দেশ বিদেশ
১৫ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকার সম্পূরক বাজেট পাস
সংসদ রিপোর্টার
১২ জুন ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৫৯ পূর্বাহ্ন
জাতীয় সংসদে বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট কণ্ঠভোটে পাস হয়েছে। এ বাজেট পাসের মধ্য দিয়ে সংসদ ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে অতিরিক্ত ১৫ হাজার ৩৩৯ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করার অনুমতি দিয়েছে। এই অর্থ অনুমোদনের জন্য ২৪টি মঞ্জুরী দাবি উত্থাপন করা হয়। এসব দাবির মধ্যে ৪টি দাবিতে আনা ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়। এগুলো হচ্ছে- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। বাকি মঞ্জুরী দাবিগুলো সরাসরি ভোটে প্রদান করা হয়। অবশ্য সব ছাঁটাই প্রস্তাবগুলোই কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। এরপর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মহিতের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) বিল ২০১৮ উত্থাপন করলে কণ্ঠভোটে পাস হয়।
গত অর্থবছর শেষে ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বাজেটের চেয়ে বেশি অর্থ বরাদ্দ চেয়েছে। সাংবিধানিক নিয়ম অনুসারে যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বাজেটের বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করতে পারেনি তাদের হ্রাসকৃত বরাদ্দের জন্য সংসদের অনুমতির কোনো প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ অতিরিক্ত ব্যয় করেছে শুধু তাদের বরাদ্দই সংসদের অনুমতির প্রয়োজন হয়। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল সংসদে এই সম্পূরক বাজেট পাস হয়। সম্পূরক বাজেটের ওপর মোট ২৪টি দাবির বিপরীতে মোট ১৭৩টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনা হয়। ব্যয় বরাদ্দের বিরোধিতা করে ছাঁটাই প্রস্তাব এনে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, সেলিম উদ্দিন, বেগম রওশন আরা মান্নান, স্বতন্ত্র এমপি রুস্তম আলী ফরাজী, জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম, নুরুল ইসলাম ওমর ও নূরুল ইসলাম মিলন। সম্পূরক বাজেটের আওতায় ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিপরীতে ১৫ হাজার ৩৩৯ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকার বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে সর্বাধিক ৩ হাজার ৯২৬ কোটি ১১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা বিদ্যুৎ বিভাগ খাতে বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়েছে। এর পরেই রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় খাত। এ খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তিন হাজার ৩৪৭ কোটি ৪১ লাখ ৬২ হাজার টাকা। সবচেয়ে কম ৪ কোটি এক লাখ ৮৭ হাজার টাকা বরাদ্দ অনুমোদন পেয়েছে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ। এছাড়া বেশি বরাদ্দ পাওয়া অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে রয়েছে-স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ খাতে এক হাজার ৮৬৮ কোটি ৬০ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগে এক হাজার ১৮২ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে জননিরাপত্তা বিভাগে এক হাজার ১০৯ কোটি ১১ লাখ এক হাজার টাকা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৬৫৯ কোটি ৯৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা,জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ৪৭১ কোটি ৯৬ লাখ ২১ হাজার টাকা, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ৩১৫ কোটি ৭৮ লাখ ৭২ হাজার টাকা, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ খাতে ৩১১ কোটি ৫১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় খাতে ১৯৫ কোটি ৪৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় খাতে ১৭৩ কোটি ৭৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ খাতে ১৬২ কোটি ৬১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। এদিকে সম্পূরক বাজেট পাসের আগে এ নিয়ে আলোচনা করেন সরকারি ও বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র এমপিরা। এর মধ্যে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের কড়া সমালোচনা করেন বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র এমপিরা। তারা বলেন, যখন বাজেট করা হয় তখন কোনো হিসাব করে করা হয়েছিল। কারা সে সময় বাজেট তৈরি করেছিলেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের বিরোধিতা: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ৪৭১ কোটি ৯৬ লাখ ২১ হাজার টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দের বিরোধিতা করেন বিরোধীদলীয় এমপিরা। তারা বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। যেটা বন্ধ করা যায়নি। অথচ প্রতি বছর এই মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত দেয়া হয়ে থাকে। এবার অতিরিক্ত বরাদ্দ মঞ্জুর না করার দাবি জানান তারা। বিরোধী দলের এমপি ফখরুল ইমাম বলেন, দেশে সুশাসনের ওপর নির্ভর করে দেশ এগিয়ে যায়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হলে দেশ এগিয়ে যাবে। জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক বলেন, সরকারের রূপকল্প বাস্তবায়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে দক্ষ জনবল প্রয়োজন। আর এজন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ মোটেও অযৌক্তিক নয়। তাই আপত্তি প্রত্যাহার করে সম্পূরক বরাদ্দের প্রস্তাব পাসের আহ্বান জানান তিনি।
স্থানীয় সরকার বিভাগের কাজ নিয়ে অসন্তোষ: স্থানীয় সরকার বিভাগে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া এক হাজার ৮৬৮ কোটি ৬০ লাখ ৯৫ হাজার টাকার বিরোধিতা করে এমপিরা বলেন, এ খাতে টাকা আরো বেশি বরাদ্দ দেয়া হোক। এ নিয়ে আপত্তি নেই। কিন্তু টাকা নিয়ে সুষম কাজ করা হয় না। সঠিকভাবে যেন সব কাজ করা হয় সে প্রত্যাশা করি। তারা বলেন, ৬৪ জেলার অভিভাবক বলতে গেলে এ মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর অধীনে রয়েছে রাজধানী ঢাকা শহর। কিন্তু জলাবদ্ধতা এখন এ শহরের অন্যতম সমস্যা। আশা করি তিনি এ সরকার বাকি সময় ক্ষমতায় থাকার মধ্যে ঢাকাকে জলযটমুক্ত করবেন। এমপিদের এসব অসন্তোষের জবাব দিতে গিয়ে মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, সুপেয় পানি নিশ্চিত করার জন্য সরকার কাজ করে চলেছে। এ কারণে পানির রাইনে নানা ধরনের কাজ করা হচ্ছে। আমি প্রত্যাশা করছি আগামী ২ বছরের মধ্যে ঢাকা শহরে আর কোনো ধরনের জলাবদ্ধতা থাকবে না। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের সক্ষমতা দিন দিন বাড়ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ নিয়ে আপত্তি: বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা বিদ্যুৎ বিভাগ খাতে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৯২৬ কোটি ১১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা বরাদ্দের বিরোধিতা করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র ৮ এমপি। তারা হলেন, বিরোধী দলের ফখরুল ইমাম, কাজী ফিরোজ রশীদ, বেগম রওশন আরা মান্নান, নুরুল ইসলাম মিলন, সেলিম উদ্দিন, মোহাম্মদ আব্দুর মুনিম চৌধুরী ও স্বতন্ত্র এমপি রুস্তম আলী ফরাজী। ছাঁটাই প্রস্তাবকারী এমপিরা বলেন, চলতি বছর ৩০ জুনের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার কথা। কিন্তু বাকি আছে আর মাত্র কয়েক দিন। সরকার এটা বাস্তবায়ন করতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। মন্ত্রী কয়েকটি প্রকল্প চলমান ও আরো কয়েকটি নতুন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেছেন। তবে এসব প্রকল্প সম্পর্কে আরো বিস্তারিত থাকলে ভালো হতো। জবাবে বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য খরচ হয় প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার। এবার কিছু টাকা পেয়েছি। আশা করি এ খাতে কিছু গতি সঞ্চার হবে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে আরো অন্তত কয়েক বছর লাগবে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, অনেকে বিদ্যুৎ বিভ্রাট আর লোডশেডিংয়ে অনেকে এক করে ফেলেন। ট্রান্সমিটারের সমস্যার কারণে অনেক সময় বিদ্যুৎ বিভ্র্যাট হয়ে থাকে। এটাকে অনেকে লোডশেডিং বলে থাকেন। দেশের জনগণ ও জনগণের চাহিদার প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ: স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ১৬২ কোটি ৬১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। এর বিপরীতে ছাঁটাই প্রস্তাব করেন বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র এমপিরা। তারা বলেন, এখন অনেকইে বিদেমে চিকিৎসা সেবা নিতে যাচ্ছেন। নিশ্চয় আমরা তাদের দেশে ধরে রাখার চেষ্টা করবো। এ সময় প্রাইভেট হাসপাতালের অথরিটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা। বলেন, কোন কিছু যাচাই-বাছাই না করেই এসব হাসপাতালের লাইসেন্স দেয়া হয়। এটা খবরদারি ও নজরদারির মধ্যে রাখা উচিত। জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, স্বাস্থ্যখাতে প্রতিবেশী অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে আছি আমরা। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যে সাফল্য পেয়েছি তা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কঠোর হয়েছি বলে অনেক অনিয়ম রুখতে পেরেছি। এক্ষেত্রে আমরা শতভাগ সফল হয়েছি। যে কোন নিয়োগ বদলি ও কেনাকাটার জন্য দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের মাধ্যমে এসব কাজ সম্পাদন করা হচ্ছে। এখানে কারও একার সিদ্ধান্তে কিছু করা হয় না। তিনি বলেন, খুব শিগগিরই ৫ থেকে ৬ হাজার ডাক্তার নেবো। আশা করি নির্বাচনের আগেই তাদের নিয়োগ দেয়া সম্ভব হবে। তখন আর গ্রামে-গঞ্জে ডাক্তার নিয়ে সমস্যা হবে না।
