দেশ বিদেশ

ভারি বর্ষণে উচ্চ ঝুঁকিতে রোহিঙ্গারা

মানবজমিন ডেস্ক

১২ জুন ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৫৫ পূর্বাহ্ন

বর্ষা মৌসুমের ভারি বর্ষণ শুরু হয়ে গেছে এরই মধ্যে। দু’দিনের এমন বর্ষণে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে অবকাঠামোর মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। বন্যা ও ভূমিধসের উচ্চ মাত্রার ঝুঁকিতে রয়েছে ৩১ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। শরণার্থী শিবিরগুলোতে অবস্থান করছে প্রায় ১০ লাখ শরণার্থী। তার মধ্যে এখনো ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকিতে আছে এমন এলাকাগুলোতে বসবাস করছে ৩১ হাজারের বেশি শরণার্থী। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছে। এতে বলা হয়েছে, বৃষ্টি শুরু হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মানবাধিকার বিষয়ক এজেন্সিগুলো ৫৯টি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভূমিধস, পানি আটকে থাকা, চরম ভাবাপন্ন বাতাস ও বজ্রপাত। একই সময়ে দাতা সংস্থাগুলো বলেছে যে, এতে আক্রান্ত হয়েছে ৯ হাজারের বেশি মানুষ। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। সড়ক যোগাযোগ ধরে রাখা, ড্রেনেজ সুবিধা রক্ষা করা সহ অবকাঠামো খাত নিশ্চিত করতে সারাক্ষণ কাজ করে যাচ্ছে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক এজেন্সি আইওএম। তারা প্রস্তুতিকরণ উন্নত করার ক্ষেত্রেও কাজ করে যাচ্ছে। অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে এসব কাজ করা হচ্ছে। এসব কাজের মধ্যে রয়েছে বর্ষার সময়ে শরণার্থীদের জীবন রক্ষাকারী সহায়তা দেয়া যেমন পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, স্বাস্থ্যবিধি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও আশ্রয়ের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা। এতে বলা হয়েছে, আশ্রয়শিবিরগুলো এতটাই ঘনবসতিপূর্ণ এবং বিশাল আকৃতির যা প্রকৃতির কারণে সেখানে প্রচণ্ড ঝুঁকি রয়েছে। পাহাড়ি ওই এলাকায় এখন কোনো সবজি দেখা যায় না বললেই চলে। বৃষ্টির ফলে সেখানকার মাটি হয়ে পড়েছে চরম মাত্রায় অস্থিতিশীল। এর ফলে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা বৃদ্ধিই পাচ্ছে। বৃষ্টিকে সামনে রেখে কয়েক হাজার বিপদগ্রস্ত পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে আইওএম এবং তার অংশীদাররা। জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত এমন ৫১৯৬টি বাড়ি সরিয়ে নেয়া হয়েছে নিরাপদ স্থানে। জুন শেষ হওয়ার আগেই এমন আরো ১৬০২টি পরিবারকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আইওএম এবং তার অংশীদারদের। এসব পরিবারে রয়েছে ৭২৪৮ জন সদস্য। টেকনাফ এলাকায় উনছিপ্রাং শরণার্থী ক্যাম্প থেকে ৭৮৭টি পরিবারকে ভারি বর্ষণের কারণে সরিয়ে নিয়েছে আইওএম। তবে এখনো ৬৫টি পরিবার বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কায় রয়েছে। আইওএমের সাইট ম্যানেজার মোহাম্মদ মানুন বলেছেন, ১৯টি পরিবারকে মনে হয়েছে ভূমিধসের আশঙ্কায় রয়েছেন। তাদেরকে সঙ্গে সঙ্গে লার্নিং সেন্টারে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এবং শরণার্থী শিবিরে শিশুদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বৃষ্টি থেমে গেলে তাদেরকে নতুন কোনো স্থানে পুনর্বাসন করা হবে। অব্যাহত বৃষ্টির ফলে তাদের জন্য যথাযথ আশ্রয় নির্মাণ করা যায় না। এ জন্য পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন অসম্ভব হয়ে ওঠে। কক্সবাজারে আইওএমের ইমার্জেন্সি সমন্বয়কারী ম্যানুয়েল পিরেইরা বলেছেন, প্রতি ফোঁটা বৃষ্টির ফলে শরণার্থী ক্যাম্পগুলোর মানুষ মর্মাহত হয়ে পড়ে। পাহাড়ি ঢালে, কর্দমাক্ত মাটি- যেখানে কোনো গাছ নেই, গুল্ম নেই সেখানে ১০ লাখ মানুষের কাকাছাছি হতে হবে আপনাকে। বৃষ্টিতে মানুষ ও তাদের মাথার উপরের তাঁবু ভেসে গেছে। আমরা জীবন রক্ষার জন্য লড়াই করছি। এসব কাজ অব্যাহত রাখতে, মানবিক গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রসারিত করতে আমাদের জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজন আরো অর্থ। বর্তমানে আমাদের তহবিলে আছে শতকরা মাত্র ২২ ভাগ। তাই অর্থ সহায়তা ছাড়া এ মাসের শেষের দিকে আমাদের কর্মকাণ্ড চালানোর অর্থ শেষ হয়ে যাবে। বিপর্যয় মোকাবিলা করতে আইওএম, ডব্লিউএফপি এবং ইউএনএইচসিআর যৌথভাবে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর নাম দেয়া হয়েছে সাইট মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্ট (এসএমইপি)। দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তারা ভারি যন্ত্রপাতি নিয়ে সেখানে অবস্থান করছে। এ ছাড়া নতুন নিরাপদ বসবাসের জমি খুঁজে পেতে বিভিন্ন টিম অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে নতুন করে কমপক্ষে ৭০০০ মানুষকে পুনর্বাসন করতে নতুন ১৮৬.৮ একর জমি প্রস্তুত করেছে আইএমও। বিদ্যমান তাঁবুগুলোকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে ভারি বৃষ্টি, প্রচণ্ড বাতাসের বিষয়টি মাথায় রেখে। গুরুত্বপূর্ণ আশ্রয় ও খাদ্য নয় (নন ফুড) আইটেমগুলোর মজুত গড়ে তোলা হয়েছে, যাতে উচ্চ চাহিদার সময়ে তা পর্যাপ্ত সুবিধা দেয়। স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে মোবাইল মেডিকেল টিম। বলা হয়েছে, বর্ষা মৌসুমে পরিষ্কার পানি পাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। তাই আইওএম এবং এর অংশীদাররা পানির গুণগত মান উন্নত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status