বাংলারজমিন

বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে গোয়াইনঘাটে পর্যটক স্রোত

মিনহাজ উদ্দিন, গোয়াইনঘাট (সিলেট) থেকে

২০ জুন ২০১৮, বুধবার, ৭:৫২ পূর্বাহ্ন

টানা ভারি বর্ষণ, বজ্রপাত। সঙ্গে আছে বেহাল সড়ক যোগাযোগের খুরাক ভাঙাচুরা সড়কের উপর দিয়ে যানচলাচলের তিক্ত অভিজ্ঞতা। খনাখন্দ ভঙ্গুর সড়কের কষ্টার্জিত যোগাযোগ উপেক্ষা করেও যেন ঢল নেমেছে পর্যটক-দর্শনার্থীদের। এ চিত্র সিলেটের গোয়াইনঘাটের সবক’টি পর্যটন স্পটের। পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে এসব বৈরী আবহাওয়া ও দুর্ভোগ উপেক্ষা করে পর্যটকদের ঢল নেমেছে পর্যটন স্পট জাফলং ও বিছনাকান্দি, রাতারগুল, লালাখালে। ঈদের দিন থেকে শুরু করে ভ্রমণপিপাসুরা ভিড় করেছেন এ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। তবে গতকাল ও পরশুর পর্যটক উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।
সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের বেহাল অবস্থা, প্রতিকূল আবহাওয়াও তাদের দমাতে পারেনি। থেমে থাকেনি পর্যটকদের বাঁধ ভাঙা উল্লাস। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করতে কেউ সপরিবারে কেউবা বন্ধু-বান্ধব সঙ্গে নিয়ে ছুটে এসেছেন প্রকৃতির সজীবতায়। পাহাড়টিলা, স্বচ্ছ জলরাশি, গহিন বনের সঙ্গে মিতালী করে ঘুরে বেড়ানোর অভিপ্রায় নিয়ে আসা মুগ্ধতায় ফিরেছেন ক্লান্ত পর্যটকরা। পাহাড়, টিলা, নদী প্রকৃতির সবুজ অরণ্যঘেরা এখানকার পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ফুটে ওঠে তাদের সরব পদচারণা। জাফলং, বিছনাকান্দির পাশাপাশি রাতারগুল সোয়াম ফরেস্ট জৈন্তাপুরের লালাখাল, জাফলং ফাটছড়া মায়াবী ঝর্ণা, পান্তুমাই মায়াবতী ঝর্ণাধারায়ও পর্যটক দর্শনার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। পাহাড়, টিলা, নদী, চির সবুজের মিতালী আর নিরাপত্তার জন্য দেশের অপরাপর পর্যটন কেন্দ্রগুলোর ন্যায় প্রকৃতির আপন সাজে সেজেছে এখানকার পর্যটন স্পটগুলো। এখানকার রূপলাভন্যময় সারিবদ্ধ পাহাড়ের সবুজ মিশেল প্রকৃতি ভ্রমণপ্রেয়সী আর সৌন্দর্য্য পিপাসুদের আকৃষ্ট করে সুদীর্ঘকাল থেকে। তাইতো প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঢল নেমেছে পর্যটক দর্শনার্থীদের। এবারও জাফলংয়েই সবচেয়ে বেশি পর্যটক, দর্শনার্থীর উপস্থিতি। দেখলে মনে হয় প্রকৃতিকন্যা জাফলং যেন আগের মতো করেই তার আপন মাধুর্য্যতায় ঘিরে ধরেছে তার দর্শনে আসা আগন্তুকদের। জাফলং খুব সহজেই আকৃষ্ট করে ভ্রমণ পর্যটকদের। এবারও দেশের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকের উপস্থিতিও জাফলংয়ে লক্ষণীয়। পর্যটকদের মতে হঠাৎ শুরু হওয়া ঝড়বৃষ্টি আর সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্ত আর বেহাল অবস্থার কারণে পর্যটকদের ভ্রমণ আনন্দে যেন খানিকটা ভাটা পড়েছে।
সোমবার দুপুর ২টায় জাফলং জিরো পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে আর বেহাল সড়কের কাঁদা জল মাড়িয়ে আসা ক্লান্ত হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। জাফলং জিরো পয়েন্টে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ ওপারে ভারতের মেঘালয়ের ঝুলন্তব্রিজ, সারিবদ্ধ দিগন্তজোড়া পাহাড়টিলার পানে দুচোখ মেলে ধরে প্রকৃতির প্রেম উপভোগ করছেন। কেউ কেউ আবার পিয়াইনের বুক চিরে আসা স্বচ্চ ঠান্ডা জলরাশির মাঝে সাঁতার কাটছেন। জাফলং ভ্রমণ সেলফি আর ক্যামেরায় নিজেকে আবদ্ধ করে তা স্মৃতিবন্দি করে রাখছেন অনেকেই।
