প্রথম পাতা
বিস্মিত ফিফার লোকজন বলেছিলেন ওহ্ মাই গড
১৯ জুন ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:২৭ পূর্বাহ্ন
স্বাধীনতার পর ঢাকার মাঠে ডাবল হ্যাটট্রিককারী ফুটবলার মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম। শৈশব থেকেই ব্রাজিলের সমর্থক তিনি। রাশিয়া বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা বিচারে তিনি ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানিই রাখছেন এগিয়ে। তার বিবেচনায় জার্মানির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে দু’টি দেশ ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনা। নিজ পছন্দের দেশ ব্রাজিল কোয়ার্টার পর্যন্ত যেতে পারলেই তৃপ্ত থাকবেন তিনি।
বাংলাদেশের শতাব্দী সেরা ফুটবলার হিসেবে ফিফা’র স্বীকৃতি পাওয়া হাফিজ বলেন, আমি ব্রাজিলের একনিষ্ঠ সমর্থক। ১৯৬২ সালে ব্রাজিল যখন চ্যাম্পিয়ন হয় তখন আমি ক্লাস এইটের ছাত্র। সে দলটির প্রাণভোমরা ছিলেন পেলে। সেই পেলের নান্দনিক ফুটবল দেখেই আমি ব্রাজিলের সমর্থকে পরিণত হয়েছি। এখনো ব্রাজিলেরই সমর্থক। যদিও বর্তমান ব্রাজিল দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো শক্তিশালী নয়। ব্রাজিল বিশ্বকাপেই তারা জার্মানির কাছে সাত গোল হজম করে বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের স্তম্ভিত করেছে। ১৯৬২-৭০-এর সে ব্রাজিল টিমের সঙ্গে এখনকার টিমের অনেক পার্থক্য। সেই রামও নেই, সেই রাজত্বও নেই।
ফুটবলের নতুন স্টার সম্পর্কে এককালের ঢাকার মাঠ মাতানো হাফিজ বলেন- বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে এসে অনেক স্টার প্লেয়ার সুপার স্টারে পরিণত হয়। নতুন নতুন অনেক স্টারের জন্ম হয় বিশ্বকাপে। এবারও নিশ্চয়ই বেশকিছু খেলোয়াড় নিজেদের প্রমাণ করবে বিশ্বমঞ্চে, জয় করে নেবে ফুটবলপ্রেমীদের মন।
খেলোয়াড়ি জীবনে ছিলেন দুর্দান্ত এক স্ট্রাইকার। রাশিয়া বিশ্বকাপে স্ট্রাইকারদের নিয়ে তিনি বলেন, জার্মানির টমাস মুলারের ওপরই ফুটবলপ্রেমীদের সবচেয়ে বেশি চোখ থাকবে বলে মনে করেন মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, বিশ্বকাপে তিনি ইতিমধ্যে ১০ গোল করেছেন। এবার আর ৬-৭টি গোল করে স্বদেশি ক্লোসাকে ছুঁতে পারেন, ছাড়িয়েও যেতে পারেন। অত্যন্ত সার্ফ প্লেয়ার মুলার। এছাড়া ফ্রান্সের গ্রিজম্যান, আর্জেন্টিনার মেসি ও ব্রাজিলের নেইমার তো আছেই। মেসি অসাধারণ প্লেয়ার। সে তুলনায় নেইমার পলকা শরীরের। সদ্য ইনজুরি থেকে ফিরেছেন, প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের কড়া ট্যাকেলে বিশ্বকাপের প্রথম পর্বেই সে ইনজুরিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও ব্রাজিলের উজ্জ্বল অতীতের দিকে তাকালেও মনের পর্দায় পেলে-গারিঞ্চার মতো পলকা শরীরের খেলোয়াড়দের মুখ ভেসে উঠে। গারিঞ্চার তো একটি পা-ই ছিল অন্যটির চেয়ে ছোট। এবার ব্রাজিলকে সফল হতে হলে নেইমারকে অতিমানবীয়ভাবে কিছু করতে হবে।
