বাংলারজমিন
ঈদের জামা-কাপড় আমাগো লইগ্যা না
তোফাজ্জেল হোসেন, বাউফল (পটুয়াখালী) থেকে
১৩ জুন ২০১৮, বুধবার, ৯:৫৫ পূর্বাহ্ন
ঈদের জামা-কাপড় আমাগো লইগ্যা না। য্যাগো তরে (ভুখণ্ডে) ঘর আছে, হ্যারা ঈদ করে। আমরাতো নদীতে মাছ ধরি। ঈদ উপলক্ষে সন্তানের নতুন জামা-কাপড় কেনার দাবি মেটাতে না পেরে এভাবেই কান্নাজড়িতকণ্ঠে কথাগুলো বললেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের বগী খাল এলাকার মান্তা পরিবারে তিন সন্তানের জননী হালিমা বেগম। হালিমার স্বামীর নাম আ. রশিদ। নৌকায় বসবাস। পেশায় জেলে। মান্তা জনগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস মোকাবিলা করে বেঁচে আছেন ভাগ্যের জোরে। শুধু পেট বাচানোর যুদ্ধে জাল, নৌকা, বৈঠা নিয়ে নদীতে লড়াই করছেন । সরকার ঈদের আগে দুস্থ পরিবারদের ভিজিএফ এর চাল দেয়। তা কী করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,’চেয়ারম্যান, মেম্বারা আমাগোরে চাউল দেয় না। কারণ, আমরা ভোটার না। চাউল পাইতে অইলে ভোটার অওন লাগে। ঘর থাহন লাগে। খানা থাহন লাগে। আমরাতো পানিতে ভাসি।’ অভাবে তাড়নায় মান্তা পরিবারের সন্তানদের মুখে কোন ঈদে তুলে দিতে পারেনি সেমাই, পায়েশ বা ফিরনি। তাই প্রতিবারের মত এবারের ঈদেও মান্তা পরিবারে নেই ঈদ আনন্দ। মান্তা পল্লীর অধিকাংশ পরিবারের এ যেন এখন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ওই পল্লীর অহিদ জোম্মাদারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমাগো আবার ঈদ। প্যাডে ভাত নাই, চাউলের বস্তা দিয়া যান। এক সন্তানের জননী ডালিয়া বেগম বলেন, আমার মাইয়াডারে গতবারে কোন জামা কাপড় কিন্যা দিতে পারি নাই। ঈদের আগের দিন এক বেডায় (তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামন) আইয়া একডা জামা আর কিছু চিনি সেমাই ও দুধ দিয়া গেছিল। হেইয়া দিয়া জীবনে প্রথমবারের মত ঈদ কোরছিলাম। এইবারতো হেই বেডারে দেহি না। ঈদের দিন কোন মিষ্টি মুখ করবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আল্লাহ তওফিক দিলে করমু। হালিমার শিশু সন্তান ফাতিমাকে এবার ঈদে সেমাই খাবে নাকি পায়েশ খাবে জিজ্ঞাসা করা হলে ফাতিমা বলে সেমাই খাব। বাবা কিনে দিবে কিনা এমন প্রশ্ন করলে ফাতিমা বলে, না। তাহলে কে কিনে দিবে? উত্তরে ফাতিমা প্রতিবেদককে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলে তুমি কিন্না দেবা। উপজেলার নুরাইনপুর খাল, কালাইয়া খাল, হেগলা খাল, তালতলি খাল এলাকায় বসবাস করে মান্তা পারিবার। সে সব এলাকায় গিয়েও দেখা গেছে একই চিত্র। কোন নৈকায় ঈদের প্রস্তুতি নেই। দরিদ্রতার কারণে ওই সব এলাকার মান্তা পরিবারের সন্তানেরা ঈদের আনন্দে কখনই শামিল হতে পারে না। উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা পিযুষ কান্তি দে বলেন, আমি সদ্য এ উপজেলায় নির্বাহি কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেছি। তাই মান্তা পরিবার সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা নেই। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।