প্রথম পাতা

উছিলা বিশ্বকাপ উদ্দেশ্য ভিন্ন

২০ জুন ২০১৮, বুধবার, ১০:১২ পূর্বাহ্ন

নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ। ইতিমধ্যে তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখতে আসা ১৫ বাংলাদেশিকে রাশিয়া থেকে ফেরত পাঠানো  হয়েছে ঢাকায়। তারা ঠিকমতো ম্যাচের বর্ণনা দিতে পারেনি। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে অনেককে রাশিয়ার বিমানে উঠতে দেয়া হয়নি। এবার বিশ্বকাপ খেলা দেখতে টিকেট কিনলেই পাওয়া যায় ফ্যান আইডি। আর এ ফ্যান আইডি থাকলেই সহজে মিলে রাশিয়ার ভিসা। রাশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ বলছে, এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশি কেউ কেউ এসেছেন রাশিয়ায়। যাদের উদ্দেশ্য রাশিয়ায় থেকে যাওয়া। কারো ইচ্ছা রাশিয়া থেকে অন্য কোনো দেশে পাড়ি দেয়া। বর্তমানে রাশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা সুবিধার নয়।

দেশটির মুদ্রাস্ফীতির কারণে ডলারের দাম ৬৬ রুবলে গিয়ে ঠেকেছে। এক বছর আগেও যার মূল্যমান ছিল ৩৫ থেকে ৪০ রুবল। এখানে ভালো নেই প্রবাসী বাংলাদেশিরা। চাকরি কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যে সুবিধা করতে না পেরে অনেকে দেশের পথ ধরেছেন। যারা আছেন, তারা টিকে আছেন অনেকটা লড়াই করেই। বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে অনেকে এসেছেন রাশিয়ায়। এখানকার ইমিগ্রেশনের তথ্যমতে প্রায় পাঁচ হাজার বাংলাদেশি টিকিট কেটে ফ্যান আইডি খুলে রাশিয়া এসেছেন। এখনো প্রায় প্রতিদিনই আসছেন। এদের বেশিরভাগই আসছেন সিলেট থেকে। সিলেটের বাবু নামে এক ব্যক্তি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এদের রাশিয়া পাঠাচ্ছেন। এখান থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে। ১৭ই জুন এয়ার এরাবিয়ার একটি ফ্ল্যাইটে মস্কো আসেন শ্রীমঙ্গলের মিঠুন। ২৮শে জুন পোলান্ড জাপানের ম্যাচের টিকিট নিয়ে তার রাশিয়া আগমন। তিনি ১৭ই জুন মস্কো আসলে তার ম্যাচ ২৮শে জুন। ঢাকা ফেরার ফিরতি বিমান টিকিট ১৮ই জুলাইয়ের। একটি মাত্র ম্যাচের টিকিট কিনে একমাস এখানে কী করবেন জানতে চাইলে মিঠুন বলেন, আসলে এখানে এসেছি রাশিয়ার অবস্থা বুঝতে।

যদি সুযোগ হয় তাহলে রাশিয়া থেকে ইউরোপের অন্য দেশে চলে যাব। নইলে দেশে ফেরত যাব। টিকিট কীভাবে সংগ্রহ করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এসব কিছু বুঝি না। আমার ছোট ভাই সুইডেন থাকে, ওই সিলেটের বাবু ভাইয়ের মাধ্যমে সবকিছু সংগ্রহ করে আমাকে পাঠিয়েছে। একই বিমানে চড়ে সিলেটের জিন্দা বাজারের ফারুক, নিউ টাউনের সাগরও রাশিয়া এসেছেন। এরা দু’জনই মস্কো থেকে যাবেন কালিংগ্রাদে। এদের সঙ্গে সোমবার কথা হয় লুঝনিকি স্টেডিয়ামের ফ্যান আইডি সেন্টারে। এদের কেউই ঠিকমতো বলতে পারছিলেন না তারা কোন ম্যাচ দেখবেন। মস্কোর সংবাদ মাধ্যমেও এদের নিয়ে রিপোর্ট হয়েছে। বাংলাদেশি কমিউনিটিও চিন্তায় পড়ে গেছে এদের নিয়ে। দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে রাশিয়ায় বসবাসকারী শাহিন আহমেদ জানান, এমনিতে এখানে অবৈধভাবে বসবাসের সুযোগ নাই। তার ওপর রাশিয়ান ভাষা না জানলে মিলবে না কোনো চাকরি। এরা বিশ্বকাপ শেষে এখানে কী করবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না। আর এদের কারণে বৈধভাবে বসবাসকারীরাও হুমকির মধ্যে আছি।

রাশিয়া থেকে কোন পথে ইউরোপে পাড়ি জমাবেন জানতে চাইলে এক ব্যক্তি বলেন, এখান থেকে জার্মানি কিংবা ফ্রান্সে চলে যাওয়ার ইচ্ছা তার। এজন্য তিনি বেছে নিয়েছেন কালিংগ্রাদকে। জার্মান বর্ডারের কাছে অবস্থিত কালিংগ্রাদ। রাশিয়ার এই শহরটিতে যেতে হলে পাড়ি দিতে হবে পোল্যান্ড ও লিথুনিয়া। ট্রেনে যাওয়ার সময় এই দুটি দেশের যেকোনো একটিতে নেমে যেতে পারলেই ইচ্ছে পূরণ হয়ে যাবে। কিংবা কালিংগ্রাদ যেতে জার্মানিতে পাড়ি জমানো সহজ। তাইতো এদের বেশিরভাগই বেছে নিয়েছেন কালিংগ্রাদে অনুষ্ঠিত ম্যাচগুলো। এরই মধ্যে অনেকে এই পথ পাড়ি দিয়ে রাশিয়া ছেড়েছেন। বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই পোল্যান্ড ও লিথুনিয়া সরকার রাশিয়ান পার্সপোর্ট ব্যতীত অন্যদেশের পার্সপোর্টধারীদের ভিসা ব্যাধতামূলক করেছে। যে কারণে কালিংগ্রাদে ট্রেনে যাওয়ার সুযোগ কমে গেছে বাংলাদেশিদের। একমাত্র উপায় বিমানে সেখানে যাওয়া। বাধ্য হয়েই বিমানে টিকিট সংগ্রহ করছেন তারা।

এ অবস্থায় কিছুটা কঠোর হয়েছে দু’দেশের ইমিগ্রেশন। অবৈধভাবে থাকার উদ্দেশে আসা এসব ব্যক্তিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে রাশিয়ান পুলিশ। রাশিয়ান পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, বিশ্বকাপ শেষে শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্যদেশ থেকে যারা এসেছেন তাদের প্রত্যেকের ব্যাপারে কঠোর হবে রাশিয়া সরকার।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status