বাংলারজমিন

শোলাকিয়ার নিরাপত্তায় ড্রোন

আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে

১২ জুন ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৪৩ পূর্বাহ্ন

শোলাকিয়ার এবারের ঈদজামাতকে ঘিরে আরো সুচারু ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। নিরাপত্তা পরিকল্পনায় প্রথমবারের মতো যুক্ত করা হয়েছে ড্রোন। নিরবচ্ছিন্ন নজরদারির জন্য ২টি ড্রোন উড়বে শোলাকিয়ায়।
পুলিশ সূত্র জানায়, দেশে প্রথমবারের মতো নরসিংদী জেলা পুলিশ ড্রোনের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। গত ২৭শে মে নরসিংদী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ড্রোন দিয়ে পরীক্ষামূলক মহড়ার পর ৬ই জুন থেকে নিরবচ্ছিন্ন নজরদারির জন্য তিনটি ড্রোন উড়াচ্ছে। শোলাকিয়ার মতো বিশাল জামাতের জননিরাপত্তায় ড্রোন ব্যবহার খুবই কার্যকর হবে, এমন চিন্তা থেকেই কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম এর আগ্রহে নিরাপত্তা পরিকল্পনায় ড্রোনের ব্যবহার যুক্ত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মাঠ ও মাঠের আশপাশ এলাকায় ড্রোনে পর্যবেক্ষণ ছাড়াও ঈদগাহ ময়দানের বাইরে, ভেতরে ও প্রবেশ পথে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ঈদগাহ ময়দান, আশেপাশের এলাকা এবং অলিগলিসহ মাঠ সংলগ্ন চারপাশের অন্তত দুই কিলোমিটার এলাকা নিয়ে আসা হচ্ছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় আওতায়। মাঠে স্থাপন করা হয়েছে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার। এর চারটিতে পুলিশ বাহিনী ও দুইটিতে র‌্যাব বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়ে ঈদজামাতের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা তদারকি করবেন। এরই মধ্যে মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে পুলিশ। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শহর এবং আশপাশের এলাকায় বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। বিজিবি, র‌্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, আরআরএফসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেড় হাজারেরও বেশি সদস্য দিয়ে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হচ্ছে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানকে। ঈদগাহ ময়দানের মোট ২১টি প্রবেশ পথের মধ্যে মুসল্লিদের জন্য ছয়টি প্রবেশপথ উন্মুক্ত রাখা হচ্ছে। সেসব প্রবেশপথে স্থাপিত আর্চওয়ে দিয়ে মুসল্লিদের ঢুকতে হবে ঈদগাহ ময়দানে। এর আগে আরো অন্তত তিন দফা মেটাল ডিটেক্টরে মুসল্লিদের দেহ তল্লাশি করা হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে ঈদগাহে আগত মুসল্লিদের কেবল পাতলা জায়নামাজ ছাড়া ছাতা বা কোনো ধরনের ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেয়া হবে না। নিশ্ছিদ্র এই নিরাপত্তাব্যুহ ডিঙিয়ে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির ঈদগাহ ময়দানে প্রবেশ একেবারেই অসম্ভব বলে মনে করছেন নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা।
পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম জানান, শান্তিপূর্ণভাবে ঈদজামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে চার স্তরের নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। মাঠের বাইরে, মাঠের ভেতরে ও প্রবেশ পথে সর্বোচ্চ ও সুচারু নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। উড়ন্ত ড্রোন থেকে নজরদারি ছাড়াও প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া নিরাপত্তা জোরদারের জন্য মাঠের ভিতর-বাহিরে পোশাক ও সাদা পোশাকে অন্যান্য বারের থেকেও বেশিসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। সার্বিক প্রস্তুতির বিবেচনায় নির্বিঘ্নে শোলাকিয়ায় মুসল্লিগণ ঈদুল ফিতরের ১৯১তম জামাত আদায় করতে পারবেন বলে পুলিশ সুপার আশা প্রকাশ করেন।
এদিকে পুলিশের নিয়মিত সদস্যদের পাশাপাশি পাঁচ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ঈদগাহ ময়দানকে ঘিরে মোতায়েন করা হবে বিপুল সংখ্যক র‌্যাব সদস্য। এদিকে সুষ্ঠুভাবে ঈদজামাত আদায়ের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ ফোর্সকে আইনগত দিকনির্দেশনা দেয়াসহ ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল দায়িত্ব পালনের জন্য ঈদগাহ মাঠের বিভিন্ন পয়েন্ট ও এলাকায় ১৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছেন জেলা প্রশাসন। গৃহীত প্রস্তুতির বিবেচনায় লাখ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে এবারো উৎসবমুখর পরিবেশে সুন্দর ও সুচারুভাবে ঈদজামাত অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী।
ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল্লাহ আল মাসউদ জানান, শোলাকিয়ায় এবারের ১৯১তম ঈদুল ফিতরের জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। এতে ইমামতি করবেন ইসলাহুল মুসলিহীন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। উপমহাদেশের বৃহত্তম এই ঈদজামাত আয়োজনের সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সংস্কার করা হয়েছে মিনার, অজুখানা। মুসল্লিদের প্রাকৃতিক কাজ-কর্ম সারার জন্য তৈরি করা হয়েছে বেশকিছু অস্থায়ী টয়লেট। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তা ও সুবিধার্থে এ বছর মাঠের পাশেই অবস্থিত আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের হলরুমে থাকার সু-ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ ঈদগাহে আসা মুসল্লিদের আপ্যায়ন ও প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী স্বেচ্ছাসেবী ক্যাম্প। প্রস্তুত রাখা হয়েছে একাধিক মেডিকেল টিম। সব মিলিয়ে বৃহত্তম ঈদজামাতের জন্য ২৬৮ বছরের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান পুরোপুরি প্রস্তুত বলে জানান ইউএনও মো. আব্দুল্লাহ আল মাসউদ।
অন্যদিকে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে এবারও ‘শোলাকিয়া এক্সপ্রেস’ নামে দু’টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে। ভৈরব বাজার-ময়মনসিংহ ও ময়মনসিংহ-ভৈরব বাজার রুটে বিশেষ ট্রেন দুটি চলাচল করবে। বিশেষ ট্রেনের একটি ঈদের দিন সকাল ৬টায় ভৈরববাজার থেকে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে এবং সকাল ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছুবে। জামাত শেষে ট্রেনটি দুপুর ১২টায় পুনরায় ভৈরববাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে এবং বেলা ২টায় ভৈরববাজার পৌঁছুবে। অপর ট্রেনটি ঈদের দিন সকাল পৌনে ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছুবে। এ ট্রেনটিও জামাত শেষে দুপুর ১২টায় কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাবে এবং বেলা ৩টায় ময়মনসিংহ পৌঁছুবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status