হাফিজের বিশ্লেষণে রাশিয়া বিশ্বকাপে সবচেয়ে শক্তিশালী আক্রমণভাগ আর্জেন্টিনার। ব্যতিক্রমী ফুটবলার লিওনেল মেসির সঙ্গে গঞ্জালো হিগুয়েন মিলে যেকোনো প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগকে উড়িয়ে দিতে পারেন। মধ্য মাঠ থেকে বল যোগান দেয়া আর ম্যাচের প্রাণ সঞ্চারে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে ফ্রান্স ফুটবল দল। পাহাড়ের মতো অটল জার্মানির রক্ষণভাগ। আর গোলরক্ষকের ভূমিকায় এই মুহূর্তে জার্মানির ম্যানুয়েল নয়্যার প্রতিদ্বন্দ্বী। জার্মানির সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে তাদের শারীরিক সক্ষমতা অনেক বেশি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা যন্ত্রের মতো খেলতে পারে, সহজে ইনজুরি তাদের কাবু করতে পারে না।
খেলোয়াড়ি জীবন শেষে রাজনীতির পাশাপাশি ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন ফুটবলে। হাফিজের বিবেচনায় এবারের বিশ্বকাপের সেরা দুইজন কোচ জার্মানির ফিলিপ লাম ও ব্রাজিলের অ্যাডেনর লিওনার্দো বাচ্চি তিতে। লামের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিনি খেলোয়াড়দের ব্যবহার করতে জানেন। খেলোয়াড়দের সঙ্গে তার সম্পর্কও ভালো। ট্যাকটিসেও তিনিই এগিয়ে। তার অধীনে জার্মানি টানা ১০ ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপে এসেছে। ব্রাজিলের কোচ তিতেও অসাধারণ ফুটবল জ্ঞান ও কৌশল দিয়ে ব্রাজিলকে খাদের কিনার থেকে তুলে এনেছেন। এ বিশ্বকাপের আরেকজন সেরা কোচ ছিলেন সদ্য বিদায়ী কোচ স্পেনের হুলেন লোপেতেগি।
বাংলাদেশের মানুষ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দুই দলের সমর্থনে বিভক্ত-বিষয়টিকে উন্মাদনা হিসেবেই দেখে থাকেন এ আন্তর্জাতিক ফুটবল ব্যক্তিত্ব। হাফিজ বলেন, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ যা করে তা আসলে বাড়াবাড়ি। দেশ যখন নানা সমস্যায় জর্জরিত এখন এটা আমার ভালো লাগে না। নিজ দেশের ফুটবল দল যেমনই খেলুক, মানুষ মাঠে যায় না, পতাকা উড়ানোর উৎসব করে না কিন্তু বিশ্বকাপ এলেই শহর থেকে গ্রামের চেহারাই পাল্টে যায়। বাড়ির ছাদে বিদেশি পতাকা উড়ায়, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার রঙে বাড়ি রাঙিয়ে তুলে; মিছিল করে। এটা আমার কাছে বাড়াবাড়ি মনে হয়। তবে বিশ্ব ক্রীড়ামোদিদের কাছে এটা নিশ্চয়ই ক্রীড়া উন্মাদনা। অন্যভাবে দেখলে এটা মন্দের ভালো। বিশ্বকাপ চলাকালে তরুণরা মাদকের চেয়ে ক্রীড়া উন্মাদনায় মজে। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের বাড়াবাড়ি নিয়ে মেজর (অব.) হাফিজ একটি অন্যরকম অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ১৯৯৪ বিশ্বকাপের সময় আমি ফিফার শৃঙ্খলা কমিটির একজন সদস্য ছিলাম। ছয় মহাদেশ থেকে ছয়জনকে নিয়ে গঠিত হয় এ কমিটি। তো সেবার মাদক গ্রহণের দায়ে আমরা আর্জেন্টিনার দিয়াগো ম্যারাডোনাকে নিষিদ্ধ করেছিলাম। মাঠে নামার আগে তার মূত্র সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর ধরা পড়েছিল মাদকের নমুনা। ফুটবল হিসেবে অনন্য সাধারণ ম্যারাডোনা ব্যক্তি হিসেবে মন্দ, মাদক দোষে দুষ্ট। কিন্তু বাংলাদেশের লোকজন সবখানে সব কিছুতেই ষড়যন্ত্র দেখে। ম্যারাডোনার ঘটনায় আর্জেন্টিনার লোকজন যখন লজ্জায় চুপ তখন বাংলাদেশে তার এ শাস্তির বিরুদ্ধে মিছিল করেছে লোকজন। তখন ফিফার অফিসিয়াল হিসেবে আমাকে লজ্জার মধ্যে পড়তে হয়েছিল। আমার কাছে তারা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছিল-ওহ্ মাই গড! সব মিলিয়ে আমার কাছে এ উন্মাদনাকে বাড়াবাড়িই মনে হয়।
