অনলাইন

বাঁধ ভেঙে মৌলভীবাজারের তিন ওয়ার্ড প্লাবিত

মাসুদ আহমদ,মৌলভীবাজার থেকে

১৭ জুন ২০১৮, রবিবার, ১০:৫০ পূর্বাহ্ন

মৌলভীবাজার শহরের কুশুমবাগ (ঢাকা-সিলেট সড়ক), ছবি: মাসুদ আহমদ

মৌলভীবাজার পৌর শহরের বড়জাটের কাছে বাড়ইকোনা নামক স্থানে মনু নদীর বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের ভাঙ্গন (৪০ ফুট) দেখা দেয়ায় পৌর শহরের দুই ওয়ার্ড সম্পূর্ণ এবং একটি ওয়ার্ড আংশিক বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। বড়হাট এলাকার বাসা-বাড়িতে কোমর-পানি, বুক পানি। চারটি খাদ্য গুদামে পানি প্রবেশ করেছে। উপজেলা চত্বর পানির নিচে। লোকজন বাসার ছাদে আর দোতলায় আশ্রয় নিয়েছে। শহরের ঢাকা-সিলেট সড়কে নৌকা চলছে। পরিবার-পরিজনকে উদ্ধার করার জন্য বাহির থেকে কেউ কেউ ছোট ট্রাকে করে নৌকা নিয়ে সড়কে নামিয়েছেন। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সাড়ে ন’টা) শহরের পশ্চিম বাজারের বাটার দোকান পর্যন্ত সড়কের উপর পানি ছিল। সময় বাড়ার সাথে সাথে পানি নতুন জায়গা দখল করছে। ৪ দিন ধরে শহরে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি ছিল যে যে পয়েন্ট (সম্ভাব্য ভাঙ্গন স্থল) কে কেন্দ্র করে সেই সব স্থান দিয়ে ভাঙ্গে নিয়ে। বলা যায় সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাড়ইকোনা দিয়ে হঠাৎ শনিবার রাত সাড়ে ১২ টার সময় শহররক্ষা বাঁধের একটি ছিদ্র দিয়ে পানি বের হওয়ার সংবাদ শুনে সংশ্লিষ্টরা বালুর বস্তা নিয়ে হাজির হয়। এই বস্তা ফেলার কিছু সময়ের মধ্যেই ভাঙ্গন দেখা দেয়। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন এর আগেই সেনাবাহিনীসহ এই বাঁধ পর্যবেক্ষণ করা হয় কিন্তু কোন আলামত মিলেনি। ভোরবেলা বড়হাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায় মানুষজন ছাদের উপরে কেউ দোতলায় আশ্রয় নিয়েছেন। পৌর মেয়র ফজলুর রহমান কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড পরিশ্রম করছিলেন শহর রক্ষার জন্য। বড়হাটের তার নিজ বাসায় এখন পানি। জানালেন পৌরসভার ৬,৯ সম্পূর্ণ এবং ৮ নং ওয়ার্ড আংশিক বন্যা কবলিত হয়েছে। উপজেলা পরিষদ, এলজিইডি জেলা কার্যালয়ে কোমর পানি। কুশুমবাগ ও উপজেলায় অবস্থিত চারটি খাদ্য গুদামে পানি প্রবেশ করেছে। চাল ও গম মিলিয়ে প্রায় ২ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য রয়েছে এই গুদামে। পানি প্রবেশ করার আগে তা সরানো যায়নি। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোজ কান্তি দাশ জানিয়েছেন, পানির ¯স্রোতের তোড়ে গুদামের গেইট খোলা যাচ্ছে না। প্রায় আড়াই কোটি টাকার খাদ্য মজুদ আছে এই চারটি গুদামে। কিছু নষ্ট হতে পারে। বড়হাট এলাকার বাসিন্দা পৃথ্বীরাজ দত্ত পরিবারের সদস্য দুজন নিয়ে পানি ভেঙ্গে শহরের দিকে আসছিলেন। বাঁধের যেখানটায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে তার কিছু দুরে পৃথ্বীরাজের বাসা। তিনি জানান, তার বাসায় এখন বুক পানি। মালামাল কিছু সরানো যায়নি। খাট, পালং, ফ্রিজ, টিভি পানিতে ভাসছে। পশ্চিম বড়হাটের মো: সুরেশ আলী (৫৫) জানান, বাসায় পানি থাকায় পরিবারের সদস্যরা বাসার ৪ তলার ছাদে রাত থেকে আছে। বের হয়েছেন কিছু খাবার সংগ্রহ করার জন্য। জানান, বাড়ইকোনা এলাকার বারিন্দ্র বাবুর বাসার পাশে প্রতিরক্ষা বাঁধে প্রথম একটি ছিদ্র দিয়ে পানি আসছিল রাত সাড়ে ১২ টার দিকে। পরে সেখানে বস্তা ফেলা হয়। এর কিছুক্ষণ পরই ভাঙ্গন শুরু হয়। বড়হাট এলাকার উর্মি রাণী দাশ (৪৫) কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস বুকের সাথে আটকিয়ে পানির মধ্যে দিয়ে ভিজে আসছিলেন কুশুমবাগ পেট্রোল পাম্পের সামনে দিয়ে। জিজ্ঞেস করতেই হাউ মাউ করে কান্না শুরু করে দেন। জানান, বাসার সব জিনিস পানিতে ভিজে গেছে। বাসায় এখন কোমর পানি। সব ফেলে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য যাচ্ছেন। কুশুমবাগে অবস্থিত পেট্রলপাম্পে পানি উঠে যাওয়ায় রিজারভার থেকে লরিতে করে পেট্রোল সরাতে দেখা গেছে। আজ ভোরে গিয়ে দেখা যায় কুশুমবাগ শপিং সিটির সামনে রাস্তার পাশের নিচু জায়গায় কিছু বস্তা ফেলে বাঁধ দেয়া হয়েছে। শহরের পূর্ব-দিকে যাতে পানি প্রবেশ করতে না পারে। কিছুক্ষণ পর একদল তরুণ এসেই এই বাঁধ তুলে দিলেন। মুহূর্তের মধ্যে পানি চলে আসে পূর্বদিকে পশ্চিম বাজার পর্যন্ত। কয়েকজন পুলিশ তাদের বাঁধা দিতে চাইলে তারা মারমুখী হয়ে উঠে এবং বলতে থাকে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো আর অন্যরা ভাল থাকবে তা হবে না।
এদিকে, রাজনগর উপজেলার মনুনদীর বিভিন্ন ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা বন্যা-কবলিত হয়ে পড়ছে। মৌলভীবাজার কুলাউড়া সড়কে এখনো পানি। মানুষ পায়ে হেটে পার হতে ভয় পাচ্ছে । সড়ক উপচে প্রবল স্রোতে পানি বের হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী (সকাল সাড়ে ন’টা) মানবজমিনকে বলেন সব চেষ্টা করেও ভাঙ্গন ঠেকানো গেল না। বাড়ইকোনার পয়েন্টটি পূর্বে চিহ্নিত করা যায়নি। সর্বাঙ্গে ব্যথা ঔষধ দিব কোথা এমন অবস্থা হয়েছে। জানান এটি চিহ্নিত হওয়ার সাথে সাথে বস্তা নিয়ে যাওয়া হয়। কিছু ফেলাও হয়। এই মধ্যেই রাত সাড়ে ১২টা বা ১ টার দিকে ভেঙ্গে যায় প্রায় ৪০ ফুটের মতো জায়গা। তিনি এও জানান নদীর পানি কিছু কমছে। মনু নদীর পানি চাদনীঘাট পয়েন্টে এখন ১৫৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, মনু স্টেশনে ৪০ সেন্টিমিটার উপর এবং কুশিয়ারা শেরপুরে ৩৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং ধলাই ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status