বাংলারজমিন

ত্রুটিপূর্ণ নৌযানে ঝুঁকিপূর্ণ ঈদযাত্রা

বিল্লাল হোসেন রবিন, নারায়ণগঞ্জ থেকে

১২ জুন ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৪৯ পূর্বাহ্ন

নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ৬টি রুটে ৬০টি ছোট-বড় নৌযান চলাচল করে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ ঘাট থেকে মতলব রুটে ১৬, চাঁদপুর রুটে ১৫, মুন্সিগঞ্জ রুটে ২৫, সুরেশ্বর (শরীয়তপুর) রুটে ২, রামচন্দ্রপুর ২ ও টঙ্গী রুটে ১টি ওয়াটার বাস চলাচল করে। কিন্তু অধিকাংশ লঞ্চই লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা। অবকাঠামো ভাঙ্গাচুরা, জোড়া লাগানো লঞ্চের পাটাতন, জং ধরা সিলিং ফ্যান, ভাঙ্গা রেলিং, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নেই টয়লেটের ব্যবস্থা। তবুও এই লঞ্চগুলোই ঈদে ঘরমুখো মানুষের একমাত্র ভরসা। যাকে বলে ত্রুটিপূর্ণ নৌযানে ঝুঁকিপূর্ণ ঈদযাত্রা। সড়কে যানজট ও ভাঙ্গা রাস্তার ভোগান্তিতে অতিষ্ঠ হয়ে বিকল্প ভ্রমণের পছন্দের তালিকায় থাকে নৌযান। তবে অন্য সময়ের চেয়ে ঈদে নৌপথে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ থাকে। লঞ্চ মালিকরাও বাড়তি আয়ের জন্য ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী পরিবহন করছে। কিন্তু নিরুপায় যাত্রীরা প্রতিবাদ না করে বাধ্য হয়েই যাতায়াত করছে। তাদের মতে, ঈদ তো করতে হবে। মোটকথা এত ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও কোনো বাঁধাই যাত্রীদের গন্তব্যস্থলে যাওয়ায় দেয়াল হয়ে দাঁড়াতে পারে না। নাড়ীর টানে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করার জন্য সকল বাঁধা উপেক্ষা করেই ছুটে যাচ্ছেন আপন গন্তব্যে। সরজমিনে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল হতে ছেড়ে যাওয়া অধিকাংশ লঞ্চের বেহাল দশা। বেশির ভাগেরই ফিটনেস নেই বললেই চলে। ঘাটে মেসার্স মুন্সিগঞ্জ রিভার টা. সার্ভিস এম-১০০১০ লঞ্চের ভেতরে গিয়ে দেখা যায় যাত্রী নিরাপত্তাহীনতার ভয়াবহ চিত্র। লঞ্চের অভ্যন্তরে ভাঙ্গাচুরা ও জোড়া লাগানো লঞ্চের পাটাতন, জং ধরে যাওয়া সিলিং, ভাঙ্গাচুরা কাঠামো, বেঁকে যাওয়া ও ভাঙ্গা রেলিং এ ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে যাত্রী উঠানো হচ্ছে। লঞ্চের পেছনে যাত্রীদের জন্য টয়লেট ব্যবস্থা থাকলেও সেটি স্টোর রুম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। লঞ্চের স্টাফদের কাছে টয়লেটের কারণ জানতে চাইলে মুচকি হেসে জানায়, নদীপথে বেডা মাইন্সের টয়লেট লাগেনি? আর এক ঘণ্টার রাস্তায় মহিলাগো টয়লেটের অত দরকার অয় না। শুধু এই লঞ্চ নয়, একই চিত্র দেখা গেছে ঘাটে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা খাজা এক্সপ্রেস ও চাঁদপুর গামী মেসার্স আমজাদ এন্টারপ্রাইজ লঞ্চে। তবে যাত্রী সেবার বেহাল দশার অধিকাংশ লঞ্চই মুন্সিগঞ্জ রুটে চলাচল করে। আর মাঝারী পাল্লার লঞ্চগুলোকে নতুন রঙ আর ঝালাই করে চকচকে করলেও বাইরের বডি দেখেই বোঝা যায় এর হাল হকিকত। চাঁদপুরগামী লঞ্চের যাত্রী হান্নান ব্যাপারি বলেন, লঞ্চগুলা দেখতে খারাপ হলেও উপায় নাই তো আমাদের। সবাই যায় সঙ্গে আমরাও যাই, আল্লাহ-বিল্লাহ কইরা। তবে ঝড় বাদল না হলে এই লঞ্চে তেমন চিন্তা নাই। প্রতিদিনই তো কত লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে। বিপদ দেয়ার মালিক আল্লাহ, রক্ষা উনিই করবেন। চাঁদপুর রুটের লঞ্চ চালক রফিক উদ্দিন নিজেকে ২৩ বছরের অভিজ্ঞ চালক দাবি করে বলেন, ঝড় বাদল হইলে লঞ্চ সাইডে ভিড়ায়া ফেলতে পারি। নদীও তো ছোট তাই চিন্তা নাই। আবহাওয়ার অবস্থা দেখেই আমরা লঞ্চ চালাই। তবে লঞ্চে পর্যাপ্ত জীবনরক্ষাকারী বয়া নেই কেন জানতে চাইলে বলেন, লাগেনা, তাই নাই। আর টায়ার (বয়া) তো মালিক দিব, আমাদের কে জিগায়া তো লাভ নাই।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও নারায়ণগঞ্জ জোনের প্রেসিডেন্ট মো. বদিউজ্জামান বাদল জানান, যাত্রীদের জন্য নারায়ণগঞ্জ ঘাট হতে ৬০টি ছোট বড় লঞ্চ ৬টি রুটে যাত্রীদের সেবা দিচ্ছে। নির্দিষ্ট কোন দিনে স্পেশাল সার্ভিস চালু করার ইচ্ছে নেই। যাত্রীর চাপ বাড়লেই আমরা স্পেশাল সার্ভিস চালু করে ফেলব। প্রয়োজনে খালি লঞ্চ ফেরত এনে যাত্রীদের সেবা দেয়া হবে।

যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, যাত্রীরা লঞ্চে এখন অনেকটাই সেইফ। আর এসব লঞ্চের ছাদে আমরা যাত্রী নেই না। ঈদের সময়ে লঞ্চের ছাদে আলকাতরা দেয়া হয় যাতে কেউ এখানে না উঠে। ঈদকে কেন্দ্র করে লঞ্চে কিছুটা লোড তো অবশ্যই পড়ে কিন্তু সেটা ডেঞ্জার লোড নয়। সুতরাং নিরাপত্তা নিয়ে যাত্রীরা নিশ্চিত থাকতে পারেন।
তবে অতীতে এসব বাণীর পরেও লঞ্চের ছাদে অহরহ যাত্রী বহন করতে দেখা গেছে লঞ্চগুলোকে। যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে তাই মালিকদের কথায় আশ্বস্ত হতে পারছেন না সাধারণ যাত্রীরা।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসি নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক গুলজার আহমেদের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status