এক্সক্লুসিভ

সিটি নির্বাচন

ঈদের ছুটিতে ফাঁকা হচ্ছে গাজীপুর, চিন্তিত প্রার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টর, গাজীপুর থেকে

১৫ জুন ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৪৮ পূর্বাহ্ন

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই নির্বাচনী মাঠ নিয়ে প্রার্থীদের হিসাব-নিকাশ বাড়ছে। ভোটারদের মন জয় করতে প্রার্থীরা যার যার সুবিধামতো প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, নিচ্ছেন নানা কৌশল। তবে পবিত্র ঈদুল ফিতরে গাজীপুরে কর্মরত বিভিন্ন পেশার লোকজন গ্রামের বাড়ি ঈদ করতে যাওয়া এখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রার্থীদের। ঈদে বাড়ি যাওয়া এসব ভোটার সঠিক সময়ে নির্বাচনী এলাকায় ফিরতে পারবেন কি না, এ নিয়ে চিন্তায় ভাঁজ পড়েছে তাদের। গাজীপুর সিটি এলাকায় এক লাখেরও বেশি ভোটার রয়েছেন, যারা শ্রমিক। ঈদের ছুটির পরই শুরু হবে নির্বাচনের ভোটযুদ্ধ। এই সময়ে শ্রমিক ভোটারদের বেশিরভাগই থাকবেন লম্বা ছুটিতে। তাই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা চাইছেন শ্রমিকরা যেন ২৬শে জুনের আগে কর্মস্থলে ফিরে আসেন। কেউ কেউ শ্রমিক ভোটারদের যথা সময়ে ফিরিয়ে আনতে নিয়েছেন বিশেষ উদ্যোগ। এদিকে বড় দুই রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থী প্রতিদিনের ন্যায় ইফতার মাহফিল ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছেন।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম নগরীর ৫০ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে ইফতার ও দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তিনি বলেন, আমি কাজে বিশ্বাসী। কথা আর প্রতিশ্রুতিতে রাজনীতির সময় শেষ। মানুষও এখন কাজ ছাড়া অন্য কিছু বুঝে না।
রমজান মাসে জাহাঙ্গীর আলম নগরীর ৫৭টি ওয়ার্ডেই ইফতার সম্পন্ন করেছেন। মহানগর আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ১০টি থানা আওয়ামী লীগ ২৭ দিনে শতাধিক ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেন। অন্তত ৩ লাখ মানুষ ইফতার করেছেন।
অপদিকে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার গতকাল নগরের ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের মিলগেট এলাকায় স্থানীয় বিএনপি নেতা হাজী দুলালের ব্যক্তিগত একটি ইফতার মাহফিলে যোগ দেন। এ সময় তিনি উপস্থিত মুসল্লিদের কাছে দোয়া ও ভোট প্রার্থনা করেন। এর আগে তিনি নিজ বাসায় আগত নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে গাজীপুরের পোশাক কারখানাগুলোর ছুটি হবে আগামী ১৫ই জুন। কোনো কারখানা ১০ দিন, কোনো কারখানা তার বেশি ছুটি ঘোষণা করছে। এছাড়া অনেক শ্রমিক ছুটি শেষ হলেও নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থলে ফিরে আসেন না। যার কারণে ভোটের দিন শ্রমিক ভোটারদের অনুপস্থিত থাকাটা স্বাভাবিক। তাই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা নিজ উদ্যোগে শ্রমিক ও কারখানা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছেন।
কীভাবে শ্রমিক ভোটারদের ভোটের আগে গাজীপুরে ফিরিয়ে আনা যায়- এই উপায়ের খোঁজে কাউন্সিলর প্রার্থীরা শ্রমিকদের সঙ্গে সমন্বয় করে শ্রমিকদের ভোটের আগে ফিরিয়ে আনতে বাস ভাড়া করে দিচ্ছেন। ওই বাস যথা সময়ে গন্তব্যে নিয়ে যাবে এবং ভোটের আগে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। অবশ্য শ্রমিকরা অন্য ঈদের সময়গুলোতেও নিজ খরচে বাসভাড়া করেই যাতায়াত করতেন। এবার তাদের খরচ লাগছে না। যাতায়াত খরচ দিচ্ছেন প্রার্থীরা।
গাজীপুর সিটি এলাকায় অন্তত দেড় সহস্রাধিক শিল্পকারখানা রয়েছে। এদের মধ্যে কর্মরত নানা শ্রেণির শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী। এদের মধ্যে কেউ জমি কিনে বাড়ি করেছেন আবার কেউ বাসাবাড়িতে ভাড়া বসবাস করে ভোটার হয়েছেন। কর্মরত এক লাখের বেশি শ্রমিক ভোটার- যাদের অধিকাংশই এবার ঈদে নাড়ির টানে বাড়ি যাচ্ছেন। তাদের কারণে ভোটে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। দীর্ঘ সময় ছুটি পেয়ে এসব শ্রমিক বাড়ি ফেরায় ভোটের মাঠে তাদের উপস্থিতি নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। বিশেষত শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে এ প্রভাব পড়তে পারে প্রকটভাবে। সংকট সমাধানে কিছু কিছু প্রার্থী নিয়েছেন বিশেষ উদ্যোগ। কেউ কেউ আবার ভোটারদের মন জয়ের জন্য নিজ খরচে আসা-যাওয়ার বাস ভাড়া করে দিয়েছেন। এরমধ্যে গাজীপুর শহরের শিববাড়ী থেকে চৌরাস্তা, চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী, চৌরাস্তা থেকে কোনাবাড়ী সড়কের দুপাশে থাকা কারখানার শ্রমিকদের বাড়ি যেতে প্রার্থীদের পক্ষ থেকে রিজার্ভ বাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে মহানগরের পাড়া-মহল্লার সড়কগুলোতেও প্রার্থীদের উদ্যোগে রিজার্ভ বাসের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কাউন্সিলর প্রার্থীরাই এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
টঙ্গী এলাকার শ্রমিক নেতা মাইনুদ্দিন হোসেন বলেন, তার সঙ্গে টঙ্গীর ৪৬, ৪৭ ও ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী যোগাযোগ করেছেন। টঙ্গী বিসিক ও মিরাশপাড়া এলাকার শ্রমিকদের যাতায়াতের জন্য বাস ভাড়া করে দিতে চান। তাদের ইচ্ছামতো বাস ভাড়া করে দেয়ার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
কোনাবাড়ী এলাকার কারখানা শ্রমিক আব্দুল মোমিন জানান, প্রতিবছর তিনি নিজে চারটি গাড়ি ভাড়া করেন উত্তরবঙ্গে যাওয়ার জন্য। তাদের বাসে থাকবে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শ্রমিকরা। এতে তার কিছু লভাংশও থাকে। এবার স্থানীয় একজন কাউন্সিলর শ্রমিকদের জন্য চারটি বাস ভাড়া করে দিচ্ছেন। এর জন্য কাউকে কোনো টাকা পরিশোধ করতে হবে না। তবে এ বিষয়ে একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কথা বলতে রাজি হননি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status