দেশ বিদেশ

মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যানের প্রশ্ন

গৃহকর্মে কেন নারীদের বিদেশ পাঠাতে হবে?

স্টাফ রিপোর্টার

১২ জুন ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৫৬ পূর্বাহ্ন

 মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক প্রশ্ন রেখে বলেছেন, বাংলাদেশি নারীদের কেন গৃহকর্মী হিসেবে বিদেশে পাঠাতে হবে? যেখানে তারা নিরাপদ নয়? একইসঙ্গে তিনি বিদেশ ফেরত নির্যাতিত নারীদের পাশে রাষ্ট্রসহ সবাইকে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক এবং লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বিদেশ ফেরত নারীদের সহায়তা ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ২২ জন নারী কর্মীকে জনপ্রতি এক লাখ টাকার চেক ও দু’টি নতুন শাড়ি প্রদান করা হয়। এছাড়া ৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরি প্রদানের বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সরকারের সব প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানকেও এভাবে বিদেশফেরতদের পাশে থাকার আহ্বান জানানো হয় অনুষ্ঠানে।
কাজী রিয়াজুল হক বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে নারীরা শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা যখন নারী কর্মী পাঠানো কমিয়ে দিচ্ছে, সেখানে আমরা কেন পাঠাচ্ছি? মানুষ পণ্য নয় বলে উল্লেখ করে তিনি মন্তব্য করেন, প্রতিটি মানুষের মানবাধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। এটা সরকারের দায়িত্ব। নিজ দেশে যদি শুধু পোশাকখাতেই ৪০ লাখ নারী কাজ করতে পারে তাহলে কেন বিদেশে পাঠাতে হবে? অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের পরিচালক কেএএম মোরশেদ। তিনি বলেন, কেউ যদি বলে নির্যাতন হচ্ছে না তাহলে তিনি অসত্য বলছেন। আর এত নির্যাতনের পরেও কেন সৌদি আরবে নারীরা যেতে চাচ্ছেন বা পাঠানো হবে সেটাও খতিয়ে দেখা উচিত। এলএফএমইএবি-এর প্রেসিডেন্ট সায়ফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ এখন মধ্য আয়ের দেশ। গড় আয় মাথাপিছু ১৭৫৭ ডলার। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ বা মধ্য আয়ের বাংলাদেশের সঙ্গে বিদেশে গৃহকর্মী পাঠানোর বিষয়টি মেনে নেয়া যায় না। আমরা চাই আমাদের নারীরা সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে বাঁচুক। কাউকে বিদেশে পাঠাতে হলে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে মানসম্মত কাজে পাঠাতে হবে। আর কেউ বিদেশে গেলে এবং যেসব নারী কর্মী বিদেশ থেকে ফেরত এসেছেন তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি আমরা চাকরি প্রদানে কাজ করে যাবো। আমরা চাই, অন্য সব খাতের ব্যবসায়ীরাও এভাবে এগিয়ে আসুক।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সামপ্রতিক সময়ে সৌদি আরব থেকে ফেরত আসা নারী কর্মীদের সহায়তা দিতে ব্র্যাক নিজস্ব অর্থায়নে জরুরি সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। ভাগ্য বদলের আশায় বিদেশে যাওয়া এই নারীদের অনেকেই শূন্য হাতে ফেরত আসছেন। ব্র্যাক তাদের বিমানবন্দর থেকে বাড়ি যাওয়ার খরচের পাশাপাশি সাময়িকভাবে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, মনোসামাজিক কাউন্সেলিং প্রদান করছে।
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, এই নারীদের অনেকে পরিবারে ফিরতে পারছেন না বা পরিবার তাদের নিতেও চাইছে না। সমাজও তাদের স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে না। অথচ তারা যখন বিদেশ থেকে টাকা পাঠান, সবাই সেটা গ্রহণ করে। বর্তমান সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন তাদের অর্থনৈতিক পুনরেকত্রীকরণ। লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকর্চার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে (এলএফএমইএবি) তিনি মহৎ এই কাজে এগিয়ে আসার জন্য ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠান শেষে বিদেশে ফেরতদের পুনরেকত্রীকরণে ব্র্যাক ও এলএফএমইএবি’র মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এলএফএমইএবি’র পক্ষে সভাপতি মো. সায়ফুল ইসলাম এবং ব্র্যাকের পক্ষে অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান এতে স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৫৭৫ জন নারী কর্মরত আছেন। এদের মধ্যে সৌদি আরবে গেছেন ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮৩১ জন নারী। তাদের অনেকেই সংকটে পড়ে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তবে এ পর্যন্ত চাকরি শেষ করে বা প্রতারণার শিকার হয়ে কতজন নারী দেশে ফিরেছেন তার সুনির্দিষ্ট তথ্য কারও কাছে নেই। অবশ্য গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত তিন বছরে প্রায় পাঁচ হাজার নারী ফেরত এসেছেন। চলতি বছরের মে থেকে ১০ই জুন পর্যন্ত শুধু সৌদি আরবের রিয়াদের ইমিগ্রেশন ক্যাম্প থেকে দেশে ফিরেছেন ৩৬০ জন নারী কর্মী। নির্যাতনের শিকার নারী কর্মীকে নিরাপদে দেশে ফেরত আনার জন্য ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম থেকে ১২৫ জনের জন্য লিখিত আবেদন করা হয় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে। আবেদনের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে ৯০ জন কর্মী নিরাপদে দেশে ফিরেছেন। বাকিরা দেশে ফেরার অপেক্ষায়। এদিকে বিদেশে ফেরত নারীদের সমস্যা সমাধানে ব্র্যাকসহ অভিবাসন নিয়ে কাজ করা ১১টি সংগঠন গতকাল সকালে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব নমিতা হালদারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নারীদের নিরাপত্তা রক্ষায় কয়েকটি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে, সংকট সমাধানে সৌদি আরবসহ বিদেশে কাজ করতে যাওয়া প্রতিটি নারী শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে গন্তব্য দেশের আইন অনুযায়ী আইনি সুরক্ষা, নির্যাতনকারীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা, ক্ষতিপূরণ, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রাপ্য মজুরি নিশ্চিত করা এবং পুনরেকত্রীকরণের ব্যবস্থা করা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status