ফুটবলার হিসেবে নয় হাফিজ বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবেই দু’বার সফর করেছেন ব্রাজিল। ২০০২ জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপের সময় প্রথম ব্রাজিল সফর করেন পাটমন্ত্রী হিসেবে জুট কনফারেন্সে। সেদিনের স্মৃতি হাতড়ে হাফিজ বলেন, বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে রাস্তাঘাটে কোনো লোকজন দেখলাম না। যেন একটি মৃতপুরী। ব্রাজিলিয়ানরা সবাই বাসাবাড়িতে টিভিতে ফুটবল ম্যাচ দেখছেন তখন। আমার হোটেল ছিল কোপাকাবানা বীচের উল্টোপাশে। ফলে বিশ্বকাপ নিয়ে ব্রাজিলের ফুটবল উন্মাদনা স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হয়েছে সেবার। ২০০৫ সালে বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে ব্রাজিল ফুটবল উন্মাদনা স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হয়েছে সেবার। ২০০৫ সালে বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে ব্রাজিল গিয়েছিলাম বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বৈঠকে। সেবার ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম মারকানা দেখতে গিয়েছিলাম। স্টেডিয়ামের বাইরে একটি গ্যালারিতে শোভা পাচ্ছে পেলে থেকে শুরু করে রিভালদো পর্যন্ত কিংবদন্তি ফুটবলারদের পায়ের ছাপ।
ফুটবলার হিসেবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে খেলেছেন এককালের পাকিস্তান জাতীয় দলের অধিনায়ক হাফিজ। সে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন থাকাকালে তাদের সঙ্গে কয়েকবার খেলার সুযোগ হয়েছিল। তখন সোভিয়েত রাশিয়ায় সব সময় কয়েকজন বিশ্বমানের ফুটবলার থাকতেন। এখন দেশটির সে অবস্থান নেই। স্বাগতিক হলেও রাশিয়া বেশিদূর যাবে, এমন প্রত্যাশা অবাস্তব।
অনুলিখন: কাফি কামাল
বাংলাদেশের শতাব্দী সেরা ফুটবলার হিসেবে ফিফা’র স্বীকৃতি পাওয়া হাফিজ বলেন, আমি ব্রাজিলের একনিষ্ঠ সমর্থক। ১৯৬২ সালে ব্রাজিল যখন চ্যাম্পিয়ন হয় তখন আমি ক্লাস এইটের ছাত্র। সে দলটির প্রাণভোমরা ছিলেন পেলে। সেই পেলের নান্দনিক ফুটবল দেখেই আমি ব্রাজিলের সমর্থকে পরিণত হয়েছি। এখনো ব্রাজিলেরই সমর্থক। যদিও বর্তমান ব্রাজিল দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো শক্তিশালী নয়। ব্রাজিল বিশ্বকাপেই তারা জার্মানির কাছে সাত গোল হজম করে বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের স্তম্ভিত করেছে। ১৯৬২-৭০-এর সে ব্রাজিল টিমের সঙ্গে এখনকার টিমের অনেক পার্থক্য। সেই রামও নেই, সেই রাজত্বও নেই।
ফুটবলের নতুন স্টার সম্পর্কে এককালের ঢাকার মাঠ মাতানো হাফিজ বলেন- বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে এসে অনেক স্টার প্লেয়ার সুপার স্টারে পরিণত হয়। নতুন নতুন অনেক স্টারের জন্ম হয় বিশ্বকাপে। এবারও নিশ্চয়ই বেশকিছু খেলোয়াড় নিজেদের প্রমাণ করবে বিশ্বমঞ্চে, জয় করে নেবে ফুটবলপ্রেমীদের মন।
