অনলাইন

গ্যাসের সঞ্চালন চার্জ ১০ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ

স্টাফ রিপোর্টার

১১ জুন ২০১৮, সোমবার, ৮:০১ পূর্বাহ্ন

গ্যাস সঞ্চালন চার্জ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গঠিত কারিগরি মূল্যায়ণ কমিটি। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) প্রতি ঘনমিটারে বর্তমানে চার্জ রয়েছে প্রায় ২৭ পয়সা। বিইআরসি কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি গ্যাসের এই সঞ্চালন ব্যয় প্রতি ঘনমিটারে ১০ পয়সা বাড়িয়ে ৩৭ পয়সা মূল্য নির্ধারণের সুপারিশ করেছে। আজ সোমবার রাজধানীর টিসিবি অডিটোরিয়ামে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের উপর গণশুনানিতে এ মত দেয় তারা। শুনানিতে কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য আব্দুল আজিজ খান, মিজানুর রহমান, রহমান মুর্শেদ, মাহমুদ উল হক ভুঁইয়াসহ জিটিসিএল, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রথম দিন বাংলাদেশ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির (জিটিসিএল) সঞ্চালন চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাবের শুনানিতে ওই প্রশ্ন তোলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বদরুল ইমাম। তিনি বলেন, এলএনজির মতো দামি জ্বালানির ওপর এতটা নির্ভর করাটা বিপজ্জনক কি না? তার মতে, বাংলাদেশের মাটির নিচে ‘অনেক গ্যাস’ আছে। আমদানির পরিবর্তে দেশের গ্যাসের ‘যথাযথ অনুসন্ধান ও উত্তোলন’ করা প্রয়োজন। গণশুনানিতে নতুন গ্যাস সরবরাহে পাইপলাইন নির্মাণে বিনিয়োগের কথা উল্লেখ করে জিটিসিএল প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের সঞ্চালন চার্জ দশমিক ২৬৫৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে দশমিক ৪৪৭৬ পয়সা অর্থাৎ ৬৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রস্তাব যাচাই বাছাই করে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ণ কমিটি মত দিয়েছে, জিটিসিএলের প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের ট্যারিফ ঘাটতি রয়েছে দশমিক ১০২৭ পয়সা। বিদ্যমান ঘাটতি সংকুলানে ট্রান্সমিশন চার্জ সমস্বয় প্রয়োজন মনে করছে মূল্যায়ণ কমিটি। তবে জিটিসিএলের সঞ্চালন চার্জ বাড়ানোর বিরোধিতা এসেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। সংগঠনের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, পাইপলাইনগুলোর নির্মাণ ব্যয় অত্যধিক বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার সঞ্চালন ক্ষমতাও স্বল্প ব্যবহৃত। ফলে সঞ্চালন ব্যবহার অযৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অযৌক্তিক ব্যয়বৃদ্ধি সমন্বয় করে গ্যাসের সঞ্চালন চার্জ বৃদ্ধি করা কি যৌক্তিক?- প্রশ্ন তোলেন শামসুল আলম। শুনানিতে বুয়েটের অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বলেন, এলএনজির কারণে দাম বাড়ানোর বিষয়টি ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু গ্যাসের দাম সমন্বয় করা যেতেই পারে। সাধারণ মানুষের ওপর যেন চাপ না পড়ে, সেজন্য প্রতিবছর পরিস্থিতি অনুযায়ী গ্যাসের দাম কমানো-বাড়ানোর একটি সিস্টেম করা যেতে পারে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম কমলে দেশেও কমানো হবে। আবার বাড়লে বাড়ানোর বিষয়টি পরিস্থিতি অনুযায়ী বিবেচনা করা যাবে। ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন বলেন, জাতীয় সংসদে এখন বাজেট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সেখানে মূল্যস্ফীতি কমানোর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এখানে গ্যাসের দাম ও সঞ্চালন চার্জ বাড়ানোর আলোচনা হচ্ছে। যা প্রভাব ফেলবে সব জায়গায় সঙ্গে উৎপাদন খরচও বাড়বে। ফলে মূল্যস্ফীতির ওপরও চাপ পড়বে। সরকারের উল্টো পথে এই কমিশন চলছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, ঈদের ছুটির সময় শুনানি শুরু করেছে কমিশন। এই সময় ভোক্তাদের বেশিরভাগই ঈদ নিয়ে ব্যস্ত। ভোক্তাদের অন্ধকারে রেখে এভাবে শুনানি করে গ্যাসের দাম বাড়ানো ঠিক হচ্ছে না। এদিকে উত্তোলন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ছাড়া সব ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের গড় দাম ৭ টাকা ৩৯ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৯৫ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে কোম্পানিগুলো। অর্থাৎ বর্তমানের তুলনায় ৭৩ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর যুক্তি হিসেবে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে বিইআরসিতে দেওয়া এক উপস্থাপনায় দেখানো হয়েছে, ২৫ টাকা ১৭ পয়সা দরে কিনে এর সঙ্গে ভ্যাট, ব্যাংক চার্জ, রিগ্যাসিফিকেশন চার্জসহ নানা ধরনের চার্জ যোগ করে আমদানি করা এলএনজির বিক্রয়মূল্য মূল্য দাঁড়াবে ৩৩ টাকা ৪৪ পয়সা। এই অঙ্ক দেশে বর্তমানে বিক্রিত গ্যাসের চার গুণ বেশি। অন্যান্য কোম্পানির পক্ষ থেকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রস্তাব করা হয়েছে সারের ক্ষেত্রে। সার কারখানায় প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম দুই টাকা ৭১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৮০ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যুতে ৩ টাকা ১৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা, শিল্পে ৭ টাকা ৭৬ পয়সা থেকে ১৫ টাকা, চা বাগানে ৭ টাকা ৪২ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৮০ পয়সা, ক্যাপটিভ বিদ্যুতে ৯ টাকা ৬২ পয়সা থেকে ১৬ টাকা এবং সিএনজিতে ৩২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status