প্রথম পাতা

ঐতিহাসিক হ্যান্ডশেক

মানবজমিন ডেস্ক

১৩ জুন ২০১৮, বুধবার, ১০:৪১ পূর্বাহ্ন

অসম্ভবকে সম্ভব করলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। রণ প্রস্তুতি থেকে আলোচনার টেবিলে এসে মুখোমুখি বসলেন তারা। হাতে হাত রাখলেন। তারপর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেন কোরিয়া উপদ্বীপ অঞ্চলকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত রাখবেন। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের ইতিহাসে সৃষ্টি হলো এক নতুন অধ্যায়। প্রচণ্ড বৈরী এই দুই নেতার সিঙ্গাপুর সামিটের দিকে গতকাল তাকিয়ে ছিল বাকি বিশ্ব। সেন্তোসা দ্বীপের বৈঠকে কোরিয়া অঞ্চলকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেন কিম জং উন। দু’নেতা স্বাক্ষর করলেন একটি ‘কমপ্রিহেনসিভ’ ডকুমেন্ট। তাতে রয়েছে চারটি মূল পয়েন্ট। তাহলো- ১. যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে নতুন একটি সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে দুই দেশ। দু’দেশের জনগণের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্যই তা করার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন তারা। ২. কোরিয়া উপদ্বীপ অঞ্চলে একটি টেকসই ও শান্তিপূর্ণ অবস্থা তৈরিতে যৌথভাবে ভূমিকা রাখবে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়া। ৩. ২০১৮ সালের ২৭শে এপ্রিল পানমুনজোম ঘোষণা নিশ্চিতকরণ। এর অধীনে উত্তর কোরিয়া পুরোপুরি পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ৪. অবশিষ্ট যুদ্ধবন্দিদের উদ্ধারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়া। এ ছাড়া উত্তর কোরিয়ার যে নেতাকে কয়েকদিন আগেও ট্রাম্প ‘লিটল রকেটম্যান’ বলে উপহাস করেছিলেন, তার প্রশংসায় তিনি পঞ্চমুখ হয়েছেন। তাকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানানোর কথা 
বলেছেন তিনি। তবে যারা কিম জংয়ের সঙ্গে তার এ বৈঠককে নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন তাদের জবাব দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, কিমের সঙ্গে আলোচনায় তিনি কিছুই ত্যাগ করেন নি। তার ভাষায়, আমি ২৫ ঘণ্টা ঘুমাই নি। তবু আমি ভেবেছি এই বৈঠকটাই ছিল যথার্থ। ১২ই জুনের ওই বৈঠককে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়া উভয়ের জন্যই শুভ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, যারা ডনাল্ড ট্রাম্পকে পছন্দ করেন না শুধু তারাই বলবেন ট্রাম্প এই বৈঠকে কিছুই অর্জন করতে পারেন নি। এ সময় তিনি কিম জং উনের পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি, তিনজন মার্কিন বন্দিকে ফেরত পাওয়া সহ বেশকিছু প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। পরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার জন্য তিনি উত্তর কোরিয়াকে চাপ দেবেন। তবে স্বীকার করে নেন এ কাজটি সম্পন্ন করতে বেশ লম্বা সময় লাগতে পারে। বিজ্ঞানসম্মতভাবে এ কাজটি শেষ করতে অবশ্যই একটি সময়ের প্রয়োজন হবে। কিন্তু যখনই এ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে তখন ধরে নেয়া যাবে যে কাজটি শেষ হচ্ছে। পারমাণবিক অস্ত্রমুক্তকরণ কাজ শিগগিরই শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এরপর যখন তিনি নিশ্চিত হবেন পারমাণবিক বিষয় আর কোনো ফ্যাক্টর নয় তখনই উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করা হতে পারে।

ওদিকে ট্রাম্প নিজেই জানিয়েছেন তিনি কিম জং উনকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং তা গ্রহণ করেছেন কিম। তবে সেই সফর হবে একটি যথার্থ সময়ে। পাশাপাশি তিনি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জংয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার নেতার ওপর বাস্তবেই তিনি আস্থা রাখেন। আপনি কি কিমের ওপর আস্থা রাখতে পারেন? সিএনএনের সাংবাদিক জিম অ্যাকস্টার এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন- আমি আস্থা রাখি। তাছাড়া তারা দু’জনে যে ডকুমেন্টে স্বাক্ষর করেছেন কিম তা মেনে চলবেন বলে আস্থা রাখেন ট্রাম্প। এ সময় কিমকে তিনি একজন অত্যন্ত মেধাবী ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। যুবক বয়সে দেশকে দক্ষ হাতে পরিচালনা করছেন কিম এ জন্যও তার প্রশংসা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কিম জংয়ের ন্যক্কারজনক কৌশলগুলো নিয়ে মন্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি এমন মন্তব্য করেন। ঐতিহাসিক ওই বৈঠকের পরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তিনি আশা প্রকাশ করেন ৭০ বছরের বেশি সময় আগে শুরু হওয়া কোরিয়া যুদ্ধ চূড়ান্তভাবে ইতি ঘটবে। তার ভাষায়, চরম ওই রক্তাক্ত যুদ্ধ কোরিয়া অঞ্চলকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। এতে নিহত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। এর মধ্যে রয়েছেন কয়েক লাখ সাহসী মার্কিনি। অতীত দিয়ে ভবিষ্যৎকে সংজ্ঞায়িত করা যায় না। গতকালের যুদ্ধ আগামীকালের যুদ্ধ হতে পারে না। বার বার ইতিহাসে প্রমাণ মিলেছে যে, প্রতিকূলতা হয়ে ওঠে বন্ধুর মতো। ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা বন্ধ করবে। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি এমন কথা বলেন। এমন সামরিক মহড়াকে উত্তর কোরিয়া দেখে থাকে উস্কানি হিসেবে। এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের প্রত্যাহার করে নেয়ার কথাও ঘোষণা করেন ট্রাম্প।

