বিশ্বজমিন
অভিবাসী ইস্যুতে ট্রাম্পের নীতির সমালোচনায় লরা বুশ ও মেলানিয়া
মানবজমিন ডেস্ক
১৯ জুন ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:২৩ পূর্বাহ্ন
অবৈধভাবে প্রবেশ করা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নীতির কড়া সমালোচনা করলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফার্স্টলেডি লরা বুশ। তিনি শুধু সমালোচনাই করেননি। পাশাপাশি নিন্দাও জানিয়েছেন। আর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বর্তমান ফার্স্টলেডি ও ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প। অভিবাসন ইস্যুতে ট্রাম্পের শূন্য সহনশীলতার নীতিতে যুক্তরাষ্ট্রে ভেঙে যাচ্ছে হাজার হাজার পরিবার। সন্তান ও পিতা-মাতাকে বসবাস করতে হচ্ছে আলাদা। এমন নীতি নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টে লিখেছেন লরা বুশ। তিনি পরিবার থেকে, পিতা-মাতার কাছ থেকে সন্তানদের এভাবে আলাদা করে দেয়াকে নিষ্ঠুরতা, অনৈতিক ও হৃদয় ভেঙে দেয়া হিসেবে অভিহিত করেছেন। ফলে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তা আরো জোরালো হলো এর মধ্য দিয়ে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, এর আগে বিরল একটি বিবৃতি দিয়েছেন মেলানিয়া ট্রাম্প। তিনি পরিবারের কাছ থেকে সন্তানদের আলাদা করে দেয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার মুখপাত্র বলেছেন, পরিবারের কাছ থেকে ছেলেমেয়েদের আলাদা করে দেয়াকে ঘৃণা হিসেবে দেখছেন মিসেস ট্রাম্প। এক্ষেত্রে একটি সংস্কার হিসেবে দেখা হয় সমাধান হিসেবে। তাই অভিবাসন সংস্কারের প্রয়োজনে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট উভয়পক্ষের প্রতি কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প। সেই আহ্বান পুনরাবৃত্তি করেছেন মেলানিয়া। তবে সত্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অভিবাসন ইস্যুতে যে নীতি ঘোষণা করা হয়েছে তা উত্থাপন করেছেন ট্রাম্পের এটর্নি জেনারেল। ফলে এই নীতিকে থামানোর জন্য কংগ্রেসের কোনো হস্তক্ষেপ প্রয়োজন নেই বা কংগ্রেস থেকে অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। ৬ সপ্তাহ ধরে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমণের বিরুদ্ধে যে দমনপীড়ন চালানো হয় তার ফলে প্রায় ২০০০ পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রাপ্ত বয়স্ক যারা সরকার অনুমোদিত প্রবেশ পথে প্রবেশ না করে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করেছিলেন তাদের ঠাঁই হয়েছে জেলখানা। অবৈধভাবে প্রবেশের জন্য তাদেরকে ফৌজদারি অপরাধে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এর ফলে শত শত ছেলেমেয়ে ও শিশু এখন আশ্রয় শিবিরগুলোতে অবস্থান করছে। তাদেরকে রাখা হয়েছে বিভিন্ন গুদামঘরে, সুপারমার্কেটে। মোদ্দাকথা হলো, তাদেরকে পিতা-মাতা থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। এমন কঠোরতাকে অপ্রত্যাশিত বলে নিন্দা জানিয়েছে সমালোচকরা। সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের স্ত্রী ও সাবেক ফার্স্টলেডি লরা বুশ এমন নীতির খোলামেলা সমালোচনা করেছেন। তিনি ওয়াশিংটন পোস্টে লিখেছেন, আমাদের সরকারের উচিত নয় শিশুদের ওয়্যারহাউজে বক্সের মধ্যে রাখা। অথবা তাদের জন্য মরুভূমির ভিতরে তাঁবু পেতে সেখানে রাখা উচিত হবে না। এমন চিত্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানি আমেরিকান অন্তরীণ ক্যাম্পের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এ ঘটনাকে এখনো যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে লজ্জাজনক ঘটনাগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মেলানিয়া আগের বিবৃতিতে বলেছেন, আমাদের দেশটা এমন হতে হবে যেখানে সব কিছুতে আইন অনুসরণ করা হবে। এমন একটি দেশ হতে হবে যা পরিচালিত হয় হৃদয় দিয়ে। সবার মাঝে এতই যখন সহনশীলতা, মমত্ববোধ তাহলে এই অভিবাসন নীতির জন্য দায়ী কে? প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর জন্য দায়ী করছেন ডেমোক্রেটদের। তিনি বলেছেন, এমন নীতির জন্য ডেমোক্রেটদের করা একটি আইনই দায়ী। তবে তিনি কোন আইনের কথা বুঝাচ্ছেন তা স্পষ্ট নয়। ট্রাম্প শনিবার একটি টুইট করেছেন। তাতে তিনি নতুন একটি আইন করার জন্য রিপাবলি-কানদের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছেন ডেমোক্রেটদের প্রতি। তবে সমালোচকরা বলছেন, গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের এটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস একটি নীতি ঘোষণা করেছেন। এই নীতির কারণেই আটক শিশু ও ছেলেমেয়েরা মা-বাবা থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। সম্প্রতি যে পরিমাণে শিশুকে আটক করা হয়েছে তাতে আশ্রয়কেন্দ্র-গুলোতে স্থান সংকুলান করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ডেমোক্রেট দলের আইন প্রণেতারা নিউ জার্সি ও টেক্সাকের কতগুলো আশ্রয়কেন্দ্র এবং প্রক্রিয়াকরণের পথে আছে এমন কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন রোববার। ভারমন্টের কংগ্রেসম্যান পিটার ওয়েলচ বলেছেন, তিনি বালকদের দেখেছেন খাঁচার ভেতর যেভাবে শিকল পরিয়ে বেঁধে রাখা হয় সেভাবে রাখা হয়েছে একটি ওয়্যারহাউজের মধ্যে। সরকারি পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, তারা টেক্সাসের মরুভূমির ভেতরে কয়েক শত শিশু থাকতে পারে এমন তাঁবুর শহর গড়ে তুলছে। এই মরুভূমিতে নিয়মিত তাপমাত্রা থাকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আইন প্রণেতা হোসে রড্রিগুয়েস এমন পরিকল্পনাকে পুরোপুরি অমানবিক, ক্ষোভের বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে যে কেউ এমন পরিকল্পনার নিন্দা করা উচিত।