একটু পশ্চিম পার্শ্বেই অবস্থিত জাফলংয়ের ভ্রমণপ্রেয়সীদের আরেক সেনসেশন হয়ে ওঠা ফাটছড়া মায়াবী ঝর্ণা। সেখানেও পর্যটক দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। ভারতের পাহাড় গড়িয়ে আসা ঝর্ণার স্বচ্ছ জলে গাঁ ভিজিয়ে উল্লাস করছেন আগত পর্যটক দর্শনার্থীরা।
এ সময় কথা হয় পর্যটক ময়মনসিংহ মুক্তাগাছার আলী হোসেন ও রাবেয়া সুলতানার সঙ্গে। এ দম্পতি জানান, জাফলং জিরো পয়েন্টে, ঝুলন্তব্রিজ, ফাটছড়া মায়াবী ঝর্ণা, পিয়াইন নদের বুকে সাঁতার কেটে আমরা মুগ্ধ। এখানকার প্রকৃতি আমাদের আসার পথে সব কষ্ট দুর্ভোগ ভুলিয়ে দিয়েছে। তারা দ্রুত সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক সংস্কারে সরকারের প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ঢাকার বংশালের আলিফ আর জাহানারা নামের এক নব দম্পতি তাদের হানিমুন পর্বও সারলেন জাফলংয়ে। নববিবাহিত এ জুটি বলেন এখানে আসতে পেরে সত্যিই আমরা খুব খুশি। প্রকৃতি আর সবুজের একখণ্ড মিতালী আমাদের পথচলার আগামীকে সুন্দর করণে স্মৃতিময় হয়ে থাকবে। তারাও সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক সংস্কারে সরকারের শীর্ষ মহলের প্রতি জোর দাবি জানান।
জাফলংয়ের মতো দর্শক সমাগম বেড়েছে বিছনাকান্দিতেরও। সেখানেও যেন ঢল নেমেছে প্রকৃতিপ্রেমিদের। মঙ্গলবার বিছনাকান্দি জিরো পয়েন্টে কথা হয় একদল তরুণের সঙ্গে। পাবনার ঈশ্বরদী থেকে আসা এ তরুণরা বিছনাকান্দির সৌন্দর্যের প্রশংসা আর প্রশাসনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, আসলে এখানে কেউ না এলে এখানকার সৌন্দর্য্য সম্বন্ধে বুঝবে না। এতো সুন্দর মনোরম পরিবেশ আমাদের খুব বেশি আকৃষ্ট করেছে। এখানাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ সত্যিই নজরকাড়া। মঙ্গলবার বিকালে নিরাপত্তা জোরদার আর পর্যটকদের সঙ্গে সময় কাটাতে আসতে দেখা যায় গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পালকে। তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুলসহ গোয়াইনঘাটের সবক’টি পর্যটনস্পটেই ঈদসহ বিভিন্ন সামাজিক দিবসে পর্যটক দর্শনার্থীদের উপস্থিতি থাকে লক্ষণীয়। তাদের পদযাত্রায় মুখরিত হয়ে ওঠে এখানকার সবক’টি পিকনিক স্পট। তাদের সার্বিক নিরাপত্তায় প্রতি বছরই উপজেলা প্রশাসন তরফে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে। এবারও গোয়াইনঘাটের পর্যটনগুলোতে বেড়াতে  পর্যটক, দর্শনার্থীরা যাতে স্বাচ্ছন্দে ভ্রমণ ও নিরাপদে  ফিরতে পারেন সে লক্ষেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। অপ্রীতিকর যে কোনো ঘটনা এড়াতে থানা পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও স্থানীয় রোভার স্কাউটরা নিয়োজিত রয়েছেন। একাধিক স্পটে আমাদের উপজেলা প্রশাসনের তরফে পর্যটন তথ্যকেন্দ্রও স্থাপিত আছে। থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল জলিল জানান, পর্যটকদের ভ্রমণ ও নিরাপদ প্রস্থানে থানা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অজ্ঞানপার্টি, মাদকরোধে পোশাক ও সাদা পোশাকে একাধিক টিম মাঠে আছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status