বিশ্বজমিন

বন্দিশিবিরে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আফিয়ার

মানবজমিন ডেস্ক

২১ জুন ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৮:৪৫ পূর্বাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের বন্দিশিবিরে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন পাকিস্তানি স্নায়ুবিজ্ঞানী ডা. আফিয়া সিদ্দিকী। তার সঙ্গে সম্প্রতি সাক্ষাৎ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের হিউজটনে নিয়োজিত পাকিস্তানি কনসুল জেনারেল আয়শা ফারুকি। এরপর তিনি একটি গোপন রিপোর্ট প্রস্তুত করেছেন আফিয়ার অবস্থা নিয়ে। তাতেই তিনি আফিয়ার ওপর শারীরিক ও যৌন নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। এ খবর দিয়েছে এক্সপ্রেস ট্রিবিউন। এতে বলা হয়েছে, টেক্সাসের কারসওয়েলে ফেডারেল মেডিকেল সেন্টারে ডা. আফিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন আয়শা ফারুকি। তারপর তিনি গোপন রিপোর্ট প্রস্তুত করে তার দেশের কূটনৈতিক কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছেন। বলেছেন, ডা. আফিয়াকে দেশে ফেরত নেয়ার জন্য দেশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পদক্ষেপ নেয়া উচিত। পাকিস্তানে ফেরত নিতে পারলে সেখানে তার বাকি শাস্তি ভোগ করতে পারবেন। পাকিস্তানে নেয়া হলে সেখানে তার সম্ভ্রম ও গোপনীয়তার বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা হবে না। ২৩শে মে আফিয়ার সঙ্গে ওই সাক্ষাৎ হয় কনসুল জেনারেলের। এরপর প্রস্তুত করা ওই রিপোর্ট জমা দিয়েছেন আফিয়ার বোন ফৌজিয়া সিদ্দিকী। এতে আফিয়ার করুণ দুর্দশার কথা তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে আটক অবস্থায় তিনি নিজের মর্যাদা, সততা ও নিজেকে রক্ষা করতে সংগ্রাম করছেন। এতে বলা হয়, আফিয়ার ওপর চালানো শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয়ে যেন বিস্তারিত একটি নোট পাঠায় পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ- এমন সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি অনুরোধ পাঠাতে বলা হয়েছে। তাতে সুপারিশ করা হয়েছে যে, আফিয়ার ইউনিটে কোনো পুরুষ সদস্যদের যেন প্রবেশে বিধিনিষেধ দেয়া হয়। তার নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত করা হয়। আফিয়া অভিযোগ  করেছেন, পুরুষ স্টাফরা  তার জিনিসপত্রের
ওপর মূত্র ত্যাগ করে। কনসুল জেনারেলের ওই রিপোর্টে আরো সুপারিশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ডা. আফিয়াকে যেন পাকিস্তানে ফেরত পাঠাতে আইনগত কৌশল খোঁজে পাকিস্তান। এতে তিনি নিরাপদ হবেন। মা ও সন্তানদের সঙ্গে তিনি দেখা করতে পারবেন। তাদের সঙ্গে তার প্রায় আট বছর কোনো দেখা-সাক্ষাত নেই। ডা. আফিয়ার সঙ্গে কনসুল জেনারেলের সাক্ষাত দু’ঘন্টা স্থায় হয়। এ নিয়ে আয়শা ফারুকি বলেছেন, তিনি আফিয়াকে দেখেছেন প্রচণ্ড নার্ভাস ও আতঙ্কিত হতে। তাকে যেখানে রাখা হয়েছে সেখানকার প্রতিটি জিনিস ও প্রতিজন মানুষকে দেখে তিনি ভয় পান। এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, তিনি জেলের স্টাফদের দেখে ভয় পান। কারণ, তারা তার গোপনীয়তা লঙ্ঘন করেন। তার জিনিসপত্র তারা নিয়ে যান বার বার। শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের হুমকি দেন। ওই বন্দিশিবিরে ধর্ষণ ও যৌনতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। যেখানে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের হুমকি বিদ্যমান সেখানে ডা. আফিয়ার মতো একজন মুসলিম নারীর থাকা অসম্ভব ব্যাপার। এটা অব্যাহতভাবে চলতে দেয়া উচিত নয়। এত সবের পরেও আমি ডা. আফিয়াকে দেখেছি দৃঢ় মনোবলের অধিকারী। তিনি আল্লাহ ও পাকিস্তানের জনগণের ওপর ভরসা রাখেন। ওই গোপন রিপোর্টে এসব কথা লিখেছেন কনসুল জেনারেল আয়শা ফারুকি। এতে আরো বলা হয়েছে, নিজের বোন নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক যেসব আইনজীবী নিয়োগ করেছেন তাদের ওপরও আস্থা নেই আফিয়ার। কনসুল জেনারেলের মাধ্যমে তিনি পরিবারের সদস্যদের প্রতি অনুরোধ করেছেন যে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আইনজীবীদের দল পরিবর্তন করতে হবে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ড. আফিয়ার মতে তার সাবেক একমাত্র আইনজীবী টিনা ফস্টারের ওপর ভরসা করা যেতে পারে। তিনি খুব আন্তরিক এবং মুসলিম। ডা. আফিয়া অভিযোগ করেছেন, জেল কর্তৃপক্ষ তার সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। পরিবারের সদস্যদের কাছে তার ফোনকল রেকর্ড করা হয়। নজরদারি করা হয়। কেন তিনি করাচিতে থাকা মাকে ফোন করেন নি? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, জেল স্টাফদের সামনে মায়ের সঙ্গে কথা বলে তিনি স্বস্তি পান না। রিপোর্টে কনসুল জেনারেল আয়শা ফারুকি লিখেছেন, ড. আফিয়া বারবার আমাকে বলেছেন, রুমে তাকে অব্যাহতভাবে বিরক্ত করা হয়। জেল স্টাফরা তার গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে। তাকে হয়রান করে। অনেক বার তাকে যৌন হয়রানির হুমকি দিয়েছে। তার মামলার সুপারভাইজার অ্যানি নোবলেটসহ স্টাফরা হুটহাট করে ঢুকে পড়ে তার রুমে। মাথা থেকে স্কার্ফ ছিনিয়ে নেয়। তা ছাড়া তাকে ওষুধের সঙ্গে এমন কিছু খাইয়ে দেয়া হয় যাতে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। উল্লেখ্য, ২০১০ সালে এ মামলার বিচার কার্যক্রমকে পরিচালনার জন্য পাকিস্তান সরকার ২০ লাখ ডলার বরাদ্দ দিয়েছিল। কিন্তু সেই অর্থ অন্যখাতে ব্যবহার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূতের ব্যক্তিগত সহকারী হোসেন হাক্কানি- এ অভিযোগও তুলেছেন আফিয়া। তিনি বলেছেন, হাক্কানি এ মামলায় কোনো সহায়ক ছিলেন না। এমন কি তিনি মামলার বিষয়ে কোনো আগ্রহও দেখাননি। নিউ ইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল আদালত ২০১০ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি ডা. আফিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। তাতে তাকে হত্যা, অস্ত্র, অস্ত্র বহন করাসহ কয়েকটি অভিযোগ গঠন করা হয়। এর দায় হিসেবে তাকে ৮৬ বছরের জেল দেয়া হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status