ইংল্যান্ড থেকে

জার্মান শিবিরে অন্তর্দ্বন্দ্ব!

স্পোর্টস রিপোর্টার, মস্কো (রাশিয়া) থেকে

২০ জুন ২০১৮, বুধবার, ৯:৩৬ পূর্বাহ্ন

একটা দল জিততে থাকলে তাদের ভুলত্রুটিগুলো যেমন চোখে পড়ে না, তেমন ভেতরে ভেতরে কোচ-ফুটবলারদের দ্বন্দ্বও সামনে আসে না। সেটা বোঝা যায়, দল ব্যর্থ হলে। এবার যা ঘটেছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানির বেলায়। মেক্সিকোর কাছে হারের পর জার্মানির কোচ-ফুটবলারের দ্বন্দ্ব সামনে চলে এসেছে। কোচ ও ফুটবলাররা পরস্পর দোষারোপের রাস্তায় হাঁটা শুরু করেছেন। প্রথম ম্যাচে হারার পর জার্মানির সমর্থকরা মস্কোসহ বিভিন্ন জায়গায় যখন হতাশ হয়ে গণ্ডগোল বাধাচ্ছেন, তখন জার্মানির ফুটবল শিবিরেও ঝামেলার ইঙ্গিত মিলেছে। কোচ জোয়াকিম লো ফুটবলারদের ওপর দায় চাপানোর পর টিন ক্রুজ ও হ্যামেলস ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কোচ-ফুটবলারদের এক হাত নিয়েছেন। যা সুইডেন ম্যাচের আগে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে জার্মান শিবিরে।

মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে মেক্সিকোর কাছে হেরে সোমবারই সোচিতে পৌঁছে গেছে জার্মানি। সেখানে গতকাল অনুশীলনও করেছে গতবারের চ্যাম্পিয়নরা। অনুশীলনেই দলের দ্বন্দ্ব ফুটে উঠেছে প্রকট আকারে। সেখানে নাকি বেশ কয়েকজন জার্মান ফুটবলার জোয়াকিম লো’র সঙ্গে কথাই বলেননি। এর আগে রাশিয়ায়   পাড়া দিয়ে প্রথম অনুশীলনেও মারামারি বাধিয়ে ছিলেন জার্মান ফুটবলাররা। জার্মান সাংবাদিক স্টেফেন পিটার অনুশীলন দেখে জানান, সোচিতে জার্মান ফুটবলারদের মাঝে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। একে অপরকে দুষছেন নানাভাবে, যা সুইডেন ম্যাচে প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি। মেক্সিকোর সঙ্গে হারের আগে জার্মানি কোচ জোয়াকিম লো কখনই ফুটবলারদের পারফরমেন্স নিয়ে সরাসরি সমালোচনা করেননি। কিন্তু মেক্সিকোর কাছে হারের পর লো নিজের কাঁধে ব্যর্থতার দায় তুলে নেননি। বরং তিনি আগাগোড়াই দুষেছেন তার ফুটবলারদের।

ফুটবলাররা পরিকল্পনামাফিক খেলতে পারেনি বলেই ডুবেছে দল। এটা ফুবলারদের কানে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। ফলে সরাসরি কোচের নাম করে কিছু না বললেও দলের দুই অভিজ্ঞ ফুটবলার ম্যাটস হামেলস ও টনি ক্রুজ ঘুরিয়ে কোচ লো’র পরিকল্পনার সমালোচনা যেমন করেছেন, তেমন সতীর্থদের একহাত নিয়েছেন, নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করায়। হামেলসের মতে, ‘প্রস্তুতি ম্যাচে আমরা মোটেই ভালো খেলিনি। এ নিয়ে আমি টিম মিটিংয়ে সবাইকে সতর্ক করেছিলাম। কেউ কানেই তোলেনি আমার কথা। সে কারণে এখন ভুগতে হচ্ছে। সৌদি আরবের বিরুদ্ধে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে ২-১ গোলে জিতলেও, ওটা আমাদের সেরা খেলা ছিল না। সেদিন উতরে গেলেও দলের বাকিদের  বলেছিলাম, এভাবে খেললে বিশ্বকাপে সমস্যা হবে। কারণ বিশ্বকাপে আমাদের গ্রুপে সৌদি আরবের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ আছে। সৌদি ম্যাচের মতোই সাদামাটা খেলে ডুবলাম। আগেই বলেছিলাম, আমরা খুব সহজেই প্রতিপক্ষের পায়ে বল জমা দিচ্ছি। পাসিংয়ে ত্রুটি হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, কভারিং ঠিক হচ্ছে না।