গত অর্থবছর শেষে ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বাজেটের চেয়ে বেশি অর্থ বরাদ্দ চেয়েছে। সাংবিধানিক নিয়ম অনুসারে যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বাজেটের বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করতে পারেনি তাদের হ্রাসকৃত বরাদ্দের জন্য সংসদের অনুমতির কোনো প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ অতিরিক্ত ব্যয় করেছে শুধু তাদের বরাদ্দই সংসদের অনুমতির প্রয়োজন হয়। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল সংসদে এই সম্পূরক বাজেট পাস হয়। সম্পূরক বাজেটের ওপর মোট ২৪টি দাবির বিপরীতে মোট ১৭৩টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনা হয়। ব্যয় বরাদ্দের বিরোধিতা করে ছাঁটাই প্রস্তাব এনে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, সেলিম উদ্দিন, বেগম রওশন আরা মান্নান, স্বতন্ত্র এমপি রুস্তম আলী ফরাজী, জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম, নুরুল ইসলাম ওমর ও নূরুল ইসলাম মিলন। সম্পূরক বাজেটের আওতায় ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিপরীতে ১৫ হাজার ৩৩৯ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকার বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে সর্বাধিক ৩ হাজার ৯২৬ কোটি ১১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা বিদ্যুৎ বিভাগ খাতে বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়েছে। এর পরেই রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় খাত। এ খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তিন হাজার ৩৪৭ কোটি ৪১ লাখ ৬২ হাজার টাকা। সবচেয়ে কম ৪ কোটি এক লাখ ৮৭ হাজার টাকা বরাদ্দ অনুমোদন পেয়েছে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ। এছাড়া বেশি বরাদ্দ পাওয়া অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে রয়েছে-স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ খাতে এক হাজার ৮৬৮ কোটি ৬০ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগে এক হাজার ১৮২ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে জননিরাপত্তা বিভাগে এক হাজার ১০৯ কোটি ১১ লাখ এক হাজার টাকা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৬৫৯ কোটি ৯৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা,জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ৪৭১ কোটি ৯৬ লাখ ২১ হাজার টাকা, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ৩১৫ কোটি ৭৮ লাখ ৭২ হাজার টাকা, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ খাতে ৩১১ কোটি ৫১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় খাতে ১৯৫ কোটি ৪৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় খাতে ১৭৩ কোটি ৭৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ খাতে ১৬২ কোটি ৬১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। এদিকে সম্পূরক বাজেট পাসের আগে এ নিয়ে আলোচনা করেন সরকারি ও বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র এমপিরা। এর মধ্যে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের কড়া সমালোচনা করেন বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র এমপিরা। তারা বলেন, যখন বাজেট করা হয় তখন কোনো হিসাব করে করা হয়েছিল। কারা সে সময় বাজেট তৈরি করেছিলেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের বিরোধিতা: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ৪৭১ কোটি ৯৬ লাখ ২১ হাজার টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দের বিরোধিতা করেন বিরোধীদলীয় এমপিরা। তারা বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। যেটা বন্ধ করা যায়নি। অথচ প্রতি বছর এই মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত দেয়া হয়ে থাকে। এবার অতিরিক্ত বরাদ্দ মঞ্জুর না করার দাবি জানান তারা। বিরোধী দলের এমপি ফখরুল ইমাম বলেন, দেশে সুশাসনের ওপর নির্ভর করে দেশ এগিয়ে যায়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হলে দেশ এগিয়ে যাবে। জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক বলেন, সরকারের রূপকল্প বাস্তবায়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে দক্ষ জনবল প্রয়োজন। আর এজন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ মোটেও অযৌক্তিক নয়। তাই আপত্তি প্রত্যাহার করে সম্পূরক বরাদ্দের প্রস্তাব পাসের আহ্বান জানান তিনি।
