বিশ্বজমিন

ইন্দোনেশিয়ায় এক নারীকে খেয়ে ফেললো অজগর

বিবিসি বাংলা

১৯ জুন ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:২২ পূর্বাহ্ন

অজগর আস্ত মানুষকে গিলে খেয়েছে- এরকম ঘটনা বিরল। কিন্তু গত এক বছরে ইন্দোনেশিয়ায় এরকম দু’দুটো ঘটনা ঘটেছে।
কী হয়েছিল ঐ নারীর?
ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি প্রদেশের মুনা দ্বীপের বাসিন্দা ৫৪ বছরের ওয়া থিবা গত বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ির কাছে সবজি ক্ষেতে গিয়ে আর  ফেরেন নি। ঘণ্টা কয়েক পর গ্রামের মানুষজন তাকে তোলপাড় করে খুঁজতে শুরু করে। পরের দিন তারা ক্ষেতের কাছে জঙ্গলে দেখতে পায় ঐ নারীর পায়ের স্যান্ডেল এবং হাতের ছুরিটি পড়ে রয়েছে। আর তার ৩০ মিটার দূরে শুয়ে আছে পেট মোটা বিশাল এক ডোরাকাটা অজগর সাপ। ‘গ্রামবাসীদের সন্দেহ হয় সাপটিই হয়তো ওয়া থিবাকে খেয়েছে। তারা সাপটিকে মেরে  সেটিকে জঙ্গলের বাইরে নিয়ে যায়’- স্থানীয় পুলিশ প্রধান বার্তা সংস্থা এএফপিকে একথা জানান। তিনি বলেন, পেট চিরে দেখা যায় তার ভেতর ঐ নারীর মরদেহ। সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ফুটেজে দেখা যায়, অজগরের পেট থেকে বের করে আনা হচ্ছে পূর্ণবয়স্কা একটি নারীর অক্ষত মরদেহ।
কীভাবে অজগর শিকার ধরে?
সুলাওয়েসির ঐ অজগরটি ছিল বিশাল আকৃতির ডোরাকাটা প্রজাতির। এ ধরনের অজগর ৩২ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এরা অতর্কিতে হামলা চালায়। তারপর দ্রুত শিকারকে শরীর দিয়ে পেঁচিয়ে ফেলে প্রচণ্ড চাপ দিতে থাকে। ফলে কয়েক মিনিটের মধ্যে শিকারটি দমবন্ধ হয়ে বা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যায়। তারপর আস্ত গিলে খেয়ে ফেলে সেটিকে। অজগরের চোয়ালের পেশীগুলো খুবই নমনীয়। ফলে শিকারের আকৃতি বড় হলেও সেটিকে আস্ত মুখের ভেতরে নিতে সক্ষম হয় তারা।
মানুষ গিলে খাওয়া কি সহজ হয়?
তবে মানুষ গিলে খাওয়ার সময় বিশেষ এক সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে অজগর। সিঙ্গাপুরে বন্যপ্রাণী গবেষক এবং অজগর বিশেষজ্ঞ মেরি রুথ-লো বিবিসিকে বলেন, ‘মানুষের কাঁধের হাড় সমস্যা তৈরি করে, কারণ ঐ হাড় বাঁকে না।’
অজগর কি আর কোনো বড় প্রাণী খায়?
মিস লো বলেন, ‘অজগরের প্রধান খাবার স্তন্যপায়ী প্রাণী। তবে তারা মাঝে মধ্যে কুমিরসহ বিভিন্ন সরীসৃপও খায়।’ অজগরের নিয়মিত খাবার বড় ইঁদুর এবং ছোটোখাটো জন্তু। তবে আকারে যত বড় হতে থাকে ততই বড় আকারের প্রাণী তারা টার্গেট করে। তার প্রধান কারণ, ইঁদুর খেয়ে তখন বড় অজগরের ক্যালরির প্রয়োজন মেটে না। তখন বন্য শূকর বা এমনকি গরুকেও তারা ছাড়ে না। তবে অনেক সময় হিসাবে ভুল করে ফেলে অজগর। ২০০৫ সালে ফ্লোরিডায় একটি বার্মিজ অজগর, যেটিকে অজগর প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বড় বলে ধরা হয়, একটি কুমির ধরে খেতে গেলে দুটিরই জীবন যায়। শিকার ধরার ব্যাপারে অজগর অনেক বাছ-বিচার করে। তাদের পছন্দ-অপছন্দ রয়েছে। উপযুক্ত বড় আকৃতির শিকার না  পেলে, অনেক সময় তারা অনাহারে থাকতেও আপত্তি করে না।
এটাই কি প্রথম অজগর কোনো মানুষ খেলো?
না। ২০০২ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকার একটি পাহাড়ি অজগর (রক পাইথন) ১০ বছরের একটি বালককে গিলে খায়। গত বছর মার্চ মাসে সুলায়েসিতেই ২১ ফুট লম্বা একটি অজগর এক কৃষককে খেয়ে ফেলে। ২৫ বছরের ঐ যুবক বাড়ির কাছে পাম বাগানে গেলে করুণ পরিণতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাকে। গত বছর ইন্দোনেশিয়ারই সুমাত্রা প্রদেশে প্রায় ২৪ ফুট লম্বা এক অজগর একটি পাম বাগানে এক কৃষকের ওপর চড়াও হয়। অনেক যুদ্ধ করে মারাত্মক জখম নিয়ে সে অবশ্য প্রাণে বেঁচে যায়। নৃবিজ্ঞানী টমাস হেডল্যান্ড ফিলিপিন্সের একটি জঙ্গলে একটি আদিবাসী সমপ্রদায়ের সঙ্গে কয়েক দশক কাজ করেছেন। তিনি জানান, ঐ সমপ্রদায়ের অন্তত ২৫ শতাংশ পুরুষ তাকে বলেছে জীবনের কোনো না  কোনো সময় তারা ডোরাকাটা অজগর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে।
 ইন্দোনেশিয়ার ব্রাওয়িজায়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্প বিশেষজ্ঞ নিয়া কুরনিয়াওয়ান বিবিসিকে বলেন, অজগর সাপ কম্পন, শব্দ বা বাতির আলো থেকে নিঃসরিত তাপের ব্যাপারে খুব স্পর্শকাতর এবং সে কারণে তারা মানুষের বসতি এড়িয়ে চলে। কিন্তু তাদের আবাসস্থলের কাছাকাছি পেলে খাবার হিসেবে মানুষকে টার্গেট করা অজগরের জন্য অস্বাভাবিক কিছু নয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status