বাংলারজমিন

খুলনা বারের ‘বঙ্গবন্ধু ভবন’ নির্মাণে কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ নিয়ে তোলপাড়

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে

২৩ জুন ২০১৮, শনিবার, ৯:১২ পূর্বাহ্ন

খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদ্য সমাপ্ত বঙ্গবন্ধু ভবন নির্মাণে এক কোটি তিন লাখ ৩৯ হাজার ৩৫০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগের প্রতিবেদন দাখিল করেছে তদন্ত কমিটি। ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে এ অর্থ আত্মসাৎ করা হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বারের হলরুমে এক আইনজীবী অর্থ লোপাটের বিষয়ে কথা বলায় তাকে প্রকাশ্যে প্রহার করা হয়েছে। বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এ দুর্নীতি অনিয়মের বিষয়ে অবগত করা হয়েছে। সমপ্রতি খুলনা জেলা ও দায়রা জজ জেসমিন আনোয়ারকে অনিয়মের অভিযোগে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। তিনি এ ভবন নির্মাণ কাজের চেয়ারম্যান ছিলেন। খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য কমলেশ সানা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে বারের দ্বিতীয় তলায় বসে নবনির্মিত ভবনে কোটি টাকা দুর্নীতির বিষয়ে কথা বলছিলাম। এ সময় এডভোকেট সুমন্ত, এডভোকেট কমলেশ ও হেমন্ত আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। একপর্যায়ে এডভোকেট সুমন্ত আমার বুকে ঘুষি মারেন। এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদক বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভবনটি নির্মাণের জন্য তিন কোটি ১১ লাখ ৪২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, ভবন নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হলেও শর্ত ভঙ্গ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বদলে সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিজন কৃষ্ণ মণ্ডল নিজ দায়িত্বে ভবনটির নির্মাণ কাজ তদারকি করেন। বৃহস্পতিবার সমিতির কার্যকরী কমিটির সভায় এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য সভা হওয়ার কথা ছিল। তবে অনিবার্য কারণবশত সভাটি হয়নি। তবে আগামী সপ্তাহে নির্বাহী কমিটির সভা হবে বলে বারের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মশিউর রহমান নান্নু নিশ্চিত করেছেন। আইনজীবী সমিতির সূত্র জানায়, সমিতির ভবন নির্মাণে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠায় বিষয়টি তদন্তের জন্য চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির কর্মকর্তারা হলেন আহ্বায়ক এসএম মঞ্জুরুল আলম এবং সদস্য আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মো. আবদুল মালেক, চিশতি সোহরাব হোসেন শিকদার ও এমএম মুজিবর রহমান। তদন্ত কমিটি ছয় মাস বিভিন্ন ভাউচার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রতিবেদন দাখিল করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এসকে ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে আইনজীবী সমিতির বঙ্গবন্ধু ভবন নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। ঠিকাদার নির্মাণ কাজ না করায় ২০১৭ সালে আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিজন কৃষ্ণ মণ্ডল নিজ তত্ত্বাবধানে নির্মাণ কাজ শেষ করেন। ইট, সিমেন্ট, বালি, পাথর, রড, পাইলিং, টাইলস, গ্রিল, কাঠ, রংমিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি ও কাঠমিস্ত্রির মজুরির ভাউচার বাস্তবতাবর্জিত। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুদানের টাকা খরচের ক্ষেত্রে অবহেলা দেখা যায়। ভবনের কাজে প্রকৌশলীর পরামর্শ নেয়া হয়নি। লিফট ক্রয়ে ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও ২০ লাখ টাকা দিয়ে একটি ক্লোন লিফট কেনা হয়। তবে এ লিফটি আইনজীবীরা লাগাতে দেননি। নিচতলা থেকে চতুর্থ তলা নির্মাণে ভাউচারগুলো নিরীক্ষার পর প্রমাণিত হয়েছে সীমাহীন অনিয়ম। কাঠের দরজা-জানালা,  চেয়ার-টেবিল নিম্নমানের কাঠ দিয়ে তৈরি করে উন্নতমানের কাঠের ভাউচার দিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। সিমেন্ট ক্রয়েও দুর্নীতি করা হয়েছে। এছাড়া ভবন নির্মাণ কমিটির কোনো সভা না  ডেকে তথাকথিত পরিদর্শক কমিটির পেছনে তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়েছে, যা সম্পূর্ণ নিময়বহির্ভূত। সদ্য বদলি (স্ট্যান্ড রিলিজ) হওয়া জেলা ও দায়রা জজ জেসমিন আনোয়ার এই অর্থ আত্মসাতের সুযোগ করে দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, তদন্ত কমিটির কাছে কাচামাল কেনার  ক্ষেত্রে ভুয়া ভাউচার প্রমাণিত হওয়ায় আইনজীবী সমিতির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদককে গত ১৩ ও ২৪শে মে হাজির হওয়ার জন্য দুই দফা চিঠি দেয়া হয়। গত ৩ জুন অডিট কমিটির সামনে হাজির হয়ে কমিটির সদস্য এমএম মুজিবর রহমানের জিজ্ঞাসাবাদে তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বিজন কৃষ্ণ মণ্ডল স্বীকার করেন বঙ্গবন্ধু ভবন নির্মাণে এসকে ট্রেডার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হলেও তারা কাজ না করায় তিনি নিজ দায়িত্বে সম্পন্ন করেন। অনিয়মতান্ত্রিক ব্যয়ের অভিযোগ সম্পর্কে সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিজন কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ভবন নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন জেলা ও দায়রা জজ। বিল-ভাউচারে কোনো অনিয়ম নেই। এদিকে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মশিউর রহমান নান্নু জানান, চার সদস্যর তদন্ত কমিটি ৬৫ পাতার একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তাতে এক  কোটি তিন লাখ ৩৯ হাজার টাকা অনিয়মের কথা বলা হয়েছে। কার্যনির্বাহী পরিষদের আগামী সপ্তাহে সভায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status