই খুনের ঘটনার পর ফের আলোচনায় এসেছে টিলাগড়। সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। পুলিশ জানায়, বৃহত্তর টিলাগড় এলাকার বাসিন্দা অয়েজ, রাব্বি, জিহাদ, রাহি, রফিক, অপর, জুম্মান, মিলনসহ কয়েকজনের হাতে নির্মমভাবে খুন হয় মশিউর রহমান তাহসিন। এদিকে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার খুনিরা দায় স্বীকার করে আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছে, সেখানে তারা জানিয়েছে, ঈদুল ফিতরের রাতে শিবগঞ্জ সাদিপুর রাস্তার মুখে হেয়ার গেইম সেলুনের সামনে মশিউর রহমান তাহসিন তার বন্ধু রাফাত আহমেদ সানি, ফাহিম, মিনহাজ, রাহী, রায়হান এবং এলাকার বড় ভাই সুমন ও সাক্কুসহ ঈদ উপলক্ষে আড্ডা দিচ্ছিল। তখন কল্যাণপুরের আলোচিত কবিরের ছেলে নাইমুর রহমান রাব্বি, নিহাদ আহমদ ওরফে লিহাদ আহমদ, মো. রফিক ও মো. রাহি হেয়ার গেইম সেলুনের পাশের পানের দোকান থেকে সিগারেট নেয়। সে সময় দোকানের সামনেই তারা ধূমপান করতে থাকে। বিষয়টিকে বেয়াদবি হয়েছে ভেবে মশিউর রহমান তাহসিনসহ তার বন্ধুরা বাধা দেয়। কিন্তু আসামিরা ও অন্যরা তাহসিন ও তার বন্ধুদের বাধা না শুনে বিদ্রূপাত্মক আচরণ করে। এতে তাহসিন ও তার বন্ধুরা আসামি রবিন ও তার সহযোগীদের মারধর করে চড়-থাপ্পড় মেরে বিদায় করে দেয়। এর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বর্ণিত আসামিরাসহ অপরাপর আসামিরা শিবগঞ্জ মিতালি ফার্মেসির সামনে চায়ের দোকানে ওত পেতে থাকে। শিবগঞ্জ সাদীপুর রাস্তার মুখের আড্ডা শেষে ভিকটিম মশিউর রহমান তাহসিন তার বন্ধু ফাহিম ও রাফাত আহমদ সানিসহ হেঁটে হেঁটে শিবগঞ্জ সোনারপাড়া বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাত ১০টায় শিবগঞ্জ মিতালি ফার্মেসির উল্টো পাশে বাইতুল জান্নাত জামে মসজিদের কাছে পৌঁছলে আগে থেকে ওত পেতে থাকা আসামিরা মশিউর রহমান তাহসিনকে আটকিয়ে তার গালে, গলায় এবং উরুতে ছুরিকাঘাত করে চলে যায়। ভিকটিম মশিউর রহমান তাহসিনের বন্ধু রাফাত আহমদ সানি ও ফাহিম তাহসিনকে সিএনজিতে করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে খুনের ঘটনার পর শাহপরান থানা পুলিশ প্রথমে অয়েজ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে। তার কাছ থেকে তথ্য পেয়ে পুলিশ রাব্বি, জিহাদ, রাহি, রফিককে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পরপরই তারা পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দায় স্বীকার করে। পুলিশ তাদের আদালতে পাঠালে রফিক ও রাহি স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য দেয়। বৃহস্পতিবার রাতভর পুলিশ অভিযান চালিয়ে খুনের ঘটনায় জড়িত অপু, জুম্মান ও মিলনকে গ্রেপ্তার করে। আর বক্তব্যে তারা জানায়, ‘প্রকাশ্যে মারধর করায় তাহসিনকে ছুরি দিয়ে খুন করি। আর খুনের ঘটনার পরপরই আমরা পালিয়েও যাই।’ তারা খুনের ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার বিষয়টি স্বীকার করে। গতকাল বিকালে শাহপরান থানা পুলিশ তাদের আদালতে পাঠায়। আদালতেও তারা দায় স্বীকার করে বক্তব্য দেয়। স্থানীয়রা জানিয়েছে, টিলাগড়ে ছাত্রলীগের গ্রুপের পরিচয় দিয়ে উঠতি ওই যুবকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। তাদের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল এলাকার মানুষ। ঈদের দিনও তারা দল বেঁধে টিলাগড় এলাকায় মহড়া দিয়েছে বলে জানান তারা। কিন্তু খুনের ঘটনার পর টিলাগড় ফের নীরব হয়ে পড়ে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status