দেশ বিদেশ

নবীনগরে পুলিশের তাণ্ডব

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে

২৩ জুন ২০১৮, শনিবার, ৮:৩৬ পূর্বাহ্ন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের লক্ষ্মীপুর দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এবার প্রাইমারি স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (পিএসসি) দেয়ার কথা রয়েছে ৬০ জনের। ফরম ফিলাপ করেছে তাদের সবাই। কিন্তু বিদ্যালয়ে আসতে পারছে না তাদের কেউই। বুধবার এই পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বিদ্যালয়ে হাজির ছিলেন মাত্র ৩ জন। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নূর মো. সিকদার বলেন- এলাকার পরিস্থিতি থমথমে। এই অবস্থা থাকলে রেজাল্ট নিঃসন্দেহে খারাপ হবে। এলাকা অশান্ত। স্কুলে যেমন ছাত্র-ছাত্রী নেই তেমনি গোটা গ্রামই বিরান। এরমধ্যে পুলিশের নির্যাতনে সন্ত্রস্ত্র হয়ে পড়েছে নতুন করে এই গ্রামের মানুষ। ঈদ উপলক্ষে বাইরে থেকে গ্রামে যারা এসেছিলেন তারা শিকার হয়েছেন পুলিশের হেনস্তার। লক্ষ্মীপুর গ্রামে পুরুষের দেখা মিলেছে কমই। সব বাড়িঘরে দেখা মিলে শুধু নারী-শিশুদের। আতঙ্ক বিরাজ করছে তাদের মধ্যেও। ঈদের দু’দিন পরই পুলিশ বাড়িঘরে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন গ্রামে বসবাসকারীরা। এ সময় তারা মারধর করেছে যাকে পেয়েছে তাকেই। মার্চ মাসে আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে খুনের ঘটনা ঘটে গ্রামে। দুলাল মিয়া (৪০) নামে একজন খুন হন। এরআগে অপরপক্ষের জিল্লু মিয়া (৬০) নামে আরেকজন আহত হন। দুলাল নিহত হওয়ার পরই বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটে। তাণ্ডব চলে তখন গ্রামের খাঁ বাড়ি, ভূঁইয়া বাড়ি, হুরাগাজীর বাড়ি, কাতাইরা বাড়ি ও লাডুর বাড়িতে। এরপর থেকেই অশান্ত লক্ষ্মীপুর গ্রাম। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নেই। ঈদ করতে বিভিন্নস্থানে বসবাসকারীরা বাড়িতে এসেছিলেন ঠিকই। তারাও শান্তি পাননি। গ্রামের রাস্তায় ভাঙা হাত নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন কলেজছাত্র জসিম সিকদার। নবীনগর সরকারি কলেজে ডিগ্রিতে পড়েন। জসিম জানান-কোনো কারণ ছাড়াই পুলিশ তার হাত ভেঙে দিয়েছে। ৩ পুলিশ সদস্য পিটিয়েছে তাকে। ঈদের দু-দিন পর ১৮ই জুন গ্রামের দু-পক্ষের ছেলেপেলেদের মধ্যে ঝগড়া হয়। তাহের মিয়ার বাড়ির লোকজন আরমান নামে এক তরুণকে মারধর করে। এরপর পাল্টা হামলা হয়। এ ঘটনায় নবীনগর থানার ওসি আসলাম সিকদারের নেতৃত্বে ৪টি স্পিডবোটে করে গ্রামে পুলিশ আসে। এএসপি সার্কেল চিত্তরঞ্জন পালও ছিলেন তাদের মধ্যে। অস্থায়ী ক্যাম্পে থাকা পুলিশ সদস্যরাও যোগ দেয় তাদের সঙ্গে। গ্রামের বউ-ঝিদের অভিযোগ পুলিশ নিজেই একটি পক্ষের বাড়িঘরে ঢুকে হামলা-ভাঙচুর করে। এ সময় অনেককে আটক করে। পরে গ্রামেই মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। অনেককে থানায় নিয়ে গিয়ে টাকা রেখে ছেড়ে দেয়া হয়। দক্ষিণ পাড়ার আবদুস সামাদ জানান- তারা ৪ জন ক্লাব ঘরে বসেছিলেন। সেখান থেকে পুলিশ তাদের ধরে এনে একটি বিল্ডিং ঘরে ঢুকিয়ে তালা দিয়ে দেয়। তাদের ছাড়িয়ে নিতে মাথাপিছু ১০ হাজার টাকা করে দাবি করে পুলিশ। এরপর ২০ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়া পান তারা। নিহত দুলালের বোন হেনা বেগম বলেন- পুলিশ আমারেও ধইরা লইয়া যাইতেছিলো। আমার ভাই খুন অইছে। এহন আমি পুলিশের অত্যাচারের শিকার। আইনের লোক ঘরে ঘরে ঢুকে এমন করতে জীবনে দেহিনি। জলিল মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা জানান-তাদের ঘর থেকে মানিব্যাগ-মোবাইলসহ অনেক জিনিস নিয়ে গেছে। মাজেদা নামে এক গৃহবধূ জানান-তাকেও থানায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন তিনি। জুনায়েদ নামের এক যুবক জানান- গ্রামের সবুর খানের এ্যাপাচি মোটরসাইকেলটি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। তার কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করা হয় এটি দিয়ে দেয়া হবে বলে। ওইদিন দফে আলী বাড়ির আবু সুফিয়ান, মোস্তফা, মোল্লাবাড়ির জলিল মিয়া, ভূঁইয়া বাড়ির আবু কালাম, জালাল মিয়া ও খায়ের মিয়ার বাড়িসহ আরো কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। দফে আলী মিয়ার বাড়ির আলী আজগর মিয়ার স্ত্রী আম্বিয়া জানান- পুলিশ রাইফেল দিয়ে মেরে তাদের ঘরের জিনিসপত্র ভেঙেছে। খালেদ মিয়ার বউ পিয়ারা জানান-এতো বয়স হয়েছে আইনের লোকজনকে এমন করতে দেখছি না। তারা বলেন পুলিশ এসে অত্যাচার-ভাঙচুর, লুটপাট করছে। উত্তরহাটির মোমিনা ও কুলসুম জানান-ঘরে ভাঙচুর করার সময় তাদের ঘরের রান্না করা খাবারও পুলিশ বাইরে ফেলে দেয়। সরজমিনে দেখা গেছে প্রতিটি ঘরেই আলমারী, সুকেশ, আসবাবপত্র, দরজা ভাঙচুর করা হয়েছে। সেগুলো ছড়িয়ে পড়ে রয়েছে মেঝেতে। কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য আবুল খায়ের জানান- পুলিশ তাকেও ধরে থানায় নিয়ে যায়। পরে তিনি ছাড়া পান। এক সাব ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে ৬ কনস্টেবল রয়েছে লক্ষীপুর গ্রামের অস্থায়ী ক্যাম্পে।
ওইদিন ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন এসআই মাহবুুবুর রহমান। তিনি বলেন, একপক্ষ আরেকপক্ষের বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। আমরা যারা এই কাজে লিপ্ত ছিলো তাদেরকে ধরেছে। ওসি আসলাম সিকদার বলেন-এগুলো ঠিক না। তারা মিথ্যা কথা বলছে। যারা এলাকায় বসবাস করছে তারাই ভাঙচুরে জড়িত। ওইদিনের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন- এ ঘটনায় ৭ জনকে আটক করে আমরা কোর্টে চালান দিয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status