অবশেষে গুডবাই: আলোচনা শেষে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন একে অন্যকে গুডবাই জানান। ট্রাম্প যখন মঞ্চে দাঁড়ানো ঠিক তখন মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায় কিম জং উনকে। এর মধ্য দিয়ে দৃশ্যত দুই দেশের মধ্যে সিঙ্গাপুরের বহুল প্রতীক্ষিত সামিটের শেষ হয়। গতকাল স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় এয়ারফোর্স ওয়ানে করে সিঙ্গাপুর থেকে উড়াল দেয়ার কথা ট্রাম্পের। তার সঙ্গে আলোচনা শেষে সিঙ্গাপুরের সেন্তোসা দ্বীপ ত্যাগ করে কিম জং উনকে বহনকারী গাড়িবহর। এদিন দু’নেতা শীর্ষ পর্যায়ের উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। সব মিলিয়ে এ আলোচনা হয়েছে প্রায় ৫ ঘণ্টার মতো। এ খবর দিয়েছে অনলাইন সিএনএন। ডকুমেন্টে স্বাক্ষরের পর পরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি কিম জং উনকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানাবেন। আরো বলেছেন, কিম জং উনের সঙ্গে তিনি একটি অত্যন্ত ‘স্পেশাল বন্ড’ বা বিশেষ সম্পর্ক তৈরি করেছেন। তাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনার সঙ্গে এখানে উপস্থিত হতে পারা সম্মানের। ডকুমেন্টে স্বাক্ষর করার পর তারা দু’জনেই যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার পতাকার সামনে দাঁড়ান। এ দিনে শেষবারের মতো আবার তারা করমর্দন করেন। এ সময় সমবেত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ট্রাম্প বলেন, তিনি (কিমের) চমৎকার একজন সমঝোতাকারী। তার দেশের মানুষের পক্ষে এই সমঝোতা। সাংবাদিকরা এ সময় তার কাছে জানতে চান উত্তর কোরিয়ার নেতার কাছ থেকে তিনি কি শিক্ষা পেলেন? জবাবে ট্রাম্প বলেন, আমি শিখেছি যে, তিনি একজন অত্যন্ত মেধাবী মানুষ। আমি আরো শিখেছি, তিনি নিজের দেশের মানুষকে খুবই ভালোবাসেন। ট্রাম্প আবার আশস্ত করেন তারা আবারও সাক্ষাতে মিলিত হবেন। উত্তর কোরিয়া খুব দ্রুততার সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্তকরণ প্রক্রিয়া অবলম্বন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। এ ইস্যুতে কি কিম রাজি হয়েছেন? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, আমরা এ প্রক্রিয়া খুব, খুব দ্রুততার সঙ্গে শুরু করছি।

ঐতিহাসিক করমর্দন: সব শঙ্কা আর অনিশ্চয়তাকে উড়িয়ে দিয়ে অবশেষে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে বসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় সিঙ্গাপুরের সেন্টোসা দ্বীপে বৈঠক শুরু করেন দুই নেতা। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের করমর্দন প্রত্যক্ষ করে পুরো বিশ্ব। এ খবর দিয়েছে বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ান। খবরে বলা হয়, বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার নেতার সঙ্গে তার বোন কিম ইয়ো জং উপস্থিত ছিলেন। আর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও, হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ জন কেলি, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ও হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব সারাহ স্যান্ডার্স অংশ নিয়েছেন। বৈঠকের শুরুতেই হাত মেলান কিম ও ট্রাম্প। ১২ সেকেন্ড পরস্পরের হাত ধরে রেখে বিশ্বকে নতুন যুগের সূচনার ইঙ্গিত দেন তারা। বৈঠক কক্ষে প্রথমে প্রবেশ করেন কিম জং। তিনি সেখানে ট্রাম্পের জন্য অপেক্ষা করেন। পরে ট্রাম্প সেখানে প্রবেশ করলে তাকে স্বাগত জানান। উষ্ণ অভিবাদন জানান একে অপরকে। পরে একান্তে কথা বলেন দুই নেতা। বৈঠক শুরুর আগে ট্রাম্প বলেন, এটা খুবই ভালো বৈঠক হবে। আর কিম বলেন, এ পরিস্থিতি তৈরি সহজ ছিল না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status