এক্সক্লুসিভ

কমলগঞ্জে পানিবন্দিদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী

সাজিদুর রহমান সাজু, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) থেকে

১৯ জুন ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:২৪ পূর্বাহ্ন

টানা বর্ষণের মধ্যে কেনাকাটায় ঈদের প্রস্তুতি নিচ্ছিল কমলগঞ্জবাসী। এরই মধ্যে দেখা দেয় আকস্মিক বন্যা। টানা বর্ষণে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হু হু করে বাড়ে খরস্রোতা ধলাই নদীর পানি। দ্রুত ধলাই নদীর পানি বিপদ সীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আঘাত করে প্রতিরক্ষা বাঁধে। এতে একে একে ৯টি ভাঙন দেখা দেয়। মঙ্গলবার বিকালে কমলগঞ্জ পৌর এলাকার করিমপুর গ্রামে প্রথম ভাঙন দেখা দেয়। এরপর বুধবার ও বৃহস্পতিবার এই দুই দিনে একে একে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধের ইসলামপুর, মাধবপুর, আদমপুর, মুন্সীবাজার ও রহিমপুর ইউনিয়ন এলাকায় আরো ৭টি ভাঙন দেখা দেয়। পাশাপাশি প্রতিরক্ষা বাঁধের দু’পাড়ে মোট ১৭টি স্থানে ফাটল ও ধস দেখা দেয়। ধলাই নদীর ভাঙনকৃত মোট ৮টি ভাঙন দিয়ে প্রবল স্রোতে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় শুক্রবার ভোর রাতেই উপজেলার প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা বানের পানিতে তলিয়ে যায়। তাতে বানের জলে ভেসে যায় কমলগঞ্জবাসীর ঈদ আনন্দ। গ্রামের পর গ্রাম ৫ থেকে ৬ ফুট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কমলগঞ্জের ৯টি ইউনিয়নের ৯০ শতাংশ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। ফলে অধিকাংশ এলাকায় ঈদের নামাজ পর্যন্ত পড়তে পারেননি মুসল্লিরা। বানের স্রোতে ভেসে গিয়ে রহিমপুর ইউনিয়নের প্রতাপী গ্রামের মিছির মিয়ার ১৮ মাসের শিশুপুত্র ছাদির মিয়া, আলীনগর ইউনিয়নের বস্তির পরিবহন শ্রমিক সেলিম মিয়া (৩৮), শমশেরনগর ইউনিয়নের ভাদাইরদেউল গ্রামের মানসিক প্রতিবন্ধী রমজান আলী (৪০) ও ইসলামপুর ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দি গ্রামের সাত্তার মিয়া (৫৫) ও তার ছেলে করিম মিয়া (২০) এবং রহিমপুর ইউনিয়নের প্রতাপী গ্রামের মিছির মিয়ার ১৮ মাসের শিশুপুত্র ছাদির মিয়া মারা যান। বন্যাক্রান্ত এলাকার মাঠঘাট, বসতবাড়ি, ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তলিয়ে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। বন্যাদুর্গত এলাকায় পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। পানিবন্দিরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাদে ও বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে ঘরের চালে আশ্রয় নেয়। বানের স্রোতে ভেসে যায় প্রায় আড়াই শ’ পুকুর ও ফিশারির কয়েক কোটি টাকার মাছ। জেলা সদরের সঙ্গে এবং অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ায় কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্ধার অভিযানে ব্যাঘাত সৃষ্টি হলেও কমলগঞ্জের ইউএনও মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, প্রকল্প কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার অব্যাহত রাখেন। চিকিৎসকদের পরামর্শে বিশ্রামে থাকা অসুস্থ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য, কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক রফিকুর রহমান পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার অভিযান চালানোর জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের অনুরোধ জানালে আওয়ামী লীগ নেতা জুনেল আহমদ তরফদারের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি নৌকা নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা পতনঊষার ইউনিয়নে এবং উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দলীয় নেতাকর্মীরা পানিবন্দিদের উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যান। পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে ১২টি নৌকা দিয়ে উদ্ধার কাজ চালান স্থানীয়রা। রোববার সকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল দুটি স্পিডবোট নিয়ে কমলগঞ্জের পতনঊষার ইউনিয়নের পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। শনিবার ঈদের দিন বিকাল থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার, মুন্সীবাজার, রহিমপুর, ইসলামপুর, কমলগঞ্জ পৌরসভা, শমশেরনগরসহ বন্যাদুর্গত বিভিন্ন ইউনিয়নে শুকনো খাবার বিতরণ করেন। এ ছাড়া কমলগঞ্জের ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা এবং জেলা পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ হেলাল উদ্দীন, মুন্সীবাজার-রহিমপুর দরিদ্র কল্যাণ ট্রাস্টসহ বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান স্ব-স্ব উদ্যোগে দুর্গতদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। কমলগঞ্জ পৌর মেয়র মো. জুয়েল আহমেদ পৌর এলাকার পানিবন্দিদের মাঝে চাল, শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন। কমলগঞ্জের ইউএনও মোহাম্মদ মাহমুদুল হক মানবজমিনকে জানান, বন্যাদুর্গতদের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ হাজার প্যাকেট খিচুড়ি ১০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৯৫ টন চাল ও নগদ ৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পানিতে ডুবে মারা যাওয়া ৫ পরিবারের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে মোট ৫ লাখ টাকা আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রবল স্রোতের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি বিপর্যস্ত হওয়ায় প্রথমদিকে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিতে বেগ পেতে হয়। তবে শনিবার বিকাল থেকে দুর্গতদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছাতে সমস্যা হচ্ছে না। প্রশাসনের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে পানিবন্দিদের ও আশ্রয় কেন্দ্রে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। কমলগঞ্জ পৌর মেয়র মো. জুয়েল আহমেদ বলেন, বন্যায় পৌর এলাকায় ৭০টি কাঁচা ঘর বিধ্বস্তসহ রাস্তাঘাট ও ফসলী জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে পৌর এলাকায় প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এদিকে রোববার বিকাল থেকে বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় কমলগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকে। বর্তমানে ইসলামপুর, মাধবপুর, পৌর এলাকা, মুন্সীবাজার, রহিমপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নেমে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও শমসেরনগর ও পনতউষারে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বৃষ্টি না হলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় এ দুটি ইউনিয়নের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status