প্রথম পাতা

খুনিরা ক্ষমতায় ফিরলে দেশ রসাতলে যাবে

কূটনৈতিক রিপোর্টার

১২ জুন ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:১৪ পূর্বাহ্ন

কানাডায় প্রবাসীদের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন  স্বাধীনতাবিরোধী ও খুনিদের মদতদাতারা ক্ষমতায় ফিরলে বাংলাদেশ ‘রসাতলে’ যাবে। টরেন্টোর ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্যে দেশের উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার গুরুত্বের বিষয়টিও প্রবাসীদের কাছে তুলে ধরেন তিনি। কানাডার কুইবেকে জি-সেভেন আউটরিচ সম্মেলনে যোগ দেয়ার পর রোববার টরেন্টোয় যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে মেট্রো কনভেনশন সেন্টারে কানাডা আওয়ামী লীগের দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি যোগ দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে উন্নয়ন হয় না। ওই স্বাধীনতাবিরোধী, ওই খুনিদের মদতদানকারী ক্ষমতায় আসলে আবার দেশ রসাতলে যাবে।” আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, “দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে বলেই জি-সেভেন আউটরিচ সম্মেলনে বাংলাদেশকে দাওয়াত করেছে।” এই উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগের আবারো ক্ষমতায় থাকার গুরুত্ব প্রবাসীদের কাছে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন- বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারাটা আজকে শুরু হয়েছে। সর্বক্ষেত্রে যে উন্নয়ন হচ্ছে, গ্রাম পর্যন্ত যে উন্নয়ন হচ্ছে, এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কথাও প্রবাসীদের সামনে তুলে ধরে তিনি বলেন- অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছি। আন্দোলন-সংগ্রাম করে নির্বাচনের সুষ্ঠু ধারা প্রতিষ্ঠিত করেছি। এই বছরের শেষে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আগামী নির্বাচন যেন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি যেন অব্যাহত থাকে, সবাইকে সে বিষয়টা দেখতে হবে। ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ প্রায় স্থানীয় সরকার পর্যায়ে প্রায় ছয় হাজার নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, বিভিন্ন নির্বাচনে তাদের (বিএনপি) প্রার্থীরা জয়ী হয়েছে। আমরা তো জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে যাইনি। খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়া যে সরকারের নয়, আদালতের বিষয়, তা প্রবাসীদের বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অপরাধীদের একদিন না একদিন সাজা পেতে হয়। আর এতিমের টাকা মেরে খাওয়া আল্লাহও পছন্দ করেন না।

আমি তো গ্রেপ্তার করিনি। আদালত সাজা দিয়েছে। বিএনপির এত বড় বড় আইনজীবী, তারা তো প্রমাণ করতে পারেনি যে, খালেদা জিয়া নির্দোষ। ২০১৫ সালের প্রথম দিকে বিএনপির লাগাতার কর্মসূচিতে নাশকতায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি যদি রাজনৈতিক ভাবে গ্রেপ্তার করতাম, তবে যখন সন্ত্রাস করেছে, মানুষ খুন করেছে, তখনই গ্রেপ্তার করতে পারতাম। খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমানের মৃত্যুর পর সমবেদনা জানাতে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় ঢুকতে বাধা পাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি চাইলে ওই দিন বাইরে থেকে আরো দুটো তালা মেরে পুলিশ পাহারা বসিয়ে আসতে পারতাম।” কানাডা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ মাহমুদ মিয়ার সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফও বক্তব্য রাখেন।
নূর চৌধুরীকে ফেরত আনতে কানাডার আদালতে লড়বে সরকার : এদিকে সংবর্ধনা সভায় দেয়া বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীকে ফেরত আনতে তার সরকার কানাডার আদালতে লড়বে। এ বিষয়ে কানাডা প্রবাসী সকল বাংলাদেশির সাহায্য ও সহযোগিতা প্রত্যাশাও করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতাকে সরাসরি গুলি করে হত্যাকারী নূর চৌধুরী বর্তমানে গোপনে কানাডায় বসবাস করছে। আমরা দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিদের শাস্তি কার্যকর করতে চাই। কেননা, তারা বাংলাদেশের জন্য অভিশাপ। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর পলাতক অন্য খুনিদেরও দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

যাদের মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং রশিদ ও ডালিম পাকিস্তানে বসবাস করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করায় এবং যুদ্ধাপরাধী-স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ হওয়ায় বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হতে শুরু করেছে। মেট্রো কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত এই সংবর্ধনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেত্রী হাসিনা আক্তার জানু, অন্টারিও প্রদেশ শাখা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সালাম, ইরতাহাদ জুবেরী সেলিম, কানাডা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ মাহমুদ মিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান প্রিন্স অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন।

নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত পাঠাতে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত: ওদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার অন্যতম সাজাপ্রাপ্ত পলাতক খুনি নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য কানাডা সরকারের কাছে তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে রোববার অনুষ্ঠিত বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীকে দ্রুততার সঙ্গে দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে প্রধানমন্ত্রী তার প্রতি অনুরোধ জানান বলে প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান এবং পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক কানাডার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন লা পেতিত ফ্রন্টেন্সে অনুষ্ঠিত দু’প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status