এতে প্রতিপক্ষ দলের সমানে আক্রমণ হানার অনেকটা ফাঁকা জায়গা তৈরি হচ্ছে। দুর্ভাগ্য, আমরা সে বিষয়ে আমল দিইনি। তাতেই মেক্সিকোর বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে আমাদের খেলা এত খারাপ লেগেছে। ওদের ঘাড়ে চেপে বসার সুযোগ করে দিয়েছিলাম আমরাই। যা খেলেছি, তাতে মেক্সিকোর জেতারই কথা। অথচ আমরা জানতাম মেক্সিকো কেমন খেলে। সেভাবে তৈরি হলে এই সমস্যা হতো না। আমাদের অ্যাটাকিং কোয়ালিটি অনুযায়ী সাত-আটজন একসঙ্গে আক্রমণে গেলে প্রতিপক্ষ চাপে পড়ে। কিন্তু মেক্সিকোর বিরুদ্ধে সেই ঝাঁজটাই খেলায় ছিল না। তাতেই মেক্সিকো বারবার কাউন্টার এট্যাকে এসেছে। এই সময় ডিফেন্সে সঠিক কভারিং ছিল না। আমার আর বোয়েতাংয়ের পাশে কাউকে দেখছিলাম না। এতে দুটো উইং দিয়ে মেক্সিকোর ফুটবলাররা হু হু করে আক্রমণ হানার সুযোগ পেয়েছে। মেক্সিকোর বিরুদ্ধে হারটা আমাদের কাছে দেরিতে ঘুম ভাঙার মতো। এখন পরপর দুটো ম্যাচ না জিতলে বিপদ আছে। হয়তো বিশ্বকাপে আমাদের অভিযান শেষ হয়ে যাবে প্রথম রাউন্ডেই।’ হামেলসের মতো টনি ক্রুজও সরব দলের খেলা নিয়ে। সুইডেন ম্যাচের আগে জার্মানির একটি সংবাদমাধ্যমকে ক্রুজ বলেন, ‘মেক্সিকোর বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে খেলাটা ধরতেই পারিনি আমরা। ঢেউয়ের মতো বারবার ধেয়ে আসা মেক্সিকোর আক্রমণ সামাল দেয়া সম্ভব হয়নি নিজেদের সেরা দূরে থাক, স্বাভাবিক খেলা তুলে ধরতে না পারায়। এত ভুল সামপ্রতিককালে আমাদের খেলায় হয়েছে বলে মনে পড়ছে না। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য আমরা নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে খেলায় ফিরেছিলাম। মেক্সিকো ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। গোলের সুযোগও পেয়েছিলাম। কিন্তু ফায়দা তুলতে পারিনি। অন্তত একটা গোল আমাদের করা উচিত ছিল। এখন নিঃসন্দেহে আমরা চাপে। পরের দুটো ম্যাচ থেকে ৬ পয়েন্ট পেতেই হবে বিশ্বকাপে টিকে থাকতে’। দুই ফুটবলার যা বলেছেন, এতে দলগত ঐক্যের অন্তরায় হিসেবে দেখছেন সকলে। আর তার জেরে পড়ে সুইডেন ম্যাচ না জিতে বিশ্বকাপ থেকে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ছিটকে গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আগামী শনিবার সোচিতে ডেনমার্ক ও আগামী বুধবার কাজানে দক্ষিণ কোরিয়ার মুখোমুখি হবে জার্মানি।

সাম্প্রতিককালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত চার বিশ্বকাপে তিন চ্যাম্পিয়ন দল প্রথম রাউন্ডের বাধা টপকাতে পারেনি। ২০০২-এ ফ্রান্স, ২০১০-এ ইতালি, ২০১৪-এ স্পেন। এবার কি তবে জার্মানি এমনি একটা অকাল বিদায়ের মুখে পড়তে চলেছে? অবশ্য সময়ই সব বলবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status