এক্সক্লুসিভ
বাঁধ ভেঙে মৌলভীবাজার শহরে পানি
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
১৯ জুন ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:২৪ পূর্বাহ্ন
মৌলভীবাজার পৌর শহরের বড়জাটের কাছে বাড়ইকোনা নামক স্থানে মনু নদীর বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের ভাঙন (৪০ ফুট) দেখা দেয়ায় পৌর শহরের দুই ওয়ার্ড সম্পূর্ণ এবং একটি ওয়ার্ড আংশিক বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। বড়হাট এলাকার বাসা-বাড়িতে কোমর-পানি, বুক পানি। চারটি খাদ্য গোদামে পানি প্রবেশ করেছে। উপজেলা চত্তরে পানি। লোকজন বাসার ছাদে, দুতলায় আশ্রয় নিয়েছে। শহরের ঢাকা-সিলেট সড়কে নৌকা চলছে। পরিবার-পরিজনকে উদ্ধার করার জন্য বাহির থেকে কেউ কেউ ছোট ট্রাকে করে নৌকা নিয়ে সড়কে নামিয়েছেন। ৪ দিন ধরে শহরে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি ছিল যে যে পয়েন্ট (সম্ভাব্য ভাঙন স্থল) কে কেন্দ্র কর সেই সব স্থান দিয়ে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভাঙেনি। বলা যায় সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে পৌরসভার বাড়ইকোনা দিয়ে হঠাৎ শনিবার রাত সাড়ে ১২টার সময় শহররক্ষা বাঁধের একটি ছিদ্র দিয়ে পানি বের হওয়ার সংবাদ শুনে সংশ্লিষ্টরা বালুর বস্তা নিয়ে হাজির হন। এই বস্তা ফেলার কিছু সময়ের মধ্যেই ভাঙন দেখা দেয়। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন এর আগেই সেনাবাহিনীসহ এই বাঁধ পর্যবেক্ষণ করা হয় কিন্তু কোন আলামত মিলেনি। বড়হাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায় মানুষজন ছাদের উপরে কেউ দু’তলায় আশ্রয় নিয়েছেন। পৌর মেয়র ফজলুর রহমান কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড পরিশ্রম করছিলেন শহর রক্ষার জন্য। এই সময় দেখা গেছে বড়হাটের তার নিজ বাসায় এখন পানি। জানালেন পৌরসভার ৬, ৯ সম্পূর্ণ এবং ৮নং ওয়ার্ড আংশিক এখন পর্যন্ত বন্যা কবলিত হয়েছে। উপজেলা পরিষদ, এলজিইডি জেলা কার্যালয়ে কোমর পানি। কুশুমবাগ ও উপজেলায় অবস্থিত চারটি খাদ্য গোদামে পানি প্রবেশ করেছে। চাল ও গম মিলিয়ে প্রায় ২ হাজার টন খাদ্য রয়েছে এই গোদামে। প্রথমে সরানো হয়নি। এ নিয়ে কথা আছে। পরে দুপুরে কিছু বিতরণ করে এবং কিছু সরিয়ে নেয়া হয় পৌর কমিউনিটি সেন্টারে। প্রায় আড়াই কোটি টাকার খাদ্য মজুদ ছিল এই চারটি গোদামে। পানিতে ভিজে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে নিচের লেয়ারের। বড়হাট এলাকার বাসিন্দা পৃত্থিরাজ দত্ত পরিবারের সদস্য দুজন নিয়ে পানি ভেঙ্গে শহরের দিকে আসছিলেন শনিবার সকালে জানান প্রতিরক্ষা বাঁধের ভাঙন তার বাসার কিছু দূরে। বাসায় এখন বুক পানি। মালামাল কিছু সরানো যায়নি। খাট, পালং, ফ্রিজ, টিভি বাসা ভাসছে। পশ্চিম বড়হাটের মো. সুরেশ আলী (৫৫) জানান বাসায় পানি থাকায় পরিবারের সদস্যরা বাসার ৪ তলার ছাদে রাত থেকে আছে। বের হয়েছেন কিছু খাবার সংগ্রহ করার জন্য। জানান বাড়ইকোনা এলাকার বারিন্দ্র বাবুর বাসার পাশে প্রতিরক্ষা বাঁধে প্রথম একটি ছিদ্র দিয়ে পানি আসছিল রাত সাড়ে ১২টার দিকে। পরে এখানে বস্তা ফেলা হয়। পরপরই ভাঙন শুরু হয়। বড়হাট ঐরাকার উর্ম্মি রাণী দাশ (৪৫) কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস বুকের সঙ্গে আটকিয়ে পানির মধ্য দিয়ে ভিজে আসছিলেন কুশুমবাগ পেট্রোল পামেপর সামন দিয়ে। জিজ্ঞেস করতেই হাউ মাউ করে কান্না শুরু করে দেন। জানান বাসার সব জিনিস পানিতে ভিজে গেছে। বাসায় এখন কোমর পানি।