খেলোয়াড়ি জীবনে ছিলেন দুর্দান্ত এক স্ট্রাইকার। রাশিয়া বিশ্বকাপে স্ট্রাইকারদের নিয়ে তিনি বলেন, জার্মানির টমাস মুলারের ওপরই ফুটবলপ্রেমীদের সবচেয়ে বেশি চোখ থাকবে বলে মনে করেন মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, বিশ্বকাপে তিনি ইতিমধ্যে ১০ গোল করেছেন। এবার আর ৬-৭টি গোল করে স্বদেশি ক্লোসাকে ছুঁতে পারেন, ছাড়িয়েও যেতে পারেন। অত্যন্ত সার্ফ প্লেয়ার মুলার। এছাড়া ফ্রান্সের গ্রিজম্যান, আর্জেন্টিনার মেসি ও ব্রাজিলের নেইমার তো আছেই। মেসি অসাধারণ প্লেয়ার। সে তুলনায় নেইমার পলকা শরীরের। সদ্য ইনজুরি থেকে ফিরেছেন, প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের কড়া ট্যাকেলে বিশ্বকাপের প্রথম পর্বেই সে ইনজুরিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও ব্রাজিলের উজ্জ্বল অতীতের দিকে তাকালেও মনের পর্দায় পেলে-গারিঞ্চার মতো পলকা শরীরের খেলোয়াড়দের মুখ ভেসে উঠে। গারিঞ্চার তো একটি পা-ই ছিল অন্যটির চেয়ে ছোট। এবার ব্রাজিলকে সফল হতে হলে নেইমারকে অতিমানবীয়ভাবে কিছু করতে হবে।
হাফিজের বিশ্লেষণে রাশিয়া বিশ্বকাপে সবচেয়ে শক্তিশালী আক্রমণভাগ আর্জেন্টিনার। ব্যতিক্রমী ফুটবলার লিওনেল মেসির সঙ্গে গঞ্জালো হিগুয়েন মিলে যেকোনো প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগকে উড়িয়ে দিতে পারেন। মধ্য মাঠ থেকে বল যোগান দেয়া আর ম্যাচের প্রাণ সঞ্চারে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে ফ্রান্স ফুটবল দল। পাহাড়ের মতো অটল জার্মানির রক্ষণভাগ। আর গোলরক্ষকের ভূমিকায় এই মুহূর্তে জার্মানির ম্যানুয়েল নয়্যার প্রতিদ্বন্দ্বী। জার্মানির সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে তাদের শারীরিক সক্ষমতা অনেক বেশি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা যন্ত্রের মতো খেলতে পারে, সহজে ইনজুরি তাদের কাবু করতে পারে না।
খেলোয়াড়ি জীবন শেষে রাজনীতির পাশাপাশি ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন ফুটবলে। হাফিজের বিবেচনায় এবারের বিশ্বকাপের সেরা দুইজন কোচ জার্মানির ফিলিপ লাম ও ব্রাজিলের অ্যাডেনর লিওনার্দো বাচ্চি তিতে। লামের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিনি খেলোয়াড়দের ব্যবহার করতে জানেন। খেলোয়াড়দের সঙ্গে তার সম্পর্কও ভালো। ট্যাকটিসেও তিনিই এগিয়ে। তার অধীনে জার্মানি টানা ১০ ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপে এসেছে। ব্রাজিলের কোচ তিতেও অসাধারণ ফুটবল জ্ঞান ও কৌশল দিয়ে ব্রাজিলকে খাদের কিনার থেকে তুলে এনেছেন। এ বিশ্বকাপের আরেকজন সেরা কোচ ছিলেন সদ্য বিদায়ী কোচ স্পেনের হুলেন লোপেতেগি।
বাংলাদেশের মানুষ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দুই দলের সমর্থনে বিভক্ত-বিষয়টিকে উন্মাদনা হিসেবেই দেখে থাকেন এ আন্তর্জাতিক ফুটবল ব্যক্তিত্ব। হাফিজ বলেন, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ যা করে তা আসলে বাড়াবাড়ি। দেশ যখন নানা সমস্যায় জর্জরিত এখন এটা আমার ভালো লাগে না। নিজ দেশের ফুটবল দল যেমনই খেলুক, মানুষ মাঠে যায় না, পতাকা উড়ানোর উৎসব করে না কিন্তু বিশ্বকাপ এলেই শহর থেকে গ্রামের চেহারাই পাল্টে যায়। বাড়ির ছাদে বিদেশি পতাকা উড়ায়, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার রঙে বাড়ি রাঙিয়ে তুলে; মিছিল করে। এটা আমার কাছে বাড়াবাড়ি মনে হয়। তবে বিশ্ব ক্রীড়ামোদিদের কাছে এটা নিশ্চয়ই ক্রীড়া উন্মাদনা। অন্যভাবে দেখলে এটা মন্দের ভালো। বিশ্বকাপ চলাকালে তরুণরা মাদকের চেয়ে ক্রীড়া উন্মাদনায় মজে। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের বাড়াবাড়ি নিয়ে মেজর (অব.) হাফিজ একটি অন্যরকম অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ১৯৯৪ বিশ্বকাপের সময় আমি ফিফার শৃঙ্খলা কমিটির একজন সদস্য ছিলাম। ছয় মহাদেশ থেকে ছয়জনকে নিয়ে গঠিত হয় এ কমিটি। তো সেবার মাদক গ্রহণের দায়ে আমরা আর্জেন্টিনার দিয়াগো ম্যারাডোনাকে নিষিদ্ধ করেছিলাম। মাঠে নামার আগে তার মূত্র সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর ধরা পড়েছিল মাদকের নমুনা। ফুটবল হিসেবে অনন্য সাধারণ ম্যারাডোনা ব্যক্তি হিসেবে মন্দ, মাদক দোষে দুষ্ট। কিন্তু বাংলাদেশের লোকজন সবখানে সব কিছুতেই ষড়যন্ত্র দেখে। ম্যারাডোনার ঘটনায় আর্জেন্টিনার লোকজন যখন লজ্জায় চুপ তখন বাংলাদেশে তার এ শাস্তির বিরুদ্ধে মিছিল করেছে লোকজন। তখন ফিফার অফিসিয়াল হিসেবে আমাকে লজ্জার মধ্যে পড়তে হয়েছিল। আমার কাছে তারা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছিল-ওহ্ মাই গড! সব মিলিয়ে আমার কাছে এ উন্মাদনাকে বাড়াবাড়িই মনে হয়।
ফুটবলার হিসেবে নয় হাফিজ বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবেই দু’বার সফর করেছেন ব্রাজিল। ২০০২ জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপের সময় প্রথম ব্রাজিল সফর করেন পাটমন্ত্রী হিসেবে জুট কনফারেন্সে। সেদিনের স্মৃতি হাতড়ে হাফিজ বলেন, বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে রাস্তাঘাটে কোনো লোকজন দেখলাম না। যেন একটি মৃতপুরী। ব্রাজিলিয়ানরা সবাই বাসাবাড়িতে টিভিতে ফুটবল ম্যাচ দেখছেন তখন। আমার হোটেল ছিল কোপাকাবানা বীচের উল্টোপাশে। ফলে বিশ্বকাপ নিয়ে ব্রাজিলের ফুটবল উন্মাদনা স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হয়েছে সেবার। ২০০৫ সালে বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে ব্রাজিল ফুটবল উন্মাদনা স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হয়েছে সেবার। ২০০৫ সালে বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে ব্রাজিল গিয়েছিলাম বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বৈঠকে। সেবার ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম মারকানা দেখতে গিয়েছিলাম। স্টেডিয়ামের বাইরে একটি গ্যালারিতে শোভা পাচ্ছে পেলে থেকে শুরু করে রিভালদো পর্যন্ত কিংবদন্তি ফুটবলারদের পায়ের ছাপ।
ফুটবলার হিসেবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে খেলেছেন এককালের পাকিস্তান জাতীয় দলের অধিনায়ক হাফিজ। সে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন থাকাকালে তাদের সঙ্গে কয়েকবার খেলার সুযোগ হয়েছিল। তখন সোভিয়েত রাশিয়ায় সব সময় কয়েকজন বিশ্বমানের ফুটবলার থাকতেন। এখন দেশটির সে অবস্থান নেই। স্বাগতিক হলেও রাশিয়া বেশিদূর যাবে, এমন প্রত্যাশা অবাস্তব।
অনুলিখন: কাফি কামাল