বাংলারজমিন
বছরের পর বছর ঈদ আনন্দ বঞ্চিত গফফারের পরিবার
মো. সাওরাত হোসেন সোহেল চিলমারী (কুড়িগ্রাম) থেকে
১২ জুন ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৪৩ পূর্বাহ্ন
বেশ ক’বছর শরীরে বেঁধেছে নানান রোগ। শরীরে নেই শক্তি, নেই মনোবল, কেউ সহায়তার হাত বাড়ালে মেলে খাবার- আর না হয় পেটে পড়ে না তা আর। চারদিকে ঈদের আনন্দ থাকলেও তাই তো কোনো আনন্দের ছোঁয়া লাগেনি এই পরিবারে। ছেলে মেয়ে বউকে নিয়েই চলছে বছরের পর বছর আনন্দহীন ঈদ। তিন বেলা ভাতই খাইতে পারি না বাবা। সেমাই, চিনি, নতুন জামা কাপড় কিনবো কী দিয়ে? শরীরেই নেই শক্তি, নেই কোনো বল কাজ করে যে পয়সা জোগার করবো তাও পারি না। রোগাক্রান্ত শরীর নিয়ে বউটা অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা পায় তাই দিয়েই খেয়ে না খেয়ে চলছে ভাঙাগড়ার সংসার। এভাবেই কথাগুলো বলে কেঁদে ফেললেন আ. গফফার। তিনি আরো বলেন, বাবারে ছেলে মেয়েরা অন্যের নতুন জামা দেখে কান্নাকাটি করছে কিন্তু কি করিম, পেটের খাবারে জোগাড় করতে পারং না, আবার নতুন জামা। এ সময় উপস্থিত তার স্ত্রীও কেঁদে ফেলেন। জানা গেছে, কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের পশ্চিম খড়খড়িয়া গ্রামের মৃত আকবার আলীর ২য় পুত্র আ. গাফফার প্রায় ১যুগ আগে হাঁপানি (রোগে আক্রান্ত হয়)। শুধু হাঁপানি নয় চিকিৎসার অভাবে নানান রোগ বাসা বাঁধে তার শরীরে। রোগাক্রান্ত শরীরে কাজকর্ম হয়ে যায় বন্ধ চলতে গেলেই হাঁফিয়ে যায়। নেই কোনো জমাজমি সংসারে নেমে আসে অভাব অনটন। দেখা দেয় নানান সমস্যা। ফলে প্রথম স্ত্রী তাকে ফেলে চলে যায়। অসহায় হয়ে পড়ে আ. গাফফার। কান্না ছাড়া যেন কোনো ভাষা ছিল না তার জানা। পরে প্রায় সাত বছর আগে রমনা পানাতি পাড়া এলাকার চাঁন মিয়ার মেয়ে পারভিনের সঙ্গে বিয়ে হয়। স্ত্রী স্বামীর কষ্ট সইতে না পেরে বেছে নেয় ঝিয়ের কাজ। আর এই কাজ করে যা পায় তা দিয়েই চলতে থাকে ভাঙাগড়ার এই সংসার। এরই মধ্যে তাদের কোলজুড়ে আসে তিনটি সন্তান। কিন্তু অভাবের সেই সংসারে যেখানে নিজেদের পেটে ভাত জোটাতে হিমশিম খাচ্ছে তার স্ত্রী সন্তাদের মুখে কী ভাবে ফুটাবে হাসি। সেই চিন্তায় দিনের পর দিন আরো ভেঙে পড়ছেন আ. গাফফার আলী। এসময় বড় ছেলে হুজাইফা (৫) কথা হলে সে বলে বাবায় কইছে ঈদে নুতুন জামা দিবে কিন্তু কইলে মাও রাগ হয় হামরা নতুন জামা চাই। স্ত্রী পারভিন কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, এমনিতেই তো স্বামী অসুস্থ নিজেদের খিদা মেটাইতেই পারি না তার উপর ছাওয়ারা নতুন জামা চাইছে তোমরায় কন কেমন করি ছাওয়ার ঘরক বুঝেং। এসময় এলাকার ক’য়েকজন বলেন আ. গাফফার আলীর সত্যি খুব কষ্ট। অসুস্থ শরীর নিয়ে কাজও করতে পারে না কেউ নিতেও চায় না। এলাকার বিভিন্ন জনের বাড়িতে কাজ করে তার স্ত্রী যা পায় তাই দিয়ে চলে সংসার। ইউপি চেয়ারম্যান মো. আজগর আলী বলেন এটা খুবই দুঃখজনক। তাই আমি যখন যা পাই চেষ্টা করি সহযোগিতার জন্য।