শেষের পাতা

শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের ছেলের মরদেহ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার

১৫ জুন ২০১৮, শুক্রবার, ১০:২০ পূর্বাহ্ন

রেল লাইনের ওপর থেকে শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের ছেলে ব্যাংক কর্মকর্তা সুমন জাহিদের (৫৭) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে তিনি রেলে কাটা পড়ে মারা গেছেন। তবে তার মৃত্যুকে রহস্যজনক উল্লেখ করে ঘটনার তদন্ত দাবি করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। নিহত সুমন জাহিদ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের একজন সাক্ষী।

শাহজাহানপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কুমার দাশ মানবজমিনকে বলেন, সকাল ১০টার দিকে ট্রেনে কাটা পড়ে লোক নিহত হওয়ার খবর পাই। ছুটে গিয়ে দেখি এক ব্যক্তির মাথা বিচ্ছিন্ন লাশ। রক্তাক্ত রেললাইনে থেঁতলে আছে মাংস ও চামড়া। আমরা যাওয়ার আগেই লাইনম্যানরা লাশ সরিয়ে পাশে রাখে। এরপর ঢাকা রেলওয়ে থানা পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়ে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে কুমার দাশ আরো বলেন, তিনি নাকি প্রায়ই সেখান দিয়ে হাঁটাহাঁটি করতেন। বৃহস্পতিবার সকালেও হাঁটছিলেন। রেললাইন পার হতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে যান। এরপরই ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া একটি ট্রেনের চাকা তার ঘাড়ের উপর দিয়ে চলে যায়। তাতেই তার দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

১৯৬১ সালে ফেনীতে জন্মগ্রহণ করেন সুমন জাহিদ। ১৯৭১ সালে জাহিদের মা সাংবাদিক সেলিনা পারভীনকে ধরে নিয়ে যায় আল বদর বাহিনী। পরে স্বাধীনতার দু’দিন পর ১৮ই ডিসেম্বর রায়েরবাজার বধ্যভূমি থেকে সেলিনা পারভীনের লাশ উদ্ধার করা হয়। রাজধানীর নিউ সার্কুলার রোডের বাড়ি থেকে মাকে যখন ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, ছোট্ট সুমন তখন বাড়ির ছাদে খেলছিলেন। এরপর মাতৃহারা সুমন জাহিদ অনেক সংগ্রাম করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি কিছুদিন সাংবাদিকতা করেন। পরে ব্যাংকে চাকরি করেন। চার মাস আগে ফারমার্স ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দেন। গতকাল তিনি যে স্থানে ট্রেনে কাটা পড়েন তা থেকে হেঁটে ৮ থেকে ১০ মিনিটের দূরত্বে তার বাসা। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সেখানে থাকতেন তিনি। প্রায় সময় ওই পথ দিয়ে হাঁটাচলা করতেন বলে জানা গেছে। ইতিপূর্বে সুমন জাহিদ যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। ট্রাইব্যুনালের বিচারে যুক্তরাজ্যে পলাতক চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক আশরাফুজ্জামান উভয়কেই মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছিল।
ঢাকা রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিন ফারুক মজুমদার মানবজমিনকে বলেন, স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে সকাল সাড়ে ৯টায় রেলওয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তার দ্বিখণ্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়। হত্যা না দুর্ঘটনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন রেললাইন পার হওয়ার সময় তিনি হোঁচট খেয়ে পড়ে যান। এ সময় কমলাপুর থেকে উত্তরবঙ্গগামী একটি ট্রেনে তিনি কাটা পড়েন। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
ঢাকা জেলা রেলওয়ে পুলিশ সুপার আশরাফুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, এটি একটি দুর্ঘটনা। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার আগে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
নিহতের শ্যালক কাজী সারোয়ার জানান, শাহজাহানপুরে সুমন জাহিদের বাসা। স্ত্রী-দুই সন্তানকে নিয়ে সেখানে থাকতেন তিনি। যেখানে তার লাশ পাওয়া গিয়েছিল, বাসা থেকে হেঁটে সেখানে যেতে ৮ থেকে ১০ মিনিট লাগে।
এদিকে সুমন জাহিদের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সদস্যরা বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, এটি একটি নিছক দুর্ঘটনা, না পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড; সে বিষয়ে দ্রুত তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। এর আগে যুদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষী সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের ভাইয়ের লাশ এরকম সড়কের ধারে পাওয়া গিয়েছিল। সেটা হত্যাকাণ্ড ছিল বলে মনে করেন বুলবুল।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির বিবৃতিতে আরো বলা হয়, শৈশবে মাকে হারিয়ে সুমন অত্যন্ত দুঃখ-কষ্টের ভেতর নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছিলেন। সুমনের অকাল মৃত্যুতে তার স্ত্রী ও শিশু সন্তানদের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছে নির্মূল কমিটি।

নির্মূল কমিটির পক্ষে বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি শামসুল হুদা, সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, অধ্যাপক অজয় রায়, সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী, লেখক-সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, সাংবাদিক কামাল লোহানী, অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, অধ্যাপক অনুপম সেন, কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুন নবী, অধ্যাপক পান্না কায়সার, স্থপতি রবিউল হুসাইন, লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী প্রমুখ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status