শেষের পাতা

সিলেটে গৌছ ও মোশারফ ফের ‘ওলটপালট’

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

১২ জুন ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:০৫ পূর্বাহ্ন

ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল কাস্টঘরের মাদকহাটের টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে। একটি সমঝোতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এ নিয়ে বহু বিতর্ক হয়েছে সিলেটে। এই ঘটনায় তোপের মুখে পড়েছিলেন ওসি গৌছুল হোসেন। আড়ালে ঘটনাটি ছিল ভিন্ন। কেউ জেনেছেন, কেউ জানেননি। তবে সিলেট পুলিশের ভেতরে এ নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল। শেষে ‘বলির পাঁঠা’ হলেন ওসি গৌছুল হোসেন। তাকে সরানো হলো সিলেট কোতোয়ালি থানা থেকে । বদলি করা হলো পূর্বের কর্মস্থল সিলেটের এয়ারপোর্ট থানায়। আর এয়ারপোর্ট থানা থেকে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় নিয়ে আসা হলো ওসি মোশারফ হোসেনকে। আপাতত পরিস্থিতি শান্ত। এই শান্ত পরিস্থিতিতেও ক্ষোভ কমে গেছে অনেকটা। দুই ওসি নিজের সাবেক দুই থানায় রোববারই যোগ দিয়েছেন। সিলেটের কোতোয়ালি থানাতে প্রায় আড়াই বছর আগ পর্যন্ত ওসি তদন্তের দায়িত্ব পালন করেছেন মোশারফ হোসেন। দীর্ঘ দিন তিনি থানায় দায়িত্ব পালনের পর ওসি অপারেশন হয়ে যোগ দেন সিলেটের বিমানবন্দর থানায়। তখন কোতোয়ালি থানাতে কিছুটা বিতর্কিত হয়ে পড়েছিলেন ওসি মোশারফ হোসেন। তার কর্মকাণ্ড নিয়ে থানার ভেতরে পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। আর ওদিকে থানায় থাকার মেয়াদও শেষ হয়েছিল।

এ কারণে ওসি মোশারফ হোসেনকে বদলি করে নেয়া হয় বিমানবন্দর থানায়। ওই সময় সিনিয়র অফিসার ওসি গৌছুল হোসেনকে বদলি করে বিমানবন্দর থেকে নিয়ে আসা হয় সিলেটের কোতোয়ালি থানায়। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে সিলেট কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভেতরে চেইন অব কমান্ড নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। এসি ও কয়েকজন এসআই ওসিকে পাশ কাটিয়ে অনেক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করেছেন যেখানে সব দোষ এসে পড়েছিল ওসি গৌছুল হোসেনের ঘাড়ে। এমনকি মিডিয়াও প্রতিরক্ষা হয়ে দাঁড়ায় ওসি গৌছের। বন্দরবাজার, লামাবাজারসহ কয়েকটি ফাঁড়ির পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্তরা ওসিকে পাশ কাটিয়ে মাদক ও জুয়ার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আঁতাত করে। নিয়মিতভাবে টাকা গ্রহণ করে। এসব ঘটনায় বিভিন্ন জুয়ার আস্তানায় নানা সময় পুলিশ গিয়ে হেনস্তা করেছে। ওসি ও কয়েকজন এসআইয়ের যৌথ মিশনের কারণে পুলিশের ভেতরে অস্তিরতা দেখা দেয়। সর্বশেষ কাস্টঘরের ঘটনার সব দোষ এসে পড়ে ওসি গৌছের কাধে। আর ওই ঘটনায় জড়ানোর চেষ্টা করা হয় সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে। শেষে অবশ্য কামরান এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিয়ে রেহাই পেয়েছেন। তবে ওসি গৌছুল হোসেন আর রক্ষা পাননি। বদলি হওয়ার আগেও তিনি ক্ষোভ সামলাতে পারেননি। সাংবাদিকদের প্রতিও তিনি বিরূপ মনোভাব দেখান। যার কারণে সিলেটের সাংবাদিকদের একটি অংশের মধ্যে তাকে নিয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে। রোববারই সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসির পদ ছেড়ে এয়ারপোর্ট থানায় যোগ দিয়েছেন ওসি গৌছুল হোসেন। যাওয়ার আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন- ‘আমাদের বদলি হচ্ছে রাজনৈতিক বদলি। সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে এক দফা রদবদল হচ্ছে।

এই রদবলে আমরাও বদলি হচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আমার যে দায়িত্ব সেটি আমি যেকোনো থানায় গেলেই পালন করবো। আমাদের কাছে সব থানায়ই সমান। কোনো বিশেষ থানা আমাদের পছন্দের নয়।’ এর আগেও এয়ারপোর্ট থানাসহ সিলেট মহানগর পুলিশে বিভিন্ন পদবিতে ছিলেন তিনি। সিলেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলয়ের অনেক নেতার সুনজর রয়েছে তার প্রতি। একইভাবে ওসি মোশারফও সুনজরের বাইরে নন। তিনি কোতোয়ালি থানা থেকে বদলি হয়ে গিয়েছিলেন এয়ারপোর্ট থানায়। ওসি গৌছ ফেরার পর আবার মোশারফকেই নিয়ে আসা হচ্ছে সেখানে। ঘুরে ফিরে হয় ওসি গৌছ, না হয় ওসি মোশারফ- এ দুজনই পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ থানার। সিলেট মহানগর পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) আব্দুল ওয়াহাব মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ওসি কোতোয়ালি ও ওসি এয়ারপোর্টকে বদলি করা নিয়মিত বদলি প্রক্রিয়ার অংশ। অন্য কোনো বিবেচনায় তাদের বদলি করা হয়নি। এটা পুলিশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলেও জানান তিনি। এদিকে সিলেটের বিভিন্ন থানার ওসিরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এসিদের ওপর। কারণ, ওসির ওপর খবরদারি করতে গিয়ে বিভিন্ন থানার এসিরা সরাসরি সাব-ইন্সপেক্টরদের নিয়ে টিমওয়ার্ক গড়ে তোলেন। এতে করে সাব-ইন্সপেক্টররা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়লে ওসিদের ওপর দায় গিয়ে পড়ে। যার খেসারত সব জায়গাতেই দিতে হয় ওসিদের। এমনকি তারা বদলিও হন। এতে করে পুলিশের টিম ওয়ার্কেও ক্ষতি হয়। অপরাধী ও মাদকসেবীরা এতে লাভবান হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status