শেষের পাতা

গাজীপুর সিটি নির্বাচন

জাহাঙ্গীরের পথসভা, খুলনার মতো নির্বাচন করতে না দেয়ার ঘোষণা হাসানের

ইকবাল আহমদ সরকার, গাজীপুর থেকে

১৯ জুন ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন

প্রায় দেড় মাস পর আবারো আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার- প্রচারণা। আদালতের নির্দেশে নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় এবং পরবর্তীতে  স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তারিখ পুনঃনির্ধারণ করায় গতকাল সোমবার থেকে এ নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। টানানো হচ্ছে পোস্টার, ব্যানার। বেজে ওঠছে মাইকের উচ্চ শব্দ। ঈদের আমেজ না কাটলেও আবারো জমজমাট হয়ে ওঠছে নির্বাচনী পরিবেশ। প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের পথসভা চলাকালে বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগমে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। বিএনপির মেয়র প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য হাসান উদ্দিন সরকার সকালে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী মতবিনিময় সভা ও বিকালে ঈদ পুনর্মিলনী সভায় যোগ দেন। বড় দুটি রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি নির্বাচনের অন্য ৫ জন মেয়র প্রার্থী এবং কাউন্সিলর প্রার্থী ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচার যুদ্ধে নেমেছেন। যদিও রমজান মাস ও ঈদকে কেন্দ্র করে নানা কৌশলে প্রচার চালিয়ে গেছেন প্রার্থীরা। আগামী ২৬শে জুন অনুষ্ঠিত হবে গাজীপুর সিটি নির্বাচন।

সকাল সাড়ে ১০টায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। প্রচারণায় নেমে নগরের বোর্ডবাজারে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে পথসভায় বক্তব্য রাখেন। এ পথসভায় আশেপাশের এলাকার নেতাকর্মী ও সমর্থক, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীদের নেতৃত্বে শোডাউন করে, মিছিল নিয়ে এ সভায় যোগ দেন। নৌকার মিছিলে মুখরিত হয়ে ওঠে এলাকা। পথসভাটি জনসভায় রূপ নেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের আয়োজনে এ সভায় মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ছাড়াও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রউফ নয়ন, অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নেতা কাজী মোজাম্মেল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সভাটি চলাকালে বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগমে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। সভায় বক্তব্য রাখার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, মিথ্যাচার করে গত নির্বাচনে বিএনপি মেয়র পদে জয়ী হয়ে নগরের কোনো উন্নয়ন করতে পারেনি,  ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও রাস্তাঘাটের কোনো উন্নয়ন হয়নি। সড়কে পানি জমে থাকে, দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে। তাই নগরবাসীর দুর্ভোগ বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষায় আমি গাজীপুরকে একটি আধুনিক শহর করতে চাই। এবার তিনি বিজয়ী হয়ে গাজীপুরকে গ্রীণ ও ক্লিন সিটি গড়তে চান। একটি পরিকল্পিত নগর হিসেবে গড়তে চান।
অন্যদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার সকালে টঙ্গীতে তার নিজ বাসায় নগরীর কাশিমপুর এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় জেলা বিএনপির সভাপতি  ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল, হাসান সরকারের নির্বাচনের মিডিয়া সেল প্রধান সমন্বয়কারী কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ডা. মাজহারুল আলম নির্বাচনী প্রধান এজেন্ট জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মো. সোহরাব উদ্দীনসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে  বিকালে তিনি নগরের শালনা এলাকায় একটি ঈদ পুনর্মিলনী সভায় যোগ দেন। দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ও বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও নেতাদের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলেন এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জেতার আশা প্রকাশ করে বলেন, খুলনার মতো নির্বাচন এখানে করতে দেয়া হবে না। গাজীপুর খুলনার তিনগুণ বড় সিটি। এখানে নির্বাচনে অনিয়ম হলে জনতা ছেড়ে দেবে না। নতুন ইতিহাস তৈরি করবে। কোনো টালবাহানা না করে সুষ্ঠু ভোট হলে তিনি শতকরা ষাট ভাগের বেশি ভোট পাবেন বলেও আশা করেন।

নানা প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি প্রার্থীদের মধ্যে বাকযুদ্ধ থাকলেও ভোটাররা মনে করছেন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এবং এ নির্বাচনে তারা যোগ্য মেয়র প্রার্থীকেই বাছাই করতে পারবেন। যার মাধ্যমে দ্রুত এগিয়ে যাবে এই সিটি করপোরেশন। নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ছাড়াও ৫৭ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ১৯ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত করবেন নগরের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ ভোটার।

গত ১৫ই মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণের কথা ছিল। হাইকোর্টের আদেশে প্রথমে ভোট স্থগিত হওয়া এবং পরে আপিল বিভাগে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর নতুন করে ২৬শে জুন এ ভোট হওয়ার দিন ধার্য করা হয়েছে। এ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৭ মেয়র, ২৫৪ সাধারণ কাউন্সিলর ও ৮৪ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থীর বাইরে মেয়র প্রার্থীরা হলেন- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি’র কাজী মো. রুহুল আমিন (কাস্তে), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. জালাল উদ্দিন (মোমবাতি), ইসলামী ঐক্যজোটের ফজলুর রহমান (মিনার), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. নাসির উদ্দিন (হাতপাখা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদ (টেবিল ঘড়ি)।

এদিকে ভোটগ্রহণের জন্য নানা ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়। এই সিটিতে এবার ছয়টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করার জন্য নির্বাচন কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রগুলো হলো- রানী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র-১ (ভোটার-১৯২৭) এবং রানী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র-২ (ভোটার-২০৭৭), চাপুলিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (ভোটার ২৪৮০), চাপুলিয়া মফিজউদ্দিন খান উচ্চবিদ্যালয় (ভোটার ২৫৫২), পশ্চিম জয়দেবপুর মারিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র-১ (ভোটার ২৫৬২) ও মারিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র-২ (ভোটার ২৮২৭)। এ ছাড়া গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্র, কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং টঙ্গীর আউচপাড়া এলাকার বসির উদ্দিন উদয়ন একাডেমি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।

নির্বাচনে মেয়র পদে সাত এবং ৫৭টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন ও ১৯টি সংরক্ষিত আসনে ৮৪ নারী কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এতে ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status