এক্সক্লুসিভ

রোজগার্ডেন থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ

কাজী সোহাগ

২৩ জুন ২০১৮, শনিবার, ৯:০৯ পূর্বাহ্ন

পুরান ঢাকার রোজগার্ডেন থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। আওয়ামী লীগের ঠিকানা। মাঝে বেশ কয়েকবার পরিবর্তন হয়েছে ঠিকানার। এ সবই ছিল অস্থায়ী। কিন্তু এবার স্থায়ী অফিস পেতে যাচ্ছে দলটির নেতাকর্মীরা। বঙ্গবন্ধু এভিনিউর দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন নতুন ১০ তলা ভবন হচ্ছে দলটির স্থায়ী ঠিকানা। এজন্য বেছে নেয়া হয়েছে ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটি। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ নতুন এ ভবনের উদ্বোধন করবেন। এ প্রসঙ্গে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধাসহ অফিস নির্মাণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যার দৃঢ়তা এবং কমিটমেন্টের জন্য আমাদের কেন্দ্রীয় প্রধান ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা দলীয় তহবিলের টাকায় এই কার্যালয় নির্মাণ করেছি। আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, দলের নিজস্ব ফান্ড থেকে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মাণ করা হয় (ফার্নিচার ও ডেকোরেশনসহ)। এর সামনের দেয়ালের দু’পাশ কাচ দিয়ে ঘেরা আর মাঝখানে সিরামিকের ইটের বন্ধন। সামনের দেয়ালজুড়ে দলের সাইনবোর্ডসহ দলীয় স্লোগান ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’, দলের চার মূলনীতি খোদাই করে লেখা। আর সামনে-পেছনে ছেড়ে দেয়া জায়গায় হবে বাগান। এ ছাড়া ভবনের সামনে ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে স্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ভবনটির প্রথম থেকে তৃতীয়তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোর ৪ হাজার ১০০ বর্গফুট। চতুর্থতলা থেকে ওপরের সবক’টি ৩ হাজার ১০০ বর্গফুটের। সংশ্লিষ্টরা জানান, দ্বিতীয় তলার কনফারেন্স রুমে ৩৫০ জনের বসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তৃতীয়তলায় ২৪০ জনের বসার ব্যবস্থা থাকবে। মাঝখানে কনফারেন্স রুম আর দুই পাশে বেশকিছু কক্ষ রয়েছে। তিনতলার সামনের অংশটা ‘ওপেন স্কাই টেরেস’। অনেকটা বাসার ড্রয়িংরুম বা পাঁচতারকা হোটেলের আদলে করা হবে এ অংশ। এখানে কৃত্রিম বাগানের ফাঁকে ফাঁকে চেয়ার-টেবিল দিয়ে বসার ব্যবস্থা থাকছে। পাশাপাশি থাকবে চা-কফি খাওয়ার আয়োজন। এ ছাড়া ভবনের চার ও পাঁচতলায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়াও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিমসহ সমমনা অন্যান্য সংগঠনের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হবে। সাত, আট ও ৯ তলায় দলীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের কক্ষ রাখা হয়েছে। ভবনের বিভিন্ন তলায় রাখা হয়েছে ডিজিটাল লাইব্রেরি, সেমিনার রুম এবং সাংবাদিক লাউঞ্জ। সামনের সড়কে ছেড়ে দেয়া নিজস্ব জায়গায় পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। চতুর্থ ও পঞ্চমতলায় সাধারণ অফিস, ডিজিটাল লাইব্রেরি, মিডিয়া রুম। ষষ্ঠতলায় সম্মেলন কক্ষ। সপ্তমতলা দলের কোষাধ্যক্ষের জন্য। অষ্টমতলায় সাধারণ সম্পাদকের অফিস। আর নবমতলায় বসবেন দলের সভাপতি। এর মধ্যে সভাপতির ফ্লোর থাকবে বুলেটপ্রুফ ডাবল গ্লাস। একদম ওপরে দশমতলায় থাকবে ক্যাফেটেরিয়া।  আধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত ভবনটি পুরোটাই থাকবে ওয়াইফাইয়ের আওতায়। আজ উদ্বোধনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে নতুন কার্যালয়ের চাবি তুলে দেবেন গণপূর্তমন্ত্রী। উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী নিজেই সভাপতিমণ্ডলী, যুগ্ম সম্পাদকসহ অন্য নেতা ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জায়গা নির্ধারণ করে দেবেন। এর মধ্যে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য রাখা হয়েছে সুপরিসর কক্ষ। সভাপতির কক্ষের সঙ্গে রয়েছে বিশ্রামাঘার ও নামাজের জায়গা। ডিজিটাল লাইব্রেরি, ভিআইপি লাউঞ্জ, সাংবাদিক লাউঞ্জ, ডরমিটরি ও ক্যান্টিনও থাকছে। আর ভবনটির ছয় বা সাততলা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অফিস থাকবে। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন যাত্রা করেছিল পুরান ঢাকার রোজগার্ডেনে হওয়া সম্মেলনের মধ্য দিয়ে। সময়ের বিবর্তনে ও প্রয়োজনের তাগিদে দলটিকে কার্যালয় পরিবর্তন করতে হয়েছে বেশ কয়েকবার। ১৫০ মোগলটুলী আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের আঁতুড়ঘর হলেও কারকুনবাড়ী লেনের একটি ভাড়া বাড়িতে প্রথম দলীয় কার্যক্রম শুরু হয় আজকের আওয়ামী লীগের। এর পর ১৯৫৬ সালে পুরান ঢাকায় ৫৬ সিমসন রোড, ১৯৬৪ সালে ৯১ নবাবপুর রোডে, এর পর সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলের গলি, পুরানা পল্টনে কার্যালয় স্থানান্তরিত হয়ে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম চলে অনেকদিন। এরপর যায় সার্কিট হাউস রোডে। ১৯৮১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের হাল ধরলে নানা বিবেচনায় ঠিকানা হয় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। সেটাও আজ থেকে প্রায় ৩৭ বছর আগে। ২০১১ সালে নতুন কার্যালয়ের পরিকল্পনা মাথায় আসে আওয়ামী লীগ নেতাদের। সরকারি বিধি অনুযায়ী নানা কার্যক্রমের পর ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ভবন নির্মাণের আনুষ্ঠানিক কাজে হাত দেয়া হয়। লক্ষ্য ছিল দুই বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার। দ্রুত শেষ করতে কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হয়নি, দলের সভাপমিণ্ডলীর সদস্য পূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ সরাসরি এ কাজের তত্ত্বাবধান করেন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে নতুন কার্যালয়টি যেখানে নির্মিত হয়েছে, সেই জমিটি ইতিমধ্যে ৯৯ বছরের জন্য লিজ নেয়া হয়েছে সরকারের কাছ থেকে। জমি লিজ ও কেনা সবমিলিয়ে ৭ কাঠা জমির ওপর মাটির নিচে (গ্রাউন্ড ফ্লোর) একতলাসহ দশতলা মূল ভবন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status