বিশ্বজমিন

রাশিয়া বিশ্বকাপে যৌন বাণিজ্য-১

মানবজমিন ডেস্ক

১৯ জুন ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:৪৭ পূর্বাহ্ন

রাশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবল মহারণ যেন যৌনকর্মীদের জন্য এক অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে সেখানে পাচার করে আনা হয়েছে যৌনকর্মী। ভিজিট ভিসা বা স্বাভাবিক ভিসায় তারা মস্কো ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে সমবেত হয়েছেন বাড়তি উপার্জনের আশায়। এ বিষয়টিকে এক রকম দাসত্ব হিসেবে দেখছেন মানবাধিকার বিষয়ক কর্মীরা। তার কিছু চিত্র ফুটে উঠেছে রাশিয়ার একটি পত্রিকায়। তাতে ঘটনার বর্ণনা দেয়া হয়েছে এভাবেÑ মস্কো ও সেইন্ট পিটার্সবুগের মাঝামাঝি প্রধানতম একটি এলাকা লেনিনগ্রাদস্কোয়ে হাইওয়ে। তার পাশে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় দাঁড়ানো দেখতে পাবেন সুন্দরী নারীদের। এই এলাকাটির স্থানীয় নাম মায়াচকি। এর অর্থ হলো ছোট্ট ছোট্ট লাইটহাউজ। সেখানে ফ্লাশলাইট জ্বলছে। নিয়ন-হলুদ পোশাকে শরীরের অনেকটা অংশ অনাবৃত করে দিয়ে ইশারায় ডাকছেন তারা মহাসড়কে গাড়ির চালকদের অথবা তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। তাদের পিছনে, নিচের দিকে মহাসড়ক থেকে নেমে গেছে পথ। তা ধরে এগিয়ে গেলে স্কিন-টাইট পোশাক পরা নারীদের অবস্থান। তাদের পায়ে অনেকটা উঁচু হিল। অপেক্ষা করছেন খদ্দেরের জন্য। মে মাসের শেষের দিকের কোনো এক বৃহস্পতিবার রাত। তাদের অবস্থানস্থলের ঠিক বাইরের দিকে এসে দাঁড়িয়েছেন এসব নারী। তাদেরকে থামিয়ে দিয়েছিল পুলিশ। এমন কি তারা আর এ পেশায় ফিরতে পারবেন কিনা তাও ছিল অনিশ্চিত। পুলিশের এমন অপারেশনের নাম দেয়া হয়েছে জাছিসতকি। ঘন ঘনই এমন অভিযান চালায় পুলিশ। রাশিয়ায় পতিতাবৃতি অবৈধ। তবু অধিকার বিষয়ক গ্রুপ সিলভার রোজ-এর হিসাবে সারা রাশিয়ায় প্রায় ৩০ লাখ নিয়মিত যৌনকর্মী রয়েছেন। এই গ্রুপটি সম্প্রতি বলেছে যে, এ বিষয়ে পুলিশ চোখ বন্ধ করে রেখেছে। অথবা তারা সামান্যই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে হাজার হাজার পর্যটকের সমাবেশ ঘটেছে রাশিয়ায়। আর এ সময়ে দেশের ভাবমূর্তি যাতে ক্ষুন্ন না হয় সে জন্য কর্তৃপক্ষ দমন পীড়ন শুরু করেছে। রাশিয়ার ১১টি শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্বকাপের লড়াই। আর সে উপলক্ষ্যে যৌনকর্মীরাও ছড়িয়ে পড়েছেন। তারা এসব শহরে অবস্থান নিয়ে হাঁকিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসা। তবে যেসব স্থান পতিতাবৃত্তির জন্য পরিচিত হয়ে উঠেছে সেখানে মাঝে মাঝেই হানা দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তাদের এমন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও অধিকারকর্মীরা বলছেন, কর্তৃপক্ষ ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখানোয় এমন যৌনকর্মীদের রাশিয়ায় আসা সহজ হয়ে পড়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে রাশিয়ায় পাচার করা হয়েছে নারী, যুবতীদের। মস্কো ভিত্তিক দাসত্ব বিরোধী সংগঠন অলটারনেটিভা’র ইউলিয়া সিলুয়ানোভার  মতে, পাচারকারীদের কাছে বিশ্বকাপ হলো একটি উপহার। সম্প্রতি এক বিকেলে ক্রেমলিনের কাছে নিজের অফিসে বসে তিনি বলেছেন তার উদ্বেগের কথা। তিনি বলেছেন, বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে ১৪ই জুন। শেষ হবে ১৫ই জুলাই। এর মধ্যে মাত্র একটি ম্যাচের টিকিট পেয়েছেন এমন বিদেশীকেও ভিসা দিয়েছে রাশিয়া। এটাই বড় ঝুঁকি। নাইজেরিয়ার নাগরিকদেরকে নিয়েই বেশির ভাগ কাজ ইউলিয়া সিলুয়ানোভার ।তিনি বলেছেন, প্রতি বছর রাশিয়ায় কয়েক হাজার নারীকে পাচার করে নেয়া হয়। গত গ্রীষ্মে ফিফা কনফেডারেশন কাপের সময় নতুন করে ভিসা দেয়া হয়। সে সময় থেকেই পাচারের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করেন ইউলিয়া সিলুয়ানোভা। তিনি বলেন, এর মধ্যে অর্ধেক নারীই বলেছেন তারা দেহব্যবসা করতে গিয়েছেন। বাকি অর্ধেক বলেছেন, তারা বাচ্চা রাখার মতো কাজ করতে চান। ইউলিয়া সিলুয়ানোভা আরো বলেন, রাশিয়ায় পাচার করে যেসব নারীকে এবং কিছু পুরুষকে নেয়া হয় তারা পশ্চিম আফ্রিকার, সোভিয়েত ভেঙে যাওয়ার ফলে যেসব রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে সেকানকার এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার। তবে এদের কেউই জানেন না, একবার তারা রাশিয়ায় পৌঁছালে তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নেয়া হবে। তা ফেরত পেতে হলে প্রতিজনকে গড়ে ৫০ হাজার ডলার করে অর্থ পরিশোধ করতে হবে পাচারকারীদের। এদেরকে নিয়ে ছোট্ট ছোট্ট গ্রুপে রাখা হয় এপার্টমেন্টসে। যখন ফোনে বা ইন্টারনেটে কোনো খদ্দের তাদেরকে ডাকে শুধু তখনই বাইরে যেতে দেয়া হয়। এতে কেউ আপত্তি করলে তাকে শারীরিক ও মৌখিক নির্যাতন করা হয়। হুমকি দেয়া হয়, দেশে ফেলে আসা তার পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status