অনলাইন

ঈদে মেহেদী দেয়ার প্রচলন কিভাবে এসেছে ?

বিবিসি বাংলা

১৪ জুন ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৪:০৯ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশে উৎসবে মেহেদীর রঙে হাত সাজানো খুব জনপ্রিয় একটি রীতি। ধর্মীয় যেকোন উৎসব থেকে শুরু করে বিয়ে-জন্মদিন সহ নানা অনুষ্ঠানে মেহেদীর রঙে হাত না রাঙ্গালে অনেকের কাছেই উৎসবের পরিপূর্ণতা পায় না। মেহেদি গাছের গাঢ় সবুজ রঙের পাতা থেকে যে মিষ্টি গন্ধের টকটকে লাল নির্যাস বের হয়, সেটা সবার মন কেড়ে নেয়। মেহেদি পাতা বেটে, শুকিয়ে, গুড়া করে বা পেস্ট করে শরীরের বিভিন্ন স্থান রাঙানোর ইতিহাস বহু পুরনো। আর উৎসবে বিশেষ করে ঈদ হলে তো কথাই নেই। বিয়েতে বর কনের হাতে মেহেদি থাকা চাই ই চাই। মেহেদির দেয়ার কারণে কখনো কোন অ্যালার্জি বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার নজির না থাকায় যুগে যুগে এর জনপ্রিয়তা একবিন্দু কমেনি, বরং বেড়েছে।
নিশাত ইয়াসমিন তার একমাত্র ছোট মেয়েকে নিয়ে মেহেদির রঙে হাত সাজাতে এসেছেন রাজধানীর এক বিউটি পার্লারে। তিনি জানান মেহেদি না দিলে তার ঈদের আনন্দ পরিপূর্ণতা পায় না। "ঈদের সময় আমরা সবাই চাই সুন্দর হয়ে সাজতে। আর মেহেদি আমাদের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। এ কারণেই মেহেদিটা পরি। এতে ঈদের আনন্দটাও বেড়ে যায়।"
শরীরে এই মেহেদি দেয়ার ইতিহাস অনেক আগের। তবে ঠিক কবে কোথায় মেহেদির আবিষ্কার হয়েছিলো তার সঠিক কোন দিনক্ষণের ব্যাপারে কোন তথ্য মেলেনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক তৌহিদুল হক জানিয়েছেন, "লিখিত কোন দলিল না থাকলেও ইসলামের নবী হযরত মোহাম্মদ (স.) এর মেহেদি ব্যবহারের তথ্য মুসলমানদের এই মেহেদি ব্যবহারের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে।"

পরে ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘল সাম্রাজ্য এই মেহেদি দেয়ার প্রথাকে আরও প্রসারিত করে। তৌহিদুল হক বলেন, "মেহেদি ব্যবহারের ক্ষেত্রে হযরত মোহাম্মদ (স.) এর একটি উক্তি রয়েছে। এই বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করে এই ভারতীয় উপমহাদেশে এক সময় মেহেদির ব্যবহার শুধুমাত্র মুসলিম জনগোষ্ঠী বা মুসলিম সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে মুঘল সাম্রাজ্যের জনগণ এটাকে প্রসারিত করে।"

রাজধানীর বিভিন্ন বিউটি পার্লারগুলোতে রয়েছে মেহেদি দেয়ার জন্য বিশেষায়িত বিউটিশিয়ান। যারা শুধুমাত্র মেহেদি দেয়ার কাজ করেন। বিবিসি প্রতিবেদন কথা বলেছেন তাদের একজনের সঙ্গে। তিনি জানান, শুধু ঈদ না, সারা বছর জুড়ে নানা ধর্মের মানুষ আসে মেহেদি দিয়ে হাত রাঙাতে। এজন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ নিতে হয় তাদের।

"গ্রাহকরা সুন্দর সূক্ষ্ম ডিজাইন চায়। অনেকে মোবাইলে ডিজাইন ডাউনলোড করে আনে। হাত ছাড়াও পায়েও অনেকে ডিজাইন করেন। কেউ কেউ মেহেদি দিয়ে ট্যাটুও করেন। কারো পছন্দ এক লাইনের ডিজাইন। আবার অনেকে পুরো হাত ভরে মেহেদি দেন। একেকজনের পছন্দ একেক রকম। আমরা ৫ ঘণ্টা ৬ ঘণ্টা বসে টানা মেহেদি দিতেই থাকি। ঈদে তো মেহেদি দেয়া হয়ই। তবে বিয়েতে এটা থাকতেই হয়। বউয়ের হাত মেহেদী রাঙ্গানো না হলে বিয়েটা পূর্ণ হয়না। বউ বউ লাগেনা।"
বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে মেহেদির ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এবং আফ্রিকায় যেসব দেশের ভাষা অ্যারাবিক সেসব দেশেও ব্যবহৃত হয় এই মেহেদি।
অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলছিলেন। বিশ্বের নানা দেশের মেহেদি ব্যবহার হচ্ছে কিন্তু এর কারণ বা উদ্দেশ্য স্থানভেদে ভিন্ন। তিনি জানান,

"শুরুতে মেহেদির প্রচলন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের জায়গা থেকে শুরু হলেও পরে এই প্রথাটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয় পেয়েছে। তবে এখন মানুষ এখন এটাকে সার্বজনীন রূপে গ্রহণ করেছে। তবে একেক দেশে একের ধরণের কারণ আর উদ্দেশ্যে মেহেদি ব্যবহার হয়।"
ইতিহাসের বইগুলোয়, মিসরের ফারাও সাম্রাজ্যে মমির হাতে ও পায়ের নখে মেহেদির মতো রঙ দেখা যায়। তবে সেটা মেহেদি দিয়ে রাঙানো কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আবার বর্তমান যুগে বিভিন্ন ধর্মের বিয়ের উৎসবে মেহেদি সন্ধ্যা নামে আলাদা একটি দিনের আয়োজন করা হয় যেখানে বর কনে থেকে শুরু করে পুরো পরিবার আনন্দে মেতে ওঠে শুধুমাত্র মেহেদির রঙে নিজেকে রাঙিয়ে তুলতে। আবার অনেকে চামড়ার বিভিন্ন রোগের জন্য হার্বাল ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করছে এই মেহেদি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status