স্থানীয় সরকার বিভাগের কাজ নিয়ে অসন্তোষ: স্থানীয় সরকার বিভাগে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া এক হাজার ৮৬৮ কোটি ৬০ লাখ ৯৫ হাজার টাকার বিরোধিতা করে এমপিরা বলেন, এ খাতে টাকা আরো বেশি বরাদ্দ দেয়া হোক। এ নিয়ে আপত্তি নেই। কিন্তু টাকা নিয়ে সুষম কাজ করা হয় না। সঠিকভাবে যেন সব কাজ করা হয় সে প্রত্যাশা করি। তারা বলেন, ৬৪ জেলার অভিভাবক বলতে গেলে এ মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর অধীনে রয়েছে রাজধানী ঢাকা শহর। কিন্তু জলাবদ্ধতা এখন এ শহরের অন্যতম সমস্যা। আশা করি তিনি এ সরকার বাকি সময় ক্ষমতায় থাকার মধ্যে ঢাকাকে জলযটমুক্ত করবেন। এমপিদের এসব অসন্তোষের জবাব দিতে গিয়ে মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, সুপেয় পানি নিশ্চিত করার জন্য সরকার কাজ করে চলেছে। এ কারণে পানির রাইনে নানা ধরনের কাজ করা হচ্ছে। আমি প্রত্যাশা করছি আগামী ২ বছরের মধ্যে ঢাকা শহরে আর কোনো ধরনের জলাবদ্ধতা থাকবে না। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের সক্ষমতা দিন দিন বাড়ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ নিয়ে আপত্তি: বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা বিদ্যুৎ বিভাগ খাতে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৯২৬ কোটি ১১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা বরাদ্দের বিরোধিতা করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র ৮ এমপি। তারা হলেন, বিরোধী দলের ফখরুল ইমাম, কাজী ফিরোজ রশীদ, বেগম রওশন আরা মান্নান, নুরুল ইসলাম মিলন, সেলিম উদ্দিন, মোহাম্মদ আব্দুর মুনিম চৌধুরী ও স্বতন্ত্র এমপি রুস্তম আলী ফরাজী। ছাঁটাই প্রস্তাবকারী এমপিরা বলেন, চলতি বছর ৩০ জুনের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার কথা। কিন্তু বাকি আছে আর মাত্র কয়েক দিন। সরকার এটা বাস্তবায়ন করতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। মন্ত্রী কয়েকটি প্রকল্প চলমান ও আরো কয়েকটি নতুন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেছেন। তবে এসব প্রকল্প সম্পর্কে আরো বিস্তারিত থাকলে ভালো হতো। জবাবে বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য খরচ হয় প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার। এবার কিছু টাকা পেয়েছি। আশা করি এ খাতে কিছু গতি সঞ্চার হবে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে আরো অন্তত কয়েক বছর লাগবে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, অনেকে বিদ্যুৎ বিভ্রাট আর লোডশেডিংয়ে অনেকে এক করে ফেলেন। ট্রান্সমিটারের সমস্যার কারণে অনেক সময় বিদ্যুৎ বিভ্র্যাট হয়ে থাকে। এটাকে অনেকে লোডশেডিং বলে থাকেন। দেশের জনগণ ও জনগণের চাহিদার প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ: স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ১৬২ কোটি ৬১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। এর বিপরীতে ছাঁটাই প্রস্তাব করেন বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র এমপিরা। তারা বলেন, এখন অনেকইে বিদেমে চিকিৎসা সেবা নিতে যাচ্ছেন। নিশ্চয় আমরা তাদের দেশে ধরে রাখার চেষ্টা করবো। এ সময় প্রাইভেট হাসপাতালের অথরিটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা। বলেন, কোন কিছু যাচাই-বাছাই না করেই এসব হাসপাতালের লাইসেন্স দেয়া হয়। এটা খবরদারি ও নজরদারির মধ্যে রাখা উচিত। জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, স্বাস্থ্যখাতে প্রতিবেশী অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে আছি আমরা। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যে সাফল্য পেয়েছি তা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কঠোর হয়েছি বলে অনেক অনিয়ম রুখতে পেরেছি। এক্ষেত্রে আমরা শতভাগ সফল হয়েছি। যে কোন নিয়োগ বদলি ও কেনাকাটার জন্য দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের মাধ্যমে এসব কাজ সম্পাদন করা হচ্ছে। এখানে কারও একার সিদ্ধান্তে কিছু করা হয় না। তিনি বলেন, খুব শিগগিরই ৫ থেকে ৬ হাজার ডাক্তার নেবো। আশা করি নির্বাচনের আগেই তাদের নিয়োগ দেয়া সম্ভব হবে। তখন আর গ্রামে-গঞ্জে ডাক্তার নিয়ে সমস্যা হবে না।