বিশ্বজমিন

আলোচিত-সমালোচিত সৌদি ক্রাউন প্রিন্স সালমান

মানবজমিন ডেস্ক

২১ জুন ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ২:৫৩ পূর্বাহ্ন

ক্ষমতায় এক বছর পাড় করলেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এ সময়ে তার অর্জন ও ব্যর্থতা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে, সমালোচনাও আছে সমান বিস্তর। বলা হয়, তিনি সামাজিক সংস্কারে বড় ভূমিকা রেখেছেন। আবার সমান তালে ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালিয়েছেন। এ সময়ে সৌদি আরবের আভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র বিষয়ক নীতিকে ঝাঁকুনি দিয়েছেন অপ্রত্যাশিতভাবে। মাত্র ৩৩ বছর বয়সী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে তার চারপাশে যারা আছেন তারা দেখেন উচ্চাভিলাসী হিসেবে। তিনি ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে সময়ক্ষেপণ করেন নি। অব্যাহতভাবে তিনি নিজেকে সংস্কারবাদী হিসেবে এবং ইসলামের উদার একজন প্রতীক হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। বিশ্বাস করা হয় কাতারের বিরুদ্ধে যে অবরোধ দেয়া হয়েছে তার নেপথ্যে ছিলেন মোহাম্মদ বিন সালমান। তার নেতৃত্বে সৌদি আরব সঙ্গে পেয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিশরকে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে তিনি কাতারের বিরুদ্ধে ওই অবরোধ আরোপ করিয়েছেন। বলা হয়, কাতারকে এভাবে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার মূল চালিকাশক্তি হলেন মোহাম্মদ বিন সালমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। দৃশ্যত এতে উপসাগরীয় সহযোগিতা বিষয়ক পরিষদ জিসিসিকে বিভক্ত করা ছাড়া তেমন কোনো বড় অর্জন আসে নি। সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ২০১৫ সালে বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। এর মাত্র দু’মাস পরেই ইয়েমেনে নৃশংস সামরিক হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এখন পর্যন্ত ওই যুদ্ধে ইয়েমেন বিধ্বস্ত। এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে দেশটি। নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ বলেছে, বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক বিপর্যয়ের দেশ ইয়েমেন। দেশের ভিতরে গত সেপ্টেম্বরে কয়েক ডজন সমালোচক ও ভিন্ন মতাবলম্বীকে জেলে দিয়েছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। এর মধ্যে রয়েছেন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনকারী অধিকারকর্মী, লেখক, সাংবাদিক ও দু’জন সুপরিচিত মুসলিম ধর্মীয় নেতা। তার এ কর্মকান্ডের কড়া সমালোচনা করে মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। যারা মানবাধিকার ও সংস্কারের পক্ষে কথা বলেন এমন নাগরিকদের দিকে সরকারের এমন উদ্যোগকে পুরোপুরি অসহনীয় বলে উল্লেখ করে সংস্থাটি। এক মাস পরে রাজধানী রিয়াদে এক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন মোহাম্মদ বিন সালমান। সেখানে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বলেন, শিগগিরই তিনি উগ্রবাদকে নির্মূল করবেন। আরো বলেন, সৌদি আরব হলো একটি উদার ইসলামের দেশ। এ দেশটি সব ধর্ম ও বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত। গত নভেম্বরে তিনি কয়েক শত সৌদি আরবের প্রিন্স বা যুবরাজ, উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ী ও সরকারের কিছু মন্ত্রীদেরকে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, এসব ব্যক্তি তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ছিলেন। গ্রেপ্তার করা এসব ব্যক্তিকে আটক রাখা হয় রিয়াদের রিটজ কার্লটন হোটেলে। পরে তাদের কে মুক্তি দেয়া হয়। তবে রিপোর্টে বলা হয়েছে, মুক্তি পাওয়ার জন্য কোটি কোটি ডলার দিতে হয়েছে জামিন হিসেবে। ক্রাউন প্রিন্স বর্তমানে সৌদি আরবের প্রধান তিনটি নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করছেন। ধর্মীয় নেতাদের প্রভাবকে খর্ব করার কথা বললেও তিনি তাদের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করছেন, যাতে তারা খুশি থাকেন। তার দুর্নীতি বিরোধী অভিযানকে অনুমোদন দিয়েছিল সৌদি আরবের প্রধান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কাউন্সিল অব সিনিয়র স্কলারস। এ বছরের জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো নারীদের স্পোর্টস স্টেডিয়ামে যাওয়ার অনুমোদন দেয়া হয়। এর আগে নারীরা কখনো স্টেডিয়ামে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। নারীদের গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ করা সংক্রান্ত একটি আইনকে উল্টে দেন তিনি। এ বিষয়ে একটি রাজকীয় ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেন তিনি। এর অধীনে তিনি নারীদেরকে জনসমুক্ষে বা প্রকাশ্যে আসার জন্য বড় সুযোগ সৃষ্টি করে দেন। তবে সম্প্রতি সৌদি আরবের নারীবাদী অধিকারকর্মীদের  গ্রেপ্তার করা হয় এবং তা চলছে। এ ঘটনা  মোহাম্মদ বিন সালমানের নারীদের দেয়া অধিকারের ওপর কালো ছায়াপাত করে। ওই অধিকারকর্মীরা প্রকাশ্যে নারীদের সম অধিকারে, নারীদের গাড়ি চালনার অধিকার এবং পরিবারে শুধু পুরুষের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন মানবাধিকারের কর্মীরাও। তাদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ সাড়াশি অভিযান চালায়। তাদেরকে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে অভিহিত করা হয়। বিদেশী সন্দেহজনক চক্রের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে বলে অভিযোগ করা হয়। এসব অধিকারকর্মীর বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের সন্ত্রাস বিরোধী আইনে অভিযোগ আনার কথা। তবে সরকারের এমন উদ্যোগের সমালোচনা করেছে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো। দুই বছর আগে মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি আরবকে তেলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অর্থনীতি  গড়ে তোলার কথা বলেছিলেন। ভিশন-২০৩০ কে সামনে রেখে তিনি এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এতে বলা হয়েছিল সামাজিক ক্ষেত্রে সংস্কার করা হবে এবং নারীদেরকে কর্মশক্তিতে অঙ্গীভূত করা হবে। শিক্ষা, পর্যটন ও মানসিক প্রশান্তির মতো সরকারি খাতগুলোকে উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। সৌদি আরবে বিদেশী বিনিয়োগকে নিশ্চিত করতে মোহাম্মদ বিন সালমান সরকারি সফরে বিদেশ গিয়েছেন। তা শুরু করেছেন মিশর দিয়ে। সেখান থেকে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র। সাক্ষাত করেছেন সরকারি বড় বড় কর্মকর্তা, সেলিব্রেটি, প্রভাবশালী নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন। চুক্তি করেছেন। আধুনিক মানের সৌদি আরবে তাদের কাছ থেকে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন। তবে যত যা-ই বলা হোক, মোহাম্মদ বিন সালমানের জনপ্রিয়তা কিছুটা হোঁচট খেয়েছেই। বিদেশী মিডিয়ায় চোখ রাখলেই তার সাক্ষ্য মেলে। সেখানে তার তীব্র সমালোচনা। ইয়েমেন ও কাতারের মতো প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে তিনি যে ভূমিকা নিয়েছেন তাতে ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারি প্রভাব ফেলেছে। এতে আঞ্চলিক বিভক্তি দেখা দিয়েছে। আরেকটি উদাহরণ দেয়া যাক। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি ঘোষণা দেন তাকে রিয়াদে জোর করে পদত্যাগ করানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে লেবাননের যোদ্ধা গোষ্ঠী হিবুল্লাহতে কাবু করার চেষ্টা হয়েছিল। তবে এ কথা বলাই বাহুল্য যে, সাদ হারিরি যখন নিজের দেশের রাজধানী বৈরুতে ফিরলেন তখনই তিনি উল্টো কথা বললেন। তিনি পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নিলেন। (অনলাইন আল জাজিরা অবলম্বনে)
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status